পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

আমাদের বিরানব্বই

  • 05 December, 2021
  • 4 Comment(s)
  • 2279 view(s)
  • লিখেছেন : সাদিক হোসেন
৬ই ডিসেম্বরের আগে অব্ধি, আব্বা বিশ্বাস করত, ওরা বাবরি মসজিদ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে। সবই ভোটের খেলা। মসজিদ ভাঙা চাট্টিখানি কথা নাকি। পুলিশ-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থা বলেও তো কিছু আছে? কিন্তু সেই বিশ্বাসটাও একদিন ভেঙে গেল, আজকে যখন সেই বাবরি মসজিদের স্থানে যে রাম মন্দির হচ্ছে তাকেই তীর্থক্ষেত্র বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে, তখন কি আর বিশ্বাস বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে?

কিছু কিছু তারিখ শুধুমাত্র কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনকে বোঝায় না। কিছু কিছু তারিখ মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯২ - তেমনি একটি তারিখ। ৬ই ডিসেম্বর ভারতীয় মুসলমানদের জীবনের উপর সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে পেরেছে। এই দিনটি আমাদের বুঝিয়েছে, আমরা, ভারতীয় মুসলমানরা ভারতরাষ্ট্রের কাছে আবর্জনা মাত্র। আমরা মানবেতর। 'আধুনিক' তথা 'সংস্কারমুক্ত' তথা সুখীগৃহকোণে আমরা শুধুই ইতর, ঘৃণা উদ্রেককারী প্রাণী - গৃহস্থের কাছে ইঁদুর যেমন। অতএব, আমাদের জন্য ইঁদুরকল দরকার ছিল। ৬ই ডিসেম্বর সেই প্রয়োজনীয় ও দরকারি কাজটি করেছে।

আমার বয়েস তখনো ১০ পেরোয়নি। খেলার মাঠ ছাড়া একা কোথাও যাবার নিয়ম ছিল না। তাও ডিসেম্বরের বহু আগে থেকে বিভিন্ন গুজব কানে আসছিল। আমার জন্ম দক্ষিণ ২৪ পরগণার আকড়ায়। ভালো মানের ইট তৈরির কারণে এই অঞ্চলটি বিখ্যাত। ছোটোবেলায়, বাড়িতে না জানিয়ে, আমরা কজন মাঝেমাঝে ইটভাটায় চলে যেতাম। চুল্লির উপরিতলের খানিকটা মাটি সরিয়ে, সেই মাটিতে আলু রেখে দিলে, মিনিট কুড়ির মধ্যেই সেগুলো পুড়ে গিয়ে নরম হয়ে যেত। কচি তালুর উপর গরম আলুর উষ্ণতা টের পাওয়া যেত ঠিক, তবে ছাল ছাড়াতে পারলে সোনায় সোহাগা - জিভের উপর তখন শুধু পোড়া আলু নয়; গাঙ্গেয় উপত্যকা বিরাজ করত। সেই ইটভাটায়, আমাদের ইটভাটায়, শোনা গেল 'জয় শ্রীরাম' লেখা ইট তৈরি হচ্ছে। বাবরি মসজিদ ভাঙবার পর এই ইট দিয়েই নাকি নতুন মন্দির তৈরি হবে। প্রতিটি ইটের গায়ে 'জয় শ্রীরাম' খোদাই করা থাকবে। যে-মাটি আমাদের বাসস্থান দিয়েছে, সেই মাটি আমাদের বাসস্থান কেড়েও নিতে পারে তাহলে?

ইটভাটার গুজবটা কতোটা সত্যি ছিল জানি না। তবে আশপাশের লোকজন যে সহজেই করসেবক হয়ে গিয়েছিল এই খবর জানতে পারতাম আব্বার কাছ থেকে। তাদের কয়েকজনকে কপালে সিঁদুর পরতে আমিও দেখেছি। আব্বার কোনো এক প্রিয় বন্ধু, যার সঙ্গে বহুবছর ধরে অফিসে গিয়েছে, সেও নাকি আব্বার উপস্থিতিতে কপালে হাত ঠেকিয়ে 'জয় শ্রীরাম' বলে অন্যজনের সঙ্গে কথা শুরু করত। আব্বা ঘরে ফিরে বলত, আসলে ভয় দেখাতে চাইছে। জানোয়ার!

