পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কোভিড টিকা ও সনাক্তকরণ : চিকিৎসা ব্যবস্থাই চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে

  • 04 June, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 1725 view(s)
  • লিখেছেন : সুমন সেনগুপ্ত
আধার, পরিচয়পত্র, আরোগ্য সেতু বা কো উইনের মতো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ফাঁদে ফেলে সরকার মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আসলে তাদের কাছে প্রতিষেধক রয়েছে সীমিত এবং সরকার বেসরকারি ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দিয়ে চলেছে। সেটাকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্যই এত সব আয়োজন। যখন যে কোনও ইচ্ছুক ব্যক্তিকে যে কোনও জায়গায় প্রতিষেধক দেওয়াটা জরুরী, তখন তাঁরা নানান টালবাহানা করছে। যখন জরুরী পালস পোলিওর মতো, প্রতি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই প্রতিষেধক দেওয়া তখন সরকার কেন এই তথ্য চাইছে, বা এই সব নিয়ে প্রতিদিন নিত্য নতুন নিয়ম চালু করছে, তা কি ভেবে দেখার সময় হয়নি?

এই মুহুর্তে বহু মানুষের কোভিড হয়েছে। তার মধ্যে অনেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন, অনেকে করাচ্ছেন না। যারা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাঁদের জন্য এক ধরনের নিয়ম। আগামী ৩ মাস তাঁরা প্রতিষেধক নিতে পারবেন না, শোনা যাচ্ছে যে আইসিএমআর যে নিয়ম করেছে তাতে এই কথা বলা হয়েছে। প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। একজন মানুষ যদি সেখানে গিয়ে বলেন যে তিনি প্রতিষেধক নিতে চান, তাহলে তাঁকে কি করে চেনা যাবে, যে তিনি আগে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন? হয়তো অনেকে বলবেন যে আপনার আধার দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়েছে, এবং প্রতিষেধক নেওয়ার সময়েও যেহেতু আধার দিতে বলা হচ্ছে,তাহলেই চেনা যাবে কে আগে থেকে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন বা হননি। না যাবে না, আপনি যদি আধার নম্বর দিয়ে আপনার অঞ্চলে সরকারী হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করালেন, রেজাল্ট পজিটিভ এল, তারপর এক মাস পর একটি প্রাইভেট বা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রতিষেধক নেন, বা কোনও সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়েও নেন, তাহলেও বোঝা সম্ভব কি যে একজন মানুষ কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন আগে? না সম্ভব নয়, মানুষের যতই ধারণা থাকুক যে এই পদ্ধতিতে হবে, কিন্তু এটা যে কোনও পদ্ধতি নয়, তা বোঝা যাচ্ছে। সেই জন্যেই এবার ফেসিয়াল বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি আনছেন আধার কতৃপক্ষ। অর্থাৎ মুখের ছবি দেখে বোঝার চেষ্টা হবে কে আগে থেকে কোভিড আক্রান্ত আর কে নয়। বায়োমেট্রিক্স শব্দটি ব্যাখ্যা করলেই বোঝা যাবে কেন এই পদ্ধতিতেও কোভিড রোগী সনাক্তকরণ সম্ভব নয়।

মানুষের হয়তো ধারণা আছে যে আধার একটি অভিনব পরিচয়পত্র এবং তা নকল করা সম্ভব নয়। কিন্তু সত্যি কি তাই ? হাতের ছাপ, চোখের মণি বা মুখের ছবি এই সমস্ত কিছুকে বায়োমেট্রিক্স বলে। এইগুলো কি অভিনব মানে ইউনিক, মানে নকল করা সম্ভব নয় ? আধার কি সত্যি কোনও পরিচয়পত্র? না কি আধার একটা চেনার পদ্ধতি? আধার আইন কি বলে? আধারের পিছনে কি লেখা আছে? লেখা আছে, আধার কোনও পরিচয়পত্র নয়, এবং আধার দিয়ে মানুষকে চেনা যায় যদি তা মানুষের বায়োমেট্রিক্সের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়। ধরা যাক আপনাকে আপনার পরিচিত দুই বন্ধুর ছবি দেওয়া হল, তারপর সেই ছবিগুলো ১০ টা ছবির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হল। তারপর আপনাকে বলা হল খুঁজে বার করতে। আপনি ১০ সেকেন্ডে খুঁজে বের করবেন। তারপর আপনাকে বলা হল, ওই দুটো ছবি ১০০ টি ছবির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হল, আপনার নিশ্চিত বেশী সময় লাগবে। যদি ১ লক্ষ ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কি হবে? খুঁজে পাওয়া যাবে তো? বায়োমেট্রিক্স দিয়ে চেনার পদ্ধতি অনেকটা এইরকমই একটি অনুশীলন। সেও আগে থেকে কম্পিউটারের তথ্য ভাণ্ডারে রাখা ছবি, চোখের মণি বা হাতের ছাপের সঙ্গে নতুন বায়োমেট্রিক্স মিলিয়ে দেখে সিদ্ধান্তে আসে। সেও চেষ্টা করে। যতক্ষণ পারে করে, তারপর অনেক সময়ে সেও ব্যর্থ হয়। যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে কি সেই মানুষটির অস্তিত্ব থাকে না? তাহলে কি তিনি প্রতিষেধক পেতে পারেন না?

