পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

শারীরিক দূরত্ব না সামাজিক দূরত্ব

  • 18 April, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 1800 view(s)
  • লিখেছেন : নীহারুল ইসলাম
করোনা যখন আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ মিটিয়ে সামাজিক দূরত্ব নয়- শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে নির্দেশ দিচ্ছে, তখন এক শ্রেণীর মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া বা ফেসবুকে সত্যি সত্যি সামাজিক দূরত্ব বাড়িয়ে তুলতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে।

আজ শুক্রবার। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে অতি পবিত্র দিন। জুম্মাবার। ভক্তি ভরে এইদিনে সবাই মসজিদে গিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করেন। কিন্তু করোনা’র কারণে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে মানবজাতির স্বার্থে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ইমাম সম্প্রদায় আরব আমিরাতকে অনুসরণ করে পশ্চিমবাংলার মুসলিম সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন, লকডাউন চলাকালীন যেন কেউ জামাত করে মসজিদে নামাজ না পড়েন। শুধু জুম্মার নামাজ নয়, দিনের অন্য পাঁচ ওয়াক্তের নামাজের জন্যেও তাঁদের ওই একই নিদান।

ইমামদের এই সিদ্ধান্ত আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজ মেনে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, আজানের (নামাজের জন্য আহ্বান) বয়ান পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন, ‘হাইয়া আলা আল সালাহ’-র (নামাজ পড়তে আসুন) পরিবর্তে ‘আল সালাতু ফি বুয়ুতিকুম’ মসজিদে মসজিদে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে। যার অর্থ, ‘বাড়িতে থেকে অথবা আপনি যেখানে আছেন সেখান থেকেই নামাজ আদায় করুন’।

এটা মিডিয়ার কল্যানে প্রায় সকলেই জানেন। তবু আবারও উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, করোনা যখন আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ মিটিয়ে সামাজিক দূরত্ব নয়, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে নির্দেশ দিচ্ছে, তখন এক শ্রেণির মানুষ ফেসবুকে সত্যি সত্যি সামাজিক দূরত্ব বাড়িয়ে তুলতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে।

একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিস্কার করা যাবে। আমাদের এই গঞ্জ শহরে সিণ্ডিকেট মোড়ে রাস্তার ওপর পাইকারি সব্জির বাজার বসে দীর্ঘদিন যাবৎ। ভোর চারটে থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত। কিন্তু দেশ জুড়ে লকডাউন চালু হওয়ার পর সেই বাজারের ভিড় দেখে স্থানীয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় যে, সিন্ডিকেট মোড় ছেড়ে স্কুলমাঠে সেই বাজার বসবে। স্কুলমাঠ অনেক বড় জায়গা। তাহলে ভিড় এড়ানো যাবে। সেইমতো গতকাল ভোরবেলা স্কুলমাঠে সব্জির পাইকারি বাজার বসেছিল। কিন্তু ভিড় এড়ানো যায়নি। বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভিড় না এড়ানো এবং বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির কারণে পাইকারি বাজারের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সেখানেই আবার খুচরো বাজার বসানো। সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। ভুল থাকারই কথা। এতো আর আমাদের সেই ছেলেবেলার রথের মেলা নয়, যে বছর বছর বসবে আর আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে।

আমাদের ছেলেবেলায় লালগোলার রথের মেলা খুব বিখ্যাত ছিল। দেখতাম ওই সময়ে মাছের বাজার, সব্জির বাজার তার নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে উঠে চলে আসত রথের বাজারেই। মানুষের সুবিধার্থে। সেখানেও ভিড় হয়েছে। তবে সেই ভিড়ে শৃঙ্খলা থেকেছে।

যাইহোক, তো কালকের স্কুলমাঠের অস্থায়ী বাজারের বিশৃঙ্খল ছবি ফেসবুকের কল্যাণে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তা থেকে একটি ছবি একজন কলকাতাবাসী নিজের দেওয়ালে সাঁটিয়েছেন এই শিরোনামে দিয়ে, ‘হায় রে আমার লকডাউন! মুর্শিদাবাদের Lalgola M. N. Academy’। তারপর সেই পোস্টকে ঘিরে যথারীতি নানান মন্তব্য। কয়েকটি উল্লেখ করছি।

১। বেশির ভাগই তো মুসলিম!

২। সত্যি

৩। Erai to marbe ..

৪। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে এই গুনধররাই যথেষ্ট

একজন রিষড়ায় বাস করেন। আরেকজন কলকাতায়। তৃতীয়জন শহরতলি কোথাও হবে, স্থান উল্লেখ নেই। আর চতুর্থজন অশোকনগরে।

আচ্ছা, কলকাতায় জগুবাবুর মার্কেট বলে একটা বাজার আছে না! তারপর চাঁদনিচক! বড়বাজার! পোস্তা! শহরতলির কথা ছেড়ে দিলাম। সারা কলকাতা জুড়ে আরও কতশত এরকম বাজার! অনেকেই বলবেন, এখন ওসব বন্ধ।

হ্যাঁ, ঠিকই বলবেন। লকডাউন চলছে, সব বন্ধ। কিন্তু কলকাতা জুড়ে অত্যাবশ্যকীয় জিনিষপত্রের বাজার! যেমন- গড়িয়াহাট, মানিকতলা, পোস্তা, জানবাজার! সেই বাজারগুলির খবর কী? যে বাজারগুলিতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে গিয়ে শিখিয়ে দিয়ে আসতে হয় কিভাবে দাঁড়াবেন। কিভাবে জিনিসপত্র ক্রয় করবেন! সবই তো টিভিতে দেখছি, খবরের কাগজে পড়ছি। এসব কি তাহলে মিথ্যা?

0 Comments

Post Comment