শিক্ষাক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস এখন নিউ নর্মাল। করোনা পরিস্থিতিতে আমরা কেউই জানিনা, ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকার মুখোমুখি সাক্ষাত কবে হবে। এমতাবস্থায় অনলাইন ক্লাসই ভরসা। আইজ্যাক অ্যাসিমভ অনেক বছর আগে যে স্ক্রিন-টিচারের ধারণা দিয়েছিলেন, তা যেন সত্যি হতে বসেছে। অবশ্য সেখানে যন্ত্রই শিক্ষক, পাঠ্যক্রম সবই আপলোড করা আছে যন্ত্রে। বাস্তবে, করোনাক্লিষ্ট পৃথিবীতে এখনও মানব-শিক্ষকদের উপর ভরসা করতে হচ্ছে। কিন্তু ঘটেছে শিক্ষকদের ভূমিকা বদল। জুম,গুগলমিট, হোয়াটস্যাপ জুড়ে সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের ক্লাসের বিস্তার।
এ ব্যাপারে শিক্ষকদের থেকে ফিডব্যাক নিলে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক/অধ্যাপকদের থেকে দুটি বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া মিলবে। সরকারি শিক্ষকদের অখুশি শোনাবে, কারণ তাঁরা সব ছাত্রদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না। আবার বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা অভিযোগ করবেন অতিরিক্ত চাপ,পার্ফর্ম্যান্স অ্যাংজাইটি ইত্যাদি বিষয়ে।
প্রথমে সরকারি শিক্ষকদের অসুবিধের কথায় আসা যাক। পি সাইনাথ সম্প্রতি একটি ওয়েবিনারে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস-এর দুর্লভতা সংক্রান্ত কিছু তথ্য দিয়েছিলেন। আমাদের রাজ্যের কথাই ধরা যাক। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৮ সালে গ্রামাঞ্চলে ৩-৪% বাড়িতে কম্পিউটার ছিল৷ ৭.৭% বাড়িতে নেট কানেকশন ছিল। গড়ে ১৪ জনে একজন ছাত্র ও ১৯ জনে একজন ছাত্রীর হয়ত নেট কানেকশন আছে।
'ডিজিটাল ভারত' গড়ার উদ্যোগে হয়ত ইন্টারনেটের সুলভতা কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু বিরাট হেরফের হয়নি। এমতাবস্থায় অনলাইন ক্লাস সাংবিধানিক ভাবে অনৈতিক নয়? কর্নাটকের সিলিকন ভ্যালিতে মোটামুটি ৮% ছাত্রছাত্রীর নেট কানেকশন আছে। সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস বন্ধই করে দিয়েছে সরকার।
সাইনাথ বললেন, মহারাষ্ট্রের এক শিক্ষক তাঁকে বলেছেন, 'ডিজিটাল ডিভাইড আগেই ছিল।এখন ডিজিটাল পার্টিশন হয়ে গেছে।' অর্থাৎ, একটা বর্ডার। তার একপাশে ইন্টারনেট-স্মার্টফোন-কম্পিউটার শোভিত কটি পরিবার। আর অন্য পাশে গোটা জাতি, গোটা দেশ। জাতি-বর্ণ-লিঙ্গগত প্রান্তিকতা যার যত তীব্র, এই নতুন বাস্তবতায় ততটাই শিক্ষায় বঞ্চিত সেই ব্যক্তি। অথচ আমাদের সংবিধান সাম্য ও সমানাধিকারের কথা বলে। এমনকী ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা এখন শিশুর সাংবিধানিক অধিকারও বটে।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। মফস্বলী ছেলেদের স্কুলে পড়াই। একটা বড় অংশের ছাত্র মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্ত ছাত্রের সংখ্যাটা নিম্নবিত্ত ছাত্রর থেকে কিঞ্চিৎ বেশি এবং তারা পুরুষ। দেখা গেছে বাড়িতে মেয়েদের থেকে ছেলেদের ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের সুযোগ বেশি থাকে। এতদসত্ত্বেও বিভিন্ন সময় আমরা অভিযোগ পাই কানেকশন সংক্রান্ত। ইন্টারনেট স্পিডের ওঠানামা নিয়ে সমস্যা লেগে থাকে। টেকনিকালিটি বিষয়ক বিমূঢ়তাও আছে('কীভাবে লগ ইন করা যাবে, ম্যাম?' ইত্যাদি প্রশ্ন)। কারণ তাদের জীবনে ইন্টারনেট ক্লাস এসেছে হুড়মুড়িয়ে, কোনো প্রাক-প্রস্তুতি ছাড়া।
উপরন্তু আছে সেই ছেলেরা, যাদের স্মার্ট ফোন নেই, ইন্টারনেট কানেকশন নেই। ভারতের আর্থসামাজিক পরিকাঠামো দেখলে, সমগ্র দেশে এরকম ছাত্র সংখ্যায় অনেক বেশি। 'আমার অনুপস্থিতিতে ক্লাসে পড়া এগিয়ে যাচ্ছে' -এই মানসিক চাপ তাদের অবসাদগ্রস্ত করছে। হয়ত তাদের অক্ষম বাপ-মা মুখ চুন করে আছেন। দেশে স্মার্টফোন-হীন ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের বাবামায়ের আত্মহননের ঘটনা কিন্তু ক্রমবর্ধমান। দিল্লি, অসম, কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, কোথায় না ঘটেছে এরকম মৃত্যু!
