এই তো সেদিন মায়ের পেট থেকে হোম-ডেলিভারি হলো।যে দায়মা তার মাকে প্রসব করিয়েছিলো সে দায়মা ট্রেনিং প্রাপ্ত ছিলো না।মানে এই আধুনিক ডাক্তারদের বুলি শুনেটুনে কিছু শেখেনি আর কি,আর সরকারের দান অনুদান অনুপ্রেরণা এই সবের সারমাটিতে বড় হয়নি সে দায়মা।তবুও এই দায়মা দাবী করে যে সে নাকি এতো হোমডেলিভারি করেছে যে তার হাতে ডেলিভারি হওয়া শিশুরা আজ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আচে।সে নিজের জন্য মাথা হিলিয়ে বলে ,আমি কি জ্যানত্যান বট্যির্যে! তমু কি তুরা মুকে স্বিক্যার করবি!হই দ্যাকগে যিয়ে বাম্যুন পাড়ার সাত্যকড়্যি মুকুজ্জ্যের নসেজো বৌ,সে বার খাল্যাস হবার সুমোতে আমার হাতে ধরে সি-কি কান্ন্যা মাইরি।আমাক্যে বল্যে কি,তুমি ক্যাকিম্যা আমাদের ঘরের বো বিটিদের খাল্যাস করো,এই বছুর কোত্যু যেনো যেও না।বলি কুনু আজাতে বিজেদেদের বো বিটিদের খাল্যাস কর্যো না যেনো।
ই কতা শুনে আমি তো তাজ্জ্যোব!হা-গালে কালি!ইয়া আবার কি কত্যা গ্যো! ছল হব্যে তো সুব্বারি হব্বে,সগ জ্যাত্যেরি হব্যে।তা ছল তো বাপু নাড়ায়ণ।এই নাড়ায়ন পিতিবিতে আস্যব্যে সেইতো আলো।আঁন্দার রাস্তাদিয়েই আসবে-ড়ে ব্যয়নটি,তু ইয়া কুতা শিকল্যি?আমি তো বাপ্যু ছুটুতেই জানত্যে প্যেরেচি কি আমি জ্যাতে ড্যুম।আর আমার স্বা্মী মুচি।তো উ মাত্যালকে তো কিচু বল্যার নাইখো।সি তো একট গ্যোরু বা শুয়োরের চাম ছারয়তেও জান্যেন্যা খো। সারা দ্যিন মদভ্যাঙ গ্যিলে হই সত্যশুঁড়্যির মদ্যের দুকানের চাল্যাতে পোঁদ উল্টিনে পড়ে থ্যাকে।লিজেকেই শান্তন্যা দিয়ে ক্ষেন্ত করে বলি,কি করবি ব্যয়নটি ত্যুর ভাল্যে এই কতাটই নেকা ছেল্যো,কি গুনোমুচির সাঁতেই আমার বে হব্বে।যাকগে যিয়ে বারো চোদ্দাটা তো আর জেবন পাবো নাখো।প্যালেও যেনো এই ডুমের ঘরেই জন্মাই।আমাকে সুব্বাই ঘেন্না করব্যে কেন্তনা এই শিশোনি দায়কে লাগব্যেই লাগব্যেই।কি কতা বললে মাইরি!ওমন জ্যাত গ্যালো জ্যাত গ্যালো কল্লে কি আর হয়! এমনিতেই বামুনপারা দিয়ে যায় না খো। সে বছ্যুরে এক বার পুজোপারবেনে যায়। তা কি এমনি এমনি যায় !লিজের পাউনা ধাউনা আনতে যায় ,সিদে আনতে যায়।
শিশোনি দায়মা রঙ বদলায় না।পরনে চওড়া লাল পাড় ডেগরুণের শাড়ি। ব্লাউজ নেই শাড়ির দেহটাকে নিজের দেহের সঙ্গে দু বার পেঁচিয়ে নিয়ে একটা ঘোমটা দিয়ে আঁচলটাকে বাম কাঁধের উপরে ফেলে দেয়।আঁচলের খুঁট তার ঘরের চাবিকে গুছিয়ে ধরে নিন্ম মুখে ঝুলতে ঝুলতে যায়।আর এই ফাঁকে চাবি শিশোনির ঘরে ফিরে যাবার রাস্তা চিনে নিতে থাকে।একটা বাঁশের ছিলকার বোনা ডালি,তাতে চার পাঁচ কেজি চাল,আড়ায়শোর মতো সর্ষের তেলের পিতলের ভাঁড় আর একটা নারকেল তেলের ছোট্ট কৌটো।চালের উপরে পড়ে থাকে কয়েকটা আলু পেঁয়াজ,দু একটা পেয়ারা,আমড়া বঁইচি-কুল।বলে রাখি শিশোনিদায় যখন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতো তখন ডালিটা ফাঁকা থাকতো,এই সময় ডালিটা তার বাম কাঁখে রাখতো কিন্তু ঘরে ফেরার সময়ে ডালি ভরা থাকে চাল আলু তেলে।ডালিটা তখন সে মাথায় নেয়।
