পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস ও আজকের লড়াই

  • 08 March, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 1502 view(s)
  • লিখেছেন : সৌমি জানা
সেই কবে ১৮৫৭ সালের ৮ ই মার্চ মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন কাতারে কাতারে সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। বিশ্ব জুড়ে যার আঁচ ছড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে যুক্ত হয়েছিল মহিলাদের ভোটাধিকারের প্রশ্ন। আমেরিকায় মহিলারা সরব হয়েছিলেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। উত্তাল হয়েছিল শহর, নগর। আজও কি সেই লড়াই চলছে না, কখনো আনিস খানের হত্যার তদন্তের দাবীতে, কখনো দেউচা পচামীতে? আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসে কি এই লড়াইগুলো আবার সেই প্রশ্নই তুলছে না?

ভাবলে মনে হয় সেই কবেকার তো কথা! কিন্তু কোথাও গিয়ে নারী দিবসের প্রাক্কালে এসে জীবন জীবিকা, সম মজুরি, সম বেতনের প্রশ্নে মিশে যায় দেউচায় কয়লাখনির বিরুদ্ধে আদিবাসী মহিলাদের মরণপণ লড়াই, নরেন্দ্রপুর থানায় বাক স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলা নারী অধিকার আন্দোলন কর্মীদের নির্যাতিত হওয়ার অসহ্য চিৎকার, মেরুনা মুর্মু, পাপিয়া মাণ্ডিদের লড়াই। সেই কবে ১৮৫৭ সালের ৮ ই মার্চ মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন কাতারে কাতারে সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। বিশ্ব জুড়ে যার আঁচ ছড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে যুক্ত হয়েছিল মহিলাদের ভোটাধিকারের প্রশ্ন। আমেরিকায় মহিলারা সরব হয়েছিলেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। উত্তাল হয়েছিল শহর, নগর। সেই মিছিলেও চলেছিল সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। নির্বিচারে চালানো হয় গুলি। আটক হয়েছিলেন বহু মহিলা শ্রমিক। আজও যেন মিশে যাচ্ছে সেই বার্তা, সেই লড়াইগুলো। একই ভাবে সামনের সারিতে লড়ছেন মহিলারা রাজ্য, দেশ, বিদেশ সর্বত্র, আরও তীব্র হচ্ছে তাদের উপর নির্যাতন পুলিশি সন্ত্রাস।
চুনি কোটাল থেকে শুরু করে আজকের পাপিয়া মান্ডি হয়ে রাস্তায় শুয়ে দিন কাটাচ্ছেন ডেউচার লড়াকু ওরাওঁ বোনেরা। কখনো চুনী কোটালের মতো নিজের প্রাণের বিনিময়ে, আবার কখনো নিজের গর্ভস্থ সন্তানের প্রাণের বিনিময়েও লড়ছেন মেয়েরা, লড়ছেন নিজের জীবন, জীবিকা, জমির অধিকারের জন্য ও নিজের জীবন, জীবিকা, আকাঙ্খা এবং বাসনাকে নিজের ইচ্ছামতো উপভোগ করতে।কাল, সময় যেন মিশিয়ে দেয় নন্দীগ্রামের সিঙ্গুরের হেসো ধরা রুখে দাঁড়ানো মহিলা কৃষক আর বর্তমানে কয়লাখনির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পুলিশি নির্যাতনে গর্ভপাত হওয়া দেউচার সেই আদিবাসী মহিলা শ্রমিককে।

রং ফুরিয়ে গেলে তার রক্ত দিয়ে সংগ্রামী ব্যানার লিখতে চেয়েছিলেন যে আনিস খান, তার রাষ্ট্রীয় খুনের বিচার চেয়ে মেয়েরা জেলে রাত কাটাচ্ছে। পুলিশের কাছে ধর্ষনের হুমকি, পেটে সারারাত ব্যাপী লাথি ও লাঠি খেয়েও আমরা পুলিশের চোখে চোখ রেখে লড়ছি নিজের নাগরিক অধিকারে। নিজেদের চাষের জমি, ঘর, ধুঁকতে থাকা হালের গরু আর ফাঁকা মরাই বাঁচাতে আমরা মেয়েরা লাঠি হাতে রাত কাটাচ্ছি বীরভূমের পাথুরে ঠান্ডায়। নিজের বাড়ির সামনে ধর্ষন ও খুন করে গাছে টানিয়ে দেওয়ার প্রতীকী ছবির দরুন যে তীব্র মানসিক যন্ত্রনা ও নিরাপত্তাহীনতা তুহিনাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করলো, এই সব পেয়েছির দেশের না ঝোঁকা কাগুজে বাঘিনী বুঝতে পারছেন না তার তীব্রতা কতদূর অবধি পৌঁছে তাদের নৃশংসতার ভীত নাড়িয়ে দেবে?