৬ই ডিসেম্বরের আগে অব্ধি, আব্বা বিশ্বাস করত, ওরা বাবরি মসজিদ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে। সবই ভোটের খেলা। মসজিদ ভাঙা চাট্টিখানি কথা নাকি। পুলিশ-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থা বলেও তো কিছু আছে?

প্রশ্নটা কাকে করত জানি না। নিজেকেই করত হয়ত। গান ভালোবাসা মানুষটা কতোদিন গান শোনেনি।

৬ই ডিসেম্বরে শুধু তো একটা মসজিদ ভাঙা হয়নি, মসজিদের সঙ্গে ভেঙে গিয়েছিল রাষ্ট্র সম্পর্কে আমাদের ধারণা। প্রতিবেশী সম্পর্কে আস্থা। ক্রমশ একটা থমথমে পরিবেশ আমাদের সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলল। মসজিদ ভাঙার খবর কখন পাওয়া গিয়েছিল মনে নেই। তবে মনে আছে, সন্ধেবেলা আব্বাকে ডাকতে এলো পাড়ার লোকজন। হঠাৎ করে আক্রমণ নেমে এলে কী পন্থা নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামল। তখনো বাড়ি ফেরেনি আব্বা। রাতের দিকে বাজারের দিক থেকে বুঝি কোনো অঘটনের খবর এসেছিল। পরে জেনেছিলাম, আমাদের স্কুলের ঠিক সামনে চাচার দোকান লুঠ হয়েছে। চাচা সারাজীবন আর সেই দোকান খুলতে পারেনি। দোকানটা বন্ধই পড়েছিল বহুদিন। আব্বা ফিরল বোধহয় অনেক রাতে। আমি ঘুমোনর ভান করে জেগেছিলাম। মাকে আব্বা বলছিল, কদিনের জন্য বাপের বাড়ি যাবে?

ওখানে বুঝি আলাদা কিছু?

আব্বা আর উত্তর দেয়নি। সারারাত আমরা তিনজনা ঘুমোনর ভান করেছিলাম।

চাচার দোকান ভাঙা ছাড়া আমাদের এখানে আর কিছু ঘটেনি। টানা বেশ কয়েকদিন কার্ফু ছিল। আব্বা অফিস যেত না। আমার স্কুল ছুটি। তবে বাড়ির উঠোন ছাড়া বাইরে বেরনোর হুকুম ছিল না। একদিন সন্ধেবেলা দেখেছিলাম, পাড়ার ছেলেরা আমাদের মাঠে শাবল দিয়ে গর্ত খুঁড়ছে। সেই গর্তের ভেতর লুকিয়ে রাখা হচ্ছে পেটো। আত্মরক্ষার অস্ত্র সেই সন্ধেবেলা কালো কালো মানুষদের মারফত দেখেছিলাম। ছায়া ছায়া ভয়। কুয়াশা কুয়াশা গাছ। আমাদের ফুটবল মাঠ আর আমাদের জন্য নয়। সেটি তখন অস্ত্রধারণ করেছে। অস্ত্রের দ্বারা গর্ভবতী হল আমাদের দশ না-পেরনো ছোটোবেলা।

আমার ফুফুর বাড়ি দাঙ্গাবাজরা আক্রমণ করেছিল। তারা পালিয়ে এসেছিল আমাদের এখানে। মুহুর্তের ভয় ফুফুকে সারাজীবনের রুগী করে রেখেছে।

ডিসেম্বরে আমার জন্মদিন। আব্বা কথা দিয়েছিল একটা ব্যাগি সোয়েটার কিনে দেবে। সেবছর জন্মদিন পালন হয়নি। কোনো সোয়েটার কেনা হয়নি। আমার জন্মদিন ১১ই ডিসেম্বর। ঐদিন CAA আইন পাশ হয়েছিল। আমার জন্মদিন বোধহয় আর কখনো পালন করা হবে না!

