শুরুতেই বলে নেওয়া ভাল, সুপ্রীম কোর্টের এই দ্বন্দ্বের কাহিনী অনেক পুরোনো। এমনকি, সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে আদর্শগত, দৃষ্টিভঙ্গীগত আকাশ পাতাল পার্থক্য আমরা বহুদিন আগে থেকেই দেখতে অভ্যস্ত। বিচারপতি তুলজাপুলকরের, সরাসরিভাবে বিচারপতি কৃষ্ণ আয়ারের সামাজিক ন্যায় ভিত্তিক রায়ের শুনানির বিরোধিতা করে, বিচারকক্ষ ত্যাগ করে যাওয়ার উদাহরণও আমাদের কাছে আছে। বিচারপতি কৃষ্ণ আয়ারের নিয়োগকে কেন্দ্র করে, সেই সময়কার বিখ্যাত আইনজীবী সোলি সোরাবজির (অধুনা প্রয়াত) নেতৃত্বে বহু আইনজীবী এই মর্মে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেন, যে বিচার ব্যবস্থায় কমিউনজম ঢুকে পড়েছে !
পরবর্তীকালে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে, জরুরী অবস্থার প্রাকমূহুর্ত থেকে ক্ষমতাসীনরা চেষ্টা চালিয়েছে, বিচারব্যবস্থা যেন রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে নতজানু হয়। এই পর্বেই “ Committed Judiciary” বা শাসকের প্রতি দায়বদ্ধ বিচারব্যবস্থা বানানোর জন্য তৎপর হয়েছিল তৎকালীন কংগ্রেস। জরুরী অবস্থার দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা ১৯৭৭ পরবর্তী সময়ে বিচারব্যবস্থাকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছিল, পুনরায় যাতে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন, দৃঢ়চেতা মনোভাব নিয়ে, ভয়ভীতি ও পৃষ্ঠপোষকতা মুক্ত হতে পারে, ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক চরিত্র ও আদর্শ রক্ষা করতে পারে।
যদি আমরা একটু গভীরে গিয়ে দেখি, তাহলে দেখা যাবে সংবিধানের বিন্যাসেই বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার দর্শন প্রোথিত আছে। শাসকদল ( কেন্দ্র/রাজ্য) যদি সংবিধানে স্বীকৃত নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলোকে লঙ্ঘন এবং পদদলিত করে, তাহলে আইনী চৌহদ্দির মধ্যে কোথায় গিয়ে একজন আক্রান্ত নাগরিক ন্যায়বিচার চাইবেন? সংবিধান বলছে, সাংবিধানিক আদালত হিসেবে রাজ্যগুলোর উচ্চ আদালত এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত, যথাক্রমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২২৬ এবং ৩২ অনুসারে, সেই নাগরিকের ন্যায়বিচারের জন্য হস্তক্ষেপ করার অধিকারী। অনুচ্ছেদ ১৪১ অনুযায়ী, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কোনও রায়, দেশের আইন বলেই স্বীকৃত হয়।
সংসদে আইন পাশ করার পাশাপাশি, বিচারব্যবস্থার দ্বারা সাংবিধানিক আইনী কাঠামো বা Constitutional Law Regime এদেশে গড়ে উঠেছে। জরুরী অবস্থার সময়ে যে নতজানু সুপ্রীম কোর্ট ADM Jabalpur মামলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় দানের মাধ্যমে বলেছিল, জরুরী অবস্থার সময়ে একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও সাস্পেন্ডেড বা স্থগিত থাকে, অধিকার ভোগ করার অধিকার থাকে না, সেই সুপ্রীম কোর্ট ১৯৭৭ পরবর্তী সময়ে, সেই নতজানু অবস্থার জন্য শুধু নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চাননি, একজন নাগরিকের অধিকারের সীমানাকে শুধু সুরক্ষিত করেনি, তার বিস্তার ও ঘটিয়েছেন। ন্যায়বিচার পাওয়ার পদ্ধতিতে ‘বৈপ্লবিক’ পরিবর্তন এনে দিয়েছেন, PIL