পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

রবীন্দ্রনাথ যা ছিলেন, যা হয়েছিলেন এবং যা হচ্ছেন

  • 15 May, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 2743 view(s)
  • লিখেছেন : শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার
আরএসএস রবীন্দ্রনাথের জীবনের প্রারম্ভিক পর্ব এবং ফ্যাসিস্ট মত সমর্থনের ছোট্ট পর্বকে আলাদা করে নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে নিজেদের রঙে রাঙিয়ে নিতে চাইছে। রবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয়কে বলা হচ্ছে প্রথম ভারতীয় নয়, প্রথম হিন্দুর নোবেল জয়। শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়ের প্রথম পর্বকে দেখিয়ে বিশ্বভারতীকে হিন্দুত্বের ছাঁচে ঢেলে সাজাতে চাইছে।

২০২৩ সালের রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে অনেক কিছুই দেখতে এবং শুনতে হল। যে দলের সরকার দেশের তারুণ্যের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পদদলিত করে অগণতান্ত্রিক আটক আইনে বন্দী করে রেখেছে উমর খালিদ, শারজিল ইমাম সহ অসংখ্য লেখক বুদ্ধিজীবীকে, কারান্তরালে খুন করে স্ট্যান স্বামীকে, তারাই 'খোলা হাওয়া' নামে এক সংগঠন তৈরি করে পঁচিশে বৈশাখ উদযাপন করছে যেখানে প্রধান বক্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অমিত শাহ কখনো সাহিত্য সঙ্গীতের চর্চা করেছেন তাঁর জীবনে, এমনটা শুনি নি। সেই রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানের শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের দায়িত্ব ছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। অমিত শাহ বক্তৃতায় যখন বলছেন যে তাদের সরকারের তৈরি নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি আসলে রবীন্দ্র চিন্তার দ্বারাই অনুপ্রাণিত, তখন তাঁর দলেরই উত্তরপ্রদেশ সরকার পাঠক্রম থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দিয়ে বাবা রামদেব ও যোগী আদিত্যনাথের লেখা অন্তর্ভুক্ত করছে। অমিত শাহ যখন কলকাতায় রবীন্দ্রজয়ন্তীতে বলছেন যে রবীন্দ্রনাথের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েই তাঁরা মাতৃভাষার মাধ্যমে পাঠদানের নীতি গ্রহণ করেছেন, তখন শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী চত্বরের সাইনবোর্ড থেকে বাংলা ভাষার নির্বাসন দিয়ে একমাত্র হিন্দি ও ইংরেজির ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০১৭ সালে বিজেপি সাংসদ সুব্রামানিয়াম স্বামী দাবি তুলেছিলেন জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে জনগনমন বাতিল করার। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে 'ওরে নূতন যুগের ভোরে' আবৃত্তি করার সময় গুজরাটি ভাষী প্রধানমন্ত্রীর উচ্চারণ ভুল হয় না শুদ্ধ হয় সেটা আমাদের বিচার্য নয়। বিচার্য হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের গান কিংবা কবিতা উদ্ধৃত করার সমান্তরালে আরএসএস নেতা দীননাথ বাট্রার নেতৃত্বে ভারতীয় ইতিহাস সংকলন সমিতি পাঠক্রম থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে রবীন্দ্রনাথকে ব্যবহারের দৃষ্টান্ত অন্যান্য দলের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক সভাসমিতিতে প্রতিনিয়তই রবীন্দ্রনাথের কবিতা বলেন বা গান গেয়ে ওঠেন। নানা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কথা টেনে আনেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই কাজগুলিতে রাজনীতি কম, প্রদর্শনবাদিতা বেশি। নানা ধরনের ভ্রান্ত তথ্য ও সন তারিখের ভুলভাল উদ্ধৃতি সত্ত্বেও বিষয়টি শেষ পর্যন্ত হাস্যকর ব্যাপারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এ নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে ভাবিত হওয়ার খুব বেশি কারণ থাকে না। অন্যদিকে, বামপন্থীরাও প্রথম যুগ থেকেই রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ও চিন্তার সাথে তাদের রাজনীতির সংলাপ তৈরির চেষ্টা করেছে। বামপন্থীদের ভাবনা বা বিবেচনায় কখনো কোনও ভুল ছিল না, এমন নয়। কিন্তু সেটা কখনোই রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিকৃতি ছিল না। ত্রুটি মূলত ছিল মূল্যায়নে। বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবারের রবীন্দ্রনাথ চর্চা বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের। এর একটি গভীর রাজনৈতিক মতাদর্শগত অভিমুখ আছে। সমালোচকদের তরফে যুক্তি দেওয়া হতে পারে যে, বামপন্থীদের রবীন্দ্রচর্চারও রাজনৈতিক মতাদর্শগত অভিমুখ রয়েছে। তাদের চর্চাও বিশুদ্ধ রবীন্দ্রচর্চা নয়। রাজনৈতিক মাত্রা সেখানেও যথেষ্টই তীব্র। আমার যেটা বলার তা হল, সঙ্ঘ পরিবারের রবীন্দ্রনাথ চর্চার নানা ধরনের বিপজ্জনক মাত্রা রয়েছে। প্রথমত, এর দ্বিচারিতা। দ্বিতীয়ত, এই রবীন্দ্রভক্তির উৎকট প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য রবীন্দ্রনাথকে সমূলে বাতিল করাই।
দ্বিচারিতার বিষয়টি আরএসএস এর কর্মপদ্ধতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। বিগত প্রায় একশ বছর ধরে সচেতনভাবে নিপুণ পদ্ধতিতে দ্বিচারিতার চর্চাকে তারা প্রায় শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়পর্বে যখন আদবানি মূরলী মনোহর যোশী বিনয় কাটিয়াররা উগ্র সংহার মূর্তি ধারণ করছে, ঠিক তখনই বাজপেয়ী মুখে অহিংসা শান্তি শৃঙ্খলার কথা বলে গেছেন। বাবরি মসজিদ ধুলোয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আদবানি মিষ্টিমুখ করছেন, যোশী উমা ভারতীকে আনন্দে জড়িয়ে ধরছেন, আর বাজপেয়ী সাংবাদিকদের বলছেন, আজ আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন। এই দুমুখো কথা বলার ধরনকে তখন স্টেটসম্যান পত্রিকা বলেছিল, বিজেপি স্পিকস ইন ফর্কড টাঙ অর্থাৎ দ্বিফালি জিভে কথা বলে বিজেপি। ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পর সারাদেশে মিষ্টি বিতরণ করার পর, আবার এক বিরাট গালভরা শব্দে শোকবার্তা প্রকাশ করেছিল আরএসএস।   ১৯৮০ সালে বিজেপি দলের সংবিধানে গান্ধীবাদ লিপিবদ্ধ করেছে, আবার ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা রেখেছে রাজনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে। এই দ্বিচারিতাগুলি এরা এমন স্বাভাবিকতার ভঙ্গিতে করে যে জনমানসে এই দ্বিচারিতা ধরাই পড়ে না। এটা অনেকটা অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের মত যা শত্রুদেশের রাডারের নজরদারিকে অনায়াসে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। দ্বিচারিতার চমকপ্রদ দৃষ্টান্ত ঘটেছে ত্রিপুরায়। সেখানে মুসলিম জনসংখ্যা এমন নয় যে মুসলিম বিদ্বেষের রাজনীতি খুব ফলপ্রসূ হবে। সেখানে তারা জনজাতি গোষ্ঠীর উদ্বাস্তু বাঙালিদের প্রতি বিরূপতাকে কাজে লাগিয়ে জনজাতিদের মধ্যে সমর্থনভিত্তি তৈরি করেছে, আবার পাশাপাশি ভাবে উদ্বাস্তু বাঙালিদের মধ্যেও সমর্থনভিত্তি তৈরি করেছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, জনজাতিদের বলেছে কমিউনিস্টরা শুধু বাঙালিদের স্বার্থ দেখে, আবার বাঙালিদের বলেছে কমিউনিস্টরা জনজাতিদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে উদ্বাস্তুদের সর্বনাশ করেছে। অভিন্ন নিশানা রেখে দু'পক্ষে দু'রকম প্রচার সমান্তরালে চালিয়ে যাওয়া, এটা আসামেও এনআরবি সিএএ নিয়ে করেছে, ত্রিপুরাতেও ভোটের জন্যে করেছে। এরপরের বিষয়টি আরো বেশি গুরুত্ব দাবি করে। আরএসএস এর কার্যক্রমের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে, প্রাক-গবেষণা পর্ব যার মাধ্যমে তারা কোনও একটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ধরন ও ভাষ্যটি নির্মাণ করে। কোনো অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ইতিহাস সংস্কৃতি আচার আচরণ বা দ্বন্দ্ব সংঘাতের গভীর অনুসন্ধান করে সেই বিষয় বা ভাবাবেগকে বেছে নেয় যার ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের সামগ্রিক মতাদর্শগত লক্ষ্যবস্তুকে সেই জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। উত্তরপূর্ব ভারতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে অবশিষ্ট ভারতের অন্যান্য জনগোষ্ঠী সম্পর্কে, বিশেষ করে বঙ্গভাষীদের সম্পর্কে একটা মজ্জাগত বিরূপতা রয়েছে। আরএসএস এই বিরূপতাকে নিপুণ সামাজিক প্রকৌশলের মাধ্যমে মুসলিম বিদ্বেষে পরিণত করেছে। আসামে মোগলদের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে আহোম সৈন্যবাহিনীকে যিনি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় অর্জন করেছিলেন সেই লাচিত বরফুকনকে ওরা পরিণত মুসলিম বিরোধী হিন্দু বীর হিসেবে। অথচ প্রকৃত সত্য হল, বাঘ হাজারিকা নামে পরিচিত লাচিতের মুখ্য সমর নায়ক ছিলেন একজন মুসলিম যাঁর প্রকৃত নাম ইসমাইল সিদ্দিক। অপরপক্ষে মোগল বাহিনীর যিনি সেনানায়ক ছিলেন রাম সিং।
দ্বিতীয় বিষয়টি ভয়ঙ্কর। ইতিহাসের একটি নির্দিষ্ট পর্ব বা ব্যক্তি মানুষের জীবনের কোনো একটি অধ্যায়কে পছন্দমত বেছে নিয়ে সেটাকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করা। একটা সামগ্রিক ইতিহাস বা ব্যক্তি মানুষের সমগ্র জীবনকে একটিমাত্র অংশের মধ্য দিয়ে দেখা এবং তাকেই তুলে ধরা। এটা সচেতন চয়নের মাধ্যমে করা হয় যাতে একজন ব্যক্তি বা একটি ইতিহাসকে নিজেদের রঙে রাঙিয়ে নেওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে আরএসএস ঠিক এই পথটি গ্রহণ করেছে। এটা সকলেরই প্রায় জানা যে রবীন্দ্রনাথের গোটা জীবনটি নানা পর্যায়ে বিভক্ত। এই পর্বগুলি বিশেষায়িত হয়ে আছে ওই সময়পর্বে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনার সাপেক্ষে। রবীন্দ্রনাথের জীবনটা এমনই যে তিনি নিজের চিন্তাভাবনা বিশ্বাসের ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে একটি পর্ব থেকে অপরপর্বে  গেছেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন, তাঁর জীবনের কোনো একটি পর্বের নিরিখে তাঁর সমগ্র জীবনকে বিবেচনা করা অনুচিত। আরএসএস ঠিক এই কাজটিই করছে। ধর্ম ঈশ্বর জাতীয়তাবাদ আধুনিকতা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়েই রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে গেছে। তাঁর প্রথম পর্বের ভাবনার আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে জীবনের প্রান্তে এসে। জীবনের প্রথম পর্বে রবীন্দ্রনাথের ভাবনাকে আজকের হিন্দুত্ববাদী ভাবনার খুব