পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

এই গভীর অসুখ কীভাবে সারবে?

  • 10 September, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 574 view(s)
  • লিখেছেন : মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়
এই আন্দোলন যে আলোর দিশা দেখাতে পারতো তা হল নারী পুরুষ সমতার পথ। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ভোগবাদী ধারণার মূলোচ্ছেদ। রাত কেন, প্রত্যেক দিন পথে ঘাটে ঘরে বাইরে মেয়েরা যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়, তা নিয়েও কথা বলা দরকার। বাসে উঠলে কোথায় বসবো, সন্ধ্যা হলে কোন্ পথে ফিরবো, অদ্ভুত দৃষ্টির সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে চলবো এ তো প্রজন্মের পর প্রজন্মের গল্প। সমাজের এই গভীর অসুখ কীভাবে সারবে?

"It was the best of times, it was the worst of
times, it was the age of wisdom, it was the age of foolishness."

ফরাসি বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে লেখা দুই শহরের গল্পে চার্লস ডিকেন্স যে মন্তব্য করেছিলেন আজ পশ্চিমবঙ্গের জন্য সেটি অত্যন্ত সুপ্রযুক্ত বলে মনে করা যেতে পারে। এই এক সময় যখন সমাজের এগিয়ে থাকা অংশের মানুষের সুপ্ত বিবেক জাগ্রত হয়ে গোটা সমাজকে কাঁপিয়ে তুলছে। সমস্ত রকম সুখ দুঃখ বিষাদ আনন্দ ছাপিয়ে যাচ্ছে এক ভয়ংকর নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং তাকে ঘিরে ঘটতে থাকা সুগভীর এক চক্রান্তের আভাস।

মাত্র কয়েক মাস আগে বহু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বহু অনুমানকে নস্যাৎ করে যে সরকার এই রাজ্যে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, তারাই আজ কাঠগড়ায়। আরজিকর কাণ্ডের পর শাসক দল সমস্ত দিক থেকে মানুষের প্রশ্নের সামনে। আর এ কথা অনস্বীকার্য যে এটি শুধু একটি ঘটনাই নয়, তার আগে থেকে চলে আসা বহু ক্ষোভ আজ এইভাবে বেরিয়ে আসছে। প্রতিবাদের এই লাভাস্রোত কে রোখার  ক্ষমতা এই মুহূর্তে কারো নেই।

প্রতিদিন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ, জমায়েতের আয়োজন হচ্ছে,‌ বিভিন্ন পেশার মানুষ যোগ দিচ্ছেন নিয়মিত ‌ এবং জাস্টিসের দাবিতে আকাশ বাতাস উত্তাল হয়ে আছে। এমতাবস্থায় যা হয়ে থাকে শাসক দল তার মত করে কিছু প্রতিশ্রুতি এবং কিছু সাফাই দিয়ে চলেছে। আর বাকিদের মধ্যে নানান রকমের অস্থিরতা মিলেমিশে একমুখীতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে।।

এ প্রসঙ্গে প্রথমে খেয়াল করে নেওয়া যাক ২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পর থেকে ভারতে নারী নিগ্রহ বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনার বিচারের দৌড় কতটা। তথ্য বলছে ২০১২ সালে গড়ে বছরে ২৫ হাজারটি ঘটনা রিপোর্ট করা হতো। ২০১৬ সালে সেটি হয় ৩৯ হাজার এবং ২০২২ সালে ৩১ হাজার। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো জানাচ্ছে ২০১৮ থেকে ২২ সালের মধ্যে ২৭ থেকে ২৮ শতাংশ অভিযুক্তের দণ্ড হয়েছে। বর্তমানে ন্যূনতম সাজা হলো ১০ বছরের কারাদণ্ড আর অত্যাচারিতার বয়স যদি ১২ কম হয় তাহলে মৃত্যুদণ্ড। এর মধ্যে ২০১৮ সালে একটি শিশু কন্যাকে অত্যাচার ও হত্যার কারণে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। 2019 সালে একজন চিকিৎসককে অত্যাচার ও হত্যার কারণে চারজনকে পুলিশ এনকাউনটার করে। ২০২০ তে হাতরাসেরঘটনা সবাই জানেন। সেখানে নিগৃহীতা নিহত মেয়েটির পরিবারকে ‌ এখনো অব্দি সামাজিকভাবে এক ঘরে করে রাখা হয়েছে, জামিনে ছাড়া পেয়ে অভিযুক্তরা ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নিহত মেয়েটির পরিবারকে একপ্রকার নজরবন্দি করে রাখা আছে। বর্তমান মামলাটিতেও বিচারশালা তারিখের পর তারিখ নিতে শুরু করেছে, অর্থাৎ বিচার দেওয়ার ক্ষেত্রে হয় সম্পূর্ণ প্রমাণ এখনো মেলেনি কিংবা কোনো বিশেষ কারণে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।

