পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বাম ঐক্য: সম্ভাবনা ও সমস্যা

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 201 view(s)
  • লিখেছেন : অশোক মুখোপাধ্যায়
আমরা সমগ্র ভারতবর্ষের সাপেক্ষে এমন একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন বিজেপি-র গণতন্ত্র বিধ্বংসী সার্বিক ফ্যাসিস্ত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করে হিন্দুধর্মীয় মৌলবাদের ভয়ঙ্কর আগ্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করাই সমস্ত বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত।

পশ্চিম বাংলার সদ্য সমাপ্ত ছটি বিধান সভার উপনির্বাচনে রাজ্যের বৃহত্তম বামপন্থী দল সিপিআই(এম) কংগ্রেসের হাত ছেড়ে শুধু মাত্র বামপন্থী দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে—বিশেষ করে সিপিআই(এম-এল)-লিবারেশন-এর সাথে জোট করে—অংশগ্রহণ করায় রাজ্যে আগামী দিনে বামপন্থী ঐক্যের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকের মধ্যেই আশা জেগেছে যে এবার হয়ত রাজ্য সরকারি ক্ষমতায় আসীন তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসনের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী বাম ঐক্য গড়ে উঠতে চলেছে। যেখানে কংগ্রেসের মতো একটা দক্ষিণপন্থী দলের সঙ্গে জোট করে চলার বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না।

সম্ভাবনাটা বাস্তব। গত আগস্ট মাস থেকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে অভয়ার খুন ধর্ষণের বিরুদ্ধে যেভাবে সারা বাংলা জেগে উঠেছিল, বিশেষ করে নারীদের রাত দখলের কর্মসূচি যেভাবে কলকাতা থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে গণ আন্দোলনের একটা নতুন রূপরেখা তৈরি হয়। যদিও এই আন্দোলনের কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানার ছিল না, সাধারণ ভাবে একে অরাজনৈতিক অদলীয় মঞ্চ হিসাবে ঘোষণা এবং উপস্থাপন করা হয়েছিল, তথাপি ওয়াকিবমহলের সকলেই জানেন, বিভিন্ন বামপন্থী দলগুলির কর্মীরা (দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই) ব্যাপক সংখ্যায় উপস্থিত ও সক্রিয় ছিল এই সব জমায়েতের পেছনে।

তার মধ্য দিয়েও আগামী দিনের জন্য বৃহত্তর বাম ঐক্যের সম্ভাবনা মজবুত হয়েছিল।

এই আশাবাদের মধ্যে অতীত কাল ব্যবহার করছি কেন?

“সম্ভাবনা মজবুত হয়েছিল” বলছি কেন?

বলছি কারণ এই সম্ভাবনার সামনে আবার কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে। কেন দেখা যাক।

ঐক্য কেন? কিসের উদ্দেশ্যে ঐক্য? ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা কোন লক্ষ্য পূরণ করতে চাই? এই প্রশ্নগুলির সমাধান না করে, সুস্পষ্ট উত্তর না পেলে ঐক্য হয় না। হলেও তা ঠুনকো বোঝাপড়ার বাইরে যায় না। আজ হয়ে কালই ভেঙে যেতে পারে।

নির্বাচনে আসন সমঝোতা একটা অস্থায়ী, বা বলা ভালো, স্বল্পস্থায়ী বোঝাপড়া। নির্বাচন মিটে গেলেই সেই বোঝাপড়ায় ইতি। দুচারটে আসনে উপনির্বাচনে ঐক্য হলে সেও আরও ক্ষণস্থায়ী ব্যাপার। অবশ্য অনেক কাল ধরেই বামপন্থী দলগুলির মধ্যে বোঝাপড়া নিছক নির্বাচনী ঐক্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। তার বাইরে বেরতে পারছে না। সেই নির্বাচনী ঐক্যও আবার একটা গোটা পর্যায়কাল ধরে নয়, এক একটা ভোটপর্বে আলাদা করে আসন বাঁটোয়ারার অতিরিক্ত কিছু নয়। ফলে উপনির্বাচনে ঐক্য মানেই তা আগামী বিধান সভার নির্বাচনে ঐক্য নয়। বিধান সভায় ঐক্য হল মানেই যে তা পরবর্তী লোকসভা ভোট অবধি বিস্তৃত হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর পঞ্চায়েত নির্বাচন? যেখানে দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই বিক্ষুব্ধ প্রার্থী দাঁড়িয়ে যায়, সেখানে বহুদলীয় ঐক্য স্থাপন তো বেশ কঠিন ব্যাপার!

