পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

শেষ ষোলোয় মেসি বাহিনী, সৌদি আরব মেক্সিকোকে পরের রাউন্ডে যেতে দিল না

  • 01 December, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 916 view(s)
  • লিখেছেন : দেবাশিস মজুমদার
একটি পেনাল্টি নষ্ট করা ছাড়া সারা ম্যাচ মেসি ছিল লায়োনেল অর্থাৎ সিংহবিক্রমে। মেসি খেললেন, মেসি খেলালেন গোটা দলকে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন আক্রমণভাগে, ছন্দে ফিরে এল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে ম্যাকএলিস্টারের। দ্বিতীয় গোল সাতষট্টি মিনিটে জুলিয়ান আলভারেজের পা থেকে। আরও গোল আসতেই পারত কিন্তু ভাগ্য আর গোলরক্ষক আর্জেন্টিনার পক্ষে ব্যবধান বাড়াতে দিল না।

প্রথমার্ধের ৩৮ মিনিটে আর্জেন্টিনা পেনাল্টি পেল পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে। পেনাল্টি নেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন মেসি। পোল্যান্ডের গোলরক্ষক তার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। ধারাভাষ্যকার ইংরেজিতে বলছেন মেসি সৌদি আরবের বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে গোল করেছেন আর পোল্যান্ডের গোলরক্ষক সৌদি আরবের বিরুদ্ধে পেনাল্টি শট আকটে দিয়েছেন। তীব্র স্নায়ুযুদ্ধ দেখতে তখন উত্তেজনায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড়। মেসি শট নিলেন এবং পোলিশ গোলকিপার তা বাঁচিয়েও দিলেন। ফলো থ্রু-তে কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে দৌড়তে দৌড়তে হেসে ফেললেন তিনি। সরল হাসি কিন্তু তার মর্মার্থ বড় গভীর। এই হাসির মধ্যে হাসি, কান্না, আনন্দ, যন্ত্রণা এমনকি ব্যঙ্গও একসাথে প্রকাশ করে ফেললেন মেসি। হ্যাঁ, ব্যঙ্গও। ভাগ্যের পরিহাসের ব্যঙ্গ, সেইসঙ্গে নিজের প্রতিও ব্যঙ্গ। আর্জেন্টিনার জার্সিতে পেনাল্টি থেকে অনেক গোল করেছেন মেসি আবার এই নিয়ে বহুবার পেনাল্টি মিসও করলেন তিনি। সবকিছু যেন এক হয়ে জীবনের মত উঠে এল মেসির ওই হাসির মধ্যে দিয়ে। একমুহুর্তের জন্য আপামর বিশ্বের আর্জেন্টিনা সমর্থকরা আর মেসির ভক্তরা শিউরে উঠলেন, বড় নির্মম বিদায় কি হতে চলেছে মেসির বিশ্বফুটবলের মঞ্চ থেকে, কারণ তাদের মহানায়ক মারাদোনারও বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে বিদায়ের দৃশ্য ছিল ভীষণ ট্র্যাজিক।

এক তারিখ আগেই ইংল্যান্ডের কাছে ০-৩ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে ওয়েলস সেইসঙ্গে ওয়েলসের তারকা ফুটবলার গ্যারেথ বেলের আন্তর্জাতিক ফুটবল কেরিয়ারেও ইতি পড়ল। যখন মনে হচ্ছে মেসির বিশ্বকাপ তথা আন্তর্জাতিক ফুটবল মঞ্চ থেকে বিদায় ট্র্যাজিক হতে চলেছে তখন ঘুরে দাঁড়ালো পুরো আর্জেন্টিনা দল।