কেন সরকার আধার চাইছে এই কোভিড পরীক্ষা এবং প্রতিষেধকের সময়ে?

প্রথমত ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষদের জন্য কো- উইন মোবাইল অ্যাপলিকেশন বাধ্যতামূলক করেছে। দ্বিতীয়ত আধার আইনে তাঁরা একটি পরিবর্তন এনেছেন, যে তাতে বলা হয়েছে, যদি কেউ আধার থেকে স্বেচ্ছায় না বেরিয়ে যেতে চান, তাহলে তিনি সম্মতি দিচ্ছেন, তাঁর আধার নম্বর দিয়ে একটি ‘ইউনিক হেলথ আইডি নম্বর’ তৈরি করতে, যা দিয়ে ভবিষ্যতে সেই মানুষটির সমস্ত চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য ডিজিটাইজ করা হবে। সেটা ভালো, কিন্তু যেটা বলছেন না, তা হল, এই তথ্য পরে অন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত ইনশিউরেন্স এজেন্সি এবং বড় ফার্মা কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হবে, যাতে আপনার সমস্ত রোগের ওপর নজর রাখা যায়। আপনার ইনশিউরেন্স প্রিমিয়াম বেড়ে যাওয়া এবং ধীরে ধীরে চিকিৎসা ব্যবস্থাই সাধারণ মানুষের হাতের বাইরে নিয়ে যাওয়াই উদ্দেশ্য।

আসলে কোনও মানুষই কি দুবার প্রতিষেধক নেবেন? বা কেউ কি প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রতিষেধক নেবেন? না, নেবেন না। যখন প্রয়োজন, যাঁর প্রয়োজন তিনি যদি প্রতিষেধক চান, সরকারের উচিৎ তাঁকে প্রতিষেধক দেওয়া, এবং তার জন্য কোনও পরিচয়পত্র লাগবে না, এই নিয়ম অবিলম্বে সরকারের চালু করা উচিৎ। যাঁর কোনও পরিচয়পত্র নেই, তাঁকে সবার আগে প্রতিষেধক দেওয়া জরুরী। সরকার ঠিক উল্টো কাজটি করে চলেছে, পরিচয়পত্র এবং এই সব মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ফাঁদে মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসলে তাঁদের কাছে প্রতিষেধক সীমিত, এবং সরকার যে বেসরকারি ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দিচ্ছে সেটাকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যখন যে কোনও ইচ্ছুক ব্যক্তিকে যে কোনও জায়গায় প্রতিষেধক দেওয়াটা জরুরী, তখন তাঁরা নানান টালবাহানা করছে। যখন জরুরী পালস পোলিওর মতো, প্রতি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই প্রতিষেধক দেওয়া তখন সরকার কেন এই তথ্য চাইছে, বা এই সব নিয়ে প্রতিদিন নিত্য নতুন নিয়ম চালু করছে, তা কি ভেবে দেখার সময় হয়নি? আসলে প্রতিষেধকের জন্য আধার চাওয়া, বা বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে মুখের ছবি দিয়ে মানুষ চেনা, এগুলো আসলে নজরদারির পুঁজিবাদের এক একটি ধাপ। প্রথমে এসেছিল আরোগ্য সেতু, তারপরে এখন কো- উইন এবং আধারের মুখের ছবি দিয়ে চিনে প্রতিষেধক দেওয়া সব এক একটি ধাপ,এখনো বুঝতে না পারলে আর কবে বুঝবো আমরা ?

0 Comments

Post Comment