সারা ডিসেম্বর স্কুল বন্ধ ছিল। বেশ কয়েকটা শান্তিমিছিল হয়েছিল সারা মাস ধরে। সারা মাস ধরে পাড়ায় পাড়ায় রাতজেগে জোয়ান মরদেরা পাহারাও দিত। যে-রাতে আব্বার ডিউটি পড়ত, মা ফ্লাস্কে করে চা করে দিত। তখন কি ইন্ডিয়া ক্রিকেট টিম দক্ষিণ আফ্রিকার ট্যুরে গিয়েছিল? আবছা মনে পড়ছে, আমরা রাত জেগে খেলা দেখতাম। একদিন রাতে, খেলা দেখছিলাম বোধহয়, হঠাৎ খবর এলো, আজ রাতেই আমাদের পাড়া আক্রান্ত হতে পারে। খবর পাওয়া মাত্রই ঘরের সবকটা লাইট নিভিয়ে দেওয়া হল। সদর দরজায় তালা ঝোলানো হল। পাড়ার মুরুব্বিরা, সঙ্গে আব্বাও ছিল, রওনা দিল প্রতিবেশীর পাড়ায়। সেইরাতে পুনরায় শান্তি আলোচনা হল।

আক্রান্ত হলে কে কী ভাবে প্রতিআক্রমণ করবে - এই নিয়ে আমরা ছোটোরা বিভিন্ন ফন্দি আঁটতাম। এটা খেলার মতো। প্রতিবেশীকে শায়েস্তা করবার খেলা। কেউ বলত তাদের বাড়িতে প্রচুর লঙ্কার গুড়ো রাখা আছে, কেউ বলত ছাদ থেকে ফুটন্ত জল ফেলতে হবে, কার কাছে যেন ধারাল বল্লম রয়েছে… এইসব। আমার দাদুর কাছে একটা লাইসেন্সড বন্দুক ছিল। সেটা অনেক আগেই থানায় জমা দিয়ে আসতে হয়েছিল। আমাদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। বড়ো বঁটিও ছিল না। ফলকাটার ছুরি কোনো কাজের নয়। আমি আমার বন্ধুদের কাছে হাবা ব'নে যেতাম। একদিন আব্বাকে বললাম, যেভাবে হোক একখানা বল্লম কিনতে হবে।

বল্লম?

হ্যাঁ।

কেন?

ওরা যদি মারতে আসে?

আব্বা বলেছিল, এতো শীতকালে কেউ কারোকে মারতে আসে না।

মানে?

মানে এই ভয়ানক শীতে কারো কী খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে অন্যের বাড়িতে ঢুকে মারতে আসবে!

যাবাবা।

এতে যাবাবার কী হল?

কিন্তু যদি আসে?

আসবে না।

তাও যদি আসে?

ঘুমিয়ে পড়বি। ঘুমন্ত মানুষকে কেউ মারে না।

স্কুল খুলল সেই জানুয়ারিতে। হেডস্যার সবাইকে মাঠে ডেকে বললেন, এই কদিনে তোমরা অনেক কিছু শুনেছ, অনেক অভিজ্ঞতাও হয়েছে। কিন্তু সেইসব কথা আর অভিজ্ঞতা যেন স্কুলগেটের ভেতরে না আসে।

আমরা, স্কুলের বন্ধুরা, সত্যিই ৬ই ডিসেম্বর নিয়ে কোনো গল্পগুজব করতাম না। সেটাকে যেন স্মৃতি থেকে বের করে দেওয়াটাই উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছিল। তবে 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি' নিয়ে রচনা লিখতে হত। সেইসব লেখায় আমরা কখনো নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা লিখতাম না। শিক্ষকরাও চাইতেন না আমরা সেইসব লিখি। হাজার হাজার মিথ্যা ও বানানো ও মহাপুরুষদের বাণী দিয়ে আমরা 'সম্প্রীতি' রচনা করতাম। শিক্ষকরা সেই সম্প্রীতির সাজ দেখে খুশি হতেন। ভালো নম্বরও দিতেন।