শিশোনিদায়ের চলন মানে পায়ের ছাপ পায়ের চাপ মাটির সঙ্গে সংপৃক্ত।তার ঘরটা গ্রামের শেষে নিচুপট্টি,যে খানে নয়ঞ্জলির জল এসে ভীড় করে থাকে,চব চব শব্দে শিশোনি রাতের আঁধারে সকালের তরুণ আলোয় মুদির দোকানে যায় নুন হলুদ লেড়ুয়া কিনতে।আবার সিদে আদায়ে যাবার সময়ে ঘরের আঙিনা থেকে বেরিয়েই প্রথমেই মোটা গুণআইল পথ দিয়ে গ্রাম ছাড়িয়ে ভিনজাতের গ্রামে পৌঁচ্ছে যায়।শিশোনিদায় নিজের রঙ বদলায় নি এ কথা আগেই বলেছি।সে জানে না রঙ বদলাতে।যাকথা তা কাজ।কিন্তু আজ বামুন পাড়ার ঘটনা ভাগ করে দিলো শিশোনিকে।এখন থেকে যদি সে ভিন জাত্যের পো-তি বো বিটিদের খালাশ করতে যায় তাহলে শিশীনিদায় আর বামুনপাড়ার কাজ পাবে না। পরিবর্তে গণশার মা এই হিন্দুগ্রামের পো-তি মেয়েদের খালাস করবে।
শিশোনি চুপ হয়ে গেছে এমন বিচারে।কিছু কথা বলা যাবে না এই গ্রামের মাত্তব্বরদের বিরুদ্ধে। একদিন পাঁচুর বাবা যে দ্যেশ স্বাধীনের দিনে বলেছিলো গ্রামের শিবতলার মন্দিরে দাঁড়িয়ে জাতের লেগেই দ্যেশ ভাগ হুয়ে গ্যালো তাই আমরা আর সেই জ্যাত জ্যাত করে লিজেদের ভ্যাঁতোরে ল্যেই করবো না। কিন্তু আজ আব্বার কি হল্যো যি সেই জাতের ল্যেই এসে ডাঁড়িন য্যালো এই পো-তি খালাসের আঁতুর ঘরে!বিস্মিত শিশোনির মাথাটা কেমুন ট্রিক ট্রিক করে নড়ে ওঠে। সে তার হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে মাঝে মাঝে। আর বলে,মুকের আহারে ক্যাড়ে লিলি?কি চালাকি জানিশ্র্যে তুরা!আমারা গরিব জ্যাত ছুটুলুকে ছুটুলুকের ভ্যাতোরে মারামারি লাগ্যিন দিল্যি!শিশোনি নিজেদের দুঃখী মাথার চুল ছিঁড়াছিঁড়ি করতে পারবে না বলেই আর কিছু বলেনি ঠিকই কিন্তু সে নিজের গ্রামের গর্ভবতী বৌবিটিদের প্রসব করাতে আর যায় নি।
যায় হোক গণশার মা মুক্যুজ্জ্যে পাড়ার মুকুজ্জ্যে বাঁড়্যুজ্যদের বো বিটিদের খালাস ক্যোরবে।শিশোনি ভাবে সত্যিই কি তাই?বাঁড়্যুজ্জ্যদের ঘরের বো বিটিদের খালাস করে কি উয়োকে ডাল্যি ভত্তি চ্যাল দিব্ব্যে?কুচু দিব্ব্যে না।গণশার মা কি,সদগোপেদের বো-বিটিদের খালাশ কত্তে পাবে?ল্যাট পাড়ার বো-বিটিদের খালাসের ভার দিইচে রমেশ ঢুলির কাকীকে।চাষা পাড়ার বো-বিটিরা খুব ল্যেই করে। বেরামের বাজুনি যকন উটে তখুন বাচাগো দায় মা বাঁচা করে চিচিন চিচিন কান্দবে।আর ঝেই খালাশ হবে যেই ফুল্টো পড়বে ,ক্যাট ময়লা ধ-ধায়ি হুয়ে যাবে আর অমনি লাগবে ল্যেই কত্তে। সিদে দিব্বে না,কাপড় দিব্বে না,দুস্যার চ্যাল দিয়ে বলব্যে যা যা হই গরুর চ্যালাতে যেয়ে বসগে। যাকগো যেঁয়ে যে যিথা খালাশ হবে হোকগো আমি কেন্তনা সুব্বারিই ঘরে যাব্বো খালাশ কত্তে।আপুনি ভগ্যোব্যান আচেরে ব্যোয়নটি সিই দেকব্যে ক্যার হাতে কতো যোশ। ভিন জ্যাত কি মানুষ লয় নাকি?উয়োরাতো আমাকে পাশে বসিনে খাবার খায়।আমিই কেবল খেয়ে না,ভাত মুড়ি তো আর খ যায় না,তাই বলি ভাত মুড়ি বাদে ঝা দিবি দ্যে আমি খাবো।কি বল্যোব্যো মাইরি!পেথম পেথম খুব রেগে যেতো মুসলমানদের বো-বিটিরা।ঝেণকিনে উঠে বল্যতো,কেনে গো কাকীমা আমরা কি গু মেখে আচি নাকি নে?যি আমাদের রেন্দা ভাত সালুন খ যাব্বে না?
