পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

পুঁজিবাদের দুর্গে সমাজবাদের উত্থান

  • 17 November, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 356 view(s)
  • লিখেছেন : সোমা চ্যাটার্জী
রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৪ বছর বয়সী মামদানিকে পাগল "কমিউনিস্ট" হিসাবে নিন্দা করলেও পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী এবং জনবহুল শহরগুলির মধ্যে একটির মেয়র পদে তাঁর এই জয়, ডেমোক্র্যাট এবং MAGA রিপাবলিকান দুপক্ষেরই রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এরই মধ্যে মামদানিকে ঠেকাতে একবারে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন রিপাবলিকানরা।

মাত্র এক বছরের মধ্যেই যাবতীয় রাজনৈতিক সমীকরণকে উল্টে দিয়ে  বিশ্ব পুঁজিবাদের কেন্দ্র নিউ ইয়র্কের নির্বাচনে 'প্রথমবারের' ইতিহাস তৈরি করেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও নির্দল প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে  গত ৪ঠা  নভেমবর  তিনি এই শহরের প্রথম মুসলমান মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। গত ১০০ বছরের মধ্যে তিনিই  নিউ ইয়র্কের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র এবং  প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মেয়রও।   শহরজুড়ে বিনামূল্যে বাস পরিষেবা, বাড়িভাড়া স্থির রাখা, ছয় সপ্তাহ থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সারা শহরে বিনামূল্যে চাইল্ড কেয়ার প্রতিষ্ঠা, নূন্যতম  মজুরী ঘণ্টায় ত্রিশ ডলার করা ,ধনীদের উপর কর বাড়ানো প্রভৃতি  - এই ধরনের একগুচ্ছ কর্মসূচীকে সামনে রেখে  জোহরান  তার নির্বাচনী প্রচার কৌশলের মাধ্যমে ৫৮ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং এলন মাস্ক সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন এবং কার্টিস  পেয়েছেন মাত্র ৭ শতাংশ।


রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৪ বছর বয়সী মামদানিকে  পাগল "কমিউনিস্ট"  হিসাবে নিন্দা করলেও পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী এবং জনবহুল শহরগুলির মধ্যে একটির মেয়র পদে তাঁর এই জয়,  ডেমোক্র্যাট এবং MAGA রিপাবলিকান দুপক্ষেরই  রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে । মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে মামদানিকে ঠেকাতে একবারে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল। মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন রিপাবলিকানরা। কোনো প্রমাণ ছাড়াই তারা অভিযোগ করছেন, মামদানি সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত এবং তিনি নাগরিকত্ব আবেদনের সময় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন । শুধু তাই নয়, গত ৭ নভেম্বর রুশ বিপ্লব দিবসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন  সোভিয়েতের পতনের সাড়ে তিন দশক পরে 'ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিজম' বা 'সোশ্যাল জাস্টিসের মতো শব্দের আড়ালে 'কমিউনিজম' প্রচার করা হচ্ছে।  সাম্যবাদী আদর্শ থেকেই বিপর্যয়ের জন্ম, তাই প্রতি বছর ২-৮ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'কমিউনিজম বিরোধী সপ্তাহ' পালিত হবে। তিনি বলেন কমিউনিজম বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক মতবাদগুলির অন্যতম এবং  কমিউনিস্টরা ১০০ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছেন। স্পষ্টতই বোঝা যায় কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো প্রকাশিত হবার ১৭৭ বছর পরেও কমিউনিজমের জুজু ট্রাম্পের মত ধনকুবেরদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ভাষণে মামদানি বলেছেন যে মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে ,কিন্তু গত বছর এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরুর সময়তেও  খুব কম মানুষই তার নাম জানত। তার তেমন অর্থ বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমর্থনও ছিল না। কিন্তু নিউইয়র্কশহরের বসবাসযোগ্যতা নিয়ে তার বার্তা এবং  কর্পোরেট স্বার্থের বিরুদ্ধে  তৃণমূলস্তরে  প্রানবন্ত প্রচারের জন্য তার জনপ্রিয়তার প্রতিফলন ঘটে জুনের ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে যেখানে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে  নিউইয়র্কের অভিজাত শ্রেণীকে হতবাক করে দেন । নির্বাচনের আগেও মামদানিকে আটকানোর সবরকম চেষ্টা করেছিল রিপাবলিকান পার্টি।  ফোর্বসের মতে,  ব্লুমবার্গ , নেটফ্লিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হেস্টিংস , এয়ারবিএনবি- এবং এস্টি লডারের মত  ২৬ জন বিলিয়নেয়ার সম্মিলিতভাবে জোহরানের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রচার  চালানোর জন্য ২২ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করেছে কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।  ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জোহরানকে সমর্থন দিয়েছেন হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং লাখ লাখ ডোনার। বিখ্যাত  চিত্র পরিচালক মীরা  নায়ার ও ইতিহাসবিদ মামুদ মামদানির  ছেলে জোহরান মামদানির মতো  আমেরিকায় দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসী হিসেবে বেড়ে  ওঠা দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের সন্তানেরা যে আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগেন,  নির্বাচনী সমাবেশে জোহরান সেদিকে ভোটারদের স্মরণ করিয়ে  বলেছেন এই নির্বাচনের লড়াই তার  মতই সব অভিবাসীদের লড়াই।  এই নির্বাচনী যুদ্ধ তাই ৩৪ বছরের এক যুবকের লড়াইকে ছাপিয়ে একটি জীবন্ত গণআন্দোলনের রূপ পেয়েছে।