আমাদের মফঃস্বলে প্রতিবছর ৬ই ডিসেম্বর পালন করা হত। তখন নাইন-টেনে পড়ি। সদ্য লেখা শুরু করেছি। আমাদের বিভিন্ন সভায় লেখা পড়তে ও শুনতে ডাকা হত। গণসঙ্গীত গাওয়া হত। অনেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বক্তৃতা করতেন। কন্ঠ কাঁপাতেন। বেশ একটা উৎসবের মতো। এইসব সভায় আমরা যারা যেতাম, তারা 'অসাম্প্রদায়িক মানুষ'-এর সার্টিফিকেট পেতাম। আমরা কব্জিতে বেলফুল লাগাতাম না, পাঞ্জাবিতে আতর লাগাতাম না - পরিবর্তে রবীন্দ্র-নজরুলের কবিতা পড়তাম। আমরা কখনো প্রশ্ন করিনি, এই যে এতোজন করসেবক মসজিদ ভাঙতে গেল, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে? কেন তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা হয়নি? কেন? কেন তারা পার পেয়ে যাবে?

আমরা এই প্রশ্নগুলো করি না। আমরা শুধু উত্তর পেয়ে যাই - পশ্চিমবঙ্গে তো দাঙ্গা হয়নি। হ্যাঁ, পশ্চিমবঙ্গে তেমন দাঙ্গা হয়নি। দাঙ্গাটাই হয়নি। কিন্তু যে বিশ্বাসঘাতকতা রাষ্ট্র করল তার হিসেব দেবে কে? আমাদের অসহায়তার কথা কেন সাহিত্যে, সিনেমায়, নাটকে লিপিবদ্ধ হল না?

গৃহস্থ কী আর ইঁদুরের অধিকার নিয়ে চিন্তিত হয়! হয় না। বরঞ্চ উল্টো - ইঁদুরকে তাড়াতে পারলেই গৃহস্থের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

যাদের উপর ভার ছিল, তারা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে বলেই ৬ই ডিসেম্বরের প্রভাব আরো গভীরতর হয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলের কথা বলতে পারি না, তবে আমাদের অঞ্চলের মুসলমানরা মেনেই নিয়েছে, তারা বাঙালি নয়; 'মহামেডান'। বাঙলার জ্ঞানতত্বে তাদের জায়গা ডাস্টবিনে। সে তাই ডাস্টবিনটাকে সাজিয়ে তুলছে হরেকরকম আবর্জনা দিয়ে। সে তার পোশাকে, বাচনভঙ্গিতে আলাদা হতে চাইছে। আলাদা হয়ে গিয়েছে। আত্মসম্মানের প্রতি তার আর আকর্ষণ নেই; আত্মরক্ষাই একমাত্র পন্থা এখন।

নাগরিকত্ব আইন পাশ হবার পর, যদি মুসলমান এলাকার কোনো জেরক্সের দোকানের সামনে দাঁড়াতেন, তাহলেই বুঝতে পারতেন, কতোটা অসহায় হয়ে পড়েছে একটা জনগোষ্টী। দলিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সার্টিফিকেট তারা জেরক্স করে নিচ্ছে। ফাইলবন্দি করে রাখছে। কারোর নামের বানান ভুল, কারোর বাবার নামের বানান ভুল - সে বিভিন্ন নথি নিয়ে দৌড়চ্ছে। এ এক ট্রাজিক ও হাস্যকর দৌড়। এ নিজের থেকে নিজের দৌড়ে পালানোর দৌড়। দেশ থেকে যাতে চলে যেতে না হয়, সেজন্য দেশের মধ্যে দৌড়। এই দৌড় অশ্লীল কিন্তু পবিত্র, এই দৌড় নাছোড় তবু হেরে যাওয়া, এই দৌড় একজন গম্ভীর ক্লাউনের যাকে বাঘের খাঁচায় পুরে দিয়ে ক্লাউনের অধিকার নিয়ে মেধাবী আলোচনায় বসেছে সার্কাসের মালিকগণ!

