বড় হচ্ছিস মনা। দেখেশুনে পথ চলবি।
কেন মা। আমি কি চোখ বন্ধ করে হাঁটি।
না। সে কথা নয় রে। সুবলের বউ সেদিন বললে - তুই নাকি আমবাগানের ভিতর দিয়ে মিত্তিরদের ভাঙা বাড়ি টপকে আসা যাওয়া করিস। ও পথে আর যাবি নে ।
কেন মা। কি হবে? তুমি ভীষণ ভয় পাও। অতটা শুধু শুধু ঘুরতে যাবো কেন বলোতো।
শুনিস নে? কেলাবের ছেলেরা সেদিন কি বলছিল। রাতের আঁধারে নাকি আলো জ্বলতে দেখেছে ওরা ও বাড়িতে ।
ধুস। ভূত বলে কিছু নাই। ওসব ওদের বানানো। নয়তো কতবার চেয়েছি বাবা না হয় ভূত হয়েই আসুক। এসেছে বলো?
জোছনার দু চোখ জলে চকচক করে ওঠে। হঠাৎ বছর দুই হলো বাপটা দু দিনের জ্বরে চলে গেল। সেই থেকে মেয়েটার এমনতর কথা। ঠাকুর দেবতার পুজোতে পর্যন্ত যায় না।
কথা গুলো মনে হতেই জোছনা জোরে পা চালায়। হরিকাকাকে একবার বলতে হবে কথাটা। আগে বড়দির বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। বড়দিও ওকে খুব স্নেহ করেন। আলাদা করে চেনেন। নাচ গান,পড়াশুনা - সবেতেই মেয়েটা বড় চটপটে হয়েছে। সামনেই বারো কেলাসের পরীক্ষা। বাপটা মারা যাবার পর থেকে তো বাড়ি থেকে খুব একটা বেরোতেও চায় না মালতী।
দোরটা ভিজিয়ে দিয়ে ইঁট বেছানো অন্ধকার রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে জোছনা। পথেই দেখা হয় হরি কাকার সাথে।
কি রে ? কিছু খবর পেলি।
জোছনা নিঃশব্দে মাথা নাড়ে। বুকের ভিতর নানা চিন্তা উথাল পাতাল করে। কোথায় যেতে পারে ?
বড়দির বাড়ি অন্ধকার। তার মানে উনি আজ হয়তো কলকাতার বাড়ি গেছে। জোছনা বলে,
চলো কাকা। আর দেরী করা যাবে না। থানায় চলো আগে। বেশী দেরী হলে… গলার ভিতরটা তার কিরকম চেপে আসে।
থানার বাইরে বটগাছতলায় সুবলের চায়ের দোকান। নদু,পুটু আর দু চারটে ছেলে বসে চা খাচ্ছে।
কি গো কাকা। এখানে? কি খবর।
দেখ না মালতীটা এখোনো ইস্কুল থেকে ফেরে নাই।
সে কি গো। চলো তো দেখি।
সবাই মিলে থানায় ঢোকে। বড়বাবু নেই। মেজকর্তা একঠোঙা মুড়ি সাথে সবে বেগুনীতে এক কামড় বসিয়েছেন , এমন সময় ঢুকলো ওরা।
ভ্রু দুটো উপরে তুলে তাকালেন তিনি। কি খবর রে। সব একেবারে দল বেঁধে।
স্যার আমাদের মেয়েটা, আজ ইস্কুল থেকে ফেরে নাই এখনো।
কোন ক্লাস?
এই বারো কেলাসে উঠেছে এবার।
ওহো। তালে তো প্রেম টেমের কেস। দেখো কার সাথে পালিয়েছে। কালকেই এসে যাবে। চিন্তা কোরো না।
এবার জোছনা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। আমার মেয়ে সেরকম নয় ছ্যার।
আরে সব মায়েরাই নিজের ছেলেপুলেকে ভালো ভাবে। আর প্রেম করা কি খারাপ। গরিবের মেয়ে। একটা হিল্লে তো হয়ে গেল।
না স্যার আমাদের মালতি খুব সাধাসিধে। বিশ্বাস করুন। প্রেম টেম করে না। একটু তাড়াতাড়ি খোঁজ লাগান স্যার। আমাদের সত্যি ভয় করছে।
সন্দেহ হয় কাউকে?