আমি হেসে কইত্যাম,না লা না,তা কেনে হব্বে?এই যি সারা রেত জেগে মাগিটকে খালাশ করব বলে বসে আচি।পো-তি কোঁতাবে আর কাঁনবে।আর আমিতো উয়াকে বল্যোব্যো,কাঁন্দিস কাঁন্দিস,শূল উঠেছে শূল উঠেছে আর খানিক কোঁতদে,আর একজেরা কোঁতটো ধরে রেক ব্যয়নটি। ইয়ায় কত্তে কত্তে ভুরবিলা হুয়ে যাবে। থালে রেত জাগলে প্যাটে গ্যাস হুয়ে যাবে ব্যোয়নটি,ধূমো ঢেকারে দেকতে পাবো নারে,রাগ গুসা ক্যোরিস না।
অনেকদিন থেকে ওই ভাগাভাগিতেই আছে ডোম পাড়ার মেয়েরা কিন্তু তাতে জিতে গেছে শিশোনি দায়। তাকে কায়দা কৌশল করে গনশারমা আর রমেশ ঢুলির কাকীমা দুজনে মুসলমান পাড়ার দায়মা করে দিয়েছে। আর শিশোনিকে দেখে ওরা ঠেলাঠেলি করে হাসে।এই গণশারমা আর রমেশঢুলির কাকীমা এমন ভাব দেখায় যেন জাত্যে উঠেছে।আর শিশোনিদায়ের জাত গেছে,তার তো জাত পাল্টে গেছে। কেমন চোখ ঠেরাঠেরি করে। শিশোনিদায় খুব বোঝে ব্যাপারটা।মাঝে মাঝে মন খারাপও করে।কিন্তু শিশোনি হিসাব করে দেখেছে গণশার মা,রমেশ ঢুলির কাকীমা গর্ভবতীমাদের খালাশ করার জন্য এত ডাক পায় না যতো ডাক পায় শিশোনি।বামুন পাড়া কায়েত পাড়া সদগোপ আর চাষা পাড়ার বো বিটিরা ডাকতেই চায় না দায়দের। কেবল যখন খালাশ হবে বেরাম উঠবে তখন ডাকে।যত সময় থাকবে তত সময়ের চাল আলু তেল মশলা দিবে, হাতে পাঁচট টাকা ধরিন দিয়ে সেই যি বিদেয় জানাবে আর ঢুকতেই দিবে না ঘরে।ডোমেদের আবার ঘরে ঢুকতে দেয়,ওই ডোমেদের মেয়েরা আসবে বলেই না আঁতুরঘর ছাগলের গোয়ালে করেছে।এখন চারদিন চলে গেছে,একটা অনুষ্ঠান সামনে পাঁচদিনে পাঁচুঠের রাত পড়েছে মা ষষ্ঠী এসে কপালের লেখন লেখবে।এমুন সাত্যের সময়ে ডোমচুয়াড় যেন ঘরের আঙনেতে না আসে। এই সব বামুনপাড়ার বো বিটিরাই বেশি করে। এই সব জাত বিচার দেখে দেখে কায়েতদের মেয়েরাও তাই করে।মন কারাপ হয়েই থাকে।মনে মনে ভাবে শিশোনি জিতে গেল্যো।যে ডাকে তার ঘরেই শিশোনি চলে যায় পো-তি খালাস কত্তে।জাত পাত দেকে না।
এমনি এক অদৃশ্য টানাপোড়েন চলতে থাকে এই তিন জনের ভিতরে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখে শিশোনি কখন এই লড়ায় থেকে বেবিয়ে এসেছে।এখন সে গ্রামের কোনো পুকুরেই নামে না,স্নান ঘরেই সারে,ছাগোল ভেঁড়া দুটো পুষেছে,ঘরে ছুটু বিটিট আচে, কি আর করা যায়,তার বে দিতে হবে,গুনোমুচিতো সেই সত্য শুড়ির মদসালে উল্টে পড়ে থাকে।তার পরিচয় দিলে তো আর ই বিটির বে হবে নাখো।বড়ো বিটি বোবাবোবা করে,বলেই যা কিছু উপার্জন করে গুনোমুচি তাকেই দেয় আর মদ গেলে।ছুটু যেন্যো কেউ হয় না তার!শিশোনির সঙ্গে তার মাঝে মাঝেই হাতাহাতি হবার উপক্রোম হয়।যায় হোক সেসব নাটক এ গ্রামের সকলের আঙিনাতে অনুষ্ঠিত হয়।
