পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বিজেপি-বাংলা-বাঙালি : বিপরীতার্থক শব্দ ভাজপা-হিন্দি-হিন্দুত্ব: সমার্থক শব্দ

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 204 view(s)
  • লিখেছেন : সন্তোষ সেন
চিকেন প্যাটিসের সাথে শ্রীমদ্ভাগবত গীতার বিরোধটা ঠিক কোথায় তা সত্যিই বোঝা দুষ্কর। খানকয়েক বেয়াড়া প্রশ্ন মাথায় কিলবিল করছে। গীতার যুগে চিকেন প্যাটিস ছিল না। কৃষ্ণ বা অর্জুন মাংস চেটেপুটে খেলেও চিকেন প্যাটিস খাননি। তাই চিকেন প্যাটিস খাওয়া ও বেচা বারণ? বেচুবাবু যে সবকুচ বেচে দেন, তার বেলা? নাকি শুধু গীতাপাঠে মন চিত্ত হয় না? দুর্বলকে ধরে না পেটালে রক্ত ঠিক গরম ও তেজি হয়না, তাই পেটানো, চিকেন প্যাটিসটা উপলক্ষ্য মাত্র? বেয়াড়া প্রশ্নগুলো তবুও পিছু ছাড়েনা।

বিরোধীদের দাবি মেনে ‘বন্দেমাতরম ও বিজেপির রাজনীতি’ নিয়ে লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে আলোচনা করতে রাজি হয় সরকার পক্ষ (৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫)। আলোচনা হবে কী, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির মন্ত্রী মহোদয় এমন বললেন যে সভা দুর্গন্ধে ভরে যায়। আমাদেরও বিবমিষা জাগে।

বন্দেমাতরম রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী তিন তিন বার ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করেন। না, আমাদের হাসি পায়নি। আমরা স্তম্ভিত। আমরা আশঙ্কিত। আমরা উদ্বিগ্ন বাংলা তথা দেশের মনীষীদের সম্পর্কে এদের অবজ্ঞা, ঘৃণা, হিংসা দেখেশুনে। বাংলা ভাষায় এদের ব্যুৎপত্তি দেখে আমরা লজ্জিত। এ কোন মহান দেশের নাগরিক আমরা?

মন্ত্রীসান্ত্রীরাও কম কিসে? তাঁরা তো একেকটি ধম্মের ষাঁড়। একজন মহান চলচ্চিত্রকার গোদি-মিডিয়ার স্টুডিওতে বসে বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের ভাই অরিন্দম চ্যাটার্জি ভারতমাতার ছবি এঁকেছিলেন। এবার মহান সংস্কৃতিমন্ত্রী আইনসভায় দাঁড়িয়ে বললেন, বন্দেমাতরম লিখেছেন কবি ‘বঙ্কিমদাস চ্যাটার্জি’। আমরা তো গণ্ডমুখ্যু! হবে হয়তো বিজেপির ইতিহাস বইয়ে লেখা আছে – রবীন্দ্রনাথ অরিন্দম ও বঙ্কিমদাস ছিলেন সহোদর তিন ভাই এবং তিনজনই মহাকবি। এদিকে দেশের পয়লা নম্বর অতশত ঝামেলিতে না গিয়ে সিধা বলে দিলেন বঙ্কিমদা। যেন পাড়ার বঙ্কা, ওঁর চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে আড্ডা মারতেন। তারপর সেই নিয়ে একটু হল্লা হওয়ায় যা করলেন, সে তো অকল্পনীয়, উনিজি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। ভাবলেন এত হল্লা যখন, এবার দাদাটা বাদ দিয়েই বলি। মাস্টারদা সূর্য সেনকে বললেন মাস্টার সূর্য সেন। 'দা' টা বাদ। ভাগ্যিস! লোকনাথ বলকে নিয়ে বলেননি, হয়তো বলে বসতেন ‘বলদা’। পাঠকের খেয়াল থাকবে, ইতালির নবজাগরণে এক বুদ্ধিজীবী ছিলেন, নাম বোকাচ্চো। ভাগ্যিস উনিজি এই নামটা জানেন না, নইলে হয়তো ওখানেও একটা মস্ত ‘দা’ লাগিয়ে দিতেন। সারাজীবনে কাজকাম তো কিচ্ছুটি নেই। নেহরু আর কংগ্রেসকে গালমন্দ করেই কম্মো খতম করেছেন। বাঙালি সংস্কৃতি বলতে জানেন “দাদা রসগুল্লা খাবে”। বা দিদি ..দিদি .. ও দিদি.., আম্মিও দইওয়ালা হতে চাই। হামি শুধু দেশ নয়, দই ক্ষীর চা বেচবে। হুঁ হুঁ বাবুমশাইরা, নয়া ইতিহাস নতুন করে চর্চা করতে হবে বৈকি। নাহলে আমরা যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পিছিয়ে পড়ব।