 

মামদানি একজন ভারতীয়-উগান্ডান-আমেরিকান যিনি  বলেছেন যে তিনি একজন গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক।  তিনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকা (ডিএসএ) এর সদস্য, যার নেতৃত্বে আছেন ভার্মন্ট অঙ্গরাজ্যের সিনেটর  বার্নি স্যান্ডার্সের মতো ব্যক্তিত্ব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থীদের একটি মঞ্চ হিসেবে বহু দশক ধরেই ডিএসএ সক্রিয়। স্যান্ডার্সের ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য লড়াই এর সময় থেকেই  ডিএসএ-র জনপ্রিয়তা  উত্তরোত্তর তরুণদের মধ্যে বৃদ্ধি  পেতে থাকে, হাজার হাজার ‘হার্ড লেফট’ তরুণ-তরুণী ডিএসএ-তে যোগ দেন। মামদানি এই নতুন ডিএসএ-র গুরুত্বপূর্ণ মুখ। এবং তারই প্রতিফলন সম্ভবত এই জয়।  মামদানির জয়ের  সাথে প্রবীণ বামপন্থী  জেরেমি করবিনের জয়ের তুলনা করা যায়  কারন টনি ব্লেয়ার  যে বামধারার রাজনীতিকে লেবার পার্টি থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, জেরেমি করবিনের নির্বাচনে তার পুনরুত্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। মামদানির জয়ের পর ডিএসএ-এর সাথে যুক্ত জ্যাকবিন ম্যাগাজিন ঘোষণা করেছে জোহরান মামদানির জয়ের আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে  এবং এটি  বামপন্থীদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা। জার্মানির দ্য লেফট পার্টি এবং ব্রিটেনের গ্রিনসের মতো দলগুলি যে মামদানির জয় থেকে গতি পাচ্ছে  তার ইঙ্গিতও স্পষ্ট।  ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের গ্রিন পার্টির প্রথম ইহুদি সমকামী নেতা জ্যাক পোলানস্কি বৈষম্য কমাতে সম্পদ কর আরোপের জন্য মামদানির আহ্বান সমর্থন করেছেন। জার্মানির বামপন্থীরাও ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং বিনামূল্যে বা ভর্তুকিযুক্ত পরিবহন ব্যবস্থার উপর জোর দিচ্ছে  এবং বলছে অভিবাসনের ডানপন্থী যুদ্ধে তারাও  তাদের নীতিতে অনড় থাকবে। অতি-বামপন্থী ফ্রান্স আনবোড পার্টি (এলএফআই) এর ম্যানন অব্রি এক্স-এ লিখেছেন মামদানির এই জয় অবশেষে সর্বত্র বামপন্থীদের জন্য একটি শিক্ষা। তা ছাড়াও নিউ ইয়র্ক সিটির ভাড়া স্থগিতকরণ এবং গণপরিবহনের মতো বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে মামদানির এই জনসমর্থন শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং নেপালের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে কিছুটা সমান্তরাল বলা যায়,  কারণ শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে উত্থান মূলত তীব্র অর্থনৈতিক সংকট এবং জীবনযাত্রার ব্যয় প্রভৃতি ইস্যুকে কেন্দ্র করেই সংঘটিত হয়েছিল অপরদিকে  নেপালে সম্প্রতি নেপো কিডসদের লক্ষ্য করে বংশগত রাজনীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক নাগরিক আন্দোলন এবং বিক্ষোভ  তৈরি হয় যার ফলে নেপালের প্রধান মন্ত্রী কে পি শর্মা অলি এই বছর সেপ্টেম্বর মাসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। মৌলিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাহিদার উপর এই জোরের মধ্যে  পশ্চিমা শহর বা উন্নয়নশীল দক্ষিণ এশীয় দেশে নাগরিক উন্মেষের মধ্যে একটি বিশ্বব্যাপী মিল দেখতে পাওয়া যাছে।


