ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলেপমেন্ট (বিপিআরডি)-র তথ্য অনুযায়ী, গোটা দেশে পুলিশের ব্যবহারের জন্য মোট সিসিটিভির সংখ্যা ২০১৩ তে ছিলো ১৮,০০০। ২০১৯-২০ নাগাদ সেটা বেড়ে হয়েছিলো ৪,৬০,০০০। গত চার বছরে সংখ্যাটা আরো অনেকটা বেড়েছে, এবং ক্রমশঃ সঙ্গে জুড়েছে পুলিশের কাজে বেসরকারি ক্ষেত্রের সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার। আবার উল্টোদিকে, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো ২০১৯-এর জুন থেকে ন্যাশনাল অটোমেটেড ফেসিয়াল রেকগনিশন সিস্টেম-এর টেন্ডার জমা দেওয়ার সময়সীমা বদলাতে বদলাতে, ২০২০-র জুন মাসে প্রকল্পের প্রায়োগিক বিষয়ে একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে। শুরুতে যেখানে, যে কোনো সিসিটিভি থেকে পাওয়া ফুটেজের সঙ্গে ফেসিয়াল রেকগনিশন টেকনোলজি ব্যবহার করার কথা ছিলো, সেখানে এখন বলা হলো, এই প্রকল্প, নতুন করে কোথাও সিসিটিভি লাগানো বা ইতিমধ্যেই লাগানো আছে এরকম কোনো সিসিটিভির ফুটেজের সঙ্গে ডেটাবেস যোগ করবে না। এর আগের আরএফপিতে সিসিটিভি-র ফুটেজের সঙ্গে এআফআরসি-কে যুক্ত করাই একটা মূল প্রয়োজনীয়তা ছিলো। বিরোধিতার কারণে সিসিটিভি-র ফুটেজের সঙ্গে সংযুক্তির বিষয়টাকে বাদ দিয়ে, ক্রাইম সিন ইমেজ/ভিডিও, ডায়নামিক পুলিশ ডেটাবেস-এর সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। যদিও ডায়নামিক পুলিশ ডেটাবেস বলতে কী বোঝায়, ক্রাইম সিন ইমেজ/ভিডিও-র মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ পড়বে কিনা, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। ফোর্বস-এর হিসেব অনুযায়ী, ২০২১-এ সিসিটিভির ঘনত্বে সব থেকে জোরালো নজরদারির ব্যবস্থা ছিলো দিল্লিতে। প্রতি বর্গ মাইলে ১৮২৬.৬ টি ক্যামেরা। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইট করেছিলেন, "Feel proud to say that Delhi beats cities like Shanghai, NY n London with most CCTV cameras per sq mile." এই বিপুল পরিমাণ নজরদারির বন্দোবস্তর বেশিরভাগটাই যোগাড় হয়েছে নির্ভয়া তহবিল-এর টাকায়। দিল্লি পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১২ তে দিল্লিতে মোট ধর্ষণের অপরাধ (আইপিসি ৩৭৬) ঘটেছিলো ৭০৬টি। ২০২১-এ ২০৭৬টি। মহিলাদের শ্লীলতাহানি (আইপিসি ৩৫৪)-র ঘটনা, ২০১২-তে ঘটেছিলো ৭২৭টি। ২০২১-এ ২৫৫১ টি। মহিলাদের শ্লীলতাহানি (আইপিসি ৫০৯) ২০১২-তে ২১৪টি, ২০২১-এ ৪৪০টি। মহিলাদের অপহরণের ঘটনা, ২০১২-তে কিডন্যাপিং ২০৪৮টি এবং অ্যাবডাকশন ১৬২টি। ২০২১-এ কিডন্যাপিং ৩৭৫৮টি, অ্যাবডাকশন ৩২৫টি। সিসিটিভি যে মহিলাদের সুরক্ষা সাংঘাতিক বাড়াতে পেরেছে, এরকমটা মনে হয় না। শুধু দিল্লি নয়, দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন বড়-ছোট শহরের নজরদারির বন্দোবস্ত ও সংঘটিত অপরাধের তথ্য অনুযায়ী, এই দুয়ের মধ্যে খুব কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ২০২০ নাগাদ, সিসিটিভির ফুটেজ এবং ফেস রেকগনিশন টেকনোলজির সবথেকে বেশি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিলো, সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময়। সেসময়ে TechSci রিসার্চ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই নজরদারি পরিকাঠামোর বাজার ২০১৮-তে ছিলো ৭০০ মিলিয়ন ডলারের, ২০২৪-এ সেটা পৌঁছবে চার বিলিয়ন ডলারে।
সিসিটিভি বসালে, অপরাধী ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে অপরাধ করবে না, এরকম তত্ত্ব খুব একটা দাঁড়াচ্ছে না। এরকম নয় যে যাঁরা এই তত্ত্বের পক্ষে সওয়াল করছেন, তাঁদের কাছে, এই তথ্যগুলো সহজলভ্য নয়। তাই শুরুতেই তাঁরা একটা ব্যাকআপ প্ল্যানের মতন করে মদ-গাঁজা-কন্ডোম-এর আশ্রয় নিয়েছেন। যেন বিষয়টা এরকম, অপরাধ না কমুক, 'নৈতিক' চরিত্র গঠনে সুবিধে হবে। এই নৈতিক মাপকাঠি কারা ঠিক করবেন, তাঁদের সেই অধিকার বর্তালো কী করে, এই প্রশ্নগুলো যাতে উঠতে না পারে তাই একটু জোরে চেঁচামেচি করা, আওয়াজে অন্যস্বরকে চাপা দেওয়াটাই আপাততঃ একটা সুবিধেজনক উপায় ঠাওরানো হয়েছে। এবং এই সব তোড়জোড়ের মধ্যে, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা, তার পিছনের কার্য-কারণ সম্পর্ক এগুলো ক্রমশঃ ফিকে হয়ে আসছে। সামাজিক বৈষম্য, ক্ষমতা প্রদর্শনের রেওয়াজ, অন্যের অধিকারকে নস্যাৎ করে গা-জোয়ারি করার যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা তাকে আড়াল করা হচ্ছে। এই জনবিরোধী অগণতান্ত্রিক সামাজিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, যাদের ওপর সবথেকে বেশি ভরসা রাখার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বিরোধী ছাত্রসমাজ, ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী ঐক্যকে কিছু অবান্তর অভিযোগে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে যাতে র্যাগিং বিরোধী সামাজিক উদ্যোগটা দুর্বল হয়, নজরদারির পক্ষে কিছু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জড়ো করা যায়। (অ)রাজনৈতিক, সুযোগসন্ধানী ক্ষমতার বয়ানকেই প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে ছাত্রদের সঠিক রাজনৈতিক উদ্যোগের সম্ভাবনাকে দুর্বল হচ্ছে।