সকলেরই লক্ষ্য হচ্ছে, এক পা এক পা করে বুঝে বুঝে এগোও। কাউকেই ভরসা করে বেশি দূর পর্যন্ত সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা ভেব না। কখন কার বা কাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করলে কতটা সুবিধা হতে পারে অঙ্ক কষে পা ফেল। যাদের আবার ভারতে একাধিক রাজ্যে সংগঠন আছে এবং/অথবা সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব আছে, তারা আবার সেই সব রাজ্যের লাভালাভের ভিত্তিতেই পশ্চিম বাংলায় ঐক্যের প্রশ্নটিকে দেখে থাকে। তাদের দোষ দেওয়া যায় না। বাস্তব পরিস্থিতিই তাদের এই দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।

এরকম ঐক্য যে আসলে মৌল অনৈক্যের উপরে ঐক্যের একটা পাতলা পলেস্তারা—তা নিশ্চয়ই কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। এর মধ্যে কোনো দীর্ঘস্থায়ী বিশ্বাসের বন্ধন নেই, কোনো দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য সাধনের সমবেত পরিকল্পনাও নেই। সেই জন্যই এক্ষুনি কোনো দীর্ঘস্থায়ী সুফল লাভের আশা করতে অসুবিধা হচ্ছে।

আর একটা সমস্যা আছে, যেটা আমার ধারণা মতে আরও গুরুতর।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন একটা লাগাতার প্যাটার্ন নিলেও এবং সাধারণ মানুষের একাংশকে জড়িত করতে পারলেও এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু বাম শক্তির মধ্যে একটা অদ্ভুত সংকীর্ণতা যুক্ত হয়ে একে কার্যত বিপথগামী করে দিয়েছে। অনেকের অপ্রিয় হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও সেই কথাটা বলতে বাধ্য হচ্ছি।

সংশ্লিষ্ট সকলেই জানেন, আমরা সমগ্র ভারতবর্ষের সাপেক্ষে এমন একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন বিজেপি-র গণতন্ত্র বিধ্বংসী সার্বিক ফ্যাসিস্ত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করে হিন্দুধর্মীয় মৌলবাদের ভয়ঙ্কর আগ্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করাই সমস্ত বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত।

প্রধান মানে অবশ্যই একমাত্র নয়।

প্রধান মানে যা হোক করে, যেমন তেমন, অর্থাৎ, অপ্রধানও নয়।

প্রধান মানে রাজ্য ভিত্তিক কোনো ঘটনার ন্যায্য প্রতিক্রিয়ায় ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে, আবার একই সময় এটাও মনে রাখতে হবে, আন্দোলনকারীদের কোনো কর্মসূচি বা শ্লোগান যেন প্রধান লক্ষ্যকে ব্যাহত না করে।

দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আর জি কর মুদ্দায় দীর্ঘমেয়াদে আন্দোলন পরিচালনা করার সময় বামপন্থীরা অধিকাংশই এই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছেন এবং অনেক দিন পরে রাজ্য সরকারকে প্যাঁচে ফেলার একটা মহাসুযোগ হাতে এসেছে মনে করে কর্মসূচি নির্ধারণ করেছেন।এখানে সিপিএম-এর যেমন টারগেট ছিল টিএমসি-কে গদিছাড়া করার একটা “জনপ্রিয়” কৌশল খুঁজে পাওয়া, তেমনই অন্য অনেক বামপন্থী শক্তির লক্ষ্য ছিল তাদের গা থেকে টিএমসি-ঘনিষ্ঠতার ট্যাগ মুছে ফেলার আয়োজন করা। ফলে জুনিয়র ডাক্তারদের ঢাল খাড়া করে এমন সমস্ত অজুহাত তৈরি করা হল, যেগুলোর কার্যত বাস্তব অস্তিত্ব ছিল না—রাজ্য পুলিশের সাহায্যে “প্রমাণ লোপাট”, “ময়না তদন্তে গাফিলতি”, তাড়াহুড়ো করে বাড়ির লোকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে “লাশ পুড়িয়ে ফেলা”, ইত্যাদি। এই প্রচার এত বিরাট মাত্রায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত প্রথম দিকে এই সব সন্দেহকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছিল। পরে অবশ্য বিবিধ পক্ষের বক্তব্য থেকে এবং বিশেষ করে সিবিআইয়ের ক্রমিক রিপোর্ট পেয়ে আদালত নিশ্চিত হয় এই সব অভিযোগের অবাস্তবতার ব্যাপারে। তখন আবার, রাজ্য সরকার বা মমতা অপরাধীদের আড়াল করছে—এই প্রচারের ফলে শেষ পর্যন্ত সিবিআইয়ের কাজে ক্ষোভ জন্মাতে লাগল, কেন্দ্র রাজ্য “সেটিং তত্ত্ব” বাজারে এল, এবং বিচার কেন বিলম্বিত হচ্ছে—এই মর্মে এক অযৌক্তিক হাহাকারের জন্ম দেওয়া হল। আশ্চর্যের কথা হল, সেই হাহাকারিয়া থেকে আলোচ্য বামপক্ষ এখনও বেরিয়ে আসতে পারছে না। একটা ভুলের ফাঁদের পড়ে আরও কিছু ভুল তাদের করে যেতে হচ্ছে।

এই হাহাকারেরই এক বিশেষ পরিণতি হল, কুলতলির নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনায় এক দল উকিল আদালতে ধর্ষকের পক্ষে দাঁড়াবে না ঘোষণা করায় আন্দোলনকারী এবং সমর্থকদের এক বিরাট অংশ দারুণ খুশি হয়ে গেল। অর্থাৎ বিচার প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তের যেটুকু আইনি সুবিধা পাওয়ার কথা, তাকেও অস্বীকার করার প্রবণতা জনমানসে তৈরি করে ফেলার সম্ভাবনা দেখা দিল।ফ্যাসিবাদের পক্ষে এর চাইতে মঙ্গলময় পরিস্থিতি আর কী হতে পারে? মব ট্রায়াল, এনকাউন্টার, ধর আর ফাঁসি দাও—ইত্যাকার যুক্তিহীন নিম্নগামী চেতনা চাশের এক উর্বর জমি তৈরি করে ফেলা হয়েছে। মমতার অপরাজিতা বিলও এই গণ হিস্টিরিয়ার সঙ্গে দিব্যি খাপ খেয়ে গেছে!