এই নির্বাচন আমেরিকান রাজনীতির বেশ কয়েকটি মিথ ভেঙে দিয়েছে। প্রথমত, এই মিথ রয়েছে যে সমাজতন্ত্র "বিষাক্ত"।  মামদানির প্রস্তাবগুলি - ক্রমবর্ধমান আবাসন খরচ, শিশু যত্ন এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যা - বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহরের শ্রমিক, তরুণ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর স্তরের মানুষের মধ্যে স্পষ্টতই প্রভাব ফেলেছে। দ্বিতীয়ত, সবাই ভেবেছিলেন যে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার সমালোচনা  করায় মামদানি ইহুদি-বিদ্বেষের শিকার হবেন। কিন্তু, নিউ ইয়র্কের ১.২ মিলিয়ন ইহুদি বাসিন্দার মধ্যে থেকে মামদানী কয়েক হাজার ভোট পেয়ে প্রমান করেছেন তা ভুল। যুদ্ধের  বিরোধীতা মামদানির  নির্বাচনী জয়ের একটি প্রধান কারণ । মামদানি বলেছেন "ধর্ম বা অন্য কিছুর ভিত্তিতে নাগরিকত্বের শ্রেণিবিন্যাস করা  তিনি সমর্থন  করেন না।, এই দেশে তার অধিকার যেমন আছে, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা উচিত।  তৃতীয়ত, মামদানীর জয় মিডিয়ার ভুল প্রমান করে যে ২০২৪ সালে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন হওয়ায় আমেরিকায় ডানপন্থী হাওয়া বইছে।  ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের বিরোধিতা বৃদ্ধির ফলে মামদানী উপকৃত হয়েছেন। চতুর্থত, জনসংখ্যার বিশাল জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করে এমন মৌলিক প্রশ্নগুলি জাতি এবং লিঙ্গ  নির্বিশেষে শহর এবং আমেরিকা জুড়ে যুব ও  শহর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া শ্রমিকদের উপর প্রভাব ফেলছে যারা ট্রাম্পের  নব্য উদারনীতিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব খুঁজছেন।  বহুধর্মী ও বহুজাতির এই মহানগরের ভোটাররা মামদানির জয়কে ঐতিহাসিক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।  তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, এটি শুধু ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের  জয়ের চেয়েও জীবনের বাস্তব সমস্যায় মোকাবিলার জন্য স্পষ্ট অবস্থানের প্রতিফলন।

 