ওই যে আগেই বলেছি শিশোনি জিতে গেছে,তার হাতে শাঁওতালদের মেয়েরাও খালাশ হয়,মুসলমান বো বিটিরাও খালাশ হয় আবার কাতে পড়ে বামুনদের ঘরের বো বিটিদের কেউ খালাশ হয়।আসলে শিশোনির গর্ভবতী মেয়ে ডেলিভারি করার যত অভিজ্ঞতা আছে অন্যদের তা নেই। তাই মাঝে মাঝে কেউ কেউ শিশোনিকেই বেশি ভরসা করে। তাছাড়া শিশোনি গরভবতীর পেটে তেল মালিশ করে দিয়ে আসে।পেটে বাচ্চা ঠিকঠাক অবস্থায় আছে কিনা দেখে আসে।তাকে টাইমে টাইমে হলুদ মাখিয়ে আসে।ডাক্তর বদ্যির দরকার থাকলে ঘোরিদের বলে আসে সাবধান করে দিয়ে আসে। চালের বাতায় দড়ি যেন বাঁধা থাকে,পেটে থেকে ছেলে যখুন বেরিনে আসবে সি কি আর সওজে আস্যব্যে?দ্যেহের বত্তিশ বাঁধুন ছিঁড়ে এই বত্তিশ বাঁধুনের ঘরের মেজেতে পড়ব্যে। ছ্যোল যতি না কাঁদে তাহলে চাল্যে বেড়িনে কাঁসার থালি বাজিনে কাঁদায়তে হবে। কাঁচা পো-তিকে স্যাঁকে দিয়ে আসতে হবে। পো-তির সাতে পাঁচ রেত থাকতে হবে। কেউ যেন না ঢুকতে পারে।আঁতুর ঘরে বাঁশেমই,লুহার শাবল ফেলিনে রেখতে হবে যেন পঁচোতে না পায় কচিটোকে। এতো সব ভার ক্যে লিব্যে ক্যে শুনি!এই সব কথা শিশোনিদায় আপন মনেই বকতে থাকে।তাই শিশোনি জিতেযায়।তার ঘরে অভাব নেই।
সব সমস্যা চলেই গেছিলো।দেশভাগের জাতপাত,পো-তি খালাশের জ্যাতপাত সব একটু একটু করে গা শোয়া হয়ে গেছিলো।তবু এই জাতপাতে এই বাংলার মাটিতে তেমন করে কোনো তাপ ছিলো না যে আগুন ধরে সকলেই পুড়ে মরবে।এখন কেনো তাপ উঠছে দেশেরভাগে ঘরেরভাগে পাটিরভাগে সবেই খুব তাপ।শিশোনি বুঝতে পারে না। আগে তো কোনো বামুন এই ডোম পাড়া দিয়ে পা মাড়াতো না।কায়েত,চাষারা তো বটেই।আকুন ক্যেনে বামুনদের সাথে রংধারি সন্যাস্যীদের আনাগুনা আমাদের এই ভাঙা পাড়াতে?চাষারা কি কম বদ গো!মাঠে ধান কেটে তুলে মেড়ে দিয়ে সেই ধান যদি হাতে ধরি তো আমাকে গা ধুয়া করাই।আর আকুন কেনে সেই তাদের ঘরের বো বিটিরা আমাদের উটোনে কেনে এসে হাজির হয়?আমাদের পাড়াতে একটো মুন্দির করে দিচে!তাও আবার লক্ষ্মী স্বরস্মতীর লয়,দুজ্ঞার লয়,গনেশের লয় কাত্তিকের লয়,লাড়ায়নের লয় ইয়া আবার কি মুন্দির গো?বুজায় যায় না কিসের দেব্তা এখানে ব্যোসবে। আগে তার বিশাল ল্যাজ গড়লো তার পর ঠ্যাং গড়লো রাতারাতি এক জাম্মুমানের মূর্তি এসে হাজির। শিশোনি খুব হাসছে।লাও ঠিলা বোঝো কেনে!হ্যাঁ-গো রাম নাই সিতা নাই লক্ষণ নাই,কুথা থেকে এক হ্যোণ্যুমানকে এনে হাজির করেচে!এই বেটিনে ঠিলা সামলাও কেনে।মুখে কাপড় দিয়ে হাসে।
সে একা হাসেনি পাড়ার অনেক গুলো মেয়ে তাদের শাড়ির আঁচল মুখে ধরে হেসেছে।কিন্তু কারোরি কোনো দোষ হয় নি কেবল শিশোনি দায়ের ঘাড়ে এসে পড়লো ধর্মের কোপ।কেনো সে হনুমানকে দেখে হেসেছে। পাড়াতে একটা দেবতার পুজো হয় না। একটা দেবী নাই,সবই ওই বমুন পাড়াতে।এক সন্ন্যাসী নেহাত এই পাড়াতে আসে হর সন্নধ্যে বিলাতে।এসেই আমাদেরকে কত দেবতার নাম শিকিনে যায়। তাকেই বলে বলে একট হ্যোন্যুমানের মুন্দিরের টাকা পো-গ্যালো,তা দেবতা বটে কি লয় বল?ফাইলামু কচ্চিস এই দেবতা নিয়ে। খুব হুসিয়ার হুয়ে যা।আর যদি কুনুদিন দেকেচি কি দেব দেবীদের নিয়ে ঠাট্টা মস্করা ক্যোরিস থালে দেকবি মজা,তুর এক দিক কি আমারই একদিক।মাইরী বল্যে দিইচ্যি ফাইলামি বন্দো কর।