শুধুমাত্র প্রতীকী বিক্ষোভ আর গণতন্ত্রের খোয়াব নয়, আমরা মেয়েরা রাস্তায় আছি আমাদের রাজনৈতিক অধিকারের দাবীতে, নাগরিক অধিকারের দাবিতে তাই সন্ত্রাসের স্বীকারও আমরাই হচ্ছি সহজে। এই রাজ্যে আমরা মেয়েরা যে নিদারুণ মানসিক যন্ত্রনা ও নিরাপত্তারহীনতার বিপদ বোধে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপোষিত সন্ত্রাসের দগদগে ঘা নিয়ে যে অভিজ্ঞতালাভ করছি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি, সেদিন সাতই ফেব্রুয়ারি, রাত তখন কত হবে, বড়জোর সাড়ে আটটা। ২০১৮ সালে গঠিত নরেন্দ্রপুর থানার বিল্ডিং এ পেল্লাই একখান বিয়েবাড়ি। মাথাহীন কিছু দেহ যেন কিছু রীতিনীতির চক্করে চকমকে জামাকাপড় পরে ঘুরছে, উঠছে নামছে। তাদের কোনও কিছুতেই যেন কিছু যায় আসে না। পরে আমাদের বেধড়ক পেটানোর সময় পুলিশকে বলতে শুনেছি পঁচাশিহাজার টাকা দিয়ে লোকে বিয়েবাড়ি ভাড়া করবে আর এই চোদনখোর বুদ্ধিজীবীরা বাইরে হিজড়াগিরি করবে (হিজরাগিরি মানে আমাদের গান, স্লোগান)। আর ওদিকে আমাদের ছয়জন সাথীরা বাকস্বাধীনতার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সেদিন বিকালে এক দফা চরম নির্যাতিত হয়ে থানায় মুক্তির প্রহর গুনছে, তাদের আটক করা হয়েছিল। আমরা, যারা তাদের আটকের খবর পেয়ে গিয়েছিলাম, ততোধিক চিন্তায় বাইরে অপেক্ষা করছি কখন সাথীরা ছাড়া পাবে, বেরোবে, কখন দেখব ওদের, বুকে জড়িয়ে ধরব। পাশের চা দোকানে প্রত্যেকের বারপাঁচেক করে ঢুঁ মারা হয়ে গেছে, তখনও বুঝিনি ওখানেও নিজেদের লোক ছেড়ে রেখেছে নরেন্দ্রপুর পুলিশ আমরা কি বলছি, কি করছি সব নখ দর্পণে রাখার জন্য। চা দোকানের ওই টুংটাং শব্দ ও যেন ক্রমে অসহ্য লাগছিল চিন্তায়, ধীরে ধীরে বাড়ছিল রাত। কয়েকজন সাথী উপরে গিয়েছিলেন, ডিটেইন করা সাথীদের মুক্তির কাজ চলছিল। উপরে খোঁজ নিতে যেতেই কনস্টেবল খুব খারাপভাবে বললেন- কতজন আসতে হবে, আছে তো লোক, বললাম এভাবে কথা বলছেন কেন, আমরা তো ঢুকিনি, আপনাদের কথা মত তিনজনই তো গেছেন, তখনও একদফা খারাপ ব্যবহার করল আবার, কথা না বাড়িয়ে নিচে নেমে এল বাকিরা।
এরপর অনেক টালবাহানা করে ছাড়া হয় সাথীদের পিআর বন্ডে। সাথীরা নিচে নামতে তাদের স্বাগত জানিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরি আমরা স্লোগান দেওয়া হয় 'কমরেড লাল সেলাম'। এতেই নাকি বিয়ে বাড়ির বিশাল অসুবিধা হয়ে যায়- মানে আমাদের জামিন পাওয়ার পর ওসি আমাদের নির্যাতন এর পক্ষে এই একটাই যুক্তি দেখাতে পেরেছে আর বলেছে আমরা নাকি পুলিশকে মেরে রাস্তায় শুইয়ে দিয়েছি। যাইহোক তো হঠাৎ করে পুলিশ ফোর্স নেমে আসে, মুক্তি পাওয়া সাথীদের বুকে ধাক্কা দেওয়া শুরু করে, তুইতোকারি শুরু করে, আমরা জিজ্ঞেস করি গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন, এভাবে কথা বলছেন কেন। থানার সেকেন্ড অফিসার মেজো বাবু বলেই ডাকা হয় যাকে হঠাৎ করে বলে ওঠেন দেখবি কি করতে পারি! এই মার সব কটাকে, পেটা পেটা। তখনি আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশবাহিনী। চোখের সামনে নিজের কমরেড দের রক্তাক্ত হতে দেখি, জড়িয়ে ধরে বাঁচানোর চেষ্টা করি, বেধড়ক পেটানো শুরু করে আমাদের পুরুষ পুলিশরা, আমার একটা পা টেনে ধরে নির্দেশ দেওয়া হয় মাঝে মানে আমার যৌনাঙ্গতে মারতে। বারংবার বিভিন্নভাবে মহিলা সাথীদের প্রতি এই নির্দেশই দেওয়া চলে, সাথে অশ্রাব্য গালিগালাজ, যা লেখা যায় না, আমাদের প্রত্যেককে প্রতিনিয়ত 'খানকি' বলে সম্মোধন চলে সাথে আমাদের শরীর, যৌনাঙ্গ নিয়ে অশ্রাব্য লেখার অযোগ্য ভাষায় চলে আক্রমণ, আমাদের বারংবার বলা হয় 'মাগী উপরে চল, দেখাচ্ছি'।

ওই অবস্থাতেও বারবার জিজ্ঞেস করি আমরা, মহিলা পুলিশ কোথায়, আমাদের মাটিতে ফেলে আরও পেটাতে পেটাতে এক পুলিশ কর্মী বলেন "এ কি, ছেলে না মেয়ে, কোথায় মারব বুকে না নীচে"। এক সাথীর মাথা গাড়ির চাকার নীচে ঠেসে ধরা হয়, পেছন থেকে ঠেলতে থাকেন দুজন পুলিশ, তাকে বাঁচাতে গেলে চলে নির্যাতন, মারের মধ্যেই চোখের সামনে দেখি আমার সাথীদের সিঁড়ি দিয়ে ঘষতে ঘষতে উপরে তিন তলায় তুলছে,তাদের জাত গায়ের রং নিয়ে চলছে আক্রমণ, চলছে মহিলা বিরোধী অশ্রাব্য গালিগালাজ। এক কমরেডকে ক্রমাগত পেটে বুকে ফেলে মারা হচ্ছিল যার সুগার, লিভারের অসুখ, চুল ধরে ঘষতে ঘষতে তোলে তাকেও, রাস্তার মধ্যেই বুট দিয়ে চেপে ধরা হয় সাথীদের মাথা। আমরা ধরতে গেলে ক্রমাগত লাথি ও লাঠি দিয়ে পেটানো চলে আমাদের, সব করে পুরুষ পুলিশ। এর মধ্যেই নামে দুজন মহিলা অফিসার, তারা আসতে আর একদফা আমাদের মহিলাদের মারধর চলে, একইভাবে ঘষতে ঘষতে 3তলায় তোলা হয় আমাদের। থানার মধ্যের অত্যাচার নিয়ে পরবর্তী লেখায় লিখব কিন্তু থানায় তোলা পর্যন্ত আমরা সবাই বারবার একটাই কথা জিজ্ঞেস করেছি - কি অপরাধ আমাদের, কেন মারা হচ্ছে আমাদের, উত্তর পাইনি আমরা, বদলে শুধু ঝাঁপিয়ে পড়েছিল উর্দি পরা একদল হায়না। মনে পড়ছে সেদিন লক আপের ভিতরের অকথ্য নির্যাতন। আমরা খুন হইনি কিন্তু মেরে মেরে প্রায় মৃত করে দেওয়া হয়েছিল। দেওয়া হয়নি ওষুধ, জল, স্যানিটারি ন্যাপকিন। চারিদিক নিঝুম হয়ে আসছিল, আর ততোধিক ক্ষত তৈরি হচ্ছিল আমাদের শরীরে, কান্নার স্বর যেন আর বেরোচ্ছিল না আর একটা পর্যায়ে, মনে হচ্ছিল মৃত্যু আসুক, ঘুমাই একটু, আক্ষেপ হচ্ছিল শুধু কমরেডদের যদি একবার বলতে পারতাম- লড়াই যেন না থামে। আর ছিল মাথা উঁচু করে থাকার দৃঢ়তা। আজকের মতোই খুব আক্ষেপ হচ্ছিল সেদিন কেন পারছি না আমার সাথীদের বাঁচাতে, রাগ হচ্ছিল আধো হুঁশেও। ঘষতে ঘষতে তুলেছিল তিন তলায়। উপরে তুলেই বয়স্ক এক অসুস্থ সাথীকে ক্রমাগত পেটানো হয়, ধরে আটকাতে গেলে শুরু হয় আমাদের উপর নির্যাতন, পুরুষ পুলিশদের। তাকে ছুঁড়ে ফেলা হয় একপ্রকার আমাদের উপর, ক্রমাগত লাঠির ও লাথি চলতে থাকে। রাতের নিস্তব্ধতায় যেন আঁচড় কেটে যাচ্ছিল অত্যাচারের সেই নৃশংসতা। পাশের ঘরে মেজবাবুর ক্রমাগত নির্দেশ মার না থামানোর। আর সঙ্গে চলছিল পুরুষ পুলিশদের জামা তুলে আমাদের