পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ডিজিটাল ইন্ডিয়া আর ভারত: কেক আর রুটির গল্প

  • 25 February, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 1239 view(s)
  • লিখেছেন : ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়
কিছু কিছু মানুষের কথা শুনে মনে হয়, এইমাত্র টপ করে ইন্ডিয়াতে এসে পড়লেন। চারপাশে সব ডিজিটাল, সবাই ডিজিটাল। সবার সব আছে, অভাব, অনটন, অসুবিধা, অপারগতা বলে দুনিয়ায় কিছু নেই। একটা দেশের ইতিহাস, ভূগোল, সমাজতত্ত্ব বলে কিছুই নেই তাদের সামনে। কারণ "তাদের" প্রয়োজন নেই। এই যে দুগ্গা দুগ্গা বলে স্কুল খুলছে, আমরা আঙুল গুলো জড়ো করে আছি, আর যেন বন্ধ না হয়

ইন্ডিয়া আর ভারতের দূরত্ব কি ক্রমশঃ বাড়ছে? ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কতটা গড়ে উঠতে পারলো? কিছু কিছু মানুষের কথা শুনে মনে হয়, এইমাত্র টপ করে ইন্ডিয়াতে এসে পড়লেন। চারপাশে সব ডিজিটাল, সবাই ডিজিটাল। সবার সব আছে, অভাব, অনটন, অসুবিধা, অপারগতা বলে দুনিয়ায় কিছু নেই। একটা দেশের ইতিহাস, ভূগোল, সমাজতত্ত্ব বলে কিছুই নেই তাদের সামনে। কারণ "তাদের" প্রয়োজন নেই। এই যে দুগ্গা দুগ্গা বলে স্কুল খুলছে, আমরা আঙুল গুলো জড়ো করে আছি, আর যেন বন্ধ না হয়। তার মধ্যেও উল্টো গাওয়ার মানুষ বিদ্যমান। বলছেন, স্কুল বন্ধ থাকুক, সেটাই চাই। আকাশ আছে, বাইজু আছে, আরও কত বন্দোবস্ত আছে ডিজিটালে। একটা বিষয়ে তিন চার জন শিক্ষক দিতে পারবে কোনো স্কুল? সেখানে কোনো শিক্ষকের তেমন যোগ্যতা না থাকলেও মেনে নিতে হবে। স্কুল পরিস্কার করতে অন্তত দেড়শো লোক দরকার। আছে? আমাদের বাচ্চাদের বিপদের মুখে পাঠাবো না। -- ঐ বাইজু, আকাশ এসবের সুযোগ কজনের ভাগ্যে জোটে এ দেশে? তাদের কী হবে? -- ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর রাহুল গান্ধী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও কত বছর বাড়িতে পড়াশোনা করেছে। তাতে কী ক্ষতি হয়েছে? -- গান্ধী পরিবারের বাচ্চাদের সঙ্গে বাকি দেশের বাচ্চাদের তুলনা? তাদের মোবাইল, ট্যাব, ইন্টারনেট কোথায়? পৌঁছেছে সব জায়গায়? তারা পড়বে না? কোনো কোনো পরিবারে প্রথম প্রজন্ম পড়াশোনা করছে। বাড়িতে পড়া দেখিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। তারা তো দু বছরে কাজে লেগে গেল বাবা মায়ের সঙ্গে। যা শিখেছিল ভুলে গেছে। তারা দেশ নয়? পড়বে না? -- তাদের জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। -- কবে? কতদিনে? এখন এই মুহূর্তে যারা ঘটমান বর্তমান তাদের কী হবে? আর তেমন উত্তর পাওয়া গেল না। আর উত্তরও ছিল না হয়তো। কিম্বা, কোনো শিশু স্কুলে গিয়ে কাঁচা বাদাম গাইছে সেটা নিয়ে হাসাহাসি মস্করাই হয়তো উত্তর। ঐ দেখো ওদের বাচ্চাদের কী অবস্থা। একটা সংখ্যার নাগরিক মানুষ তাদের অবস্থা ও অবস্থান দিয়ে বিচার করে যান, যাচ্ছেন, পুরো দেশকে।