আরও অদ্ভুত কথা হল, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে যখন রাজ্য জুড়ে সরকারি মেডিক্যাল দুনিয়ায় থ্রেট কালচার-এর দুই বড় পাণ্ডা অভীক দে এবং বিরুপাক্ষ দাসকে তিন মাস আগে সরিয়ে দেবার পরে আবার ফিরিয়ে আনা হল, প্রতিবাদকারীরা আর কোনো কর্মসূচিই নিতে পারছেন না। অসময়ে ভুল জায়গায় শক্তি ফালতু খরচ করে ফেলার মাশুল এইভাবে আজ তাদের দিতে হচ্ছে।

এই গোলক ধাঁধা থেকে বেরনোর রাস্তা কি নেই?

আছে।

বামপন্থীদের বসে দেশ ব্যাপী ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের একটা দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির পরিকল্পনা করতে হবে। প্রচার ও জনমত গঠনের কাজ দিয়েই কাজটা শুরু করতে হবে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে জনগণের উপর যেভাবে স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে, মুসলিম ও দলিতদের যেভাবে নিশানা বানিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে, মসজিদ দেখলেই তার তলায় মন্দিরের ভূত আবিষ্কারের যে সরকারি প্রকল্প ঘুরপাক খাচ্ছে, বেকার সমস্যা মূল্যবৃদ্ধি অপুষ্টি অশিক্ষার সমস্যা যেভাবে বেড়ে চলেছে, সংবাদ মাধ্যমগুলিকে যেভাবে মোদীতোতায় পরিণত করা হচ্ছে—এই সমস্ত মুদ্দা নিয়েই সারা দেশ জুড়ে প্রচারে নামার দরকার আছে। শুধু ভোট এসে গেলে যাদের গণতন্ত্রের কথাটা মনে পড়ে, তাদের দিয়ে এই কাজ সম্পন্ন করা মুশকিল। সমস্যার দিকে তাকিয়ে প্রচার জনমত গঠন ও আন্দোলনের কথা ভাবতে শিখতে হবে।

আদানি যেভাবে এখন দেশ ছাড়িয়ে তার জালিয়াতির সাম্রাজ্য বিদেশেও সম্প্রসারিত করতে চাইছে, মোদী অমিত জুটি যেভাবে তাকে সুরক্ষা দিয়ে চলেছে, আদানির স্বার্থে তার বেশি দামের বিদ্যুৎ বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতেই যেভাবে বাংলাদেশেও অশান্তির আগুন জ্বালানোর চক্রান্ত করা হয়েছে—এগুলোও—বুঝতে পারলে—বামপন্থীদের হাতে চমৎকার কার্যক্রম যোগান দিতে পারে। তার বদলে অধিকাংশ বাম দলগুলিও যেভাবে জাতীয়তাবাদের ঝুটা ও ঠুনকো আবেগে ভেসে গিয়ে আদানি-মোদী প্রকল্পকেই শক্তিশালী করে বসেছে, সেও বামপন্থী রাজনীতির দেউলিয়াপনার এক অনবদ্য উদাহরণ হিসাবে দেখা যেতে পারে।

এমনকি বামপন্থী নেতারা এক সঙ্গে বাংলাদেশে একটা তথ্যসন্ধানী পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে পারেন (বয়ানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে), বা নিজেরাও দল বেঁধে যেতে পারেন, প্রকৃত তথ্য জানার জন্য। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম যে ৯০ শতাংশই ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে পশ্চিম বাংলা তথা ভারতের জনমানসকে বিভ্রান্ত করে দিতে চাইছে এবং এক ভয়ঙ্কর মুসলিমফোবিয়ার দিকে দেশকে ঠেলে নিয়ে চলেছে, এটাও তাঁরা তখন সহজেই বুঝতে এবং দেশে ফিরে এসে দেশকে বোঝাতে পারবেন। 

একটা কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়, যত দিন যাবে কেন্দ্রের মোদী সরকার বিরোধীদের হাতে আন্দোলন করার মতো নিত্য নতুন মুদ্দা দিয়ে যেতেই থাকবে। সেই সব মুদ্দাকে সামনে রেখে বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধ হতে চাইলে একটা দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম রচনা করে তারা এগিয়ে যেতে পারেন।

ইতিহাস তাদের হয়ত আরও কিছু দিন সময় দেবে।

তবে অনন্ত কাল নিশ্চয়ই দেবে না!

0 Comments

Post Comment