ভরা ভাদর। ব্যাঙের ফুর্তির মাস, বাবুদের বেদনার। এ বচ্ছর বেদনা কিচু অধিক। রাঁড়ের বাড়ি যাওয়া বন্দ আচে। মাস্কে কেবল শ্রীমুখটি রক্ষে করবে ভাইরাস থেকে, বাকি রক্ষে হবে কী উপায়? বাবুরো ভেবে মরচেন, হোয়াটস্যাপ ফেসবুকে মনোমত জবাব পাচ্চেন না। তাই হাফ পেন্টুলুন পরে গলায় টাই বেঁদে ব্যাজার মুকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম কচ্ছেন, রসের অভাবে বদনখানা চিবুনো চুইং গামের মতন দ্যাকাচ্চে।
তবে সকল বাবুর এম্নি দুর্গতি হয়নি। প্রধান সেবকবাবু মুনি ঋষির মতন তপোবনে আচেন, ময়ূরের নাচ দেকচেন, দু চার দানা খাওয়াচ্চেন। দেশে রোজগার অমিল, হসপিটাল বেড অমিল, ডাক্তার অমিল, মায় মিড ডে মিল অমিলে দাঁড়িয়েচে। তবু জাতীয় পাখির দানা অমিল হয়নি দেকে দেশপ্রেমিক প্রাণে পুলক জেগেচে। আমাদের সম্পাদক এক কচি রিপোর্টারকে পাঠিয়েছিল ময়ূরটির ইন্টারভিউ নিতে। প্রাণীটি বিলক্ষণ ঠ্যাঁটা। সম্পাদকের ঘরে বসে রিপোর্টার ছোকরার ইমেল করা ট্রানস্ক্রিপ্ট পড়লেম। কোট কচ্ছি, নিজেরাই বিবেচনা করুন
রিপোর্টার: উনি কী খাওয়ালেন?
ময়ূর: এফ সি আই গুদোমের জিনিস থেকে স্যানিটাইজার বানানোর পর যা পড়েছিল সেই দানা। কেন? আপনি খাবেন?
রিপোর্টার: আরে না না! মানে জিজ্ঞেস করছিলাম কেমন লাগল?
ময়ূর: লাল্লির মায়ের এখন যেমন লাগছে তার চেয়ে ঢের ভাল।
রিপোর্টার: কার মা বললেন?
ময়ূর: লাল্লি। ঐ যে আপনাদের সাধুর রাজ্যে না খেয়ে মরেছে যে মেয়েটা।
রিপোর্টার: তার সাথে আপনার কী কানেকশন?
ময়ূর: আপনার মাথার সাথে বুদ্ধির যা কানেকশন, আপনার মালিকের কারবারের সাথে খবরের যা কানেকশন।
রিপোর্টার: আচ্ছা, দানা কি আপনি চুষে খান না কামড়ে খান?
ময়ূর: ঠুকরে খাই। আরো অনেক কিছুই ঠোকরাতে পারি। দেখাব ঠুকরে?
সম্পাদক তো রেগে আগুন। বল্লে, হুতোমবাবু, দেকলেন ব্যাভারটা? বল্লেম, ভারী অন্যায়। যেসব বেয়াড়া প্রশ্ন মানুষের শুধোবার কতা সেগুলো ময়ূরে শুধোচ্চে এ বা কি কথা? সায় দিলেম দেকে সম্পাদকের ভারী আহ্লাদ হল। বল্লে ময়ূরটি যে চীনে দালাল সে বিষয়ে সন্দ নেই। প্রাইম টাইমে সকল কতা ফাঁস করে দেবে। লাল্লি যে চীনে দালাল ছিল সে কতা প্রুভ কত্তেও বেগ পেতে হবে না। চীনে জিনিস বয়কট করা হয়েচে বলেই না তার বাপের কাজকম্ম লাটে উঠেচে। নোট বাতিলের বেলাতেও লাল্লিদের যে একই হাল হয়েছিল সে কি খামোকা? কালো টাকা যা ছিল বাতিল হয়েছিল। সকলি স্ট্রং লিডারের স্ট্রং পলিসির ফল।
স্ট্রং বলতে আরেকটি রঙ্গ মনে পল্ল, সেটি এই বেলা বলে নিই। সে অনেক কাল আগের কতা। একবার এক বাবুর খোঁচায় হাকিমদের বেজায় গোঁসা হয়েছিল। যাকে তাকে হাজতে পুরে আর জরিমানা করে অভ্যেস বিগড়ে থাকায় ভেবেছিলেন চোখ পাকিয়ে ধমকে দিলে বাবু বিবি সকলেই নেড়ি কুকুরের মতন ন্যাজটি দু পায়ের মদ্যখানে রেকে ঠকঠকাবেন। কিন্তু এই বাবুটি ওই ময়ূরটির চেয়েও ঠ্যাঁটা। গলায় কাছা দিয়ে ‘ঘাট হয়েচে, অপরাধ নেবেন না হুজুর’ বলবার স্থানে বল্লেন ‘কী যে অপরাধ তা তো ভেবে পাচ্ছি নে। সাজা দেবেন দিন গে, দুখখু নেই। হুজুর যে বুঝলেন না কী বলেচি দুখখু সেইটে।’ আস্পদ্দা দেকে অনেকে ছি ছি কল্লে, নিন্দুকের দল আবার খ্যাক খ্যাক করে হেসে গড়াগড়ি। নাহক তালি দিয়ে বল্লে ‘উচিৎ শিক্ষা হয়েচে। দে এবার কী সাজা দিবি?’ হাকিম জানতেন তেনারাই স্ট্রং, ওধারে যে অমন স্ট্রং লোক আচে সে কতা কেউ বলেনি। আক্কেল গুড়ুম কিন্তু পাবলিককে সে কতা বুঝতে দেয়া হয় না। তাই বাবুটিকে বল্লেন ‘দ্যাক, অনেক সয়েচি। কদিন সময় দিলেম, ভেবে চিন্তে ক্ষমা চেয়ে যাবি। নইলে কিন্তু…’। দ্যাকা গেল বাবুটি বেহায়া কম নয়, বল্লে ‘আবার কী ভাবব? বলেচি তো ক্ষমা চাইব না। কী করবেন করুন না দেকি।’ হাকিম ফের বল্লেন ‘নইলে কিন্তু…’। কয়েক যুগ কেটে গিয়েচে, নইলে যে কী সে কতা একুনো প্রকাশ হয়নি। হুতোমের কানে এসেচে এ নিয়ে বিটকেল ছোকরার দল র্যাপ (এদানি গানের ওই ছিরি) বেঁধেচে
হাকিম যে নাম তার কে জানে কী কাম তার
ছেলে মেয়ে ধরে ধরে তাদের হাজতে পুরে
হচ্ছিল নামদার।
কোথা থেকে প্রভু এল টিকি ধরে টান দিল।
তাকে চোখ রাঙিয়ে দেয়ালেতে টাঙিয়ে
হাকিম তো ভেবেছিল দেবে ছবি বানিয়ে।
ওরে প্রভু কি জিনিস করবে না কুর্নিশ
যত ভয় জমেছিল করে দিল যে ফিনিশ।
এখন কে যে হাকিম কে করে বিচার কার
সবকিছু ঘেঁটে গেছে মাপ করো সরকার।
মাপ চাওয়া দরকার
মাপ চাও সরকার।