আবার বিদ্যালয়ে দলিত শিশুকে মারধর
স্থান : উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলার নাগরা থানার অধীন একটি গ্রামের হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল।
কাল: গত শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২।
পাত্র: ক্লাস সিক্সে পড়া এক শিশু।
শিশুটি একটি ‘অপরাধ’ করে ফেলেছিল। স্কুলের শিক্ষক কৃষ্ণ মোহন শর্মার বাইকে হাত দিয়েছিল সে। ফলে শর্মাজির ক্রোধাগ্নিতে সে ভস্ম হওয়ার উপক্রম। পুলিল রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, ঐ শিক্ষকটি তাকে একটি ঘরে বন্ধ করে রাখে, তাকে ধাতু দণ্ড দিয়ে প্রহার করে, ঝাঁটা পেটা করে, এবং তার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। একজন দলিত ছাত্রের কী করে স্পর্ধা হয় ‘সংস্কারী’ ব্রাহ্মণের বাইকে হাত দেওয়ার! শেষে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীরা এসে ছাত্রটিকে মুক্ত করে।
পুরো ঘটনার মধ্যে রূপালি রেখা এটুকুই। আর একটি রূপালি রেখা হলো সরকারী শিক্ষা দপ্তর থেকে অপরাধী শিক্ষকটিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সরকারি অফিসাররা ভরসা দিয়েছেন যে ঘটনার তদন্ত হবে এবং অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।
একভাবে দেখতে গেলে, ষষ্ঠ শ্রেণীর এই ছাত্রটি ভাগ্যবান। সে প্রাণ নিয়ে নিজের পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছে। একমাস আগে নয় বছরের দলিত ছাত্র ইন্দ্র মেঘওয়াল সে সুযোগ পায়নি। তাকে আমরা আশা করি আমরা এর মধ্যেই ভুলে যাইনি।
রাজস্থানের জালোরের শিশু ইন্দ্রের জন্ম দলিত পরিবারে। সে স্কুলে পড়ত। তার ‘অপরাধ’ ছিল যে সে ‘উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষিত’ পাত্র থেকে জল নিয়েছে, আর তারই শাস্তিস্বরূপ স্কুলের এক শিক্ষক চালি সিং তাকে মারতে মারতে একেবারে মেরেই ফেলে। স্বাধীনতা ৭৫ বছর পরেও উচ্চবর্ণের জন্য আলাদা জলপাত্র? অস্পৃশ্যতা? জলপানের কারণে ৯ বছরের শিশুকে হত্যা? এ কোন দেশে আমরা বাস করছি! মনে আসে নবারুণ ভট্টাচার্যের সেই অবিস্মরণীয় পংক্তি- এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়…।
আসলে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও ভারত কতটা অন্ধকারে পড়ে আছে, এখানকার দলিত ও আদিবাসীরা কীরকম অত্যাচারিত হন, এই দুটি শিশু নির্যাতনের ঘটনা সেটাকেই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
দলিত ও আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার যে শুধু টিকেই আছে তা নয়, তা বাড়ছে।
ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালে তফশিলি জাতিভুক্তদের ওপর অপরাধ ১.২ শতাংশ বেড়েছে, আর আদিবাসীদের ওপর অপরাধ বেড়েছে ৬.৪ শতাংশ। দলিতদের ওপর অপরাধ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে উত্তরপ্রদেশে—যে রাজ্যের একটি দলিত শিশুর ওপর অত্যাচারের খবর দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম। আর দ্বিতীয় স্থানে আছে ইন্দ্র মেঘোয়ালের রাজ্য রাজস্থান।
আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার বাড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ‘এগিয়ে’ আছে মধ্যপ্রদেশ, তার পরে রাজস্থান। উত্তরপ্রদেশ এ ক্ষেত্রে ‘প্রথম সারিতে’ থাকতে পারেনি, কারণ বোধহয় এই যে সে রাজ্যে আদিবাসীদের সংখ্যা নেহাত কম।
যাক, রামরাজ্য আসছে। শম্বুকরা সাবধান!!
মূলধারার মিডিয়া যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো ভিতরের পাতায় ছোট করে ছাপে, সেই সব খবরকে সামনে আনার দায়িত্বে আছে সহমন।