পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ফেসঅ্যাপ চ্যালেঞ্জ --- নজরদার রাষ্ট্রের দিকে আরও এক ধাপ?

  • 20 July, 2019
  • 0 Comment(s)
  • 2358 view(s)
  • লিখেছেন : সুমন সেনগুপ্ত
এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীর বহু মানুষ ফেসবুকের একটি ফেসঅ্যাপ চ্যালেঞ্জে মগ্ন। সকলে নিজের ছবি দিয়ে বৃদ্ধ হলে কেমন লাগবে বা কোনও পুরুষকে মহিলার মতো দেখতে হলে বা উল্টোটা হলে কেমন লাগবে সেই ‘খেলাতে’ ব্যস্ত? কিন্তু এটা কি শুধুমাত্র একটা ‘খেলা’ নাকি এটার পিছনে অন্য কিছু আছে?

এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীর বহু মানুষ ফেসবুকের একটি ফেসঅ্যাপ চ্যালেঞ্জে মগ্ন। সকলে নিজের ছবি দিয়ে বৃদ্ধ হলে কেমন লাগবে বা কোনও পুরুষকে মহিলার মতো দেখতে হলে বা উল্টোটা হলে কেমন লাগবে সেই ‘খেলাতে’ ব্যস্ত? কিন্তু এটা কি শুধুমাত্র একটা ‘খেলা’ নাকি এটার পিছনে অন্য কিছু আছে? আসলে এই মোবাইল অ্যাপটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্তেলিজেন্সের সাহায্যে মানুষের মুখকে দ্বিগুণ বা ৩ গুন করলে কেমন লাগবে সেটা দেখাচ্ছে। অনেকেই বলছেন এটা অতি সাধারণ নিরীহ একটা খেলা। কিন্তু সত্যিই কি তাই? যারা বিষয়টি সম্বন্ধে জানেন তাঁরা কিন্তু সাবধান করছেন। এই মোবাইল অ্যাপটি তৈরি করেছে রাশিয়ার সেন্ট পিটারসবারগের ওয়ারলেস ল্যাব বলে একটি কোম্পানি ২০১৭ সালে। প্রশ্ন উঠেছে যে এতে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য কি সুরক্ষিত থাকবে না কি এর মধ্যে দিয়ে বেশ কিছু ব্যক্তিগত জিনিষ কিছু বৃহৎ কোম্পানি নিয়ে নিচ্ছে সেটা নিয়েই কথা উঠে গেছে। আমরা অনেকেই হয়তো এটা ব্যবহার করে ফেলেছি ইতিমধ্যেই, ওদের নিয়মকানুন যে লেখা আছে সেটা না পড়েই। বেশী খুঁটিয়ে পড়তে হবে না একটু চোখ বোলালেই দেখা যাবে যে এই ফেসঅ্যাপ আমাদের ফোনের গ্যালারি, কন্টাক্ট সহ সমস্ত কিছুর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। শুধু তাই নয় সেগুলোকে নিয়ে নিজের পছন্দমতো ভাবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে যা ইচ্ছে করতে পারে। এই ব্যবহারটা কিন্তু একবারের জন্য নয় এটা সারাজীবনের জন্য এবং এখান থেকে বেরোনোর কোনও উপায় নেই। এর পাশাপাশি আরও একটা কথা মনে করিয়ে দিতে হয় এটা যে বা যারা ব্যবহার করছেন তাঁরা শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষতি করছেন এমনটা নয় তাঁর বন্ধুতালিকায় যারা আছেন তাদেরটাও ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে দিলেন। এরপর কি হতে পারে ? একজন মানুষের নাম কিংবা ব্যবহিত নাম যদি কোনও হ্যকার জানতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে কিংবা আগে কোনও পোস্ট কেউ করেন তাঁকে নজরে রাখাটা অনেক বেশী সুবিধাজনক হয়ে যাবে। প্রতিটি মানুষের নাম বয়স শহর ইত্যাদি যদি জানা থাকে অন্য কারুর তাহলে যার কাছে এই তথ্য আছে সে কি পরিমাণ ধনী সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষেরই হয়তো নেই কিন্তু বিপদটা যে ভয়ানক সেটা সম্পর্কে বহু মানুষ কিন্তু বারবার সচেতন করছেন।

বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জুকেরবারগের নামে অভিযোগ উঠেছিল যে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য একটি ব্রিটিশ কোম্পানি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সাহায্য নেওয়া হয়েছিল তাহলে কি আগামী দিনে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়েও সেরকম কিছু হবে কিনা সেটা বলা যাচ্ছে না কিন্তু এই তথ্য দিয়ে যে মানুষের ব্যাঙ্কের তথ্যও যে যাবে না সেই নিশ্চয়তা নেই। এই মুহূর্তে পৃথিবী চালাচ্ছে মূলত ৪ থেকে ৫টি কোম্পানি। আমাজন, গুগল, ফেসবুক এবং অ্যাপেল। তাঁরাই এই মুহূর্তে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। যেই কারণে তাঁদের প্রয়োজন তথ্য। এখনও অবধি দেখা গেছে যে এই ফেসঅ্যাপের মাধ্যমে এই রাশিয়ান কোম্পানিটি প্রায় ১৫০ কোটি মানুষের প্রাথমিক তথ্য হাতে পেয়ে গেছে, যার মধ্যে নাম আছে, ফেসবুক কি নামে ব্যবহার করেন, কি কি বিষয় আপনার পছন্দের তালিকায় আছে? এগুলো পেলে কোনও মানুষকে তাঁদের পছন্দমতো পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা কি খুব কঠিন কাজ হবে?

বায়োমেট্রিক্স মানে কি ?

হাতের ছাপ, চোখের মণি কিংবা মুখের ছবি এই সবগুলোকেই বায়ওমেট্রিক্স বলে। এইটা কি অদ্বিতীয় ? মানে এটা কি অভিনব? নকল করা সম্ভব নয় ? কিন্তু সত্যি কি তাই ? আচ্ছা ধরা যাক আপনাকে আপনার পরিচিত দুই বন্ধুর ছবি দেওয়া হল, তারপর সেই ছবিগুলো আরও ১০ টা ছবির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হল। তারপর আপনাকে বলা হল খুঁজে বার করতে। আপনি ১০ সেকেন্ডে বার করে দেবেন। তারপর ওই ছবি দুটো ১০০ ছবির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হল, আপনার খুঁজে বের করতে কতক্ষণ লাগবে? ধরা যাক ১০ মিনিট। একইরকম ভাবে যদি ছবি দুটো ১ লক্ষ ছবির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় আপনি খুঁজে পাবেন তো ? এই অনুশীলনটাকে বলে মানুষের ছবি মেলানো এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া । বায়োমেট্রিক দিয়ে চেনাটাও এইরকমই একটা পদ্ধতি। কম্পিউটার বায়োমেট্রিক্স দিয়ে মেলানোর চেষ্টা করে। সেও ছবির সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করে। চোখের মণি, হাতের ছাপ বোঝার চেষ্টা করে, একটা পর্যায় অবধি পারে, তারপর সেও ব্যর্থ হয়। এটা একটা সম্ভাবনা মাত্র। এই সম্ভাবনার ফল সঠিক হতেও পারে আবার ভুল ও হতে পারে। যদি ভুল হয় তাহলে কি সেই মানুষটির কোনও অস্তিত্ব থাকে না ?

ভারতের মতো দেশের ক্ষেত্রে বলা যায় যেখানে প্রায় কেউই সচেতন নন তাঁদের শরীরের ওপর তাদেরই একমাত্র অধিকার আছে এই বিষয়ে সেখানে এই ধরনের একটি মোবাইল অ্যাপে তাঁদের কত বড় ক্ষতি হতে পারে সেটা আলোচনা করাই বৃথা। এরসঙ্গে আবার যদি যুক্ত হয় কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রক থেকে জারি হওয়া নির্দেশনামা যে এরপর অপরাধী সনাক্তকরনের জন্য ‘ফেসিয়াল রেকগনিশন’ পদ্ধতি চালু হবে তাহলে কি বলা যায় এই ফেসঅ্যাপের মাধ্যমে ছবি নেওয়াটা সত্যিই কাকতালীয় বলা যায়? কিছুদিন আগেই আধার নিয়ে হইচই হয়েছে তথ্য চুরি হওয়া নিয়ে, এরপর আধারের সঙ্গে ফেসিয়াল রেকগনিশন কে মিলিয়ে ভোটের কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়ার প্রস্তাবও আসছে। যেখানে এখনও এটাই প্রমাণিত হয়নি যে আধার আদৌ কোনও পরিচয়পত্র কিনা, আদৌ এটা কি নাগরিকত্বের প্রমাণ নাকি সেখানে এই প্রস্তাব কি নাগরিকদের ওপর নজরদারি ছাড়া অন্য কিছু?

0 Comments

Post Comment