মোটামুটিভাবে নির্ভয়া কান্ডের পর কড়া আইন এবং কিছুটা সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও এই অবস্থার বিশেষ ‌ উন্নতি হয়েছে বলে এমনটা বলা যায় না।  আরজিকরের ঘটনার পর পরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের উপর অত্যাচারের ঘটনা সামনে এসেছে।‌ এ অবস্থায় জাস্টিস চাওয়ার দাবিটি যতই জোরদার হোক তার গতি প্রকৃতি নিয়ে ভাবতে হয়।

আর সেখান থেকেই বহু প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। মেয়েদের রাত দখলের একটি ইভেন্টের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম গতবছর কাশীতে। সেখানে রেল স্টেশনের সামনে উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা জমায়েত করেছিলেন রাত দখলের স্লোগান নিয়ে, উত্তরপ্রদেশের মত কঠোর পিতৃতান্ত্রিক রাজ্যে এ এক বিশেষ প্রতিবাদ হিসেবে সংঘটিত হয়েছিল।‌ সেই প্রতিবাদে উপস্থিত ছিলেন মেধা পাটেকার এবং তিনি তার বক্তব্যে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন সমাজের অন্য ভাগের মেয়েদের কথা যারা কঠোর শরীরশ্রম দিয়েও অধিকারের ছিটেফোঁটা পায় না।

পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাত দখলের কর্মসূচি যা দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে তার মধ্য থেকে যে জাস্টিস শব্দটি উঠে আসছে তার উদ্দেশ্য কী? এই দেশের আইন আদালতের উপর গভীর আস্থাশীল কি সবাই? নারী নিগ্রহে অভিযুক্ত মানুষ এ দেশে যে কোনো উচ্চপদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারে, জনপ্রতিনিধি হতে পারে,আবার কুড়ি বছরের সাজা পেয়ে প্রথম চার বছরে দশবার প্যারোলে ছাড়া পেতে পারে। ডেরা সাচ্চা সওদার অভিযুক্ত প্রধান জেলের চেয়ে বাইরেই বেশি থাকেন । আবার এ দেশেরই একটি রাজ্য যেটি নাকি মডেল সেখানে অভিযুক্ত গণধর্ষক ও হত্যাকারীদের শুধু জাতের কারণে ছেড়ে দেওয়া যায় এবং পুষ্পমালায় স্বাগত জানানো হয়। অতএব ধর্ষকের ভয় কেন থাকবে? প্রশ্নটা এইখান পর্যন্ত পৌঁছল কি?

অন্যদিকে জাস্টিসের নামে যারা পথে নামলেন তাদের চেহারাটাও তো তেমন অমলিন নয়। একটি বাইক বাহিনীকে দেখলাম জাস্টিস চাইতে, যে বাহিনীতে কোনো মেয়ে নেই এবং অন্যান্য রাতে এদের দাপটে মেয়ে কেন পথচলতি পুরুষেরাও একটু সরে যান। পিতৃতান্ত্রিক ভাবনার মূলে যে পরাক্রম প্রদর্শন যেটি গিয়ে ঠেকে গণপিটুনি ও গণধর্ষণে, সেটির উপর আঙুল উঠলো কি? প্রায় সব রকমের গোষ্ঠী পথে নেমেছে, বাকি বোধহয় সিবিআই ও আদালত। অবশ্য কাঠুয়ার ঘটনায় আইনজীবীদের ধর্ষকদের পক্ষ মিছিল করতে দেখা গিয়েছে । আর এই টুকরো টুকরো বহুধাবিভক্ত প্রতিবাদ আসলে গোটা বিষয়টিকে ইভেন্ট সর্বস্ব করে তুলছে। চে গুয়েভারার ছবি যেভাবে পুঁজিবাদের টীশার্ট আর মগে শোভা পায়।

সমাজমাধ্যম গালগল্পের জনক। হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির হাত ধরে যে কোনো অনুমান এখন প্রমাণে পরিণত হয়েছে আদালত তার নিক বা না নিক। শুরু হয়েছে শত্রু খোঁজা। প্রথমদিকে প্রাণপণ খোঁজ চলছিল মুসলমান নামের, পাওয়া গেলে এখন  রাতদখলের বদলে পরষ্পরের ঘর জ্বালানো শুরু হয়ে যেত। যে সময় সমাজমাধ্যমের দাপট ছিল না তখনও গুজবের ফলে কি ভয়াবহ কান্ড ঘটতে পারে তা প্রত্যক্ষ করেছিলাম বিহারের ভাগলপুরে। শহরের ছোটখাটো একটি ঝামেলাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে গ্রামে গ্রামে প্রচার করা হয়েছিল যে মুসলমানের হাতে শহরে পড়তে আসা কয়েকশো ছেলেকে কেটে ফেলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভয়াবহ গণহত্যার বলি হয়েছিলেন ‌ সহস্রাধিক গ্রামীণ মুসলমান। পরে জানা গিয়েছিল মাত্র চারটি ছেলে ঘটনার পরে নিখোঁজ হয়ে যায়।