জোছনা মাথা নাড়ে। আমি তো সারাদিন বাইরে থাকি ছ্যার। তবে কিছু হলেই ও আমারে সব বলতো। তেমন তো শুনি নি কিছু।
এইবয়সের ছেলে মেয়েদের একটু চোখে চোখে রাখতে হয় বুঝলেন । আপনারাও দেখুন। আমরাও দেখছি।
ছ্যার একটা মিসিং ডায়রী নিন না।
কাল বড়বাবু আসলে কোয়। দেখো তার মধ্যে হয়তো মেয়ে ফিরে আসবে।
চার রাস্তার মোর থেকে বামদিকে আর ডানদিকে চারটে রাস্তা চলে গেছে। একবার মিত্তিরদের বাড়ির দিকটা ঘুরে যাবে কাকা? জোছনা আস্তে আস্তে বলে।
চলো মাসি। সেই ভালো নদু টর্চটা জ্বেলে আগে আগে যেতে থাকে।
পুরোনো বাড়ি। ইতিউতি চাপড়া ভেঙে পড়েছে। আগাছা জন্মেছে। তবু তারই মধ্যে একটা দিক একটু যেন পরিষ্কার। কয়েকটা খবরের কাগজ, ঠোঙা, সিগারেটের টুকরো পরে রয়েছে এদিক ওদিক।
এখানে কারা আসে আমরা জেনেছি মাসি। ওদের টিকি অনেক উঁচুতে বাধা। ছুঁতেও পারবে না। তোমার মেয়ের কিন্তু এ দিক দিয়ে চলাফেরা করা একদম ঠিক নয়।
হঠাৎ কিছুটা দূরে ঝোপের মধ্যে একটা কুকুর ডেকে উঠলো।
চলো তো ওদিকটায়। নদু টর্চের আলো হাতে দৌড়ে যায়। পিছন পিছন আসে সবাই। হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে হরিকাকা।
ওগুলো কি? চোখ বন্ধ করে বসে পরেন তিনি।
জোছনা ছুটে যায়। এক পাটি অতি পরিচিত ছেঁড়া জুতো, স্কুলের ব্যাগ। জোছনা জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পরে মাটিতে।
আধো জ্ঞান ফিরতে ধড়মড়িয়ে উঠে বসল জোছনা। সারা পাড়ার লোক ভিড় করে আছে তার দালানে। আরো কতো চেনা অচেনা মুখ। চারিদিকে শুধু ফিসফিসানি। জোছনা মাথাটা টলে যায়। ও কার শরীর শোওয়ানো রয়েছে ? সারা শরীরটা ফুলে উঠেছে এতো যে চেনা দায়। ভোর তিনটে সময় নাকি পূব পাড়ার ভেড়িতে ভেসে উঠেছে বডিটা। সারা শরীরে অত্যাচারের চিহ্ন স্পষ্ট। জোছনার সারা শরীর কেঁপে ওঠে। একটা গাঢ় অন্ধকার নেমে আসে চোখের পাতায়। রক্তের মতোন জমাট সে অন্ধকার চিরে যেন ভেসে আসে মালতীর অসহায় গলা--" মা বাঁচাও। আর যাবোনা ও পথে। সত্যি বলছি মাগো"।
গত দুটোদিন কিভাবে কেটেছে জোছনার মনে নেই। কখনো জ্ঞান এসেছে আবার গেছে। সব ঝাপসা। বেঁচে থাকার আর কোন মানে নেই তার। মাথার কাছে সুবলের বউ বসে রয়েছে ঠায়।
ও দিদি। এবার একটু ওঠো। মুখে কিছু দাও। তিনদিন হয়ে এলো। দূর থেকে ভেসে আসছে অনেক মানুষের আওয়াজ। পায়ের কাছে কে যেন টিভিটা চালিয়েছে। মালতী মালতী নামটা শুনে উঠে বসে জোছনা।