কাছাকাছি মনে হবে। ভারতের সনাতন অতীত নিয়ে এক ধরনের পুনরুত্থানবাদিতা তাঁর ছিল। ভারতের বর্ণব্যবস্থাও তাঁর মনে হত দৃষ্টান্ত বৈচিত্র্যের মধ্যে সামঞ্জস্যের দৃষ্টান্ত। শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয় স্থাপন করে সেখানে বর্ণাশ্রম প্রথাকে মান্যতা দিয়ে চলার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর বাল্যকালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গনেই প্রথম হিন্দুমেলার আয়োজন করা হয় যাকে ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রথম প্রকাশ বলে অভিহিত করেছেন। জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষের এই পর্বটি ছিল হিন্দু পুনরুত্থানবাদী চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত। রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের দেশাত্মবোধক গানেও ছিল হিন্দুত্ববাদী ঝোঁক। ১৮৯০ সালে পৈতৃক জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে পূর্ব বাংলায় যাওয়ার পর ভারতীয় গ্রাম সমাজের অন্তর্নিহিত সামঞ্জস্য নিয়ে তাঁর এতদিনকার ধারণায় প্রথম ধাক্কাটি খান তিনি। প্রত্যক্ষ করেন, প্রথা পালনের নামে কতটা অমানবিক আচরণ হয়ে থাকে সমাজে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশ নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার জগৎ আরো বিস্তৃত হয়। আমাদের মজ্জাগত দ্বিচারিতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি সরে আসেন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকে। রবীন্দ্রনাথের জীবনে এই পর্ব থেকে ভাবনা চিন্তার এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়। গোরা উপন্যাসে গোরার গোঁড়ামি থেকে সমন্বিত ভারতীয়ত্বের ধারণায় উত্তরণের কাহিনী প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথেরই জীবন বৃত্তান্ত। ঘরে বাইরে উপন্যাসে আমরা দেখি অন্ধ জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণার প্রত্যাখানকে। গোরা থেকে সভ্যতার সংকট রবীন্দ্রনাথের জীবনের এক সম্পূর্ণ ভিন্ন পর্ব। মাঝে একটি ক্ষুদ্র সময়ের জন্যে ইতালি থেকে শান্তিনিকেতনে আসা এক ফ্যাসিস্ট সমর্থক অধ্যাপকের প্রভাবে তিনি ফ্যাসিস্ট মতের সমর্থক হয়ে উঠলেও অচিরেই তিনি এই পর্বও কাটিয়ে ওঠেন। আরএসএস রবীন্দ্রনাথের জীবনের প্রারম্ভিক পর্ব এবং ফ্যাসিস্ট মত সমর্থনের ছোট্ট পর্বকে আলাদা করে নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে নিজেদের রঙে রাঙিয়ে নিতে চাইছে। রবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয়কে বলা হচ্ছে প্রথম ভারতীয় নয়, প্রথম হিন্দুর নোবেল জয়। শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়ের প্রথম পর্বকে দেখিয়ে বিশ্বভারতীকে হিন্দুত্বের ছাঁচে ঢেলে সাজাতে চাইছে। রবীন্দ্রনাথের জীবনের প্রথম পর্বের দেশাত্মবোধক গানগুলিকে সচেতনভাবে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অথচ গুণগত এবং ভাবগত কারণেও যে গানগুলি রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার কেন্দ্রে স্থান পায় না, তাকেই চালু করার চেষ্টা চলছে। যে দুর্বলতা ও অসম্পূর্ণতাগুলিকে রবীন্দ্রনাথ পরিত্যাগ করেছেন তার আলোতেই রবীন্দ্রনাথকে ঢেলে সাজানোর তোড়জোড় চলেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি ঘরে বাইরে সভ্যতার সংকটের রবীন্দ্রনাথকে আরএসএস এর কবি হতে দিতে পারি?

0 Comments

Post Comment