যায় হোক শিশোনি প্রথমের দিকে খুব ক্ষেপে ছিলো।সে বলে উঠলো যদি এতোই লিজেকে বামুন বলে মুনে কচ্চিস তো ওই বামুন পারাতে যেয়ে ঝা বলার বলগা যেয়ে।আমার সঙ্গে লেয় কত্তে আসবি না।এই সব তর্কবিতর্ক হতে থাকলো গণশার সঙ্গে।শিশোনি দায় মনে মনে বিড়বিড় করতে থাকে।বানুন্দের পো-তি বো-বিটিদের খালাস করিস বলে লিজেদের বামুন ভাবচিস রে?হু হু বাব্বা সে গুড়ে বালি,তুর মাকেও বামুন রা হই গরুর চাল্যাতে ডারকরিনে রেখে।এক পো মুরি দিলে ওই দূরে হতেই ঢেল্যে দেয় তাতে চাট্টে মুরি গামচাতে পরে বাকী গুলান উরে যেয়ে লাচ্চে পরে।কুকুরে চ্যাটে চ্যাটে খায় তমু তুর মায়ের ক্ষেমতা নাইখো কুরোবার।কুরোইত্যে দ্যেব্বে না। তার আবার ফুটুনি দিকাইচিস।এই সব কথা বিড়বিড় করে বলে,জোরে বলতে পারে না।
গণশাকে এখন ডোম পাড়ার সবাই খুব মানে।তাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে।যাক গণশা এক সন্ন্যাসিকে ডেকে আনেছিল্যো বলেই তো আমরা দেবতার মুক দেক্ত্যে পাল্যুম রে লিজেদের পারাতেই।এখুন গনশাই আমাদের পারার বামুন।এই সব কথা শুনে গনশার খুব আহাল্লাদ আর মনের ভিতরে জাকিয়ে অহঙ্কার জমছে।আমি ডুম পারার ভাল্যোমুন্দ্যো ইবারে থেকে দেখ্যেবো।যাককে সগুলি ভগমানের ইচ্চে,জয় বাবা বীড় হ্যোন্যুম্যান জয়।
এখন এই পাড়ার শিশোনিদায় বাদে সব ঘরের জন্যই কিছু টাকা দিয়ে পাঠিয়েছে পাহাড়পুরের রামমন্দির কমিটির সদস্যরা।বলে দিয়েছে সামনে রামনবমি আসছে তাই ওই পাড়ার সব্বারি দেওয়াল যেন ভালো করে লেপাপোচ্ছা করে কমলা রঙ করে রাখে।আর দেওয়ালে যেনো বীরহনুমানের ছবি একে রাখে।মনে রাখতে হবে রামের রক্ষক ছিলো হনুমান।সুতরাং এই পাড়ার মানুষেরা হাতে টাকা পেয়ে আপন আপন ঘরের রামের রক্ষককে স্থাপন করার কাজে খুব ব্যস্ত।তারা নিজেদের দেওয়াল রাঙাতে দেওয়ালে জল ছেটাই।কিন্তু মাটির ঘরের ঝুরঝুরে দেওয়ালে জল ছিটিয়ে দিলে চাঙড়চাঙড় মাটি খসে পড়ে দেওয়ালগুলি জ্বরাসার হয়েগেলে শিশোনি আবার মুখে কাপড় দিয়ে হাসে।সেও বড়ো অহঙ্কারি।তার ঘরের দেওয়াল নেই সে কলমির বেড়া দিয়ে রেখেছে।সবুজ পাতা আর তাতে থোক থোক ফুলে ভরে আছে,যদিও সে ফুলে কিছু দড়দড়ে পিপড়েরাই লাইন দিয়ে থাকে সত্যি কিন্তু মাটিতো খসে পড়ে না।এই নিয়ে শিশোনি দায় ভালোই থাকে।কিন্তু এই কয়েক মাস থেকে শিশোনি দায় আর ভালো নেই।গণশা পাড়ার ছেলে শান্তই ছিলো এতো দিন,সে এখন কি করে যেন মাস্তান হয়ে উঠেছে।শুধু কি সে ইকাই মাস্তানরে?এই ডুম পাড়ার জুয়ান জুয়ান ছেলেদের নিয়ে সি কুতা চল্যে যায়। সারা রেত কুতা থাকে কি জানি বাপু সুকালে লাটাইতে লাটাইতে আসে আর ঝিমেইতে ঝিমেইতে চিঁচাই “জে শ্রীড়িড়াম”। শিশোনি মনের ভিতরে গণশার নাটক করতে থাকে।