এইখানে বলে রাখি, ভ্যাক্সিন বেরোনোর আগে বা রোগের প্রকোপ কমার আগে স্কুল খুলে দেওয়াও হঠকারিতার পরিচয়। যখন আদৌ স্কুল খোলা সম্ভব হবে, তখনও তা নির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনেই খুলতে হবে। এনসিইআরটি থার্মাল চেক আপ করে স্কুলে ঢোকানো, সোশাল ডিসট্যান্সিং বজায় রেখে ক্লাস করানোর পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু তার বাস্তব প্রয়োগ প্রায় অসম্ভব বলেই স্কুল-কলেজ এখনও বন্ধ। মিড ডে মিল শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে মাসিক র্যাশন হিসেবে বিলি হচ্ছে সরকারি নির্দেশে। সেই পদক্ষেপ অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু আপাতত এখনও নিয়মিত ক্লাস শুরু করা প্রায় অসম্ভব ঠেকছে, বিশেষত যখন করোনা সংক্রমণের ভিত্তিতে পৃথিবীতে ভারত তিন নম্বরে উঠে এসেছে ও অচিরেই এক নম্বরে উন্নীত হতে পারে বলে অনেকের আশা। তাই শ্রী সাইনাথও একবারও চটজলদি স্কুল খোলার কথা বলেননি।
তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা কী হতে পারে?
মহারাষ্ট্রের শিক্ষক সংগঠনগুলি টেলিভিশন সম্প্রচারের কথা বলছে। বলছে, টিভিতে পড়ানো হলে হয়ত গ্রামের ছেলেমেয়েরা বেশি উপকার পাবে। কিন্তু সেরকম কোনো সরকারি উদ্যোগ এখনও দেখা গেল না৷ বেসরকারি নিউজ চ্যালেনগুলি কিছু ক্লাস চালায়৷ সরকার কি পারত না একটা আলাদা চ্যানেল, শুধুমাত্র লকডাউনের সময়ের শিক্ষার জন্য, চালু করতে?
রেডিওকেও কাজে লাগানো যেত। অল ইন্ডিয়া রেডিওর কোনো স্টেশন লকডাউন কালীন শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করা যেত না? রেডিও কিন্তু অনেক কম মূল্যে কেনা যায়। স্মার্টফোনের দাম অনেক বেশি, তদুপরি আছে মাসিক ইন্টারনেট প্যাকেজের খরচা। অনলাইন ক্লাসকে পুরোপুরি বাদ দিতে বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, শিক্ষাদানের একাধিক উপায় থাকলে তা আরও অনেকের কাছে পৌঁছত। কেন সেভাবে ভাবা হল না? আমরা কি শিক্ষাকে বড়লোকের পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েই দিয়ে দিলাম?
পণ্য হিসেবে শিক্ষা- এই সংক্রান্ত আলোচনার সুবিধার্থে তাহলে এবার বেসরকারি স্কুলের দিকে চোখ ফেরানো যাক। এক দিকে যখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বোর্ড পরিক্ষার্থীদেরও ঠিকমতো পড়াশুনো হচ্ছে না, তখন অন্য দিকে অভিভাবকদের টাকায় পুষ্ট বেসরকারি স্কুলগুলি ক্লাস ওয়ান-টুর বাচ্চাদেরও প্রবল পড়াচ্ছে। অথচ এটি হয়ত এক উৎকৃষ্ট সময় হতে পারত শিশুকে সভ্যতার সীমাবদ্ধতা বোঝানোর। সংযম শেখানোর। মিতব্যায়িতা শেখানোর। প্রকৃতির সঙ্গে তার পরিচয় করানোর। এ ছাড়া ভার্চুয়াল স্কুল বা বাবামা তাকে কন্সেপচুয়ালি অঙ্ক বা বিজ্ঞান বা ভাষা ইত্যাদি শেখাতেই পারতেন গল্পচ্ছলে।
বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বয়ান শুনলে জানা যাবে, তাঁদের কাছে এই নতুন অনলাইন ক্লাসের স্বাভাবিকতায় চটজলদি অভিযোজিত হওয়া প্রায় অস্তিত্বরক্ষার সমার্থক। এতে সড়গড় হতে না পারলে চাকরি যাবে। তাঁদের অনেককে ক্লাস নিতে হয় উমপুনের পরদিনও, নেট কানেকশন বা কারেন্টের দুরবস্থা সত্ত্বেও। কিছু কিছু স্কুলের অনলাইন ক্লাসে, শোনা যায়, অভিভাবকরা দৃশ্যতই ছাত্রদের সঙ্গে বসে থাকেন, তদারকি করতে। ফলে শিক্ষক তাঁর অভিপ্রেত পরিবেশ পান না৷ তাঁর পারফরম্যান্স র্অ্যাংজাইটি বাড়ে। ছাত্র-ছাত্রী যেন এখানে উপলক্ষ্য মাত্র। স্কুল হল বিক্রেতা, শিক্ষক বিক্রয়ের মাধ্যম,অভিভাবক ক্রেতা, আর শিক্ষা পণ্য। এভাবে শিক্ষাদান বা শিক্ষাগ্রহণ কতটা সমৃদ্ধ করে ছাত্র-ছাত্রী বা শিক্ষককে?
