পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

সংখ্যালঘুদের বিপন্নতা ও সংবিধানের রিক্ততা

  • 15 August, 2023
  • 1 Comment(s)
  • 1134 view(s)
  • লিখেছেন : মনসুর মণ্ডল
যখন দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের বিপন্নতার গভীরতা বুঝতে চাইছি, তখন অদ্ভুতভাবে দেখছি এক মাপকাঠি— দেখতে পাচ্ছি, এই বিপন্নতা ততটাই যতটা বিপন্ন দেশের মুসলিমরা। দেশের স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তী বর্ষ পেরিয়ে এসে মুসলমান সমাজের বিপন্নতা ও সংবিধানের রিক্ততা সমার্থক হয়ে গেছে।

কথা ছিল স্বাধীন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক সংবিধান হবে। অচিরেই তা মিলল। (যদিও শুরুতে সংবিধানের প্রস্তাবনায়  ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটা ছিল না।) যাদের নিয়ে অমীমাংসিত বিতর্কের জেরে দেশভাগ, সেই মুসলিমদের মধ্যে যারা ভারতে রয়ে গেল তাদের অতঃপর আশ্বস্ত হওয়ারই কথা।

স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনার আগেই ভারত ও পাকিস্তানে দেশভাগ জনিত দেশান্তর শুরু হয়েছিল। যে সকল মুসলমান ভারতে থেকে গেল, সে’ শুধু জন্মভূমির মায়া ও পরভূমে জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তার আশঙ্কাতেই নয়, দেশনেতাদের ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিশাও ছিল কারণ। আর এর অন্তর্নিহিত সত্যটা হল এই যে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের ভিত্তিমূলে স্থাপন করা, এটা স্রেফ কিছু নেতার মস্তিষ্কপ্রসূত নয়; ভারতের বহুত্বগামী সাংস্কৃতিক ধারা ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নানা জাতি-ধর্মের মানুষের মিলিত প্রয়াস এবং সেখান থেকে গড়ে ওঠা আধুনিক রাষ্ট্রভাবনা, এসবের সারসংকলনের এক সাংবিধানিক দর্শন হল ধর্মনিরপেক্ষতা।

ভারতের এই সংকল্প যাত্রা আজ ম্রিয়মান। এখন ধর্মনিরপেক্ষতার রাষ্ট্রীয় প্রাসঙ্গিকতা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিঃশেষ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। একদশক ধরে রাষ্ট্রীয় সহায়তায় মুসলমান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা-ভাষণ থেকে নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় ইদানিং রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন যুক্ত হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের খারগাঁওতে রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসা, দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরিতে হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসা, সাম্প্রতিক হরিয়ানার নূহতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের ধর্মীয় মিছিলকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসা—এরকম উদাহরণ আরও আছে এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে সরকারী কর্তাব্যক্তিরা মুসলিমদের দায়ী করেছেন ও বুলডোজার দিয়ে মুসলিমদের বাড়িঘর, দোকানপাট, ধর্মস্থান ধ্বংস করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অভিযোগের নিশানায় সর্বদা একটি দলেরই সরকার; সে’ বিজেপি। আগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকসংঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, সংঘ পরিবার-ভুক্ত আরও সব ধর্মীয়-সামাজিক আদলের সংগঠনগুলির ধর্মীয় ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক কার্যকলাপে বিজেপি পৃষ্ঠপোষক বা মদতদাতা হিসেবে পিছন পিছন চলত। এখন সব মিলেমিশে একাকার।

বিজেপি পরিচালিত সরকারগুলো সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে যেটা করছে, সেটা কেবল হিংসায় মদত দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার প্রয়োজনবাদী রাজনীতি নয়, লক্ষ্য দূরপ্রসারী-- বিজেপি সংখ্যালঘু দমনের মধ্য দিয়ে তার আধিপত্যকামী রাষ্ট্রভাবনা বদ্ধমূল করতে উন্মুখ। সাম্প্রদায়িক হিংসা এখন বিজেপির রাজনীতিতে বিভাজনের উপায় নয়, এটা রণনীতিগত সিদ্ধান্তে পর্যবসিত। এই উল্লম্ফন তার আগ্রাসী চরিত্রকে অবিচল করে তুলেছে। এই উল্লম্ফনেই তার সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্য সন্নিবিষ্ট। এটা করতে বিজেপির একদশকের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যেমন সহায়ক হয়েছে, তেমনি এক বহুবিস্তৃত জনসমষ্টিকে হিন্দুত্বের রাজনীতির জনভিত্তিতে পরিণত করে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করেছে।

