পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

তিন প্রধানের শাসকদলের পক্ষে নির্বাচনী ময়দানে অংশগ্রহণ : বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত

  • 11 November, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 628 view(s)
  • লিখেছেন : সুমন কল্যাণ মৌলিক
সদ্য ঘোষিত ভারতীয় দলের প্রথম একাদশে একজন বাঙালির প্রতিনিধিত্ব নেই। বঙ্গ ফুটবলের এই লজ্জার সময়ে আইএফএ কর্তা তৃনমূল কংগ্রেসের পক্ষে ময়দানে নামাকে একমাত্র কাজ বলে মনে করছেন, এ দিনও আজ বঙ্গভাষীদের দেখতে হচ্ছে! গল্পটা অবশ্য এখানেই শেষ হচ্ছে না।পরিকল্পনা মাফিক এর পর নামানো হচ্ছে প্রাক্তন খেলোয়াড়দের একটা অংশকে। এই নির্লজ্জ স্তাবকতার পক্ষে যে যুক্তি সমূহ হাজির করা হচ্ছে তা শুনলে ঘোড়াতেও হাসবে।

পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন উপনির্বাচনে ইস্টবেঙ্গল - মোহনবাগান- মহামেডানের কর্মকতারারা যে ভাবে শাসকদলের পক্ষে নির্বাচনী ময়দানে নেমে পড়েছেন তা শুধু অভূতপূর্ব নয়, একই সঙ্গে ধিক্কারযোগ্য এবং গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত। আশার কথা হল তিন প্রধানের সমর্থক বাহিনীর একটা বড়ো অংশ কর্মকর্তাদের এই নির্লজ্জ তোষণ নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।শুধু তিন প্রধানের প্রশাসকরাই নয়,একই সঙ্গে মাঠে নেমেছেন রাজ্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা আই এফ এ এর সভাপতি।একদা এ রাজ্যের ফুটবল দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে ছিল,আজ অবস্থা এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে সদ্য ঘোষিত ভারতীয় দলের  প্রথম একাদশে একজন বাঙালির প্রতিনিধিত্ব নেই। বঙ্গ ফুটবলের এই লজ্জার সময়ে আইএফএ কর্তা তৃনমূল কংগ্রেসের পক্ষে ময়দানে নামাকে একমাত্র কাজ বলে মনে করছেন, এ দিনও আজ বঙ্গভাষীদের দেখতে হচ্ছে! গল্পটা অবশ্য এখানেই শেষ হচ্ছে না।পরিকল্পনা মাফিক এর পর নামানো হচ্ছে প্রাক্তন খেলোয়াড়দের একটা অংশকে। এই নির্লজ্জ স্তাবকতার পক্ষে যে যুক্তি সমূহ হাজির করা হচ্ছে তা শুনলে ঘোড়াতেও হাসবে। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে নৈহাটি কেন্দ্রের তৃনমূল প্রার্থী ক্রীড়া মোদী,তাতেও খুব একটা চিঁড়ে ভিজবে না। বিগত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা তথা ভারতের জনপ্রিয় ক্রিকেট খেলোয়াড় অশোক দিন্দা বিজেপির হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই একই যুক্তিতে তখন তিন প্রধানের কর্মকর্তাদের কিন্তু অশোকের পক্ষে নামতে দেখা যায় নি।পশ্চিমবঙ্গের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাস সম্পর্কে যাদের সামান্য জ্ঞান গম্যি আছে তারা জানেন জাতীয় কংগ্রেসের প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সিপিআই(এম) দলের সুভাষ চক্রবর্তী, অশোক ভট্টাচার্য ক্রীড়াপ্রেমী হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন, কিন্তু তারা যখন ক্ষমতাশালী তখন কিন্তু তাদের নির্বাচনী লড়াইয়ের সমর্থনে তিন প্রধানের কর্তারা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মাঠে নামেন নি।

এবারে তিন প্রধানের এই সিদ্ধান্ত অভূতপূর্ব একাধিক কারণে। একথা কারো অজানা নয় যে ২০১১ সালে পরিবর্তনের সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে সাহিত্য সংস্কৃতি এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রের জনপ্রিয় নক্ষত্ররা (চলতি ভাষায় সেলেব) দলে দলে নিজের আখের গোছাতে সরাসরি শাসক দলের খাতায় নাম লেখালেন। সরকার সঙ্গে হৃদত্যা বজায় রেখে ক্ষমতার ভান্ড থেকে মধু খাওয়া এ রাজ্যের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। কিন্তু বাম আমলে বিষয়গুলো এত নগ্ন ছিল না।নতুন জমানায় ২১ জুলাই এর বার্ষিক শহীদ সভা হোক বা সরকারের কোন অনুষ্ঠান হোক,গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীর আশে পাশে এক সেলেব মন্ডলী ঘুরে বেড়াচ্ছে, এ দৃশ্য আজ রাজ্যবাসীর চোখ সয়ে গেছে।নতুন যুক্ত হয়েছে বিধায়ক ও সাংসদ নির্বাচনে নিত্যদিনের রাজনীতির  সঙ্গে সম্পর্ক রহিত এই সেলেবদের নির্বাচনী প্রার্থী হওয়া ও তৃনমূল সুপ্রিমোর ক্যারিশমায় ভোটে জিতে যাওয়া। কিন্তু সেখানেও এতগুলো নির্বাচনে তিন প্রধানের এইভাবে শাসক দলের হয়ে সরাসরি মাঠে নামতে দেখা যায় নি।