শুধু শিক্ষাসংক্রান্ত মূল্যবোধ যে পাল্টাচ্ছে তা নয়। শিক্ষাদানের যা মূল যান্ত্রিক সহায়ক, অ্যান্ড্রয়েড ফোন, তাকে ঘিরে মূল্যবোধেরও যেন হঠাৎ বদল ঘটেছে। যেকোনো 'হঠাৎ বদল' কিন্তু কমবয়সীদের বিভান্ত করে, 'কনফিউজড' করে৷ শিশুশিক্ষার ব্যাপারে একটি প্রাথমিক পরামর্শই থাকে এইরূপঃ বিপরীতমুখী দুরকম নির্দেশ দিয়ে শিশুকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। অথচ, যে শিশুকে এতদিন মোবাইল থেকে দূরে রাখা হত, তার হাতেই তুলে দিতে হচ্ছে মোবাইল। আমাদের মফস্বলের স্কুলে যেদিন শেষ পা রাখি, সেদিন পর্যন্ত স্কুলের ত্রিসীমানায় ছাত্রদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। সেই গোঁড়া শিক্ষকরা আর সেই ছাত্র-ছাত্রীরা এখন নিজ নিজ অ্যান্ড্রয়েড হাতে রাজ্যের দুই প্রান্তে।
ডিজিটাল অ্যাক্সেসের পরে ডিজিটাল সিকিউরিটির প্রশ্নটিও আসে। জুম অ্যাপটি আদৌ নিজেই সুরক্ষিত কিনা(গৃহমন্ত্রক বলেছে, সুরক্ষিত নয়), সে প্রশ্ন নাহয় তোলা থাকল। কিন্তু কিছুদিন আগে শোনা গেল,লা মার্টিনিয়ার স্কুলের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। কেউ ক্লাস চলাকালীন অশালীন হুমকি ও খুনের হুমকি দিয়েছে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীদের। কেরলে, শিক্ষিকাদের নিয়ে কুরুচিকর বক্তব্য ভেসে উঠেছে অনলাইন ক্লাসে। আমাদের কিশোর-কিশোরীরা ডিজিটাল সেফটি বিষয়ে অজ্ঞ। এমনকী শিক্ষক-শিক্ষিকারাও সবকিছু জানেন না এ বিষয়ে। তাই ছাত্রীটি জানে না, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-এ কেউ তাকে যৌনভাবে হয়রানি করতে পারে না। সে জানে না হোয়াটস্যাপের নিরাপদ ব্যবহার, জানে না হোয়াটস্যাপ কীভাবে ট্র্যাফিকিং শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হয়ে উঠেছে বর্তমানে। আবার ছাত্রটিও জানে না, কোন্ কোন্ কাজ করলে ডিজিটাল মাধ্যমে 'কনসেন্ট' লঙ্ঘন করা হয়। শিক্ষকও জানেন না, নিজের ফোন নম্বর দেওয়ার ইচ্ছে না থাকলে তাঁর 'হোয়াটস্যাপ গ্রুপ' খোলার বদলে 'হোয়াটস্যাপ ব্রডকাস্ট' খোলা উচিত ছিল, তাহলেই তিনি ও তাঁর ফোন নম্বর নিরাপদ থাকত। বস্তুত,প্রভূত ডিজিটাল অজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই বর্তমানে অনলাইন ক্লাসগুলি চলছে। কারণ,আগেই বলেছি, অনলাইন ক্লাসের বাস্তবতা আমাদের দোরগোড়ায় এসে পড়েছে হঠাৎ করে। বিনা প্রস্তুতিতে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তাও।
NIMHANS শিশুদের মানসিক বিকাশে অনলাইন সময় কাটানোর তথা অনলাইন ক্লাসের বিরূপ ফলের কথাই বলছে। ফোনের ছোট স্ক্রিনের দিকে টানা এক-দু’ঘন্টা তাকিয়ে থেকে মনোযোগ দিয়ে লেকচার শোনা খুবই দুষ্কর। তাতে চোখেরও ক্ষতি, মস্তিষ্কেরও।
