মা জননীরা বাবুদের হাড় জ্বালাতন কল্লেন। লকডাউনে ঘর গেরস্তালির কাজকম্ম কত্তে গিয়ে এম্নি মেজাজ সপ্তমে, এর মদ্যে হাতে নাতে প্রুফ পাওয়া গেলো মেয়েছেলেরা রাক্ষুসী হয়ে ব্যাটাছেলেদের ঘাড়ে চেপেচে। কোভিড তুশ্চু। লোক অম্নি মরে, নয় দুটো বেশী মরচে। কিন্তু ঘরে ঘরে যে ঠাকুরমার ঝুলি শুরু হয়েচে তার হবে কী? বাবুদের ঘুম ছুটেচে। ফেসবুকে সুন্দর মতন মেয়ে দেকলে আগের মতন মেসেঞ্জারে দেবভাষায় আলাপ কত্তে ভরসা হচ্চে না, নামটি রিয়া হলে ডবল বুক ধড়ফড়। আগে এত গোল ছিল না। অ্যান্টিন্যাশনাল সুন্দরী দেকলেই একানে রড ঢুকিয়ে দোব, ওকানে ইট ঢুকিয়ে দোব। কেবল মেয়েকে নয়, তার মাকেও রেপ করবার ষড়টি পাঁচো ইয়ার মিলে বুক ফুলিয়ে করা যাচ্চিল। একন ভয় হচ্চে। বাংলার মেয়েছেলে বলে কতা, এরা অমাবস্যায় মড়ার উপর বসে মন্তর পড়ে, এদের দেবী পয্যন্ত এম্নি বেহায়া যে ন্যাংটো হয়ে সোয়ামীর বুকের উপর দাঁড়িয়ে হাতে কাটা মুণ্ড ধরে নেত্য করেন। অমন সুন্দর সোনার টুকরো ছেলেকে চিবিয়ে খেয়েচে, আমায় খেতে পারবে না এ বা কি কতা? উড়ে এসে রক্ত শুষে খেতে পারে। ঘরে বসে বাণ মাল্লেই বা কী? ও বিষয়ে গাঁটকাটাবাবুকে বিশ্বেস হচ্চে না। ডাকিনীকে কি সিডিশনে কয়েদ কত্তে পারবে? তবে কিনা দেশে আইন আদালত আচে, সরকার বাহাদুর রয়েচেন। তাই এক নম্বর রাক্ষুসীকে গুষ্টিসুদ্ধ হাজতে পোরার বেওস্তা হচ্চে। কোতোয়াল ব্যান্ড অফ ইন্ডিয়া চেপে ধল্লেই ভোমরা ভোমরীর কৌটো বেরিয়ে পড়বে একন। ও দুটোকে কেটে ফেল্লেই যেকানে যত বুকে জ্বালা ধরানো বাঙালী মেয়েছেলে শায়েস্তা হবেন।
আর সকলে নিশ্চিন্দি, বাঙালী বাবুদের কিঞ্চিৎ ডিলেমা হয়েচে। সেই রামমোহন, বিদ্যেসাগর মশায়ের কাল থেকে বাংলায় মেয়েছেলেদের বড় বাড় বেড়েচে। সে কতা সমাজে বলা হয় না। দু চার পাড়াগেঁয়ে বাবু বলে থাকেন, তবে শহুরে ইংরেজি জানা বাবুরো স্কচ গিলতে গিলতে বল্লে গিন্নী সোফায় শুতে দেবেন কি রাঁড়ের বাড়ী যেতে বলবেন সে ভয়ে রা কাড়েন না। সে কালের বাবুদের তবু রাঁড় ছিল। এ বাবুদের এলেম নেই, রেস্তও নেই। কেবল নোলা। গিন্নী সে কতা বিলক্ষণ জানেন বলে খোঁটা দিয়ে থাকেন। দেশে ঠ্যাঁটা মেয়েছেলেদের অনলাইন শিক্ষে দেবার ফ্যাশান হওয়ায় এদানি এই বাবুদের হাড় জুড়োবার বেওস্তা হয়েচিল। সমাজে প্রাণ খুলে মেয়েছেলেদের নিন্দে করবারও সুবিধে