আমি মহামান্য আদালতের রায় পড়েছি। আমি ব্যথিত যে আমাকে সেই আদালতের অবমাননার দোষে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যার মহিমা আমি একজন অনুগত রক্ষী হিসাবে রক্ষা করবার চেষ্টা করেছি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে --- দরবারী হিসাবে নয়, হাততালি দেওয়ার লোক হিসাবে নয়। এই কাজ করার জন্য আমাকে যথেষ্ট মূল্য দিতে হয়েছে --- ব্যক্তিগত মূল্য এবং পেশাগত মূল্য। আমাকে শাস্তি দেওয়া হতে পারে বলে আমি ব্যথিত নই, আমি ব্যথিত কারণ আমাকে একেবারেই ভুল বোঝা হয়েছে।
ন্যায়বিচারের ব্যবস্থাকে “বিদ্বেষপূর্ণ, রুচিহীন, সুচিন্তিত আক্রমণ” করার দোষে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে দেখে আমি হতচকিত। আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি যে এরকম আক্রমণ করার পিছনে আমার কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রমাণ না দিয়েই আদালত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। স্বীকার না করে উপায় নেই, যে অভিযোগের ভিত্তিতে এই সুয়ো মোতু নোটিশ দেওয়া হয়েছে, আদালত তার কোন কপি আমাকে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি দেখে আমি হতাশ। এমনকি আমার উত্তরের হলফনামায় আমি যে মন্তব্যগুলো করেছি, বা আমার কৌঁসুলির অসংখ্য সাবমিশনেরও, আদালত কোন জবাব দেননি।
আমার পক্ষে বিশ্বাস করা শক্ত যে কোর্টের মতে আমার টুইট “ভারতীয় গণতন্ত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের ভিতটাই নাড়িয়ে দিয়েছে”। আমি শুধু আবার বলতে চাই যে ঐ দুটো টুইট আমার প্রকৃত বিশ্বাসেরই প্রতিফলন, এবং তার প্রকাশ যে কোন গণতন্ত্রে অবশ্যই অনুমোদনযোগ্য হওয়া উচিৎ। যথাযথ কাজ করার জন্য বিচার বিভাগের নিজের কাজকর্ম নিয়েও প্রকাশ্যে আলাপ আলোচনাই প্রার্থনীয়। আমি বিশ্বাস করি যে সাংবিধানিক কাঠামো বজায় রাখার জন্য গণতন্ত্রে যে কোন প্রতিষ্ঠানের খোলামেলা সমালোচনা আবশ্যিক। আমরা আমাদের ইতিহাসের সেই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি যখন উচ্চতর আদর্শকে রুটিন দায়িত্বের ঊর্দ্ধে স্থান দিতেই হবে, যখন সাংবিধানিক কাঠামোকে রক্ষা করা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত ভদ্রতা রক্ষার চেয়ে বেশি জরুরী, যখন বর্তমানের কথা ভেবে ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনে পিছপা হওয়া চলবে না। এই সময় চুপ করে থাকা কর্তব্যে অবহেলার সামিল, বিশেষ করে আমার মত আদালতের একজন অফিসারের পক্ষে।
আমার টুইটগুলো আর কিছুই নয়, আমাদের গণতন্ত্রের ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে আমি যে কাজকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব বলে মনে করেছি, তা পালন করার সামান্য প্রয়াস মাত্র। আমি অন্যমনস্ক হয়ে টুইটগুলো করিনি। যা এখনো আমার প্রকৃত বিশ্বাস তা-ই টুইট করে প্রকাশ করার জন্য যদি আমি ক্ষমা চাই তাহলে সেটাই হবে কপট এবং অবমাননাকর। অতএব, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী তাঁর বিচারসভায় যা বলেছিলেন, আমি কেবল সেটুকুই সরল করে বলতে পারি --- আমি ক্ষমা ভিক্ষা করছি না। আমি বিশালত্বের কাছে কোন আবেদন করছি না। সুতরাং আমি সানন্দে সেই শাস্তি প্রার্থনা করছি যা আমার প্রাপ্য, আমার সেই কাজের জন্য পাওয়া উচিৎ যাকে আদালত অপরাধ বলে রায় দিয়েছেন, আর আমার কাছে যা নাগরিকের সর্বোচ্চ কর্তব্য।
আমাদের সন্তানরা যখন বড় হবে, তখন হয় আজকের এই অন্ধকার আর থাকবে না, নয় গাঢ়তর হবে। তখন তাদের যা যা পড়াতে হবে কিভাবে এই অন্ধকার কাটল তা বোঝানোর জন্য, অথবা কেন কাটল না তা বোঝানোর জন্যও যখন বলতে হবে অন্ধকারেও কারা আলো জ্বেলে রেখেছিল, তখন কাজে আসবে সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত প্রশান্ত ভূষণের এই বিবৃতি