আমরা যখন কলেজে পড়ছি, প্রেসিডেন্সি কলেজে কাজ না থাকলে খই ভাজার চূড়ান্ত গান ছিল টুনির মা... কথা খুব সিম্পল, কোন জটিলতা নেই...
"ও টুনির মা, তোমার টুনি কথা শোনে না,
যার তার লগে ডেটিং মারে, আমায় চেনেনা!!!
ও টুনির মা, তুমি তোমার টুনিরে বুঝাও না,
দিনে রাত্রে মিসড কল মারে, ফোন করে না"...
বলাই বাহুল্য, সেই যুগ ছিল নোকিয়া ১১০০র... ইয়ে , ওই ফোনটা আমার ছিল... গান শোনা যেত না... ভরসা ছিল হিন্দু হোস্টেল, হিন্দু হোস্টেলের সিনিয়রদের স্টক আর বন্ধুদের মত লোকজনের ল্যাপটপ... তখনও আমার নিজের ল্যাপটপ ছিলনা...
গান আর যাবে কোথায়, ব্রেনেই যায়... টুনির মা তে আমার মত বীভৎস অনাচুড়ে পাবলিকও "ভজগৌরাঙ্গ" নেচে পার পেয়ে গেছে প্রেসিডেন্সি কলেজে... আইসি-এসএফআই নির্বিশেষে চলতো... আর আইসির কিছু মোরাল নেতা ছিল, তাদের পেছনে আইসির লোকজনই খিস্তি করতো...
হিন্দু হোস্টেলের বেয়াড়া রাত্রি, তরলের প্রভাব কিংবা প্রভাব ব্যতীত কোন সময়ই গানটা কম পড়েনি... বিদেশে ভোরবেলা ওয়াশিংটন ডিসিতে ঢোকার সময়েও গাড়িতে টুনিরমা... বলাইবাহুল্য, আপাদমস্তক রাবীন্দ্রিক পরিবারে আমার বাবা ছাড়া এসব গান ফিকফিকে হাসিতে অ্যাপ্রিশিয়েট করার লোক কম...
কেসটা হল কয়েকদিন আগে... উবর ধরে বাড়ি ফেরার সময়ে এফএম চ্যানেলে হঠাৎ শুনি সুরটা... আমি মোবাইলে খুটখুট করছিলাম... বন্ধ করে এক মনে এফএম... গানটা ততক্ষণে অনেকটা হয়ে গেছে... হিন্দি বুঝিনা... তাতেও যা বুঝলাম, গানটার প্রথম দুটো শব্দ হচ্ছে "হাওয়াহাওয়া "...
বাড়ি এসে সার্চ... সোজা গুগল বাবার ভরসা... কম্পিউটারের স্ক্রিন হুড়হুড় করে তথ্য বমি করে দিল...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকা ব্রিটেনের সাথে, যে যুগে বিটলস, পিঙ্কফ্লয়েড, ইগলস, আয়রন মেইডেন, ডায়ার স্ট্রেটস গান গাইছে, তাদের সাথেপাল্লা দিত কে জানেন???
ইরান... সারা পৃথিবীর সাইকেডেলিক রকের অন্যতম প্রাণ পুরুষ ছিলেন ইরানে... কুরোশইয়াগমেই... জিমি পেজ বা জিমি হেনড্রিক্সের সাথে তুলনীয় গিটারিস্ট... ইসলামিক বিপ্লবের আগের ঘটনা...
Like our Facebook Page
১৯৭৪এ শাহ শাসিত ইরানে বের করেন নিজের অ্যালবাম গোল-এ -ইয়াখ... রেজাপহ্লভীর শাসনে অতটাও সেন্সারশিপ ছিলনা... আধুনিকীকরণে খানিক মন দিয়েছিলেন... অবশ্যই আমার কাছে রাজনৈতিকভাবে প্রেফারেবল ১৯৫৩পূর্ববর্তী পারস্য গণতন্ত্র...
ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরানের রক-অ্যান্ড-রোল চলে যায় আন্ডারগ্রাউন্ডে... যে কোন ধর্মীয় রাষ্ট্রে (চাপ নেবেন না, বিজেপি বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে এদেশেও হবে) খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতিএগুলোরওপর প্রথম আঘাত নামে... ইরানেও তাই হয়েছিল... কুরোশের অ্যালবাম হারিয়ে গেছিল???
গোল-এ-ইয়াখের গান ছিল "হাওয়ারহাওয়ার" যার ফার্সি মানে হচ্ছে "Hail! Hail! My beloved is coming"... আদ্যোপান্ত প্রেমের গান... এবং অসাধারণ...
এই গান শেষ পর্যন্ত ল্যান্ড করে পাকিস্তানে... হাসান জাহাঙ্গির রেকর্ড করেন "হাওয়া! হাওয়া! খুশবুলুটাদে"... মূল গান ছিল ফোক রক ধর্মী... কিছুটা সাইকেডেলিকের সুরের চলন ব্যবহার করে... হাসান জাহাঙ্গিরের গান বেরিয়েছিল জেনারেল জিয়া-উল-হকের সামরিক শাসনে... গানের কথা অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ মনে হওয়ায় হাসান জাহাঙ্গির কে বলা হয়েছিল প্রচার মাধ্যমে কথা পালটে গাইতে (এখনো মিল পাচ্ছেন না???)...
মুম্বাই পৌঁছনোর আগে গান পৌঁছোয় বাংলাদেশে... প্রমিতের হাতে পড়ে অতএব টুনির মা... বাংলাদেশ সামরিক শাসন টাসন অনেকদিন কাটিয়ে এসেছে... এসব বিষয়ে কুলকাল... অতএব কলকাতা এসে পৌঁছোয় টুনির মা... এবং আমাদের বীভৎস নৃত্য...
পার্কসার্কাস ফ্লাইওভারে উঠে টানা যেতে যেতে মোবাইলে খুটখুট করছিলাম... হঠাৎ কানে সেই সুর... পরাণে পশিল মোর, হৃদয়ে পশিল গো...
গানটা হিন্দি... ডিটো টুনির মার সুরটা ইন্টারল্যুড হিসেবে ব্যবহার করেছে... অনেক শুনে বুঝলাম, গানটার প্রথম চারটে শব্দ হচ্ছে "হাওয়া হাওয়া এ হাওয়া"... মুবারক সিনেমার গান, মূল হাসান জাহাঙ্গিরের গানের রিমেক... হাসান জাহাঙ্গিরের গানটা শুনে নেবেন, টুনির মার আসল সুরটা রয়েছে...
আর এখানে দিলাম প্রবাদ প্রতিম কুরোশইয়াগমেইর "হাওয়ারহাওয়ার "... হিন্দি সিনেমার প্রবল জনপ্রিয় হবার জন্য সুর নয়... আপাদমস্তক রকের প্যাটার্ন, কিন্তু সুরের প্রোগ্রেশন প্রাচ্যের... কীরকম!!!
সে আরেকদিন হবেখন...
ও হ্যাঁ, এই গানে গিটার, বেসগিটার , লিডগিটার, লিডভোকাল, ব্যাকিং ভোকাল- সব কুরোশ...
ফার্সি একটা চমৎকার ভাষা, কখনো পারলে শিখবো!!!
https://www.youtube.com/watch?v=-fNW8OrEsn0
MusicAcrossBorders
0 Comments
Post Comment