 

বাঙ্কিমদা, বঙ্কিমদাস, বন্দেভারাত, মাষ্টার সুরিয়া সেন –এসবই ট্রেলর। সিনেমা আভি বাকি হ্যায়। সবই উয়াদের ক্রোনোলজির খিলা গো বাবুমশায়জ

আসল কথাটি আর রহিল না গোপনে। সারাজীবনে যারা বন্দেমাতরম বলেনি, জাতীয় পতাকা তোলেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামে যাদের নাম খুঁজে পাওয়া, খড়ের গাদায় সূঁচ খুঁজে বার করার মতোই ঝকমারি ব্যাপার। তবে তাদের একটা মস্ত ভূমিকা ছিল –ইংরেজদের পদলেহন, ইংরেজ বাহাদুরের কাছে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পাওয়া। তাদের কাছে আবার বন্দেমাতরম-এর কদর? এখন যাদের একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঙালি- ঠ্যাঙানো, তারা হঠাৎ করে বাঙালি আর দেশপ্রেমিক সাজতে গেলে, ঘুড়াও হাসবে! বাংলার ক্ষমতায় এদের ঠাঁই দিলে, সব নখ দাঁত, গদা, ঢাল তলোয়ার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে বীরপুঙ্গব হনুমানের দল। বাংলার সব জ্বলন্ত প্রদীপগুলো নিভে যাবে এক লহমায়। পড়ে থাকবে এক ভয়ঙ্কর বীভৎস বাংলা।

 

হিন্দুত্বের তিলক কেটে একপাল ষাঁড়কে বাজারে ছেড়ে দিলে যা হয়, তাইই হচ্ছে। একে গুঁতোচ্ছে, ওকে মারছে, তাকে সহবৎ শেখাচ্ছে, নারীদের ‘মা’ হওয়া শেখাচ্ছে। কারোর দোকান উল্টে ফল খেয়ে নিচ্ছে। গীতাপাঠের ব্রিগেডিয় আসরে চিকেন প্যাটিস বিক্রি করা এক নিরীহ মুসলিম ভাই ও এক হিন্দুকে কান ধরে উঠবস করাচ্ছে, ধরে রামধোলাই দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার প্যান্ট খুলিয়ে লিঙ্গ যাচাইয়ের নিদান দিচ্ছে। মনে বড় দুখ গো বাবুমোশায়। বেশ কিছু বাঙালিও খৈনি ডলতে ডলতে জুটে গেছে ইদের দলে। তুরা খাল ক্যাটে কুমির লিয়ে আইছিস। তুদেরকেও শেষমেশ কামড় দিবেক, সি খিয়াল কি আছে?

