পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

দুর্নীতি বন্ধ করার নামে আধার নিজেই কি একটা দুর্নীতি ?

  • 16 October, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 2511 view(s)
  • লিখেছেন : সুমন সেনগুপ্ত
আধার কি কোনও পরিচয়পত্র? যদি এই প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া যায় তাহলে আধারের প্রয়োজনীয়তা কি ? তাহলে আধারের মধ্যে দিয়ে যে সরকারী অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে সেটাও সম্পূর্ণ মিথ্যে। বিভিন্ন সময়ে যে বলা হয় রেশন কার্ডের সঙ্গে বা প্যান কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগ করতে তাহলে তার উদ্দেশ্য কি ? তাহলে কি দুর্নীতি বন্ধ করার নামে আধার নিজেই একটা বড় দুর্নীতি।

সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সাইবার স্পেসের সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সকলের সামনে প্রশ্ন করলেন যে সকলেই নিশ্চিত ভারতের আধারের কথা শুনেছেন? কিভাবে ব্যাঙ্ক-মোবাইল- আধার এই ত্রিফলার সাহায্যে ভারত দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে সেটা নিশ্চিত সবাই জানেন? সকলে হাত তুলে বললেন, হ্যাঁ, জানেন। তিনি আরও বলেন যে কি করে সরকারী পরিষেবার ক্ষেত্রে সঠিক মানুষকে চিহ্নিত করার কাজটি এবং তার ফলে কি করে কত কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করা গেছে তা সবাই জানে। আগের সরকারের দুর্নীতি এই সরকার ঠিক করছে। এতটা পড়েই হয়তো অনেকে ভাবতে পারেন সত্যিই তো এই না হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, এই না হলে আচ্ছে দিন? তিনি আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছিলেন যে কিভাবে আধার দিয়ে প্রায় ৯০০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। তাহলে কি সত্যিই আধার দিয়ে দুর্নীতি রোখা সম্ভব? আধার দিয়ে কি সরকারি টাকা সঠিক জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব? তাহলে কি আধারই একমাত্র একটি পরিচয়পত্র হয়ে উঠবে আগামী দিনে যা দিয়ে একটি স্বচ্ছ সরকার চালানো যাবে?

দীর্ঘদিন কাজ করছেন ডঃ অনুপম শরাফ। তিনি ঠিক করেন যে তথ্য জানার অধিকার আইনে তিনি অর্থ মন্ত্রকের কাছে জানতে চাইবেন কি পদ্ধতিতে তাঁরা সরকারী পরিষেবা সঠিক মানুষের কাছে যাচ্ছে কি না জানতে পারছেন? উত্তরে তাঁরা জানান যে আধার আইন ২০১৬ অনুযায়ী তাঁরা সরকারী পরিষেবা পৌঁছচ্ছে কি না বলতে পারেন, কিন্তু কোন পদ্ধতিতে তা হচ্ছে, তা তাঁদের জানা নেই। তিনি আরও জানতে চান সেই সমস্ত সরকারী দপ্তরে যে কারা কারা ভুয়ো তথ্যের জন্য বাদ যাচ্ছেন এরকম কোনও তথ্য সরকারের কাছে আছে কি, থাকলে জেলা ভিত্তিক সেই তথ্য যেন প্রকাশ করা হয়। উত্তর আসে তাঁদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই। তাঁরা এই প্রশ্ন আরও অন্যান্য সরকারী দপ্তরে পাঠিয়ে দেন, সেখান থেকেও কোনও সদুত্তর পাওয়া যায় নি। কিন্তু তাঁরা এটা জানিয়ে দেন যে সরকারী সুযোগ সুবিধা পেতে গেলে আধার লাগবে।

এই তথ্য জানার অধিকার আইন দিয়েই কিন্তু আগে জানা গিয়েছিল যে আধার কখনোই বাসস্থানের পরিচয়পত্র নয়, এমনকি সবাই যে বলে থাকেন যে আধার জন্মের সংশাপত্র তাও নয়। সেই কারণেই তিনি এবারে অর্থদপ্তরের কাছে জানতে চান যে কি পদ্ধতিতে কোনও সরকারী দপ্তরে একজন সরকারী সুবিধা প্রাপককে চিহ্নিত করছে তা যেন উদ্ধৃতি সহকারে জানানো হয়। কারা এই চিহ্নিতকরণের দায়িত্বে আছেন সেই আধিকারিকদের নাম যেন জানানো হয়, এই সমস্ত প্রশ্ন করা হয়। অদ্ভুতভাবে কোনও প্রশ্নেরই উত্তর পাওয়া যায় নি।

তাহলে এখন প্রশ্ন হল, যদি এই প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া যায় তাহলে আধারের প্রয়োজনীয়তা কি ? তাহলে আধারের মধ্যে দিয়ে যে সরকারী অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে সেটাও সম্পূর্ণ মিথ্যে। বিভিন্ন সময়ে যে বলা হয় রেশন কার্ডের সঙ্গে বা প্যান কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগ করতে তাহলে তার উদ্দেশ্য কি ? তাহলে কি দুর্নীতি বন্ধ করার নামে আধার নিজেই একটা বড় দুর্নীতি। ইদানীং যে শোনা যাচ্ছে, ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধারকে যুক্ত করা হবে তাহলে তার উদ্দেশ্যই বা কি ? অনেকেরই হয়তো মনে আছে যে মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন ২০১৬ সালে যে ৪৯০০০ আধার নিবন্ধিকরণ কেন্দ্রকে তাঁদের সরকার বাতিল ঘোষণা করেছেন, কিন্তু তিনি একবারও বলেননি যে ওই আধার নিবন্ধিকরণ কেন্দ্রগুলো যে ২০০৯ থেকে ২০১৬ অবধি যে যত আধার করিয়েছে সেই অত সংখ্যক আধারের কি হবে? সেগুলোও কি বাতিল হবে? যদি না হয় তাহলে সেই অত আধার দিয়ে কি ঘুরিয়ে দুর্নীতিই করা হবে, যেটা সরকারী দুর্নীতি যা কোনওদিন কেউ ধরতে পারবে না, আর ঝাড়খন্ডের ১১ বছরের সন্তোষী ‘ ভাত ভাত’ করতে করতে মারা যাবে, কারণ তার রেশন কার্ডের সঙ্গে আধারের সংযোগ ছিল না।

0 Comments

Post Comment