কাতার বিশ্বকাপ প্রতি মুহুর্তে পরীক্ষা নিয়ে চলেছে এলবিসেলেস্তে জার্সির। প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে বিস্ময় পরাজয়। তাও বা পরের ম্যাচে মেসিবাহিনী উজ্জীবিত ফুটবল খেলে মেক্সিকোকে পরাজিত করল তো নতুন বিতর্ক এসে চাপল মেসির ঘাড়ে। মেসি নাকি মেক্সিকোর জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন ড্রেসিংরুমে। অভিযোগ আনলেন মেক্সিকোর বক্সার সান্তোস। আর্জেন্টিনীয় সংবাদমাধ্যম জানালো অনিচ্ছাকৃতভাবে মেক্সিকোর পতাকা বুট খোলার সময়ে মেসির পায়ে ঠেকে থেকে থাকলেও তিনি মেক্সিকোর জাতীয় পতাকার অবমাননা করেননি। বক্তব্যের চাপান উতোর চলতে থাকল। মেসিকে দমাতে এটাই নাকি মেক্সিকোর দাওয়াই। এত সবকিছু ঘাড়ে নিয়ে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন মেসি। কোচ লায়োনেল স্কালোনি মেসিকে এদিন ব্যবহার করলেন একেবারে তার দুই স্ট্রাইকারের মাঝখানে। ওই একটি পেনাল্টি নষ্ট করা ছাড়া সারা ম্যাচ মেসি ছিল লায়োনেল অর্থাৎ সিংহবিক্রমে। মেসি খেললেন, মেসি খেলালেন গোটা দলকে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন আক্রমণভাগে, ছন্দে ফিরে এল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে ম্যাকএলিস্টারের। দ্বিতীয় গোল সাতষট্টি মিনিটে জুলিয়ান আলভারেজের পা থেকে। আরও গোল আসতেই পারত কিন্তু ভাগ্য আর গোলরক্ষক আর্জেন্টিনার পক্ষে ব্যবধান বাড়াতে দিল না। লেওয়ানডস্কি ছাড়া পোল্যান্ড দলে বড় করে বলার মত কিছু নেই। সেই লেওয়ানডস্কিও সারাটা সময় কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েই থাকলেন, কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে পোলিশ রক্ষণভাগ আর্জেন্টিনার আক্রমণ শানাতে দেয়নি। ২-০ ব্যবধানেই ম্যাচ জিতল আর্জেন্টিনা। কিন্তু হেরে গেলেও পরের রাউন্ডে যাওয়ার ছাড়পত্র ঘোষণা করে নিল পোল্যান্ড। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি মাসে এই দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতায় নেহেরু কাপের ম্যাচে যা ১-১ গোলে অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছিল। এবারে কাতারের মাটিতে আর্জেন্টিনা অনায়াসে জিতলেও পোল্যান্ডও তাদের সাথে উত্তীর্ণ হল শেষ ষোলোয়। বিগত রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছেই ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল মেসিবাহিনীকে। এবারে ফ্রান্স আর আর্জেন্টিনা যথাক্রমে ডি আর সি গ্রুপ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠায় পরের রাউন্ডেই তারা মুখোমুখি হচ্ছে না। পোল্যান্ড খেলবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। এদিন কার্যত নিজের রিজার্ভ বেঞ্চের টিমকেই তিউনিশিয়ার বিরুদ্ধে নামিয়েছিলেন দিদিয়ের দেশঁ। কারণ ফ্রান্স আগেই পরবর্তী রাউন্ডে পৌছে গেছে। তবে ফ্রান্সের রিজার্ভ বেঞ্চ যে এখনও পূর্ণ শক্তির হয়ে উঠতে পারেনি তার প্রমাণ হল ওয়াহবি খাজরির গোলে তিউনিশিয়ার কাছে ফ্রান্সের ০-১ গোলে হার। তারপরেও ফ্রান্স গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোয় জায়গা করে নিল।

অন্যদিকে ২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপের পর আবার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় জায়গা করে নিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ ষোলোয় মেসি বাহিনীর সামনে তারাই। সট্রেলিয়া এমন একটি দেশ যা প্রায় সব দলগত খেলাতেই নিজেদের বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। লেকির ৬০ মিনিটে করা গোলে ডেনমার্ককে হারিয়ে পরের পর্বে উঠে গেল অস্ট্রেলিয়া। আর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জয় পেয়েও বিদায় নিতে হল তিউনিশিয়াকে।

অন্যদিকে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে স্বপ্নের ফলাফল দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেও কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘটে গেল প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরবের। পোল্যান্ডের কাছে ০-২ গোলে হারের পর এদিন সৌদি আরব মেক্সিকোর কাছে হারল ১-২ গোলে। কিন্তু সৌদির ওই এক গোল মেক্সিকোকে ছিটকে দিল বিশ্বকাপের লড়াই থেকে। ম্যাচের নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর শেষ মুহুর্তে সালেম আলদেওসারি গোলে ব্যবধান কমায় সৌদি আরব আর এই গোলই এযাত্রা কাতারের মাটিতে মেক্সিকোর সঙ্গে বিশ্বকাপের ব্যবধান বিপুলভাবে বাড়িয়ে দিল। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাই ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড আর আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। তাই এলবিসেলেস্তে জার্সির আরও অগ্রগমন ঘটাই স্বাভাবিক, একইভাবে ফ্রান্সেরও কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে হচ্ছে। তবে অঘটনের ঘনঘটা রয়েছে কাতার বিশ্বকাপে। তবে আর্জেন্টিনার উচিত পেনাল্টি শট নেওয়ার ক্ষেত্রে মেসি নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠা। তবে শেষ ষোলোয় যে বিভিন্ন দলের মধ্যে ধুন্ধুমার ফুটবলযুদ্ধ অপেক্ষা করে রয়েছে তা আর আলাদাভাবে বলে দিতে হয় না।     

0 Comments

Post Comment