শিশোনি চুপ হতে থাকে,ভাবতে থাকে কিছু একট বদলিন যেচে মুনে হচে।কি জানি বাফু হওয়া কুন বাগে যেচে কি জ্যানি! গণেশা যা বাড়াবাড়ি কচ্চে যতুই হোক পারার ছুঁড়া।কবক্যের ছ্যেল্যে সি। হ্যাঁগো আমারই হাতে খালাস হ্যোল্যো উয়োর মা। সি কি কষ্ট পেত্তম পো-তি খালাস কর্যা।ঘরে একটা ঝুড়ি নাই যে ধরবে উয়োর মা।এই সব কথা শিশোনি কাকে যে বলে কে জানে।শিশোনি একা বাড়িতে থাকলেও মনে হয় যেনো কেউ আছে । সে কি কোনো প্রেতাত্মার সঙ্গে কথা বলে?গুনোমুচির কাছে শুনেছে শাঁখচুন্নি আচে তাহলে কি সেই শাঁকচুন্নি শিশোনির কাছেও আসে নাকি মাঝে মাঝে? এ কথা পড়শিরা ভাবে।শিশোনি তার মনের সঙ্গে অনেক লড়ায় করে গণেশকে নিয়ে।কি জানি বাপু গনশার হল্যোকি?এতো রাম রাম করে ক্ষেপে উঠ্যোল্যো কেনে?আমাদের এতো বছুরের পুরোনো গাঁ।কতু কুনু দিন কুনু দেবতা উটেনি,কুনু কালী বলো,মা ষষ্টি ,মা শেতলা কেউ দিকা দেয় নি। মাদূজ্ঞীর পুজো বরাবর হয়। তাতে লাড়ু মুড়ি খুব পো যায়।তখুনতো আর বামুনরা বাচবিচের করে না,দেয় চাট্টি করে লাড়ুমুড়ি দেয়। ওই এক দুখান সাদা লাল পেরে শারি এক খান সয়া বিলাউজ দেয় তা মিছে কতা কেনে বল্যোল্বো। কেন্তুনা এই গনশার হল্যোট কি ,কেনে সি এমুন কর্যে মুছলমানদের নামে গিবত গায়ছে!তাও আরালে হয়তো পারা যায় ,হ্যাঁগো একে বারে চিচিন চিচিন বল্যোছে পাকিস্ত্যান চল্যে যা, দ্যেশভাগ লিয়েচিস আবার হিতা কিকচ্চিস? যা পাকিস্তানে যা। হারে উয়োরা পাকিস্তান যাব্বে কেনে? উয়োদের পোঁদে বেড়েয়লে একটোও উদ্দূ কতা বলত্যে জানে না। হিন্দি তাও জানে না আমাদের মত্যোনি উয়োরা।সে দিন বাসটেনে কি হাসি, দারিন আচি বাস ধরব্যো বলে।একটা ভাগলপুরের ফকির আচে না সে কুন দ্যাশভাগের সমুতে ভাগলপুরে নাকি দাঙগা হল্যোলছেলো অখুন এই আমাদের কান্ঠাতে যে মুছল্মানদের গেরাম আচে সে গেরামে বাসা নিয়ে আকুনো আছে।সেই ভিক্ষে চেয়ে খায়। সি বলছিল্যো কি ভগমান নাকি ইন্তেহ্যান লিচ্ছে মানুষের ,তো বয়োন্টি কি বল্যোল্ব্যো,অই মুছল্মান গেরামের কেউ বাকী নাই সুব্বাইকে আমি শুদোলছি,হা গো ইন্তেহান মানে কী বটে? তো কেউ বলতে পাল্ল্যো না।তারা আব্বার পাকিস্তানে গেয়ে কি বল্যোল্বে কি খাবে?বলি হারে গনশা উয়োরা কি বাবার জনমে রুটি খেয়েচে?দুটো ভাত না পেল্যে বাংলী মানুষ প্যাট দাঁদুড়ে মর্যা যাবে যিরে ।দুটো গরম ভাতে এক ড্যূং ম্যাড় খেয়ে বেঁচে থাকবে। তা তুরা অমনি কর্যে কেনে বলচিস উয়োদের পাকিস্তানে পাট্যিন দিবি?এতো জ্বালা!
শিশোনির কথা শুনে গণেশা খুব রেগে গিয়ে বলে ,তু মাগ্যিকেও ওই মুছল্মান্দের গেরামে পাট্যিন দবো,মুছল্মাদের গেরামে যেয়ে যেয়ে মাগি উয়োদের মতুন নেমোখেরাম হুয়ে যেলছিস।
গণেশের মুখে এমন কথা শুনে শিশোনি থ হয়ে ক্ষণেক দাঁড়িয়ে থাকে । ভাবতেই পারছে না যে গণেশ এমন কথা বলছে। শিশোনি দায় তার শাড়িটাকে কোমোরে বাঁধে ,তার পর ধীরে পায়ে এগিয়ে যায় গণশদের ঘরের দিকে। গণেশ ভিতরে ভিতরে ভয় পায়।গণেশ চিতকার করে ওঠে,কেনে মারবি নাকি?আর যদি এক পা এগোলচিস মাগী দেকবি, বলেই বিশাল এক তরবারি বের করে শিশোনির ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেলে গণেশের মা গণেশের পায়ে জড়িয়ে ধরে তাতে তরবারি নিয়ে উপুড় হয়ে আঙিনাতে পড়ে যায় গণেশ। শিশোনি ভয় পায় না।গণেশের মায়ের চিৎকার আর গনেশের চিৎকার মিলিয়ে এক বিশ্রীশব্দে পাড়া ছেয়ে যায় । পাড়ার লোকেরা দৌড়ে আসে কি হল্যো গ্যো কাকী মা?