দিকে ইঙ্গিত, যা স্পষ্টতই ধর্ষনের ইঙ্গিত। ওই অবস্থাতেও প্রশ্ন করেছিলাম একবার তো বলুন কেন মারছেন, বদলে খালি নেমে আসছিল লাঠি আর লাথি। আমার ইউটিআই এর ট্রিটমেন্ট চলছিল তাই বলি পেটে বুকে আর যৌনাঙ্গে প্লিজ মারবেন না আমার ট্রিটমেন্ট চলছে। তারপর থেকে যতগুলো মার মেরেছে সব মুখ বুক পেট আর যৌনাঙ্গের দিকে। আর সঙ্গে বারংবার একই উক্তি- মাথা নিচু করবি কি না বল, চুপ করবি কিনা, গুলি করে দেব। ততবার সাথীরা একই উত্তর দিয়েছে, সোচ্চারে বলেছি করুন গুলি, মারুন কত মারবেন, উত্তর দিন কেন মারছেন। পাইনি উত্তর। চাওয়া হয়েছিল ফোনের পাসওয়ার্ড। দেয়নি কেউ। এটা বলেই যে ফোন আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, আগে বলুন কি অপরাধ আমাদের। এরপর আমার উপর আরও বাড়ে নির্যাতন। ক্রমাগত লাথি মারা হয় বুকে, পেটে, পুরুষ ও মহিলা পুলিশ সবাই। টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় মহিলা সেলে, যেখানে সিসিটিভি লাগানো। মহিলা সাথীরা প্রস্রাব করতে চাইলে তাদের বাধ্য করা হয় ওই সেলে সিসিটিভি আওতা এর মধ্যেই তা করতে। সারারাত ওভাবেই মানুষ থাকার অযোগ্য একটা সেলে ফেলে রাখা হয় আমাদের। বাইরে থানার মধ্যে চলতে থাকে আসর, দুই একজন ছাড়া সবাই দেখি হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে ফেলেছে, একজন যিনি চা ইত্যাদি দেন তিনি ছাড়া কোনও মহিলা নেই, আইটেম সং চলছে জোরে। মোটামুটি পিকনিক পরিবেশ। জানি না কোথায় ছিলেন আমাদের থাকা মহিলা পুলিশ অফিসার। মাঝরাতে এই তীব্র অত্যাচার এর দরুন শুরু হয় আমার তীব্র যন্ত্রণা, বাড়ে ইউটিআই। সেই অবস্থায় ফুটবল খেলার ভঙ্গিতে পুরুষ পুলিশরা এসে সার্কাস দেখার মত দেখতে শুরু করে, ইউটিআই হয়েছে বলার পর ও কেউ বলে আমি নেশা করি, নেশার জিনিস পাচ্ছি না বলে এরকম হচ্ছে, কেউ বলে ওকে গ্যাসের ওষুধ দে, নাটক করছে মাগী পালিয়ে যাবে বলে। শেষে চোখ দাঁড়িয়ে যাবার অবস্থায় একজন পুলিশ কর্মী পুরুষ যিনি টেনে বের করে আমায় সেল থেকে, ওই অবস্থায় আমায় জিজ্ঞেস করে কি নেশা করি, তখন সেল থেকে সাথী বর্ষা চেঁচিয়ে ওদের বোঝাতে থাকে ইউটিআই কি। অত বড় থানায় কেউ জানে না কি ইউটিআই। আবার ঘষতে ঘষতে নামানো হয় নীচে, নির্দেশ দেওয়া হয় আমায় শুতে না দিতে, ধরে রাখতে। জুতো পরতে চাইলে বলে ক্রিমিনাল রা জুতো পরে না। হসপিটালের সামনে গাড়ি নামিয়ে টানতে টানতে ঢোকানো হয় কোভিড ওয়ার্ডে, খুলে নেওয়া হয় মাস্ক। প্রশ্ন করি এটা তো কোভিড ওয়ার্ড, বদলে আবার চড় বসানো হয় গালে। অবাক হই সত্যি, প্রায় মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও খানিক হেসেই ফেলি, বলি এতদিন ধরে মেডিক্যাল কেস করছেন জানেন না কোনটা কোভিড আর কোনটা ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড। জানতাম মারবে আবার, কিন্তু কি করি এটাই যে শিক্ষা লড়ে যাওয়ার। হসপিটালে ওষুধ না থাকায় একই ভাবে টেনে টেনে নিয়ে যায় বারুইপুর হসপিটালে। একই জিনিস করে সেখানেও। এতক্ষণ এ এসে পৌঁছায় আমাদের দায়িত্বে থাকা মহিলা পুলিশ। এসে সেখানে নার্সকে এক প্রকার জোর করে যে ওত ভালো করে কিছু করার দরকার নেই। এরপর যেভাবে ইনজেকশন দেওয়া হয় আর চ্যানেল করা হয় মনে হচ্ছিল মৃত্যু আসুক এবার। কিন্তু মাথা নোয়ায় নি কেউ তখন ও। বারবার একই কথা খালি বলা হচ্ছিল - এই তো আরও মারছি, কি করতে পারবি আমাদের। মাথা উঁচু করেই হেসেছিলাম আমরা। একটু মায়াই হচ্ছিল। মানুষ হয়ে পা চাটা যন্ত্রতে যারা রূপান্তরিত হয় তাদের জন্য করুনাই হয় আমার। ক্যাথিটার করার কথা বলেছিল ডাক্তার, ধমকানি খেয়ে আর বোধহয় সাহস করেনি আমার চিকিৎসা করার। আমার সামনেই আমার আধমরা অবস্থায় ডাক্তার কে লিখতে বলা হয় যে লিখুন ও ফিট। প্রসঙ্গত আমাদের মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে যার প্রতিটা ফেক। আমাদের কোনও মেডিকেল ই করা হয়নি।এসে দেখি সেলে কুঁকড়ে শুয়ে আছে আমার সাথী। আসতেই কোলে এসে মাথা রাখল- সৌমি দি খুব ভয় করছিল, এরা যেভাবে কথা বলছিল তুমি যাওয়ার পর ওরা রেপ করতে পারে জানো। ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে মনে পড়ছিল কত কথা বোধহয় ব্যাথায়,যন্ত্রনায় ঘোর লেগেছিল, দেখছিলাম লাল টকটকে একটা সূর্য। আর ওদিকে সংবিধান অনুযায়ী একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের আওতায় থাকা একটি থানায় সকাল বেলা চলতে থাকে গীতা, হনুমান চালিশা। মহিলা পুলিশমন্ত্রীর পোষা পুলিশ মহিলাদের কাস্টডিতে অত্যাচার করে, যৌনাঙ্গে লাথি মারে, ধর্ষনের হুমকি দেয় আর সমানতার গিমিকবাজি দিয়ে সরকার ভাবে নাগরিকদের ভুলিয়ে দেওয়া যাবে সব সরকারী অপরাধ।

অন্যদিকে বর্তমান ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নারী দিবস হলো সেই দৃপ্ত ঘোষণা- যখন নারীর কাজের অধিকার, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং কাজের বৈষম্যের অবসানের জন্য লড়াইয়ের পাশাপাশি একই সঙ্গে রাশিয়ান মহিলারাও প্রথমবার ১৯১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি 'রুটি ও শান্তি'র দাবিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরোধিতা করেন। ইউরোপের নারীরা ৮ মার্চ শান্তি বিষয়ক কার্যক্রমকে সমর্থন করে বিশাল মিছিলে নামেন। ১৯১৩-১৯১৪ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিবাদ জানানোর একটি প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে।
ভাবুন তো পরতে পরতে মিলে যাচ্ছে সমস্ত নিপীড়নের হিসেব শুধু সময়টা যেন টাইম মেশিনে পাল্টে দিয়েছে কেউ। সেদিন ও তো মহিলারা লড়েছিলেন ইউনিয়নের দাবিতে, শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে। আর আজও এই আটই মার্চ, আমরা মেয়েরা সরাসরি রাষ্ট্রকে তার ক্ষমতায় থাকার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করতে চাই। আমরা মেয়েরা আমাদের দেহের ঘাম রক্ত দিয়ে এই দেশ গড়েছি, নৃশংস রাষ্ট্রের বন্দুকের মুখে আমাদের লড়াই থামবে না।

0 Comments

Post Comment