পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

পাঁচসংবাদ

  • 05 October, 2019
  • 0 Comment(s)
  • 1954 view(s)
  • লিখেছেন : মিলন দত্ত
প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে হাজারো খবর— সংবাদমাধ্যমে এবং হালের আরও নানা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে। তারই ভিতর থেকে পাঁচটি খবর বাছাই করে আপনাদের সামনে হাজির করা হল। কিছু সংবাদ আপনারা পড়ে ফেলেছেন, কিছু হয়তো এড়িয়ে গেছে চোখ। পাঁচমিশেলি খবরের ডালি ‘পাঁচসংবাদ’

১. গণতন্ত্রের গুঁতো

দেশে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা, গণপিটুনি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যে ৪৯ জন বিশিষ্টজন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন রামচন্দ্র গুহ, অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আদুর গোপালকৃষ্ণনও।তাঁদের বিরুদ্ধে বিহারের সদর থানায় গত কাল রাষ্ট্রদ্রোহ, শান্তিভঙ্গ-সহ বিভিন্ন অভিযোগে এফআইআর করা হয়েছে। আদুর গোপালকৃষ্ণনের প্রশ্ন, সরকারের সমালোচনা করলেই রাষ্ট্রদ্রোহ! আমরা গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছি?প্রধানমন্ত্রীকে লেখা বিশিষ্টজনদের চিঠি নিয়ে বিহারের মুজফ্ফরপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সূর্যকান্ত তিওয়ারির কাছে আবেদন দাখিল করেছিলেন সুধীরকুমার ওঝা নামে এক আইনজীবী। সুধীরকুমার অভিযোগ করেছিলেন, ওই ৪৯ জন বিশিষ্টজন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর চমৎকার কাজকর্মগুলিকে খাটো করে দেখিয়েছেন। এ ছাড়াও ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাকেই’ সমর্থন করেছেন ওই বিশিষ্টজনেরা।

২. শ্রীনগরে সাংবাদিকদের মিছিল

৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার দু’মাস পূর্ণ হয়েছে। স্কুল-কলেজ-অফিস এখনও বন্ধ। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও কার্যত বন্ধ। লাল চক এখন খাঁ খাঁ। হাসপাতালে রোগী কমছে। ভিন্‌ রাজ্য বা ভিন্ দেশে আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করা এখনও অসম্ভব। মোবাইল নেই, বাড়িতে ইন্টারনেটও নেই। এইসব নানা কারণে কাশ্মীরে সাংবাদিকদের কাজ করা এখন বিড়ম্বনা হয়ে উঠেছে। স্থানীয়, জাতীয় ও বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা বৃহস্পতিবার প্ল্যাকার্ড হাতে নীরব মিছিল করেছেন শ্রীনগরে। সাংবাদিকদের অভিযোগ, খবরের সূত্র প্রকাশ করার জন্য তাঁদের চাপ দিচ্ছে সরকারবাড়িতে বা মোবাইলে ইন্টারনেট নেই, অথচ সরকারের তৈরি করে দেওয়া মিডিয়া সেন্টারে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বালাই নেই । সেখানে আছে মাত্র পাঁচটি কম্পিউটার। কাশ্মীরে গণতন্ত্রের এই হাল।

৩. বাংলাদেশে দুর্গাপুজো

বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো এবার বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বাগেরহাটে শিকদার বাড়িতে ৮০১টি দেবদেবীর মূর্তির সমন্বয়ে তৈরি পূজামণ্ডপ মূর্তির সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো বলে ই পুজোর আয়োজক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদার দাবি করছেনগত বছরে ৭০১টি দেব-দেবীর দৃষ্টিনন্দন মূর্তি নিয়ে তৈরি এই পুজোমণ্ডপ পেয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি। এবার ১০০ মূর্তি বেড়েছেআয়োজকদের ধারণা এতো বৃহৎ সংখ্যক মূর্তি নিয়ে দুর্গাপুজো বিশ্বের কোথাও নেই। বাংলাদেশে গত বছর ৩০ হাজার দুর্গাপুজো হয়েছিল। এ বছর পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা প্রদান ও সরকারী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরেও ফি বছরের মতো এ বারও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। সতেরো থেকে উনিশটি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

৪. কর্ণাটকে এনআরসি

এবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি হতে চলেছে কর্ণাটকে। বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নেলমঙ্গলা তালুকে ইতিধ্যেই একটি ডিটেমশন ক্যাম্প বা আটককেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি। আটককেন্দ্র থেকে যাতে অভিবাসীরা পালাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের প্রাচীরগুলো কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। পুরোনো এক সরকারি কার্যালয় প্রাঙ্গণ সংস্কার করে তাকে আটককেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। গত জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় সরকার কর্ণাটক সরকারকে দ্রুত একটি আটককেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেয়। অবৈধ অভিবাসীদের নির্বাসিত না করা পর্যন্ত তাদের আটকে রাখার জন্য এটি ব্যবহৃত হবে।বেঙ্গালুরুর আশপাশে আরও কয়েকটি আটককেন্দ্র তৈরি করা হবে। কর্ণাটকে অবৈধভাবে বসবাসরত আফ্রিকান ও বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে আটককেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

৫. বিদগ্ধ মোদী

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সার্ধশতবার্ষিকী জন্মজয়ন্তীতে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি সম্ভবত আমাদের মাননীয় অতিশিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদীকে বিদগ্ধ প্রবন্ধকার হিসেবে পাওয়া। আসলে তো এটা আবিষ্কার। গান্ধীজয়ন্তী উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদীর লেখা একটি সুবিশাল প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকার প্রখ্যাত সংবাদপত্র ‘নিউইয়য়র্ক টাইমস’-এ। ২ অক্টোবর প্রকাশিত প্রবন্ধটির নাম ‘হোয়াই ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ওয়ার্লড নিড গান্ধী’। নিবন্ধটির বিষয়ে পরিচয় করিয়ে সম্পাদকীয় মন্তব্যটি এই রকম: মহান নেতা এমন এক বিশ্বকে দেখতে চান যেখানে সমস্ত নাগরিকের থাকবে সম্মান এবং সমৃদ্ধি’। তার আগেই অবশ্য আরেক মহান চিন্তক শ্রীমান অমিত শাহ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ একটি জ্ঞানগর্ভ উত্তরসম্পাদকীয় লিখে ফেলেছেন। গণপিটুনি বন্ধ করার জন্য যে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলে ‘দেশদ্রোহী’ হতে হয় তিনি কেমন ‘সমৃদ্ধি আর সম্মান’-এর স্বপ্ন দেখাতে পারেন তা নিয়ে আমেরিকার গণ সাধারণের কতটা আস্থা আছে তা অবশ্য হাউডিমোডি ইভেন্টের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ থেকেই বোঝা যায়। আর ভারতীয়দের তো নাভিশ্বাস উঠছে।


0 Comments

Post Comment