গণেশের মা তখন গণেশের হাত থেকে তরবারি কেড়ে নিয়ে ঘরের কোন এক অন্ধকারে লুকিয়ে দিতে ঢুকে যায়।মাতাল গনেশ উঠোনে পড়ে থাকে।উপুড় হয়েই চিৎকার করে “জে শীড়ীড়াম”অন্যরাও গলা মেলায় জে শীড়ীড়াম।
গনেশের মা হাত জোড় করে সব্বাইকে চলে যেতে বলে,শিশোনি চলে যায়।যাবার সময়ে শেষ বারের মতো বলে যায় গণেশকে, গণশা সবদান হ্যুয়ে যা,ভাল্যো বইচি।থা না হলে তু যাদে ঘাটে মাছ ধত্তে গেইচিস তারা তুকে কিন্তু মাচ ধরা টোপ করে দিব্ব্যে।
আমি এই আমি যাকে তু মাগী মাগী কর্যে তুচ্চ্যতাচ্চ্যল্য কল্ল্যি,এই মাগীই তুকে পেত্তম ধুয়া মুচা কর্যেছেল্যো।এক ডুং শুকনো কাপুড় ছেলো না ঘরে। কুনু জাত্যের লুকেরা দ্যেয় নি র্যে গণেশা। ওই বে জাত্যের ঘরের মেয়েরাই দিইছ্যেল্যো। তুর আঁতুড়ের দ্যেহ্যে জরিন দিইছেলাম। সেই তু আমাকে বল্ল্যি মাগী!আমাকে বল্ল্যি নেমোখের্যাম!মুচলমান!তা কি হইচে কি আমি যতি বা মুচলমান হ্যল্যাম?মুচলমানদের পো-তি বো-বিটিদের খালাস কত্তাম বেশ কত্তাম,জেবন চলেছে সেই উয়োদের ঘরের চ্যাল ডালে।তাই বলে কি আমি জ্যাতি উটতে গেইচি নাকি?সবদান হুয়ে যা।যেরা কুনুদিন আমাদের বাগে চেয়ে দেকে নি,যারা কুনু দ্যিন আমাদের ছ্যেলে মেয়েদের পরা শুণ্যাতো দূরের কতা ছায়া মারাতে দেয় নি সেই তারা একট হ্যোণ্যুমানের মুন্দ্যির গড়ে দিইচে,কটা পাঁচির রুঙ্গাইতে দিইচে বলে মুচলমান মারবি বলে এতো বড়ো তোলোয়ার ঘরে রেকেচিস!মা গো মা! আমি ক্যূন দ্যাশ্যে দিশান্তরি লুব্যো গো!তুমরা দেকোগো!শিশোনি হঠাত যেনো ভয় পেলো। এতোক্ষন যেন তার সবটাই নাটক বলে মনে হয়েছিলো। কিন্তু পাড়ার লোকেরা যখন এতো বড়ো ঘটোনা দেখে গণেশকেই সমর্থন করলো তখন শিশোনি দৌড়াতে থাকলো।আর চিৎকার করতে থাকলো “অরে গণশা পালিনে আয় ,তু যেকানে যেলচিস উটো একটো ডাকাতদের ডেরারে”।
শিশোনি আর পাড়ার কারো সঙ্গে মেশে না। দু চারটে পাড়ার বুড়ি শিশোনির কাছে বিড়ি চাইতে আসে। তার খেজুর তলায় বসে বিড়ীতে টান দিতে দিতে বলে ,হাটি শিশো তুর সঙ্গে গণেশবামুন্যের কি হইছ্যেলো? শিশোনি হেসে বলে, তা ভালো গনেশা বামুন হুয়েযেলো থালে?তাই এতো উয়োর সাউস হুয়েছে আমাকে মাত্তে আসে। আচ্চা বলতো পিসি ওই অতবড়ো তলোয়ার গণশা কুতা প্যাল্যো?বুড়ি পিসিরা বিড়ি টানতে টানতে বললো,কেনে তু জানিস নাখো? আর জানবিই বা ক্যামুন কর্যে?গুনোমুচিতো মদ গিলে উল্টিনে পরে থাকে শুড়ির মদের দুকানে।তুর পেট্যেতো ব্যাটাও ধরিস নি। সেদিন রামলবোমি না কি বলচে,সেই রেতে যাদের ঘরে বেটা আচে তাদের ঘরে ঘরে একটো করে তলোয়ার দিইচে গণশা।মিচিল নাকি কব্বে। বাপু যুগ-যামানা হারিন্যে যেচে।কেখে কেখে ক্যাটবে বল্যে বলছিলো।আমি বামুন পারা দিয়ে গেইছিলাম,উয়োরা বলাবল্যি কচ্চিল্যো ডুমেদের ছেলেদের ভারা নিয়ে যা,মারপিট উয়োরাই করব্যে।
শিশোনি চোখ স্থির করে শোনে ,শুনতে শুনতে কপাল মোছে তার শাড়ির আঁচল দিয়ে।
দিন আসে দিন যায় কিন্তু মানুষ গুলো রঙ বদলায়।রং বদলাতে পারে না কেবল শিশোনি।শিশোনির পনেরো ষোলো বছর হয়ে গেছে আর গর্ভবতী মায়েদের প্রসব করাতে যায় না। কারন সরকার হাসপাতালে ডেলিভারি করার জন্য প্রচার প্রসার করিয়ে জননীসুরক্ষার টাকা চালু করে একটা জাগায় নিয়ে গেছে।গণেশের মা ,রমেশের কাকীমা আশা কর্মী হতে পেরেছে পার্টি করতো বলে, কিন্তু শিশোনিকে কোনো কিছুতেই সুযোগ দেয়নি।কিছু করার নেই ,অগত্যা শিশোনি এর তার ঘরে কাজ করে দিয়ে আসছে,আর নদীর ধারে গিয়ে গাছে থেকে শুকনো ডাল ভেঙে এনে বোঝা বেঁধে বয়ে আনে জ্বালানি করার জন্য।ঘরে একটি গাই পালতে নিয়েছে তার বাছুর হয়েছে।এমনি করেই চলে যায় তার সংসার।
