"দরবেশ এজিদকে নিয়ে আদানা থেকে বেরিয়ে পড়লেন। তার ঘোড়া পড়ে থাকল। তাঁরা দুজনেই তোরোস দাগলারি পাহাড়ের দিকে এগোতে থাকলেন............
"ওখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক অতিকায় ঈগল পক্ষী।"
"ঈগল? আমরা ঈগলে চড়ে চাঁদে যাব?"
"হ্যাঁ! তুমি শামের পুত্র জালের কথা শুনেছ? জালকে আলবার্জ পাহাড়ে পরিত্যাগ করা হলে সেখানে এক অতিকায় ঈগল কৃপা পরবশ হয়ে পাহাড়ের চূড়ায় তাঁর বাসায় নিয়ে গিয়ে নিজের শাবকদের সঙ্গে প্রতিপালন করেছেন। জালের পুত্র বিখ্যাত বীর রুস্তম, যে না জেনে নিজের পুত্র সোহরাবকে হত্যা করে। ঈগল ভেবে তাচ্ছিল্য করো না। পৃথিবীর ইতিহাসে লেখা থাকবে, ঈগল প্রথম চন্দ্রবক্ষে প্রবেশ করেছিল। তবে চাঁদে অনেকে আগে এসেছেন, তাঁরা পৃথিবীর নন। ওঠো, আমাদের মহাকাশযান চলে এসেছে।"
এজিদ দরবেশের পেছনে বসল। এমন অতিকায় ঈগল সে কখনও কল্পনা করতে পারেনি। মুহূর্তের মধ্যে তাঁরা পৌঁছে গেলেন একটি ব্রিজের কাছে। সেতুটির নীচে আর চারপাশে আলোছায়ার খেলা। অতিকায় সেতু থেকে রক্তবর্ণের আলোর ছটা ছিটকে ছিটকে পড়ছে। দরবেশ বললেন, "এই যে সেতুটি দেখছ, এটা দুনিয়ার সবথেকে বড়ো। বহু কোটি বছর আগে কে বা কারা এটা বানিয়ে গিয়েছে তা আমি জানি না। মানুষ ছাড়া ফেরেশতা আর জিন আছে দুনিয়ায়। ফেরেশতারা খোদাতালার ইচ্ছার বাইরে কিছু করেন না। মনে হয়, জিনেরাই এই সেতু বানিয়েছে।"
এজিদ বলে, "কোটি কোটি বছর আগে মানে? পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ারও আগে?"
"হ্যাঁ। চাঁদের বয়স দামাস্কার চেয়েও বেশি। চাঁদের পাথরের বয়স চার কোটি বছর আর ধুলোর বয়স পাঁচ কোটি।"
"আপনি কী করে জানলেন?"
"গায়েবি-বিদ্যা জানো? পৃথিবীর বুক থেকে এই হিসেব করা যায়। সূর্যের চেয়েও চাঁদ পুরোনো। এখানে জল আছে, রয়েছে খাল; চলো তোমাকে আরো জিনিস দেখাই।"
এজিদ বিস্ময়ে দেখে বহু সুউচ্চ মিনার। মসজিদের মতো। শয়ে শয়ে গম্বুজ। একটি মূর্তির দিকে আঙুল দেখিয়ে দরবেশ বলেন, এই দৈত্য-পুতুলের কপালটা দেখেছ?"
এজিদ তাকায়। চওড়া কপাল, মুখমণ্ডলে উজ্জ্বল ধারালো চোখমুখনাক, অসামান্য চিবুক দেখে সে ঘাবড়ে যায়।
"শোনো, ইস্তাখরিয়ার মানুষরা বলেন, নক্ষত্র-দেবতারা এখানে আসেন আগুনের রথে চড়ে। পাথর খুদে খুদে বানান বাসভূমি। তার পর কী যে হল, তাঁদের পুরাণ থেকে আর জানা যায় না। নক্ষত্র-দেবতা তো আগুনের তৈরি, জিনও ধূমহীন বহ্নির পয়দা। তাঁদের রথও আগুনের। চলো, ঈগল আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে না। ও নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীতে ফিরে যাবে।"
……………
উটের পিঠে চড়ে থাকা একটি লোক হঠাৎ বললেন, “কৃষ্ণসার অশ্ব কিন্তু মঙ্গলজনক নয় ভাই। বড়ো রহস্যময় এই ঘোড়া। সাপের বিষ ঢালা ওদের সারা গায়ে।’’
অন্য মানুষটি বলেন, “কালো ঘোড়া তো স্বয়ং খলিফা এজিদ, যিনি সামান্য লোক হয়েও কত উচ্চতায় উঠে গেলেন।’’
“আস্তে বল ভাই! গর্দান খোওয়াতে চাস নাকি?’’
“শোনো ভাই, এজিদের ঘোড়া দুলদুল নয়। এমনকি সাত আশ্চর্য ঘোড়ার একটিও নয়। যেমন লোক তেমনি তাঁর খচ্চর।’’
“খচ্চর কী রে! খাঁটি আরবীয় অশ্ব।’’
“কিন্তু দেখো, খচরামি তো করছে!”
লোকটি হাসেন। তার পর মানুষটিকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুই সাত আশ্চর্য ঘোড়ার কথা জানিস? আমাকে একটু বল না!”
মানুষটি বলেন, “চলো, খলিফার ঘোড়া প্রাসাদের দিকে মুখ ঘুরিয়েছে। এ যাত্রায় বাঁচা গেল।’’
উটও ঘোরানো হল। মানুষটি ফিসফিস করে বলেন, “পক্ষীরাজ হয় সাদা রঙের। স্বাধীনভাবে উড়ে যায় আবার টগবগ করে চলেও।’’
“কী বলছিস সব! ঘোড়া উড়বে কী করে?”
“পাখা থাকলেই উড়বে। পাখিরা ওড়ে না!”
“তা ওড়ে।’’
“দ্বিতীয় আশ্চর্য ঘোড়ার একটি শিং আছে, তার লেজটি সিংহের। তিন নম্বর অশ্বটিও ডানাওয়ালা, তবে তার মাথা ঈগলের।’’
“তোর মাথা খারাপ।’’
“যা বলছি শোনো। চতুর্থ অশ্ব হল কেলপিস।’’
“মানে?”
“জলাশ্ব—পানিতেও চলে।’’
“শালা পাগলা!”
মানুষটি গালাগাল শুনতে পান না। তিনি বলতে থাকেন, “পঞ্চম অশ্ব নারীদের বিধবা করে, তার নাম ‘আলো’। অনেকটা দুলদুলের মতো। সে একাই ৬০ জন পুরুষের ১০০-রও বেশি স্ত্রীকে বেওয়া করে দেয়।’’
“আর দুটো?”
“বুসেফেলাস, যার মাথা ষাঁড়ের। সাত নম্বর আশ্চর্য ঘোড়ার আছে আটটা পা। চলো, এবার উট থেকে নামো।’’
দু জনে উট থেকে নামেন। তার পর লোকটি বলেন, “তুই উট নিয়ে কিছু জানিস? আমি উটের পিঠে চড়লে লিঙ্গটি শক্ত হয়ে যায়।’’
“জানি। বলব তোমাকে। সে কথা অনেক!”