আরেকজনের গল্প বলি। তিনি দেখি একজন অশীতিপর বৃদ্ধকে সমানে বলে যাচ্ছেন, আপনার গুগল পে নেই কেন? আপনার বাড়ির ঠিকানা জিপিএস করুন। সে বেচারা বৃদ্ধ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনে কেবল নম্বর ডায়াল টুকু করতে পারেন। কেন তিনি এসব সিস্টেম এখনো শিখে উঠতে পারেননি বিজাতীয় ভাষায় সেই অভিযোগ শুনতে শুনতে কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। আরেক ডিজিটাল বাবু একদিন এক রিক্সাওয়ালাকে ধরেছেন, তোমার কেন গুগল পে নেই? ফোন পে নেই? সে বেচারা দশ টাকার জন্য এত কথা, এত জ্ঞান জীবনেও শোনেনি। কাঁচুমাচু মুখে বলল, আমার ওসব নেই দাদা। তখন ডিজিটাল দাদা তাকে একরাশ জ্ঞান দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করেন, এবার বুঝে গেছো? তোমার ফোন পে'র নম্বর বলো। সাতকান্ড রামায়ণ পড়ে সীতা কার পিতা। তিনি এইটুকু সময়ের মধ্যে ভুলেই গেছেন যে ঐ মানুষটির স্মার্টফোনই নেই। ফোকটে জ্ঞান দিতে দিতেই হয়তো তার মনে হয়েছে, রিক্সা চালক এই এক বক্তৃতাতেই ভীষণ স্মার্ট হয়ে উঠবে। তা যখন দেখা গেল, রিক্সা চালক যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেছেন, তখন তার কী হতাশা। এতক্ষণ সময় বৃথা গেল, একজন 'মূর্খ' কে তিনি আজ জ্ঞানের আলো দেখাতে চেয়েছিলেন, হল না। প্রচন্ড বিরস মুখে দশ টাকা ক্যাশে ভাড়া দিলেন। রিক্সা চালক প্রাণে বাঁচলো সে যাত্রা।

এই নব্য বাবুরাই বীরভূম বাঁকুড়ায় গিয়ে "ট্রাইবাল মেয়েদের" নাচ দেখবেন আর মহুয়া খাবেন বলে বায়না ধরেন। যাদের সম্পর্কে তাদের আর কিচ্ছু জানার নেই। কিছুদিন আগেই এমন একটি পোস্ট দেখলাম ফেসবুকে। সামনে দোল আসছে। মদে, মাংসে উদযাপনের দিন। জনৈক ভ্রমণ পিয়াসী জানতে চেয়েছেন, দোলে কোনো ট্র্যাভেল এজেন্ট ট্রাইবাল নাচের ব্যবস্থা রেখেছে কিনা। তবে তিনি যাবেন। সম্প্রতি একজন পঞ্চাশোর্ধ মহিলা ডাক্তার এর বদলি হয়েছে মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামীণ হাসপাতালে। তিনি ভয়ানক শঙ্কিত ও বিরক্ত হয়েছেন। তাঁর ধারণা কলকাতা থেকে দূরে গ্রামাঞ্চলে তিনি একেবারেই নিরাপদ নন। কেঁদে কেটে অস্থির, যেন স্টেশনে নামলেই তিনি রেপড হয়ে যাবেন। গ্রাম বাংলা মানেই হায়না, শিয়ালের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি শুধু একা নন, তাকে ঘিরে যারা আছেন তারাও একই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এই তো একটা বিরাট শ্রেণীর মানুষের ভাবনা। বেশ কিছু মনীষীরা পায়ে হেঁটে দেশ চিনতে বলেছিলেন। আমরা মাথার ওপর পা দিয়ে হাঁটতে অভ্যস্ত করেছি নিজেদের। শেষে আরেকটি গল্প বলি। একটি রান্নাবান্নার অনুষ্ঠানে একজন বিখ্যাত রন্ধনবিদ এসেছেন। তাঁকে সঞ্চালক জিজ্ঞেস করলেন, ধরুন, বাড়িতে বাজার কিছুই নেই তেমন। সহজ করে কী করবেন? তা তিনি উত্তর দিলেন, চিকেন করবো। খুব বেশি কিছু লাগবে না। একটু দই, একটু নারকেল, একটু কাজুবাদাম, কিসমিস, একটু ধনেপাতা, একটু জিরে, আদা পিঁয়াজ রসুন, ধনে, গরম মশলা, একটু ক্যাপসিকাম, একটু বেবি কর্ণ, একটু মাশরুম, একটু পোস্ত ......... ইন্ডিয়াও যেন ঠিক এমন করে বলছে, ভারত রুটি খেতে পাচ্ছে না তো কী হয়েছে? কেক খাক।

আমি ডিজিটালের বিরুদ্ধে নই। যারা পেরে উঠছে না, তাদের বিরুদ্ধেও নই

0 Comments

Post Comment