এখন সমাজমাধ্যমে প্রতিদিন নতুন নতুন সংযোজন। অপরিসীম দুর্নীতি তো ছিলই, তার এক একটি রথি-মহারথীর নাম এখন বাজারে ঘুরছে আর সাথে সাথেই তাদের আশেপাশে থাকা যে কোন ব্যক্তিই এখন অভিযুক্ত।‌ ‌ এটা ঠিক যে এই দুর্নীতির প্রতি মানুষের এত বড় প্রতিবাদ হয়তোবা চূড়ান্ত বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কিছুটা ময়নাতদন্ত করবে এবং হয়তোবা জনস্বাস্থ্যের দিকটা আর একবার ভাবা হবে। এই প্রশ্নগুলো খুব জরুরী এবং সেগুলো উঠেও আসছে।

কিন্তু তার পাশাপাশি ‌ পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার তীক্ষ্ণ বর্শাটুকু নারী-নিগ্রহের প্রতিবাদেও হাতিয়ার হয়ে উঠছে এই ঘটনাও দেখতে এলো। সবার আগে রাগ পড়লো গিয়ে লক্ষ্মীর ভান্ডারের  উপর। এটা অবশ্য বর্তমান উচ্চমধ্যবিত্ত এবং তাদের নেতৃত্বে পুষ্ট রাজনীতির ট্যাগলাইন।  নারীর গৃহশ্রমের মূল্যায়নে এরা এতটাই অনিচ্ছুক যে হাজার বারোশো টাকা পাওয়াও এদের কাছে বিরাট অপরাধ। অবশ্য জনপ্রতিনিধিদের ক্রমবর্ধমান ভাতা, সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা এসব নিয়ে কোনো কথাই ওঠে না।
হয়তো এজন্যই তেমন কাউকে দেখলাম না যিনি বাড়ির সহায়িকাকে নিয়ে রাত জাগলেন। তাদেরও হয়ত পেশাগতভাবে পৃথক ডাক দিতে হবে। আবার দেখছি, যে শিক্ষককুল মিড ডে মিলের বরাদ্দ কমানো, অপ্রতুল শিক্ষক, সিলেবাসের মতো জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মিছিল তো দূরের কথা, লিখিত প্রতিবাদ করার কথা কখনো ভাবেননি, তারাও এই বিষয় নিয়ে পথে নামছেন।‌ শিক্ষারত্ন ফেরাচ্ছেন কেউ কেউ, যে রত্ন স্বয়ং শিক্ষককেই আবেদন করে পেতে হয়। অভিনেতা থেকে নেতা হওয়া যেহেতু এখন সবচেয়ে সহজ, তাই আন্দোলনে তাদের যোগদান সিনেমার প্রোমো কি না বোঝা যায় না।
কে না জানে সমাজ মাধ্যমে তৈরি হওয়া আন্দোলনের প্রাণভোমরা সমাজ মাধ্যমেই লুকিয়ে থাকে, বাস্তবের মাটিতে না প্রোথিত হলে তার বিনাশ অনিবার্য।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই হবে কিন্তু কেমন করে প্রতিবাদ করবে সেটা কেউ ঠিক করে দেবে কেন? অনেকে যেমন মূল অপরাধীদের নাম ঠিকানা কুষ্ঠি ঠিকুজি সব জেনে গেছেন। তেমনই যারা পথে নামছেন তাদের অনেকেরই ‌ পূর্ব ইতিহাস জানা। দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্র বিপ্লবে রাজদ্বারে শ্মশানে তারা কার পাশে দাঁড়িয়েছেন সেটাও তো জানা যায়। কার পাশে দাঁড়াবো এই প্রশ্নটা আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভয়াবহ মৃত্যুর পর সেই একটি মেয়ের জন্য আমার যে সমবেদনা তা যদি অপর একটি আদিবাসী মেয়ের জন্য উদ্বেলিত না হয় তাহলে কিন্তু সমস্যা হয়। আবারো সেই পুরনো কথাতেই ফিরে যেতে হয় তাহলে কি ধর্ষণের মূলে যাওয়া হবে না! একই সময়ে বাংলার ছেলেরা একাধিক রাজ্যে ‌ গণপিটুনিতে খুন হয়েছে তাদের কথা কি বলা হবে না! ‌ এই হত্যা তো সেই একই পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রদর্শনের ফল। একটা প্রশ্ন হবে এরকম, ওগুলো অন্য রাজ্যে ঘটেছে, অতএব এই প্রতিবাদের সাথে তার মিলবে না, কেউ বলবেন এর সাথে সরকারের কোনো যোগাযোগ নেই, এটা জনরোষ ইত্যাদি। তলিয়ে দেখলেই এটা স্পষ্ট যে আজ যদি পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা নিয়ে দেশের অন্য প্রান্তে এমনকি দেশের বাইরেও প্রতীকী আন্দোলন হতে পারে, তবে মহারাষ্ট্র বা অসমে হয়ে যাওয়া ঘটনা কেন আলাদা হবে? আর জনরোষ গাছ থেকে পড়ে না, গোরক্ষার নামে মানুষ মারা একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কান্ড। এই সবগুলোকে যুক্ত করতে না পারলে সত্য অধরাই থাকবে।