এখন দেশের বুকে ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে ঘনীভূত বিপদ এইখানে যে, বিজেপির বহুবিস্তৃত জনভিত্তি আছে। ভোটের অঙ্কে যদিও বা তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়া সম্ভব, তথাপি সামাজিক পরিমণ্ডলে তার রাজনৈতিক ভিত্তিকে নিঃশেষ করা সোজা ব্যাপার নয়। সংঘ পরিবার ধর্ম-জাতপাত নিয়ে হিন্দুত্বের যে ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছে, তার বিপরীতে উপযুক্ত ন্যারেটিভ দাঁড় করানো যায়নি। অথচ তার জন্য ভারতের বহুত্বগামী সমাজ-সংস্কৃতিতে অঢেল উপাদান ছড়িয়ে আছে। প্রয়োজন সেটাকে সংহত করা। এটা করার ক্ষেত্রে মনে হয় বেশি বাধা রাজনীতির জায়গা থেকেই এসেছে। সেটা হল ধর্মনিরপেক্ষতার অপলাপ।

৩০শে জানুয়ারী ১৯৪৮-এ গান্ধীজীর হত্যা ও  ২২শে ডিসেম্বর ১৯৪৯-এ বাবরি মসজিদ নিয়ে ষড়যন্ত্র—এই দুই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল স্বাধীন ভারতের যাত্রাপথ কন্টকমুক্ত নয়। কিন্তু গান্ধীজীর হত্যা ও দেশে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর দায়ে ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ১৯৪৮-এ আর.এস.এস-কে নিষিদ্ধ করা হলেও দেড় বছরের মধ্যেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, যখন আর.এস.এস অনেকটাই হতোদ্যম। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৯৫০ সালে ২রা মে তাঁর মুখ্যমন্ত্রীদের যে চিঠি লিখেছিলেন (লেটার্স টু চিফ মিনিস্টার্স, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৮৩), তাতে আক্ষেপ করেছিলেন, “….. আমরা একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কথা বলেছিলাম। কিন্তু প্রায়শই দেখা যাচ্ছে, যাঁরা এ সম্বন্ধে আলোচনা করেছিলেন, তাঁরাই এটাকে সবচেয়ে কম অনুভব করেছেন এবং তাঁদের কাজে ও কথায় একে অমান্য করছেন।“ গত শতকের আশির দশকে ক্ষমতাসীন জাতীয় কংগ্রেস হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয়-সামাজিক সংগঠনগুলি সম্পর্কে সহযোগিতার অবস্থান নিয়েছিল। বিপরীতে কেন্দ্রে কংগ্রেসী শাসন ক্ষমতার বিরোধিতা করতে গিয়ে অ-বিজেপি দলগুলির বিজেপিকে সঙ্গে নিতে বাধেনি। বিজেপির পক্ষে এর ফলাফল ছিল এই যে, ১৯৮৩-র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তার সাংসদ সংখ্যা ২ থেকে ৮৫-তে ও ১৯৯১-এ ১১৯-এ উঠিয়ে নিতে পেরেছিল। অবশেষে অ-বিজেপি দলগুলির অবিমৃষ্যকারিতা সমাহিত হয় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ট্র্যাজেডির মধ্যে। আজ যখন হিন্দুত্বের আগ্রাসী রাজনীতি সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা ও ভারতীয় গণতন্ত্রকে গ্রাস করতে উদ্যত, তখনও বিজেপি বিরোধী দলগুলি ধর্মনিরপেক্ষতার স্পষ্ট উচ্চারণ ছেড়ে ধর্ম সম্পর্কে কে কতটা উদার, হিন্দু নেতা কতটা বর্ণহিন্দু বা মুসলিম নেতা কতটা মুমিন মুসলিম, সেইটা দেখাতে বেশি উদগ্রীব। আবার সরকারে থাকলে রামমন্দিরের পাল্টা জগন্নাথ মন্দির বানানোর মতো সরকারি সিদ্ধান্তে আত্মপ্রসাদলাভে আত্মহারা হওয়ার দশা। ফলে হিন্দুত্বের মোকাবিলায় এক সাংবিধানিক হাতিয়ারে শান আর পড়ে না।

ধর্মনিরপেক্ষতার হাতিয়ারে শান দেওয়ার কথা বলতে গেলে দিল্লীর সি.এ.এ বিরোধী আন্দোলনের কথা এসে যায়। দিল্লীতে ছাত্রছাত্রীরা ও মুসলিমরা সি.এ.এ বিরোধিতায় বেশি সোচ্চার ছিল। দিল্লীর শাহীনবাগে মুসলমান ছাত্র-যুবরা আন্দোলনের এক নতুন ধারাও গড়ে তুলল। কিন্তু বড় বড় সংসদীয় দলগুলি সেটাকে মুসলমানের আন্দোলন ভিন্ন আর কিছু ভাবতে পারেনি। এই ব্যবধানের সুযোগ নিয়ে সংঘ পরিবার উত্তর-পূর্ব দিল্লীতে বিধ্বংসী সাম্প্রদায়িক হিংসা নামিয়ে আনল। পরিণামে সহস্রাধিক মুসলমান ছাত্র-যুব-আম জনতা আজও কারান্তরালে। অন্যদিকে, তিনটি কেন্দ্রীয় কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে কৃষক আন্দোলন ২০২০-তে শুরু হয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলল। আন্দোলন ছিল অ-পার্টি ধারার। কিন্তু তার প্রতি সংহতিতে দেশ জুড়ে আন্দোলনের ডাক দিতে বাধা ছিল না কোন রাজনৈতিক দলেরই। সেখানে বামপন্থীরা ছাড়া আর কেউ এগিয়ে আসেনি, বাকিরা কেবল নৈতিক সমর্থন দিয়ে দায় সেরেছিল। অথচ ২০২১-এর ৫ই সেপ্টেম্বর  এই কৃষক আন্দোলন মুজাফফরনগরে ২০১৩-য় ঘটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-বিভাজিত হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে এক মিলনক্ষেত্র রচনা করল কিষাণ মহাপঞ্চায়েতের মধ্য দিয়ে।