এবারের এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের কারণটি পুরোপুরি রাজনৈতিক, আরো নির্দিষ্ট করে বললে তিলোত্তমার জন্য ন্যায় বিচার ও হুমকি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দলতন্ত্রের প্রভাবমুক্ত কিন্তু রাজনৈতিক গণ আন্দোলন। যে কোন সফল গণ আন্দোলন নানান নতুন দৃশ্যকল্পের  জন্ম দেয়, অভয়ার জন্য আন্দোলনও তার ব্যতিক্রম হয় নি। তিন প্রধানের সমর্থকরা যেভাবে ন্যায় বিচারের দাবিতে সরব হয়, তাতে আতঙ্কিত হয়ে ডার্বি ম্যাচ বাতিল এবং পরবর্তীতে সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন সরকার পক্ষকে নাজেহাল  করে তোলে। আজ যখন আন্দোলন স্বাভাবিক নিয়মে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত তখন শাসক দলের অঙ্গুলি হেলনে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছেন ক্লাব কর্তারা।এটা আরো সম্ভব হচ্ছে ক্লাবগুলোর চূড়ান্ত অপেশাদার ও সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোর কারণে।কোন রকম দায়বদ্ধতা ছাড়া প্রশাসকরা ক্লাব চালান। আমরা সবাই এই প্রশাসকদের চিনি। চিট ফান্ড কান্ডে অভিযুক্ত সাংবাদিক, ব্যবসায়ী,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছোট -বড় নেতা আজ এই ক্লাবগুলোর মাথা।অস্বচ্ছ পদ্ধতিতে সদস্য   নেওয়া,ক্লাব পরিচালনা সংক্রান্ত ভোটে টাকার খেলা এই ক্লাবগুলোতে একধরনের মৌরসীপাট্টা গড়ে তুলেছে যার সঙ্গে ফুটবলের কোন সম্পর্ক নেই।এমনকি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে টাকার জন্য জোট বাঁধলেও গোটা বিষয়টা  এক দুর্নীতিগ্রস্ত বেনিয়া সংস্কৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ক্লাবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হল সাধারণ ক্লাব সমর্থকদের।এই মানুষগুলো শুধু ক্লাবের প্রতি ভালোবাসার কারণে শীত-গ্রীষ্ম- বর্ষা গ্যালারি ভর্তি করেন কিন্তু ক্লাবের ভালো মন্দে তাদের কোন কথা বলার ক্ষমতা নেই।

এবারের উপনির্বাচনে তিন প্রধানের কর্মকর্তাদের ভূমিকাটা অভূতপূর্ব হলেও খেলার রাজনীতিকরণের কাজটা কিন্তু অভূতপূর্ব নয়। স্পোর্টসম্যান স্পিরিট শব্দটি বহু আগেই অর্থহীন হয়ে গেছে। এদেশে খেলার নিয়ামক সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণ বহু আগেই রাজনৈতিক নেতা এবং ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে।এমনকি যে সমস্ত খেলোয়াড়রা ক্রীড়া প্রশাসনে এসেছেন, তারাও আসলে কোন না কোন রাজনৈতিক দলের ডামি ক্যান্ডিডেট।সাম্প্রতিক উদাহরণ হল সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার সর্বোচ্চ পদাধিকারী কল্যাণ চৌবে যিনি আসলে বিজেপির প্রতিনিধি। সাম্প্রতিক অতীতে আমরা দেখেছি কিভাবে নিজের পছন্দের এক পুলিশ কর্তাকে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের ( সিএবি) সভাপতি নির্বাচিত করতে গিয়ে মুখ পুড়িয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দেশের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশীল ক্রীড়া সংস্থা  বিসিসিআই এর সর্বোচ্চ পদে জয় শাহের নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে তার বাবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতযশ কারো অজানা নয়।কুস্তি ফেডারেশনর সভাপতি প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ  ব্রিজভূষণ বা কংগ্রেস জমানায় কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারির নায়ক কংগ্রেস সাংসদ সুরেশ  কালমাদি আসলে একই সংস্কৃতির প্রতিনিধি। এই মুহূর্তে কলকাতার ময়দানে কান পাতলেই শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর এক ভাইয়ের ' ক্রীড়াপ্রেমী' হিসাবে নানান সক্রিয়তার কথা। আজ তাই তিন প্রধানের সমর্থকদের তাদের প্রাণপ্রিয় ক্লাবের গরিমা নষ্টের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে হবে তেমনি সমস্ত ক্রীড়মোদীদের উচিত খেলার মাঠকে রাজনৈতিক নেতাদের দখলদারি মুক্ত করার দাবিতে সরব হওয়া।

0 Comments

Post Comment