বা জনস্বার্থ মামলা এবং স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করা যাবে, যা Judicial Activism বলে খ্যাত। জরুরী অবস্থার সময়ে বাক স্বাধীনতা সহ অন্যান্য অধিকার যে লঙ্ঘন করা যায় না, সংখ্যালঘিষ্ঠ এই রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি এইচ আর খান্না। তার ফলে তাঁকে প্রধান বিচারপতি অবধি করেনি তৎকালীন শাসক দল। ২০১৭ সালে পুট্টুস্বামী মামলায়, এই বিচারপতিকে সুপ্রীম কোর্ট সম্মান জানিয়েছিল, তিনি বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে উর্দ্ধে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে।
২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি লাহোটির সময়ে, সংসদ ও শাসকদলের আধিপত্যের সঙ্গে বিচারব্যবস্থার সংঘাতের বিষয়টি সামনে এসেছিল। তখন এই সংঘাতকে উচ্চ বিচারব্যবস্থার প্রতিনিধিত্বকারী উচ্চ বর্ণের বিচারপতিদের সঙ্গে ‘জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী’ লোকতন্ত্রের ন্যায়সঙ্গত সংঘাত বলে চিহ্নিত করেছিলেন অনেকেই।
প্রাতিষ্ঠানিক শাসনক্ষমতা বড় না বিচারব্যবস্থা ( বিশেষ করে সুপ্রীম কোর্ট) বড় এই প্রশ্নটাই সত্তর দশকে উঠেছিল। সত্তর দশকের শুরুতে বিখ্যাত ‘কেশবানন্দ ভারতী’ মামলায়, সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যে সুপ্রীম কোর্ট সংবিধান জাত, এবং সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ, শাসকদলের কাছে নয়। তাই সংবিধানই, পূর্বোক্ত অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী, সুপ্রীম কোর্টকে ক্ষমতা দিয়েছে, নাগরিকের অধিকারের ওপর যেকোনও রকম আক্রমণকে রুখে দেওয়ার এবং তাঁকে সুরক্ষা দেওয়ার। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের সব ধরনের আক্রমণের বিরুদ্ধে, সুপ্রীম কোর্ট যাতে’ Sentinel’ হয়ে দাঁড়াতে পারে, সংবিধান সুপ্রীম কোর্টকে এই ক্ষমতাও দিয়েছে। বি আর আম্বেদকরও বলেছিলেন, সংবিধানের ৩২ নম্বর ধারাই, সংবিধানের হৃদয় ও মূল স্পিরিট, এই স্পিরিটই বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার মূল নৈতিক ও বাস্তব ভিত্তি।
বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯ সালের পর থেকে খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই বিচারব্যবস্থার ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে। এই পর্বের কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পর থেকেই স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থাগুলো সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন, যেগুলো পরোক্ষে সেই সংস্থাগুলোর স্বাধীনতাকে খর্ব করার পরীক্ষানিরীক্ষা বা Test Case হিসেবে দেখা যেতে পারে। কখনো বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বা বিচারব্যবস্থার উচিৎ, আইনমন্ত্রকের বা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া বা Coordination করে কাজ করার। ( সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস- ২৫শে জানুয়ারী, ২০২১) তারপরে কিছুদিন বাদে, নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসে, বিচারব্যবস্থায় হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টে