পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ভোট প্রচারে বাংলাদেশে মোদী

  • 03 April, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 1504 view(s)
  • লিখেছেন : মিলন দত্ত
পশ্চিমবঙ্গের ভোটের প্রচারে মোদীর আভাবনীয় বাংলাদেশ অভিযান তাঁর নানা (অপ)কীর্তির মতোই উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ অভিযানটা এবার ছিল অবিস্মরনীয়। কারণ আমরা এই প্রথম জানতে পারলাম, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেমে জেলেও যেতে হয় তাঁকে।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জন্য ভোট চাইতে বাংলাদেশ পর্যন্ত ধাওয়া করা যায়, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদীর নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড না দেখলে কারও পক্ষে কল্পনা করাও দুঃসাধ্য ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সম্প্রতি দু’দিনের সফরে ঢাকায় গিয়ে মোদী মূলত বিজেপির ভোট প্রচারই করেছেন।

সফরের দ্বিতীয় দিনেই মোদী গোপালগঞ্জে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে যান মোদী। সেখানে ওড়াকান্দি মন্দিরে প্রার্থনা করেন। পরে ভাষণে দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, কীভাবে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তাঁর জন্মস্থানে এসেছেন। এছাড়া তিনি নিয়মিত শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুগামীদের থেকেও অনেক কিছু শিখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলাম। আমার মনে আছে, আমি পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগরে গিয়েছিলাম, তখন আমার মতুয়া পরিবারের সদস্যরা আমায় অপরিসীম ভালোবাসা দিয়েছেন। বিশেষত বড়মা যেভাবে আমায় কাছে টেনে নিয়েছিলেন, মায়ের মতো আশীর্বাদ করেছিলেন, তা আমার জীবনের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। ঠাকুরনগর থেকে বাংলাদেশে এসে একই রকম অনুভূতি হচ্ছে।’ মোদী দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওড়াকান্দিতে আসার ইচ্ছা ছিল তাঁর। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার বাংলাদেশে এসেও ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। অবশেষে সেই ইচ্ছাপূরণ হল।

রাজ্যের প্রায় ৩৫ টি কেন্দ্রে মতুয়া ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোটের একটা বড় অংশ গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। কিন্তু নানা কারণে উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়া জেলার মতুয়াদের এ বার বিজেপি-প্রীতি অনেকটাই ঘুচেছে আঁচ করেই মেদীজির এই আন্তর্জাতিক অভিযান। দেশে ভোট চেয়ে মতুয়াদের বিশেষ বাগে আনতে না পেরে মোদীর এই ‘মাস্টারস্ট্রোক’। তবে ‌ছয় মারতে পারলেন কিনা তা বোঝা যাবে দোসরা মে ফল প্রকাশের পরে। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন মোদী। শান্তনু তাঁর থেকে বয়সে ছোটো হলেও বনগাঁর সাংসদের থেকে তিনি নাকি অনেক কিছু শিখতে পারেন। কারণ শান্তনু শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত। মোদী বলেন, ‘এটা ভারত এবং বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থক্ষেত্র।’ সঙ্গে মোদী আশ্বাস দেন, ওড়াকান্দিতে প্রাথমিক স্কুল তৈরি করবে ভারত সরকার। সেই সঙ্গে ওড়াকান্দিতে যে ভারতীয়রা আসেন, তাঁদের যাতায়াত আরও সহজ করে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। স্রেফ ভোটভিক্ষার জন্য নরেন্দ্র মোদীর এই আভাবনীয় অভিযান তাঁর নানা (অপ)কীর্তির মতোই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ অভিযানটা এবার অরও অনেক কারণেই ছিল অবিস্মরনীয়। কারণ আমরা এই প্রথম জানতে পারলাম, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আন্দোলনে নেমে জেলেও যেতে হয় তাঁকে। মোদীর দাবি, তাঁর রাজনৈতিক যাত্রাপথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ঢাকায় তিনি বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবনেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আমি এবং সহকর্মীরা ভারতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেছিলাম।’ মোদী জানান, তখন তাঁর বয়স সবে ২০-র কোঠায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সত্যাগ্রহ করে জেলে যাওয়ার সুযোগও হয়েছিল তাঁর।

নরেন্দ্র মোদীর মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সত্যাগ্রহ এবং ‌গ্রেফতারির দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মোদি সাহেব বলেছেন উনি মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলে গিয়েছিলেন, কারণ কী? মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তো ভারতীয় নেতা-কর্মীদের বিরোধিতা ছিল না। বরং ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে এক কোটি শরণার্থী অসহায় বাঙালির সহায়তা এবং কীভাবে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করা যায়, সেই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছিল। তার জন্য রুশ-ভারত চুক্তি হয়েছিল। বরং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল হিন্দু মহাসভা। সম্ভবত পাকিস্তানেরও কিছু অর্থ-শর্ত তারা পেয়েছিল কি না, আমি জানি না। সেই কারণেই তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের জন্য নয়, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার জন্য জেলে যেতে হয়েছিল।’

ওড়াকান্দি মন্দিরে যাওয়ার আগে মোদী যান সাতক্ষীরার প্রাচীন যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে। সেখানে তিনি পুজো দেন। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির পক্ষে হিন্দু ভোট এককাট্টা করার জন্য কোনও সম্ভাবনাই বাদ রাখেননি মোদী। আর তাঁর প্রচার কাজে সুবিধা করে দিয়েছে রাজ্যের তাবড় সংবাদমাধ্যম। দেদার প্রচার করেছন তাঁরা। সাতক্ষীরার পরে মোদীর গন্তব্য ছিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া। নরেন্দ্র মোদি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে গিয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। টুঙ্গিপাড়া থেকে নরেন্দ্র মোদি যান ওড়াকান্দিতে। তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রাণপুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরেও পূজা দেবেন। করোনা মহামারি শুরুর পর এটাই ছিল মোদির প্রথম বিদেশ সফর। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির এটা দ্বিতীয় ঢাকা সফর। এর আগে ২০১৫ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় যান মোদি।

নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিকে কেন্দ্র করে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতা-কর্মী ও মুসল্লিদের একাংশের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেটা ঘটেছিল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে। সেই সংঘর্ষের সময় পুলিশ গুলি চালালে মৃত্যু হয় অন্তত পাঁচ জনের। এর প্রতিবাদে দুপুরে বিক্ষোভে নামেন হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রসহ চারজন নিহত হন। পরে ছাত্ররা হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়ক অবরোধ করেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে শুক্রবার রাতে হেফাজত নেতাদের দুই দফা বৈঠকের পর অবরোধ প্রত্যাহার করেন মাদ্রাসার ছাত্ররা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করেন। মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসাসহ জেলার সব কওমি মাদ্রাসাছাত্ররা শহরের বিভিন্ন সড়কসহ বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করেন। তাঁরা বিকেল চারটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন হামলা ও ভাঙচুর চালান।

শাসক আওয়ামি লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের হাতে সবচেয়ে বেশি প্রহৃত এবং লাঞ্ছিত হয়েছেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়েনের ছেলেমেয়েরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে তাঁদের মারধর করে শাসক দলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা। বেশ কয়েকজন বামপন্থী ছাত্রছাত্রী ওই ঘটনায় আহত হন।

0 Comments

Post Comment