গীতা পাঠের আসরে যাত্রাপালার অধিকারী বাবুকে দেখে মনে হল ক্লান্ত পরাজিত এক দলপতি। চারিদিকে কর্মব্যস্ততা, জীবনের জয়গান, আর উনি গীতা হাতে নিজের গলা চুলকোচ্ছেন। গলায় কি বুনো ওল-এর চুলকানি? দিন, দিন, বাঘা তেঁতুল ঘষে দিন।

রাজধর্ম ছেড়ে রাজ্যপালও মিশে গেলেন হাম্বাদের দলে। দেখে মনে হল স্নিগ্ধ শ্যামলকান্তি, মিঠে রোদ্দুরে বসে বলছেন হাম্বা হ্যায়, অর্থাৎ কিনা ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি। এও এক নয়া ইতিহাস। আপনারাই কেবল জানতি পারেন নাই। কেউ কেউ, আবার ষাঁড়ের দলে শিংওয়ালা বাছুর। মায়ের পেট থেকে পড়ে দুই ঠ্যাং তুলে লাফাচ্ছে, কাকে গুঁতোবে কেউ জানেনা। দেখা গেল গোদি-মিডিয়াকে। তাঁরা তো আবার শিক্ষিত ইনজিরি ষাঁড় (SIR)। বুম এগিয়ে দিয়ে চিল্লাচ্ছে, শুধু বাংলাদেশী আর রোহিঙ্গা নয়, নেপাল, ভুটান থেকেও লোক এসে জনসমুদ্র বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিএএসএফ এর চেকপোস্ট টপকে কীকরে এত লোক এসে মিশে গেল, সেটা বেমালুম চেপে গেল। কেউ বলছেন, ব্রিগেড আজ কুরুক্ষেত্রে পরিণত। এরপর কোনোদিন রামায়ণ পড়া হলে নির্ঘাত বলবেন, ব্রিগেড এখন লঙ্কাকাণ্ড, হনুমানের দল চারদিকে লাফাচ্ছে, লণ্ডভণ্ড করছে। ঐটুকু তো মেনে নিতে হবে দ্যাশের বিকাশের স্বার্থে। তবে না পাবেন আচ্ছে দিনের সুফল। হর হর মহাদেব!

এখন কথা হল, চিকেন প্যাটিসের সাথে শ্রীমদ্ভাগবত গীতার বিরোধটা ঠিক কোথায় তা সত্যিই বোঝা দুষ্কর। খানকয়েক বেয়াড়া প্রশ্ন মাথায় কিলবিল করছে। গীতার যুগে চিকেন প্যাটিস ছিল না। কৃষ্ণ বা অর্জুন মাংস চেটেপুটে খেলেও চিকেন প্যাটিস খাননি। তাই চিকেন প্যাটিস খাওয়া ও বেচা বারণ? বেচুবাবু যে সবকুচ বেচে দেন, তার বেলা? নাকি শুধু গীতাপাঠে মন চিত্ত হয় না? দুর্বলকে ধরে না পেটালে রক্ত ঠিক গরম ও তেজি হয়না, তাই পেটানো, চিকেন প্যাটিসটা উপলক্ষ্য মাত্র? বেয়াড়া প্রশ্নগুলো তবুও পিছু ছাড়েনা। যে ভণ্ড ভক্তগণ গদগদ চিত্তে গীতা পাঠ করতে / শুনতে গিয়েছিল, তাদের চিকেন প্যাটিস দেখে লোভ লাগতে পারে এবং পটাপট দু’একটা পেটে চালান করে দিতে পারে। ওরাও তো মানুষ না কি? তাই লোভ নিয়ন্ত্রণের অন্য কোনও পথ না পেয়ে মারধোরের পথ বেছে নেওয়া? নাকি চিকেন-প্যাটিস ওয়ালাকে কৌরব পক্ষের দুঃশাসন মনে হচ্ছিল, তাই প্রহারেন সমাপয়ে? হয়তো বা, গীতা পাঠ করে শুদ্ধ চিত্তে মনে হলো, আমরাই তো গাণ্ডীবধারী অর্জুন। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল প্যাদানি। নাকি ধর্মকে রাজনীতির দলীয় গন্ডির মধ্যে এনে ধম্মো নিয়ে রাজনীতির ব্যাওসা করলে এমনটাই হয়?