যে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত যে কলেজিয়াম ব্যবস্থা আছে, তা খারাপ, তাকে আক্রমণ করা শুরু করলেন। বলতে শুরু করলেন, এই ব্যবস্থা নাকি অস্বচ্ছ এবং এই কলেজিয়াম ব্যবস্থা নাকি ভারতের সংবিধান বিরোধী এবং সংসদে গৃহীত NJAC ই নাকি সঠিক পদ্ধতি এবং মানুষ নাকি কলেজিয়াম ব্যবস্থা আর চাইছেন না। এই আক্রমণ আরো তীব্র হয়েছে বিচারপতি চন্দ্রচূড় প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরে। হিন্দুত্ববাদী ওয়েব পোর্টাল Op India তে গত অক্টোবর মাস থেকে চন্দ্রচূড়কে চুড়ান্ত আক্রমণ করা শুরু হয়েছে, তিনি নাকি ‘হিন্দু’ বিরোধী, ভন্ড সেকুলার, কমিউনিষ্ট ইত্যাদি। Op India আরো লেখে ২০২৫ অবধি যেহেতু, চন্দ্রচূড় প্রধান বিচারপতি থাকবেন, ফলে তাঁর প্রতিটি কাজ, তাঁরা নজরে রাখবেন। অর্থাৎ তিনি কলেজিয়ামের প্রধান হয়ে, বিভিন্ন হাইকোর্ট এবং সুপ্রীম কোর্টে, বিজেপি এবং আরএসএস মতাদর্শ বিরোধী বিচারপতিদের যাতে নিয়োগ না করেন, তাই ঐ ব্যবস্থা তুলে দিতে হবে। তাহলে কী চন্দ্রচূড়ের আগে ৬ জন বিচারপতি ছিলেন সবাই সরকার ঘেঁষা এবং তাঁরা সেই হিসেবেই সুনাম অর্জন করেছেন? এই অনুমান সত্যি প্রমাণিত হয়, যখন দেখা যায় যে তাঁদের প্রায় সকলকেই অবসর নেওয়ার পরে, নানা আধা সরকারী সংস্থার প্রধান করা হয় এমনকি রাজ্যসভার পদ অবধি দেওয়ার খবর সামনে আসে। বিচারপতি থাকা অবস্থাতেও তাঁদের নানান ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। নির্বাচনী বন্ড, কাশ্মীরে ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা তুলে নেওয়া, কাশ্মীরে বহু পরিবারের হেবিয়াস কর্পাস মামলা, লকডাউন পর্বে পরিযায়ী শ্রমিকদের অবর্ণনীয় দুর্দশার বিষয়গুলো এবং NRC CAA নিয়ে মামলার শুনানিই হয়নি, যা পরোক্ষে সুবিধা করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় শাসকদলকে। বর্তমান বিচারপতির আমলে এই মামলাগুলোর শুনানি হতে পারে, অতএব চাপে রাখা, আক্রমণ করা, কলেজিয়ামের সুপারিশগুলো ঝুলিয়ে রাখা, একটা দুটো নাম বিবেচনা করলেও, বাকি নাম কোনও কারণ না দেখিয়ে আটকে রাখা, নাপসন্দ বিচারপতিদের নাম বাতিল, যেমন বিচারপতি মুরলিধরের নাম ফেলে রাখার মতো প্রক্রিয়া এখন চলছে। পাশাপাশি, আইনমন্ত্রী অভূতপূর্বভাবে সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, যতদিন না পর্যন্ত এই কলেজিয়াম ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, ততদিন অবধি বহু বিচারপতির আসন ফাঁকা থাকবে। ( এই সময় ১৬/১২/২০২২) বার্তা পরিষ্কার, যতদিন না অবধি, নিজেদের পছন্দমতন বিচারপতি নিয়োগ করতে পারা যাচ্ছে ততদিন অবধি বিচারপতির আসন ফাঁকাই থাকবে। সেইরকম নিজেদের পছন্দমতন বিচারপতি কীভাবে পাওয়া সম্ভব? আইনমন্ত্রী কিন্তু জানেন না এমনটা নয়, যে সারা দেশে কত মামলা বকেয়া রয়েছে। প্রায় ৪.৭ কোটি মামলা দেশের বিভিন্ন আদালতে ঝুলে রয়েছে, তার মধ্যে ৮৭.৪% নিম্ন আদালতে এবং ১২.৪% মামলা আটকে রয়েছে হাইকোর্টগুলোতে, এছাড়াও ১,৮২,০০০ মামলা শুনানি ও নিস্পত্তির অভাবে আটকে রয়েছে। সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি রামানা বলেছিলেন, বিচারপতিদের পদ পূরণ না হলে, এই বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।(দি হিন্দু- ১৩/০৫/২০২২)
বিজেপি কি চায়?