তারপরেও ছোটদের অনলাইন ক্লাসের হুজুগ চলছেই। তাদের ক্ষেত্রেও হয়ত টিভি আর রেডিওকে বেশি কাজে লাগানো যেত।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটিতে অনলাইন শিক্ষায় কতটা সুবিধে হচ্ছে? হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় কোভিড-১৯ বিপর্যয়ের শুরুর দিকে একটি সার্ভে করে। দেখা যায় যে কেবলমাত্র ৫০% পড়ুয়াদের ল্যাপটপ ব্যবহার করার সুবিধে রয়েছে। খুব বেশি হলে ৪৫% মোটামুটি ভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা পাবে। ১৮% ছাত্রছাত্রী অনেক চেষ্টা করলেও এসব সুযোগ একেবারেই পাবে না(UoH Herald 2020)। তাই আগ্রহ থাকলেও অনেকে অনলাইন পড়াশোনায় অংশ নিতে পারবে না। আবার ইন্টারনেট বা ফোন থাকলেই তো হয় না, এমনকী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রীর বাড়িতেও পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ নেই।
বাড়িতে যদি দুজন স্কুল বা কলেজের পড়ুয়া থাকে, তাহলে একই সঙ্গে দুজনের জন্য ক্লাস করার শান্ত পরিবেশ দেওয়া এমনকী শহুরে মধ্যবিত্ত ফ্ল্যাটবাড়িতেও কঠিন হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময়ই লিঙ্গভিত্তিক ভাবে আগে সুযোগ পায় ছেলেটি এবং অবিচার হয় মেয়েটির ওপর। বাড়িতে যদি একটিমাত্র ডিভাইজ থাকে বা ক্লাস করার জন্য একটি মাত্র ঘর, আর একই সময় যদি দুজনের ক্লাস থাকে, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েটির বদলে সুযোগ পায় ছেলেটি। অথচ প্রকৃত ক্লাসরুমে হয়ত পড়ুয়ারা এসব বাধা-বিঘ্নকে কাটিয়ে একরকম সাম্যবাদী অবস্থানে সাময়িক ভাবে আসতে পারত।
অনলাইন পড়াশোনা কি এই বিশেষ কোভিড-পরিস্থিতিতে একটি সাময়িক প্রক্রিয়া মাত্র? তেমনটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু বিগত বেশ কিছু বছর ধরে অনলাইনে পড়াশুনোকে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যত বলে জাহির করা হচ্ছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক, ইউজিসি, এবং নীতি আয়োগ বিভিন্ন আলোচনায় অনলাইনে পড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন (বিজনেস ওয়ার্ল্ড ২০২০)। ইউজিসি’র চেয়ারম্যান সম্প্রতি অনলাইন শিক্ষার সমর্থনে বলেছেন, 'এই কোভিড-১৯-এর সময়ে এবং পরবর্তী ক্ষেত্রেও আমরা একটা পরিস্থিতি দেখছি যেখানে অনলাইন শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। দেশের মোট ভর্তির অনুপাত বাড়ানোর জন্য এটা প্রয়োজনীয়।' (নিউজ১৮ ইন্ডিয়া ২০২০)। ভবিষ্যতে যদি সত্যি অনলাইন শিক্ষা ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় পরিকাঠামোর স্থায়ী অংশ হয়ে ওঠে, তাহলে সেই ধরণের শিক্ষার সুলভতা নিয়ে এখনই আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। আলোচনা হওয়া উচিত এই ব্যবস্থায় নিহিত অসাম্য নিয়ে।
অনলাইন ক্লাসকে শিক্ষার ভবিষ্যৎ ভাবার আগে দেশে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় গভীর অণ্বেষণ প্রয়োজন। তাছাড়া ক্লাসরুম শুধু পড়াশোনা শেখায় না। একটি আদর্শ ক্লাসরুম জীবনবোধ শেখায়, যৌক্তিক প্রশ্ন করতে শেখায়। মানুষে মানুষে সম্পর্ক গড়ে ওঠে ক্লাসরুমে। ক্লাসরুম বা স্কুল সমাজেরই একটি মিনিয়েচার। সামাজিক জীব হিসেবে ছাত্রের বিকাশের জন্য তাই তারা প্রয়োজনীয়। অনলাইন ক্লাস সে বিকাশ ঘটাতে সক্ষম কি?