ও নাম নিচ্ছে কেন ওরা। ওদের হাতে ওর মেয়ের ছবি। কেন? ও নামের তো আর কোন অস্তিত্ব নেই। জোছনা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। কতো মানুষ।ওরা রাস্তা জুড়ে বসে আছে। কারো হাতে মোমবাতি,কারো হাতে ছবি। একটা বড় মিছিল। রাস্তা জুড়ে চিৎকার—এই জঘন্য অপরাধের শাস্তি চাই,শাস্তি চাই। ওরা হাতে হাত রেখে মালতীর নাম গাইছে, বিচার চাইছে। হঠাৎ একটা তীব্র সাইরেনের শব্দ। বিশাল জানজটে আটকা একটা অ্যাম্বুলেন্স। ভিতরে তার মালতীর বয়সী একটা মেয়ে কাতরাচ্ছে। তার মা হাত জোড় করছে,জায়গা চাইছে।
হরিকাকা এগিয়ে আসে। ওঠ জোছনা ওঠ। দেখ, কতো কতো মানুষ তোর মালতীর জন্য লড়ছে। তুই তাদের পাশের দাঁড়া। দোষীদের শাস্তি দে। নইলে মালতীর আত্মা যে শান্তি পাবে না মা।
জোছনা উঠে দাঁড়াল ধরে ধরে। তবে কি সত্যি এ পৃথিবী তে এখোনো ভালো মানুষ আছে? সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে মাথার ভিতর।
জোছনা বেরিয়ে আসে উঠোনে। কারা যেন এসেছে তার সাথে কথা বলতে। কে যেন সুন্দর করে ঝাঁট দিয়েছে উঠানখানা। চাপাগাছটার নীচে একটা টুলের উপর মালতীর ছবি। একটা মালা। ধূপ জ্বলছে।
কে যেন বললো বসো মা। মনটাকে শক্ত করো।
নদু পুটু, কেলাবের ছেলেরা দৌড়ে আসে। হরিকাকার কানে কানে কি যেন বলে। সবাই উঠে দাঁড়ায়।
শোন জোছনা, তোর সাথে দেখা করতে আসছে সব বড় বড় মানুষ। বুঝে শুনে সব কথা খুলে বলবি। যে গেছে সে তো গেছেই। কিন্তু আমাদের বোনটারে যারা মারলো তার তো শাস্তি চাই।
দুটো সাদা গাড়ি এসে দাঁড়াল ইঁটের রাস্তা ধরে। ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত এক পক্ককেশী সৌম্য পুরুষ, চোখে চশমা, কাধে ঝোলা ব্যাগ। সঙ্গে দুজন মধ্যবয়েস্ক রমনী। সাদা তাঁতের শাড়ি। কপালে গোল টিপ। ওরা দুজন মালতীর দুই হাত, ধরল পরম মমতায়।
আমরা তো আছি বোন। এত সহজে সব কিছু হতে দেব না । তোমার মেয়ের অত্যাচারকারীদের শাস্তি হবেই ।
কাউকে কি সন্দেহ হয় তোমার?
জোছনা একবার কি ভাবলো। তারপর চুপ করে গেল। থানার বড়বাবু যদি আরো একটু আগে খোঁজখবর শুরু করতেন। কেউ তো বিশ্বাস করতেই চাইলো না।
কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না জোছনার । ওরা একটা ব্যাঙ্কের কাগজ ওর হাতে ধরিয়ে দেয়। আমাদের পক্ষ থেকে এটুকু রাখো বোন। জোছনা ডুকরে কেঁদে ওঠে। এসব তার দরকার নেই। তার মালতীকে কি কেউ এনে দিতে পারবে?