পুলিশ, মিলিটারি, আমলাদের চাকরিতে যেরকম নিয়োগব্যবস্থা আছে, বিচারবিভাগেও সেইরকম নিয়োগ ব্যবস্থা চালু হোক, এটাই বিজেপির ইচ্ছে। তাহলেই আমলা, মিলিটারি, পুলিশের মতো সম্পুর্ণ আনুগত্যভিত্তিক নিয়োগ করা সম্ভব হবে। ধীরে ধীরে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে বিলুপ্ত করা যাবে চিরকালের জন্য। সেই লক্ষ্যে এখন কাজ করছেন, বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং অধুনা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। রাজ্যসভায় সাজিয়েগুছিয়ে এই কলেজিয়াম ব্যবস্থাকে আক্রমণ করেছেন তিনি। আইনজীবী হয়েও সচেতনভাবে ( কিন্তু মূর্খের মতো) তিনি বলেছেন, NJAC আইনটিকে সংবিধান বিরোধী বলে খারিজ করে দিয়ে, সুপ্রীম কোর্ট, জনসাধারণের সার্বভৌমত্বকে ( Will of Peoples’ sovreignity) কে আঘাত করেছে। সুপ্রীম কোর্ট উপরাষ্ট্রপতি সহ সমস্ত সাংবিধানিক প্রধানকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, সংবিধান সুপ্রীম কোর্টকে ক্ষমতা দিয়েছে সংসদে গৃহীত যে কোনও আইনকে সংবিধানের মৌলিক ভিত্তির কষ্টি পাথরে যাচাই করার এবং তারপরেই সেই সমস্ত কিছু সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ অনুসারে দেশের আইন হিসেবেই স্বীকৃত।
এরা জ্ঞানপাপী। কারণ দেখুন, কাশী, মথুরা সহ নানা স্থানের মসজিদকে বাবরি মসজিদের মতো ভাঙার লক্ষ্যে সংসদে গৃহীত ‘Places of Worship Act’ (ধর্মীয় স্থান সংক্রান্ত আইন, ১৯৯১) কে চ্যালেঞ্জ করেছে সুপ্রীম কোর্টে। এই আইন ১৯৪৭ সালের আগের সমস্ত ধর্মস্থানের চরিত্রকে অক্ষুণ্ণ রাখার নীতিকে আইনি রূপ দিয়েছিল। এই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানানোকে সমর্থন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসেই ---- NJAC আইন সুপ্রীম কোর্ট কতৃক বাতিলের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার সময়েই—বলছেন, দেশের কোনও আইনিই বিচারব্যবস্থার পর্যালোচনার বাইরে নয়। (TNN Nov 25) এই দ্বিচারিতা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। একদিকে হিন্দু রাষ্ট্র স্থাপনের লক্ষ্যে, সংখ্যালঘুকে তাঁর জীবনের সমস্ত চিহ্ন মুছে দেওয়ার জন্য সংসদে আইন তৈরী করা, যার ফলস্বরূপ একদিকে তাঁকে আক্রমণ করা আর অন্যদিকে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা যাতে খর্ব হয়, সংসদে প্রণীত আইন সুপ্রীম কোর্ট মানতে বাধ্য বলে চিল চিৎকার জুড়ে দেওয়া- এই তো এই মূহুর্তের কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি। সঙ্গে তো গোদী মিডিয়া আর বিজেপি আরএসএসের সংগঠন তো আছেই ২৪ ঘণ্টা।
বিচারপতিদের নিয়োগ, যোগ্যতা ইত্যাদি নিয়ে ভারতের আইন কমিশনের একাধিক পর্যবেক্ষণ আছে। ২০০৯ সালের ২৩০ তম রিপোর্টে তা নিয়ে সবিস্তার আলোচনাও রয়েছে, যেখানে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বরে, অপরাধ নিরোধক সংক্রান্ত কংগ্রেসে বিচারব্যবস্থার মৌলিক স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের মূল শর্ত ও আবশ্যিক বৈশিষ্ট হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারপতিদের বিচার প্রদান করা, আইনের চোখে সবাই সমান এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত অপরাধ প্রমাণিত হচ্ছে, ততক্ষণ অভিযুক্ত নির্দোষ, এই তিনটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থার মৌলিক উপাদান, এই কথাও সেই ঘোষণায় বলা আছে। ভারত তাতে স্বাক্ষর করেছে, সুতরাং আন্তর্জাতিক স্তরেও ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ভারত বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্যেও দায়বদ্ধ।
ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামো এমনিতেই বহু দোষে দুষ্ট, মারাত্মকভাবে flawed, তবুও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায়, শেষ স্তম্ভ হিসেবে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের এখনো আস্থা আছে। বিজেপি তাঁর মনুবাদী হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টার লক্ষ্যে, বিচার কাঠামোকেও ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে, সংবিধান মেনে তাঁকে রক্ষা করার শপথ নিয়েও তাঁকে ভেতর থেকে অন্তর্ঘাত করছে। বিচারব্যবস্থার শীর্ষস্তরের অনেকেই সচেতনভাবে রোখার চেষ্টা করছেন, অন্তর্ঘাতের বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করার কাজটি করে চলেছেন। ইন্দিরা গান্ধীর মতো মোদীও যেন বিচারব্যবস্থাকে করায়ত্ত না করতে পারেন, সেই বিপদের কথা সামনে নিয়ে আসছেন।