ভারতের জাতীয় কংগ্রেস কর্ণাটক বিধানসভায় ব্যাপক জয় হাসিল করার সঙ্গে সঙ্গে, সবার দৃষ্টি যে জাতীয় স্তরে "বিরোধী ঐক্যের" দিকে হবে, তা জানাই ছিল। সবার চোখ থাকবে বাংলার দিকে এটাও অনেকেই বুঝতে পারছিলেন। সবাই উৎসুক হয়েছিলেন, এই ফলাফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর তৃণমূল কংগ্রেস কেমন প্রতিক্রিয়া জানাবে? যদিও ডিএমকে, এনসিপি, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) সহ অনেক বিরোধী দল সাংবাদিক সম্মেলন করে, টুইট করে এবং বিবৃতির মাধ্যমে কংগ্রেসকে অভিনন্দন জানিয়েছে, কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিমো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাথমিকভাবে কর্ণাটকের জনগণকে বিজেপিকে পরাজিত করার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। এর পরে সারা বাংলার স্থানীয় সংগঠনগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কর্ণাটকের ফলাফল উদযাপন না করার জন্য। তাদের হয়তো মনে হয়েছিল, বা তাঁদের এই আশঙ্কা ছিল যে কংগ্রেস এটিকে অন্য অর্থ করতে পারে, তাই তাঁদের এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অনেকে বলছেন, এই জয়ের উদযাপন করলে, বাংলায়, বিশেষ করে মালদা এবং মুর্শিদাবাদের ৩০ শতাংশ মুসলমানদের মধ্যে কংগ্রেসের সম্ভাব্য পুনরুত্থানের যে আশা দেখা যাচ্ছে, তা তৃণমূলকে আরও নিরাপত্তাহীনতায় ফেলতে পারে। এটি আসলে শুরু হয়েছিল সাগরদিঘির নির্বাচনের ঠিক পরে, যেখানে কংগ্রেস প্রার্থী, বামফ্রন্ট সমর্থিত, তৃণমূলকেকে পরাজিত করেছিল, তার পর থেকেই।
তার একদিন পরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, একটি সাংবাদিক সম্মেলনে, কিছু শর্তসাপেক্ষে, জাতীয় স্তরে কংগ্রেসকে সমর্থন করার বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন৷ বাংলায় কংগ্রেস তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করবে না। তিনি আরও বলেছেন, যেখানে যে শক্তিশালী, সেখানে তাকে বিজেপির বিরুদ্ধে এককভাবে লড়তে দেওয়া। তিনি নিশ্চিত এটা বলতে চাননি যে কংগ্রেস বাংলায় তার দোকান বন্ধ করে দেবে। তিনি যা চেয়েছেন তা হল কংগ্রেস যাতে, বিজেপিকে আরও আক্রমণ করে।
https://twitter.com/pooja_news/status/1658076340682211328?s=20
তার পক্ষ থেকে যথেষ্ট ন্যায্য. তবে কঠিন বাস্তবতাটা কী, তা নিয়েও একটু কথা বলা উচিৎ। পরিস্থিতি এখন যা দাঁড়িয়েছে, বাংলায় একটি ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে।তৃণমূলকে কোনও আনুষ্ঠানিক জোটে প্রবেশ করতে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, অন্তত এই মূহুর্তে। আমি যদি তৃণমূল হতাম, তাহলে আমিও জোট করতাম না। বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূলের লাভ কিছুই নেই। তৃণমূল দলের জন্য সর্বোত্তম পরিস্থিতি হবে ৩০টি আসনকে চিহ্ণিত করা, সেইগুলোতে জয়ী হয়ে একটি কঠিন দর কষাকষি করার অবস্থানে থাকা। এজন্য তাদের ৪২টি আসনেই লড়তে হবে।
কংগ্রেসের কথা যদি বলা যায়, তাদের খেলার ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ ৫ থেকে ৬টি আসনে। মালদহে ২, মুর্শিদাবাদে ৩ এবং রায়গঞ্জে ১টি। তারা পুরুলিয়ায় একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, কিন্তু এটি একটি সম্মানজনক অবস্থানে থাকা ছাড়া অন্য কিছু হবে না। যদি তারা তৃণমূলের সঙ্গে একত্রিত হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ায় তবে তাদের সব মিলিয়ে ৬টির বেশী আসন দেওয়া হবে না। বর্তমানে কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ২টি, তাঁদের ঐ আসনে ছাড়া হবে এবং ৪টি এমন আসন দেওয়া হবে, যেখান থেকে তাঁরা জিতে আসতে পারবে না। যদি তারা বামেদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয় তবে তারা মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে উপকৃত হতে পারে। কিন্তু বামেরা কি আদৌ লাভবান হবে? অতীত থেকে যদি কিছু শেখা যায়, তাহলে একটা কথা বোঝা যাচ্ছে, বামেরা তাঁদের নির্বাচনী ফলাফল উন্নতি করতে পারে, এমনকি ভোট-ভাগের ক্ষেত্রে তারা ২ নম্বর স্থানে উঠে আসতে পারে, তাঁরা ২২-২৫% এর কাছাকাছি ভোটও পেতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই ভোট পেলেও তাঁরা একটিও আসন নাও পেতে পারে, বাংলায় যে প্রবণতা তাতে একটি নির্বাচনী এলাকায় জিততে হলে যে কোনও রাজনৈতিক দলকে অন্তত ৩৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে।
বাম & কংগ্রেসের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে আনুষ্ঠানিক জোটে না গিয়ে একটি কৌশলগত বোঝাপড়া করা এবং কংগ্রেসের সেই ৬ থেকে ৭টি আসনের বাইরে একটি আসনেও শ্রম এবং অর্থ কোনটাই খরচ করা উচিৎ নয়। মধ্য ও উত্তরবঙ্গের দিকে নজর দেওয়াটা বেশী জরুরী। ভদ্রলোকের কলকাতা আরও কিছুদিন না হয় অপেক্ষা করুক, সব কিছু তো একদিনে পাওয়া সম্ভব নয়।