মোদি সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে এক যৌথ উৎসাহ আছে; তা হল হিন্দুত্বের নাফা ও কর্পোরেটের মুনাফা। এই দ্বৈত স্বার্থ প্রখরভাবে ছায়াপাত করেছে দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। সুতরাং দেশের বুকে গেড়ে বসা ফ্যাসিবাদ চরিত্রগতভাবে কর্পোরেটমুখীও। তিনটি কেন্দ্রীয় কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলন একদিক থেকে ছিল তো কর্পোরেট কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধাচরণ। যেসব রাজনৈতিক দল কৃষক আন্দোলনের উত্তাপে নিজেদের সেঁকে নিতে পারেনি, তারা ফ্যাসিস্ট শক্তির সামনে তাদের দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠবে কীভাবে?

মোদি জমানায় হিন্দুত্বের নিশানা সংখ্যালঘু থেকে জাতপাত হয়ে জাতিসত্তা পর্যন্ত বিস্তৃত। সেখানে বিভাজন-বিদ্বেষের সেরা বাজি মুসলমান সমাজ। আজ মুসলিমদের সামনে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার চেয়ে নাগরিক বাস্তবতা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন কঠোর থেকে কঠোরতর হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমান বিরোধী সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনে স্থানীয়তা ছাড়িয়ে সমগ্রতা আরোপ করতে সচেষ্ট। হরিয়ানার হিংসা-দীর্ণ নুহ্ সেই সাক্ষ্য বহন করছে। প্রথমে নুহ্ শহরের পার্শ্ববর্তী বসতিগুলির বাঙালি মুসলিমদের বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী তকমা দিয়ে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করল হরিয়ানা সরকার এবং সেই আবহে নুহ্তে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে দেওয়া হল। হরিয়ানা সরকার বলল, হিংসার জন্য বহিরাগত মুসলিমরা দায়ী। অনুপ্রবেশকারী মুসলমান ও বহিরাগত মুসলমান একাকার করে হিংসা থামতে না থামতে সরকার সিপাই-সান্ত্রি-বুলড়োজার নিয়ে ছুটল বাঙালি মুসলমান বসতিগুলি উচ্ছেদ করতে। পাঞ্জাব-হরিয়ানা উচ্চ আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান আপাতত বন্ধ। পাঞ্জাব-হরিয়ানা উচ্চ আদালতের বিচারপতি জি. এস. সান্ধাওয়ালিয়ার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এই বলে যে, আইন-শৃঙ্খলার নামে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের ঘর ভাঙায় প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে? ১৭ থেকে ১৯শে ডিসেম্বর ২০২১-এ হরিদ্বারে একটি হিন্দু ধর্ম সংসদ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে এই বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, দেশে যেরকম দ্রুত হারে মুসলমান জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে ২০২৯-এ একজন মুসলিম প্রধানমন্ত্রী হওয়া অসম্ভব নয়। ধর্ম সংসদ থেকে দেশে মুসলমান নিকেশ করার ডাক দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর এই আশঙ্কা কি জেগে ওঠে না যে, হরিয়ানার হিংসা দেশবাসীর সামনে এক অশনি সংকেত?

যখন দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের বিপন্নতার গভীরতা বুঝতে চাইছি, তখন অদ্ভুতভাবে দেখছি এক মাপকাঠি— দেখতে পাচ্ছি, এই বিপন্নতা ততটাই যতটা বিপন্ন দেশের মুসলিমরা। দেশের স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তী বর্ষ পেরিয়ে এসে মুসলমান সমাজের বিপন্নতা ও সংবিধানের রিক্ততা সমার্থক হয়ে গেছে।

1 Comments

Moyallem Naiya

15 August, 2023

দেশ বিপন্ন কিনা জানিনা তবে মুসলিমরা যে বিপন্ন, এটা নিশ্চিত ৷ রাজনীতির কারবারীররা সারা দেশব্যাপী যেভাবে হিন্দুত্ব নিয়ে মেতে উঠেছে তাতে আগামী দিনে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও পারস্পরিক সন্দেহের বীজ গভীরভাবে প্রোথিত, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ৷ সময়োপযোগী লেখা ৷ ধন্যবাদ সাহেব ৷

Post Comment