কে জানে বাবা অতশত! গীতার ঠিক কোথায় কত নম্বর পাতায় কত নম্বর শ্লোকে চিকেন প্যাটিস/ চিকেন খাওয়া নিষেধ আছে? কে জানাবেন স্বয়ং তথাগত, নাকি ঘোষ মহাশয়, নাকি উর্বর মস্তিষ্কের অধিকারী বাবু?

গীতা পাঠের এই পুণ্য অধ্যায়টি এককথায় প্রকাশ করিলে একটিই কথা কহিতে হয় :

‘সনাতন সংস্কৃতি সংসদ’ নামে পশ্চিমবঙ্গে যে একটি সংগঠন আছে, সেটা জানা গেল ব্রিগেডের কুরুক্ষেত্রে। এই সংগঠনের উদ্যোগেই হয়ে গেল ‘পঞ্চ লক্ষ কন্ঠের গীতা পাঠ’ নামে অদ্ভুত অনুষ্ঠানটি। অদ্ভুত, কারণ পুস্তক সাধারণত ব্যক্তিগত পাঠের বিষয়। দু-চার জন মিলেও হতে পারে। কিন্তু একসাথে ‘পাঁচ লাখ’(যদিও মেরে কেটে এক লক্ষের জমায়েত) মানুষ একটা বই উচ্চ নিনাদ-সহ পাঠ করার হুল্লোড় ইতিপূর্বে ঘটেছিল ২০২৪ সালে সাধারণ নির্বাচনের আগে। আবার বঙ্গে নির্বাচনী দামামা বাজার ঠিক আগে। কেন যে ভোটের আগেই এইসব পাঠের দরকার পড়ে, মুসলিম প্যাদানো, তাড়ানোর খুব প্রয়োজন হয়, তা বুঝতে মাথায় একজোড়া শিং না হলেও অ্যান্টেনা লাগিয়ে নিন।

ধম্মের পেয়াদারা হৈ চৈ করে সীমান্ত পেরিয়ে দাপিয়ে বসার আগে কয়টি সহজ কথা সহজ করেই বুঝে নেওয়া দরকার।

এইভাবেই সংঘী বাহিনী গোটা দেশে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করে চলেছে একেবারে শুরু থেকেই। এটাই আরএসএস'রও প্রধান শ্লোগান, একমাত্র অ্যাজেন্ডা। হিন্দু্রাষ্ট্র বানাও, যেখানে একটি মাত্র ভাষা থাকবে, হিন্দি। একটিমাত্র ধর্ম থাকবে, হিন্দু ধর্ম। একটিই খাদ্য থাকবে - ভেজ। নন-ভেজে ওদের যে বড্ড এলার্জি। যেখানে কেবল উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির চাষ হবে। এই রামরাজ্যে মুসলিম দলিত আদিবাসী সহ নিম্নবর্ণের প্রান্তিক হিন্দুদের ঠাঁই হবেনা। দেশের এই নাগরিকদের হয় চলে যেতে হবে, কিম্বা বেনাগরিক হয়ে সরকারি সব সুযোগ সুবিধে হারিয়ে দাস শ্রমিক হয়ে থাকতে হবে, বা জেলখানার অন্ধ কুঠুরিতে পচে মরতে হবে, বড়জোর বিনি পয়সার মজুর হয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে জীবনাবসানের সুযোগ পাবে। এটা বহুত্ববাদী, ‘বিবিধের মাঝে মিলন’এর ভারতবর্ষের ঐতিহ্য বিরোধী, নক্কারজনক সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়। এদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের সনাতনী ভারতবর্ষে গরু বলদ গোবর গোমূত্র নিয়ে গবেষণা হবে, জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হবে, ধাপ্পাবাজ বণিক রামদেবের লোক ঠকানো ব্যবসা চলবে রমরমিয়ে। পেয়ারের দুই ব্যবসায়ী দেশের জল জঙ্গল জমিন পাহাড় নদী খনিজ সম্বল, সব লুটেপুটে খাবে। প্রতিবাদ করলে দেশদ্রোহী বলে জেলে পুরে দেওয়া হবে।