এদিকে শাসকদল আরেক রকম উৎসাহে মৃত্যুদন্ডের জন্য পথে নেমেছে। কঠোর আইনের কথা চলছে। নির্ভয়া কান্ডের পর কমিশন যে জাস্টিসের পথ দেখিয়েছিল সেটা মৃত্যুদন্ড, তার পর থেকে যে কোনো ধর্ষণকারী নির্যাতিতার প্রাণ নিতে বদ্ধপরিকর যাতে কোনো সাক্ষী না থাকে। মৃত্যুদণ্ড পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার জাস্টিস। মানবাধিকারের বিপ্রতীপে যার অবস্থান। একটি ভয়ঙ্কর ঘটনার জাস্টিস আর একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা। রোকেয়া একটি আদর্শ নারীস্থানের কথা ভেবেছিলেন যেখানে অনিষ্টকারীদের মাথা না কেটে নির্বাসিত করা হয়।

আপাতভাবে এখনও আন্দোলন মৌলিক প্রশ্নের চেয়ে জাস্টিসের প্রতিই আগ্রহী। মনে মনে প্রায় অনেকেই বিচার শেষ করে ফেলেছেন।‌ সন্দীপ ঘোষের ফাঁসি, পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ, সেক্ষেত্রে মহারাষ্ট্র , উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার ক্ষেত্রে কী হবে,  প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি শাসন,  ঠিক কী চাওয়া হচ্ছে বোঝা মুশকিল। সম্মানীয়া রাষ্ট্রপতি এ যাবৎ 'ঘোর তিমিরঘন নিবিড় নিশীথে পীড়িত মূর্ছিত দেশে' কোনো অন্যায়ে এতটা বিচলিত হলেন না, এখন তিনি বলছেন যথেষ্ট হয়েছে। মণিপুরের কবে যথেষ্ট হবে কে জানে!

এই আন্দোলন যে আলোর দিশা দেখাতে পারতো তা হল নারী পুরুষ সমতার পথ। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ভোগবাদী ধারণার মূলোচ্ছেদ। রাত কেন, প্রত্যেক দিন পথে ঘাটে ঘরে বাইরে মেয়েরা যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়, তা নিয়েও কথা বলা দরকার। বাসে উঠলে কোথায় বসবো, সন্ধ্যা হলে কোন্ পথে ফিরবো, অদ্ভুত দৃষ্টির সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে চলবো এ তো প্রজন্মের পর প্রজন্মের গল্প। সমাজের এই গভীর অসুখ কীভাবে সারবে?  অন্যদিকে সবচেয়ে সস্তা শ্রমের কাজ করে যাবে মেয়েরা অসংগঠিত ক্ষেত্রে, তবু এতটুকু সম্মান পাবে না। এক করোনায় কর্মচ্যুত হওয়া মেয়েরা আজ যে কী শর্তে কোথায় কাজ করছে তার একটু আভাস পেলে শিউরে উঠতে হয়।

তবু আমরা আশায় আশায় থাকি। দীর্ঘ পনেরো বছর নারী দিবসের মিছিল নিয়ে হাঁটার সময় যারা সাবধানে এড়িয়ে চলতেন, নারী নির্যাতনের সমস্যা নিয়ে থানায়, হাসপাতালে কিংবা আদালতে যাদের কখনো দেখিনি আজ তারা রাত দখল করছেন, এটাই তো সবচেয়ে বড় পাওয়া।

"শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত সূর্যোদয়।"

0 Comments

Post Comment