বিশ্ব পুঁজিবাদের আর্থিক কেন্দ্রে যেখানে ব্যাংক, রিয়েল এস্টেট ফার্ম এবং মিডিয়াগুলি অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী, সেখানে মামদানি দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করে রাজনীতিকে  অভ্যন্তরীণভাবে রূপান্তরিত করার বার্তা দিচ্ছেন, যা মার্কিন মূলধারার দল রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট উভয়েরই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।  ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প বেশ কয়েকটি ডেমোক্র্যাটিক-চালিত শহরের বিরুদ্ধে ফেডারেল ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করেছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে অভিবাসন দমন করেছেন।  ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি হল "আমেরিকা ফার্স্ট"  যা অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ, অভিবাসী-বিরোধী মনোভাবের পক্ষে।  তার এই পদক্ষেপগুলি  আমেরিকার ক্ষেত্রে ন্যায্য বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এর বিস্তৃত প্রভাব বিশ্বের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে,  মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি করে  বিশেষ করে উন্নয়নশীল অর্থনীতির দরিদ্রদের দুর্দশা আরও খারাপ করছে। ট্রাম্পের নীতির ফলে জলবায়ু পরিবর্তন, কর নীতি এবং সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলের উপরও প্রভাব পড়েছে।  তা ছাড়াও  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার বেশিরভাগ তহবিল রাজ্য থেকে আসে।  এই অবস্থায়  প্রায় ৪,০০০ কর্মচারী নিয়ে গঠিত, শিক্ষা বিভাগ ও  স্কুলগুলিতে ফেডারেল ফান্ড বন্ধ করার তার পরিকল্পনা নিম্ন আয়ের শিক্ষার্থী এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এক চূড়ান্ত ভীতির ও অব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। গাজা  প্রসঙ্গেও ট্রাম্প ইসরায়েলকে সমর্থন করে গাজা উপত্যকা দখল এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে বহিষ্কারের  ঘোষণা করেন। এসব কারনে নিজেদের দলের মধ্যেই তার নীতির বিরোধিতা শুরু হয়েছে , এবং ক্রমাগত দুর্নীতি , যৌন ও বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত  দলীয় লোকেরা (বহু যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অ্যান্ড্রু কুওমো) বিরুদ্ধে   ইতিমধ্যেই জনগনের সমর্থন হারিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দমন-পীড়ন মানুষের এবং অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। সর্বোপরি  মার্চ মাস থেকে ডলারের দাম তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে , সরকারি ঋণ বৃদ্ধি আরও বেড়েছে। বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি ও । লাখ লাখ মানুষ চাকরিহারা হয়ে পড়েছে যা ট্রাম্প প্রশাসনের অসারতার দিকটাই তুলে ধরে এবং এই কারনেই ওয়াল স্ট্রিট এবং কর্পোরেট মিডিয়ার সমর্থিত হয়েও  নিউ ইয়র্কের প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো ভোটারদের দ্বারা চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।   অন্যদিকে মিলেনিয়াল প্রজন্মের এই প্রগতিশীল মুখ মামদানি অজস্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিউইয়র্কের শ্রমজীবী জনতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ গড়ে তুলেছেন। ট্যাক্সি চালকদের আন্দোলন থেকে নিউইয়র্কের পরিবেশ আন্দোলন, এলজিবিটিকিউ অধিকার আন্দোলনের মত নাগরিক সমর্থিত ইস্যুতে পাশে পেয়েছেন   সঙ্খ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিস ও  এটর্নি জেনারেল ্লেটিসিয়া জেমস  কে।  নিউ ইয়র্কের  কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও  তার প্রচারে অংশ নিয়েছেন, মামদানি পেয়েছেন  গভর্নর ক্যাথি হুক এর সমর্থনও।


মামদানির মেয়র নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আমেরিকার ইতিহাসে এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছে।  ২০২৫ সালের স্থানীয় নির্বাচনে  হান্না শভেটস (Ithaca, নিউ ইয়র্ক) ও ড্যানিয়েল কারসন (Bangor, মেইন দুইজন কমিউনিস্ট পার্টি ইউএসএ (CPUSA)-এর প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।  ১৯৪০-এ পিটার ক্যাচিওনি ও বেন ডেভিস এর নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত  হবার প্রায় ৮০ বছর পর এই প্রথম বিজয় এবং স্পষ্টতই এটি মার্কিন কমিউনিস্ট আন্দোলনের নতুন জাগরণ। মামদানি বামপন্থী হলেও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নন। তাই তার জয়ের থেকেও এটি অনেক গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করে।  পশ্চিমের মরা গাঙ্গে  খুব শিগগিরই বামপন্থার জোয়ার আসবে এমন আশা কি রাখা যায়?

0 Comments

Post Comment