কেলাবের ছেলেরা বলে--" রেখে দাও মাসি। টাকা ছাড়া যুদ্ধ চলে না । জীবন চলে না।“
গাড়িটা চলে যায় ধূলো উড়িয়ে।
গাড়ির কাঁচটা তুলে দিয়ে বয়স্কা রেবাদি বলেন তরুনদা, এই ইস্যুটা নিয়ে রাজ্যজুড়ে একটা আন্দোলনে নামতে হবে। এটাই আমাদের এবার ঘুরে দাঁড়াবার শেষ অস্ত্র কিন্তু।
ঠিকই বলেছেন রেবা -আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে এগিয়ে যাবার এটাই মোক্ষম সুযোগ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই হরিকাকা দৌড়ে আসে।
আবার যেন কারা আসছেন। চারিদিকে পুলিশ ,ক্যামেরা, আলো । জোছনা ভাবে এতো পুলিশ --, ইস সেদিন যদি এনাদের কে পেতাম তালে হয়তো মেয়েটাকে বাঁচানো যেত।
জনাকয়েক মহিলা পুরুষ এগিয়ে এলেন । উঠোন জুড়ে হুল্লোড়। জোছনাকে জড়িয়ে ধরলেন একজন।
চিন্তা নেই মা । পুলিশ, প্রশাসন এখোনো আছে। দোষীরা খুব শীঘ্র শাস্তি পাবেই। তুমি দেখো। ভরসা রাখো। মা বোনদের সম্মান নিয়ে কোন আপোষ হবে না।
সারাদিন ধরে চললো আরো কতো হলুদ নীল কালো, সাদা রঙের সমুদ্দুর। সমস্ত উঠোন জুড়ে হইচই। কারো মাথায় চন্দনের ফোঁটা তো কারো লাল সিঁদূর। কারো পাঞ্জাবি তো কারো জিন্স। জোছনা যেন জেগে জেগে ঘুমিয়ে পড়লো। স্বপ্নে দেখল সে যেনো ভাসছে মহাশূন্যে । হাজার হাজার রঙের মাঝে সে কেবল একলা সাদা,শূন্য।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে কখন। বাড়িটা ফাঁকা হল ধীরে ধীরে। যেন চেনা ছন্দে ফিরছে সারাদিনের হাপ ধরা ছোট্ট ইঁটের ঘরটা। উঠোনে এসে বসে জোছনা। মালায় মালায় ঢেকে গেছে মেয়েটার মুখ। ভূঁইচাপার গন্ধ ঢেকেছে দামী বিহারী ধূপে। ঝলমল করছে মোমবাতি অসংখ্য আলো। জোছনার তবু মনে হয় সবকিছুর পিছনে নিকশ কালো অন্ধকার বাঁশঝাড় আর ঐ এঁদো পুকুর- তার রোজকার চেনা পৃথিবীতে, দাঁড়িয়ে মালতী যেন তাকে ডাকছে মা বলে।
কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যেই কেটে গেল আরো একটা মাস। কাগজের প্রথম পাতা থেকে দ্বিতীয় পাতা হয়ে শেষের পাতায় ঠাঁই পেল মালতীর খবর। টিভির নিউজের ব্রেকিং হেড লাইন থেকে মুছে গেল মালতীর নাম। এরই মধ্যে একদিন হরিকাকাকে নিয়ে জোছনা থানায় গেছিলো। বড়বাবু খাতির করে চেয়ার দিলেন বসতে। চা আনতে লোক পাঠালেন। জোছনা চুপ করে ছিল অনেকক্ষণ।
শেষে বললো-আমার মেয়েটার এমন অবস্থা কে করেছিল স্যার?
এখনো তো কিছু নিশ্চিত করে জানতে পারিনি। তদন্ত তো চলছে। দোষী ঠিক ধরা পড়বেই। একটু ধৈর্য্য ধরো। মনে হয় কোন ছিঁচকে চোর বদমায়েশের কান্ড। তোমার মেয়ের কানে,নাকে তো সোনা ছিল ।
তাই না?
ওর বাবা পরিয়ে দিয়ে গেছিলো শখ করে। বছর দুয়েক আগে। বাবার স্মৃতি। তাই কিছুতেই খেলানো যেত না।
ওসব সোনা টোনা কেন দিতে যাও। আর তোমাদের ও বলি, ছেলে মেয়ে বড় হলে একটু চোখে চোখে রাখবে। কোন পথে যায়। দেখবে এ এমনই ভয়ঙ্কর বয়স।
তার মানে কি স্যার।
না না কিছু না। আমরা দেখছি তো। তোমার পাশে আমরা আছি।
জোছনা বেরিয়ে আসে নিঃশব্দে। বাড়ি ফিরে আলো নিভিয়েই বিছানায় গাটা এলিয়ে দেয়। মাথার ভিতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এতোদিন যে আশা আর শক্তি নিয়ে বেঁচেছিল সব শক্তি যেন উড়ে যাচ্ছে শরীর থেকে। তবে কি কিছু করা যাবে না?
হঠাত ক্যাঁচ করে শব্দ হয় দরজায়।
কে? জোছনা লাফিয়ে ওঠে।
আমি হরি কাকা। শোন, বোন। একটা খবর আছে। এর পিছনে অনেক বড় মাথা আছে রে। তোর আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমরা গরিব মানুষ। মেয়েটার কপালটাই খারাপ। কি আর করা। আমি পাকা খবর পেয়েছি। বেশী বাড়াবাড়ি করলে ওরা তোকেও সরিয়ে দেবে। এসব ছেড়ে দে। ওর কথা ভুলে যা।
তার মানে। তুমি কি বলতে চাইছো কাকা? আমি যাদের কথা ভেবেছিলাম তারাই এ সব্বনাশ করেছে?
হা রে। ঐ ভেড়ির পিছনে বাগানবাড়িতে গা ঢাকা দে আছে সব। আজ হাতে নিতে ধরেছি পটলকে। আমাকে বললো পালাও কাকা। এখানে আর ঘোরাঘুরি করো না। তবে তোমাকেও আর পাওয়া যাবে না। ও বললো ও নাকি নিজের চোখে দেখেছে সেদিন মালতীকে ওরাই…
চুপ কর হরি কাকা। একদম চুপ। কত টাকা খেয়েছিস তুই?
বিশ্বাস কর মা। আমাদের কি সাধ্য ওদের ধরবো। থানা পুলিশ করে কি আর কিছু হবে? জানিস তো ওদের হাত কতো লম্বা। পটল রোজ ওদের মাল সাপ্লাই করে ঐ বাড়িতে। কেউ জানলে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে বলেছে ওকে।
হঠাত লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় জোছনা। কুলাঙ্গি থেকে একটানে নামায় ধান কাটার হাসুলি খানা।
বাইরে তখন ঘন অমাবস্যার আঁধার । জোছনা ছুটতে থাকে মাঠ পেরিয়ে ভেড়ির দিকে। হাঁসুলিটা কোমরে গুঁজে ছুটতে থাকে সে। দূরে তারায় ঢাকা আকাশের দিকে চেয়ে চিৎকার করে ওঠে-" আসছি মালতী। আমি আসছি। আর একটু সবুর কর মা। ওদের শাস্তিটুকু শুধু নিজের হাতে দিয়ে যেতে দে মা।“
পিছন থেকে হরিকাকা ছুটতে ছুটতে হাঁপাতে থাকে-
একটু দাঁড়া জোছনা। লক্ষী বোন আমার। আমিও আসছি তোর সাথে।
নিশুতি রাতে কোথাও যেন কুকুর কেঁদে ওঠে দূরে, হয়তো কোন অজানা আশঙ্কায়।