অনাগত সেই মহান দেশে ঠাঁই হবেনা রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, কাজী নজরুল, ভগৎ সিংহ, প্রীতিলতাদের। ভুলিয়ে দেওয়া হবে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বোস, মেঘনাদ সাহাদের মতো মহান বিজ্ঞানীদের নাম। ভুলিয়ে দেওয়া হবে সুজলা সুফলা নদীমাতৃক কৃষিপ্রধান ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও প্রকৃতি কেন্দ্রীক যাপনের কথা।

দেশের সত্যিকারের ইতিহাস মিউজিয়ামে পাঠিয়ে রাম, সীতা, লক্ষণ, গোলওয়ারকার, সাভারকার, মোদি, যোগী, নাথুরামদের মহান জীবনের সুমহান কর্মকাণ্ড পড়ানো হবে। ওদের ঐ দেশে মেয়েরা অন্তপুরে জায়গা পাবে স্বামী শ্বশুরদের পা ধোয়া জল খেয়ে গৃহকর্মে সুনিপুনা হতে। ভবিষ্যত উত্তরাধিকারের, বিশেষ করে পুত্র সন্তান পয়দা করতে আর উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ভোগবিলাসের সামগ্রী হতে।

 

ভাবতে সত্যি কষ্ট হয় –এই একবিংশ শতাব্দীতে যখন বিজ্ঞান এগিয়ে চলেছে গ্ৰহ থেকে গ্রহান্তরে প্রাণের অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে, নতুন নতুন আবিষ্কার চমকে দিচ্ছে বিশ্ববাসীকে। কৃষ্ণগহ্বরের ছবি আমাদের অভিভূত করছে। মহাকর্ষীয় তরঙ্গের শনাক্তকরণ আমাদের চমৎকৃত করছে। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির স্রষ্টারা মানুষের ইতিহাস থেকে উপাদান সংগ্ৰহ করে সৃষ্টি করে চলেছেন আদি সত্যের অনুসন্ধানে অসাধারণ সাহিত্য, শিল্পকলা। ইতিহাস পুনর্নির্মাণ করে মানুষের সভ্যতা বিকাশের নিয়ম জানার চেষ্টা করে চলেছেন ইতিহাসবিদরা। ফসিলের জিন বিশ্লেষণ করে আদিম সভ্যতার পাঠ শেখাচ্ছে। প্রকৃতি, পরিবেশ, বাস্তসংস্থান নিয়ে চলছে গবেষণা। আন্তর্জাতিক স্তরেই এইসব সংকটের সমাধানের দিশা খোঁজার প্রচেষ্টা আমাদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আলোকবর্তিকা হয়ে বিজ্ঞান প্রযুক্তি সামনের সারিতে চলে আসছে। ঠিক সেই সময় ভারতে চলছে অন্ধ সংস্কারে আচ্ছন্ন দাসবৃত্তিসুলভ মানুষ তৈরির জঘন্য প্রচেষ্টা। কেবলমাত্র ক্ষমতার লোভে আপাদমস্তক আচ্ছাদিত একদল স্বৈরাচারীর স্বার্থ হাসিল করার জন্য দেশের ঐতিহ্যশালী সভ্যতা শিক্ষা সাহিত্য জ্ঞানের আলোক শিখাকে কল্পিত রামায়ন পুরাণের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। জোরসে বলছে –জয় ছিরাম! পেছনের দিকে এগিয়ে চলো জোর কদমে! 

 

এদেরকে আটকে দিতে হবে এখনই সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। নতুবা বাঙালি তথা ভারতীয় তথা বিশ্বনাগরিকের সাড়ে বারোটা বাজতে বেশি সময় লাগবে না। চুলোয় যাবে সৌহার্দ্য, সৌভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা। বিশ্বমানবতা তো লক্ষ যোজন দূরে। শুনতে কি পাচ্ছো, সেই অনাগত দুঃস্বপ্নের ডঙ্কা?

দূরে কোথাও এক রাতজাগা পাখি ডেকে চলে নব রবির নব কিরণের খোঁজে…….।

 

 

 

 

0 Comments

Post Comment