পাড়াতে এখন সব পুজো হয়। পুজো করে যায় কোথাকার কোথাকার বামুন এসে। কই গনশাকে তো পুজোতে বসতে দেয় না।শিশোনি মন্ডোপের কাছাকাছি গেলে একটা নমো করে আসে।ঘরে লক্ষ্মীর পায়ের আল্পনা দেয়, তুলশি তলায় সকালে গোবরের ছড়া দেয় মাড়ুলি দেয়।আবার সন্ধায় সন্ধ্যা দেয় প্রদীপ জ্বালিয়ে শাঁখ বাজায়। শাঁখ ধুয়ে তুলুশি তলায় রেখে দেয়।সন্ধ্যা সকালে একটা ধূপকাঠি ধরিয়ে লেকেন্ডারের গোপালকে দেখায়।দিন চলে যাচ্ছে।
গনশার সঙ্গে আর শিশোনিদায়ের ঝগড়া হয় না ঠিকই কিন্তু গণশার একটা রাগ শিশোনির উপরে থেকে গেছে ।সে শোধ নেবার সুযোগ খুঁজে। সামনে ভোট চারিদিকে গরমাগরম মিটিং।জাতিবিদ্বশে ভরা ভাঘন শোনা যায়।গণেশদের গ্রামের পাড়াতে রামভক্তের দল গঠন করা হয়েছে। সেবারে কি হাসি গণেশরা নিজেদের কোমরে খড়ের লেজ লাগিয়ে হণুমান সেজে নাটক করেছে রামায়ন থেকে।প্রতি রাতেই তরবারি চালানোর মহড়া দেওয়া হয়। ক্লাবে অনেক টাকা পেয়েছে তারা। কেরাম আর খেলে না ,সিরিয়াল দেখে, রামায়ন দেখে আর নেট চালিয়ে সিনেমা দেখে।যখন ডাক আসে তখন দল বেঁধে চলে যায় কুচকাওয়াজ করতে।
গণেশকে তার ভালোবাসার রাজনৈতিক কর্মীরদল সন্ধ্যা বেলায় ডেকে নিয়ে গেছে কি সব পরিকল্পনা জানাতে। সে তার মাকে বলে গেছে পাড়ার ছেলেরা যেন তৈরি থাকে সে এসে সবাইকে কোথায় যেন নিয়ে যাবে।কিন্তু একি কালরাত এলো!যাদের কথায় গনেশ এতো কিছু করলো তারা আজ কি বলছে গণেশকে!এ প্রস্তাব শুনে গনেশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পেচ্ছাব করে ফেললো,মুখ শুকিয়ে গেলো ,তার জিহ্বা তালুতে চিটিয়ে লেগে গেলো।বার বার মনে পড়ছিল শিশোনিদায়ের কথা “গণশা বাড়াবাড়ি করিস না টোপ হুয়ে যাব্বি রে আমরা ছুটুলুকের জ্যাতবটি তুখে বাঁদর করে খ্যেল্যিন লিব্যে,তুকে বলির পাঁটা করে দিব্বে,অমন করে জ্যাতে উঠতে যাস না ভাইটি”। গনেশের মাথা ঘুরছে নিজেকে চিমটি কাটছে সে বেঁচে আছে কিনা দেখার জন্য।মাঝে মাঝে গনেশ ফিস ফিস করে বলে,কি এতো বড়ো স্পর্ধা!আমাকে খুন করে দাঙ্গা লাগাবে?সকাল হতে হতে এই শান্ত গ্রামগুলা জ্বলে উঠবে?গণেশ মনে মনে সংকল্প নেয়,যা হয় হবে ,আর পিছিয়ে যাবার রাস্তা নেই।এতো মরণ খেলা।গণেশ তার তরবারি উঁচিয়ে তুলল চিৎকার করে উঠোলো “জে শীড়িড়াম”।তার পর তরবারি চালিয়ে দিলো ওদের গরদানে।মাথা ঝাঁকিয়ে পড়লো ওদের মুণ্ডু।গণশা দেখলো যাদের মুন্ডুগুলো দেহ থেকে খোসে গেলো তারা কেউ জাতে ওঠেনি ,আজাত বেজাতের মুন্ডু।তারা আর কেউ না তারই পাড়ার ডোম সাঁওতাল চুয়াড় বলে যারা গালাগালি মাখে প্রতিদিন তারাই আপন রক্তে আপনার বেদী ভিজিয়ে দেবতাদের পুজো দিচ্ছে।গণেশ তাই আর নদীর বালি ছেড়ে বাড়ি ফিরছে না।সারা রাত ধরে নদীর বালির ভিতরে লাশ লুকিয়ে দাঙ্গা রুখার পাগলামি করছে।আর বিড়বিড় করে বলছে “শিশোদিদি আমাকে দু-চড় মার,আমাকে লাতি মার আমাকে বঁটি দিয়ে মার আমাকে মাটি করে দে শিশোদিদি”।দাঙ্গা রুখবার জন্য গণেশ রাতের আঁধারে বালিতে বলি হতে থাকে সারারাত।