হয়েচিল। ইশকুল, কালেজের হোয়াটস্যাপ গ্রুপে মনের সুখে মা বোনেদের গাল দেয়া আরম্ভ হয়েচিল। কিচু জোক মা বোন কাজিন গার্লফ্রেন্ডদেরও পাঠানো হত। তেনারা গোঁসা কল্লে, আরে জোক তো সিরিয়াস নয়, বলে হেঁ হেঁ করা দস্তুর হয়েচিল। একন বেছে বেছে বাঙালী মেয়েছেলেদের গাল দেয়ায় বাবুদের ঠাওর হচ্চে না সায় দিলে নিজেদের গায়েই লাগবে কিনা।
তবে ডিলেমা কেবল বাঙালী বাবুদের হয়নি। হিংলিশ ভাষায় দড় বাংলার মা জননীরাও আতান্তরে পড়েচেন। জিনস পরে প্রধান সেবকের ছবিতে ফ্লাইং কিস ছুঁড়তে অ্যাদ্দিন মন্দ লাগেনি, একন ভক্তবৃন্দ ডাকিনী বলচে শুনে কার উপর অভিমান কত্তে হবে গুগলে খোঁজ পাচ্চেন না। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, জে এন ইউ, জামিয়া মিলিয়ার মা জননীদের অ্যাদ্দিন গাল পেড়ে একন তেনাদের পাশেই দাঁড়াতে হচ্চে। দুঃখে বুক ফাটলেও এনাদের অবশ্যি মুখ ফোটে না। এনারা চুনোপুঁটি ভক্তদের আমল দেন না, জানেন প্রধান সেবক মহিলাদের ভারী ভক্তি করেন। সনে তিনবার মোবাইল ক্যামেরা, ডি এস এল আর, মুভি ক্যামেরা, হ্যান্ডিক্যাম, ও বি ভ্যান ইত্যাদি ছবি তোলার যন্তরের চোদ্দ গুষ্টি জুটিয়ে গর্ভধারিণীর পায়ে মাতা ঠেকাতে যান। বাবু ঘোর নারীবাদীও বটেন। মডার্ন ম্যারেজের মতন গিন্নীকে স্পেস দেন। সেই পনেরো বচ্ছর বয়স হতে স্পেস দিতে দিতে গিন্নীকে স্পেসে পাঠিয়ে দিয়েচেন। এ সওয়ায় তেনার বাঙালী ভক্ত মা জননীরা ফাটা বুক আশার ব্যান্ডেজে বেঁধেচেন। সেবকবাবু তেনাদের অপমানের প্রতিকার করবেন।
তবে কিনা সকল স্থানের মা জননীরা এনাদের মতন ভক্তিমতী নন। এক তামিল মা জননী মেলা গোল কল্লেন। দোষের মদ্যে এক বাবু তেনাকে বলেচেন হিন্দি না বলতে পাল্লে ভারতীয় হয় না। কতাটি কলকেতার কাউকে বল্লেই পাত্তেন। কলকেতার বাবু বিবিরা জানেন হিন্দি না বলতে পাল্লে বাঙালীই হয় না। মত্তে তামিল দেকে বলতে গ্যাচেন। একন ঠ্যালা সামলাও। মন্তর পড়তে কি কেবল বাংলার মেয়েছেলেরা পারে? তামিল মন্তরের জোরে একন বাবুটির সাধের চাকুরি নিয়ে টানাটানি। এক হালফ্যাশনের বাবু ব্যালকনিতে ভক্তি ভরে চুপিচুপি গাইচিলেন, যেন পাঁচ কান না হয়। হুতোমের সূক্ষ্ম শরীর তাই শুনে ফেল্লেন
ডাকিনী যোগিনীতে মা ভরে গেলো দেশ
কোভিড ভুলিয়া করো এদেরে নিকেশ।
বাঙালী মেয়েরে শুদু স্বপনেতে চাই
তামিল মেয়েরে কোতা দিও নাকো ঠাঁই।