ক্লাউন ছাড়া আর কী! নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আর কোনো দল আন্দোলনে যাবার প্রস্তুতি নেয় না। তারা ঐ একবার শাহিনবাগে, পার্কসার্কাসে গিয়েছিল - গিয়ে অসাম্প্রদায়িকতার সার্টিফিকেট নিয়ে নিয়েছে। এই তাদের পাওনা। ভাগ্যিস নাগরিকত্ব আইন হয়েছিল। ভাগ্যিস ৬ই ডিসেম্বর হয়েছিল। এই দিনগুলো কারোকে লাথি মারে, কারোকে অসাম্প্রদায়িকতার সার্টিফিকেট দিয়ে গলায় মালা পরায়।

৬ই ডিসেম্বর - বাবরি ধ্বংস। ১১ই ডিসেম্বর নাগরিকত্ব আইন। একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। যে ভয়ানক ছোটোবেলা আমি কাটিয়েছি, সেই ভয়ানক ছোটোবেলা আমার মেয়েও কাটাচ্ছে।

এ এক বৃত্ত। চারিদিক এতোই স্বাভাবিক যে মনে হবে প্রাকৃতিক। এই বৃত্তটি প্রাকৃতিক তবে। চাঁদের মতো গোল। সুন্দর। তাকিয়ে দেখুন - ঐ, মায়াবী জ্যোৎস্না নেমেছে।

4 Comments

subhradip ghosh

06 December, 2021

লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা লাগে নিজের সংখ্যাগুরু অস্তিত্বের জন্য। যতই "অসাম্প্রদায়িক" "মুক্তমনা" হই না কেন, যতই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করি না কেন, দিনের শেষে এই রাষ্ট্রের , এই সমাজের কাছে আমি সংখ্যাগুরু, সাদিক সংখ্যালঘু। আমি লেজিটিমেট বাঙালী, আর সাদিক কেবলই "মহামেডান", "অবৈধ অনুপ্রেবশকারী" কৌমের একজন। সাদিকের মেয়ে তরী আর আমার ছেলে সার্থক একদম একবয়সী। অথচ তরীকে বাঁচতে হবে প্রতি মুহূর্তের অনিশ্চয়তায়, আউটকাস্ট হয়ে, যে অনিশ্চয়তা তৈরির একমাত্র দায়িত্ব আমাদের, সংখ্যাগুরুদের। হাজারো মিঠে বুলি, হাজারো গদ্য পদ্য গানের সম্ভার এই সাইকোলজিক্যাল তফাত ঘোচাতে পারবে না। We have failed you Sadique, we have failed you Tori. ক্ষমা চাইবার মুখও নেই। অসহায় লাগছে, ভঙ্গুর লাগছে ... এইটুকুই।

সুমন সেনগুপ্ত

06 December, 2021

লজ্জায় মাথা নীচু করতে হয়।

আবদুল বাসির

06 December, 2021

যে সাংস্কৃতিক inferiority complex থেকে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা হয়ে ছিল, সেই সংস্কৃতি ২৯ বছরে প্রমাণ করেছে তা কত অসার, হিনমন্য, দুর্বল তাই হিংস্র, তীব্র জাতপাতে বিশ্বাসী, অমানবিক ও মানবসভ্যতার সম্পূর্ণ বিরোধী। ইতিহাস বলছে এই মিথ্যা সাময়িক, তা ধ্বংস হওয়া শুধুমাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। এটি সভ্য মানুষের পরীক্ষা মাত্র। এত অসভ্য সংস্কৃতি কখনোই টিকতে পারবে না পৃথিবীতে। প্রতিটি মানুষকে ঠিক করতে হবে সে ধর্ষক না মানুষ। যদি মানুষ হয় সে এই বর্বরতার প্রবল বিরোধিতা করবে। আর যদি আপন কন্যার ধর্ষক হয় (দেবদাসী সংস্কৃতি) আর জাতপাতের ঘৃণায় বিশ্বাস করে তবে, নিশ্চিত থাকুক তার জীবন অভিশপ্ত হবে। আর যে ব্রাহ্মণ্যবাদ দ্বারা ৯৭% ভাগ হিন্দুকে তারা কুকুরের ইতর মনে করে, সেই সংস্কৃতি পচা লাশের পচে যাওয়ার মতই প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক ঘটনা মাত্র।

সুশান্ত কর

07 December, 2021

সুন্দর লিখেছেন। একদিন সূর্যের ভোর আসবেই। আর কী বলতে পারি?

Post Comment