পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

হুতোমের লিগ্যাসি

  • 09 September, 2019
  • 0 Comment(s)
  • 2429 view(s)
  • লিখেছেন : হুতোম প্যাঁচা
এনারসি নিয়ে কলকেতার বাবুবিবিদের কি মত, সেই নিয়ে এই লেখা।
কাগচে একখানা পেল্লায় ছবি দিয়েচে। ভাবলেম বুঝি কোন নেতার নূতন প্যালেস তয়ের হচ্চে। আমাদের কালে কলকেতার অনেক উঠতি বাবুর অমনি প্যালেসের সাধ ছিল, হয়ে ওঠেনি। তেনারা কেবল বর্ধমানের মহারাজার জাঁক দেখেচেন আর লখনৌয়ের রাজ্যি খোয়ানো বাদশাও কেমন মহল বাগিয়েচেন তাই দেকে জ্বলে মরেচেন। ছবি দেখে ঠাহর কল্লেম এ তেমনি প্যালেস। এ যুগে রাজা নেই, মন্ত্রীরা রাজা হয়ে বসেচেন যকন, দু-এক প্যালেস বানাবেন না এ বা কি কথা? তা এমনি প্যালেসটি যে বাবুর তেনার কেচ্ছাও নিশ্চয় নকশা লেখার মতন হবে, এমনি মনে কচ্ছি।
আজ ভোর থাকতে রেলগাড়িতে চেপেচি। বাবুদের এটি আপিস যাবার সময়, কাগচ পড়তে পড়তে রাজা উজির মারবার সময়। দিনের মদ্যে এমনি আমোদ আর কখনো পাওয়া যায় না, নকশার যোগানও খাসা জমে।
তা যে বাবুর হাতে কাগচটি ছিল, তেনাকে শুধোলেম প্যালেসটি কার?
তিনি আমায় এমনি কটমটিয়ে দেখলেন যেমন পহেলা বার ন্যাংটা মেয়েমানুষ দেকচেন। পাশের বন্ধুটিকে বল্লেন “মালটা কে রে? কেমন ফুলবাবু সেজেছে দ্যাখ। আবার ডিটেনশন ক্যাম্পের ছবি দেখে জিগেস করছে কার প্যালেস?”
বন্ধুটি হাতের ফোন থেকে মুখ তোলবার এই অবসর পেলেন। আমায় আলগোচে দেখে নিয়ে বললেন “নট এ নোন ফেস। মাস্ট বি ওয়ান অফ দেম।”
বুজতে পারব না ভেবে ইংরেজি বলচেন দেকে আমারো রসিকতা করবার সাধ হল। দাঁত বের করে বল্লেম, আমি মুখ্যু সুখ্যু মানুষ, বাবু। অমনি প্যালেস তো দেকি না এদিকে, তাই শুধোচ্চিলেম আর কি।
শুদু ওই দুই বাবু নয়, এতদঞ্চলের বাবুরো সকলেই আমোদ পেলেন। ইন্টারভিউ আরম্ভ কল্লেন। কোতায় থাকা হয়, কী করা হয়, কোতায় যাওয়া হচ্চে, কোত্থেকে আসা হচ্চে, সব বাবুদের জানা চাই। হুতোমও যে সে ঢ্যামনা নন। বল্লেম আদিনিবাস কলিকাতা। তবে একন যত্রতত্র থাকা হয়, করার মদ্যে ড্যাবডেবিয়ে বাবু বিবিদের দ্যাখা হয়।
অনেক বাবুই আমোদ পেলেন, তবে এক বাবু গম্ভীর গলায় বল্লেন “ঠিকঠাক অ্যানসার দেয়া অ্যাভয়েড করে রাবিশ কথাবার্তা বলছে। নির্ঘাত বর্ডার পেরনো পাবলিক। নামটা জিজ্ঞেস করুন তো।”
আমার তো ভূতের কান, নইলে শুনতে পাবার কথা নয়। পেয়ে নিজে থেকেই বল্লেম, আজ্ঞে আমার নাম হুতোম প্যাঁচা। শুনে কামরাসুদ্ধ বাবু, বিবিদের সে কি হাসি! একজন বল্লেন “আবার মাজাকি করছে! মনে হয় ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার টোয়ার্কার হবে। কারখানা উঠে গেছে তো, অফিস টাইমে গান করলে লোকে ক্যালাবে বলে লোক হাসিয়ে পয়সা তুলছে। দু পাঁচ টাকা দিয়ে দিন, আর জ্বালাবে না।”
ঘোষজা বোসজা চাটুয্যে মুখুয্যে পকেটে হাত দিতে যাচ্চিলেন, এক পাকা চুলের বাবু সে আমলের পাহারাদারের মতন বাজখাঁই গলায় বল্লেন “কেউ পয়সাকড়ি দেবেন না। এদের কি মতলব আছে আপনি জানেন না। এর জামাকাপড় দেখেছেন? কোয়াইট এক্সপেনসিভ। ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার না হাতী। এরা সব কোটি কোটি টাকার মালিক। এই যে, ইউ! সত্যি কথা বলো। কোথা থেকে এসছ? প্যাঁচা আবার কী সারনেম?”
পাশ থেকে বাবুর গোলগাল গিন্নী বল্লেন “আরে শিডিউল কাস্ট হবে। মেদিনীপুর ফুর সাইডের।”
আমি জবাব না দিয়ে কেবল মিটিমিটি হাসচি, আরেক বাবু ওপিনিয়ন দিলেন “আরে না না। এরা সব মহমেডান। বাংলাদেশ থেকে ব্যাগ ভর্তি ভর্তি টাকা নিয়ে এদিকে চলে আসে, আর আইডেন্টিটি লুকানোর জন্যে শিডিউল কাস্ট সারনেম ইউজ করে। ও ঠিকই বুঝেছে কাগজে ওটা কিসের ছবি। জাস্ট শিওর হওয়ার জন্যে জিগেস করছে। মনে ভয় আছে না?”
আর কেউ আমার জবাব চাইলেন না, দেখলেম এই কতাটাই সকলের পচন্দ হয়েচে। কাগচ হাতে বাবু বেশ হেসে হেসে ঘাড় দুলিয়ে বল্লেন “হুঁ হুঁ, বাওয়া, এই বেলা ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও। নইলে দুদিন পরে এই প্যালেসেই দেবে ঢুকিয়ে। এটা ডিটেনশন ক্যাম্প। লিগ্যাসি ডকুমেন্ট দেখাতে না পারলেই চালান হয়ে যাবে এইখানে। দেশের সবচেয়ে বড় ডিটেনশন ক্যাম্প।”
আমি শুধোলেম, আজ্ঞে কোন জায়গায় এটি?
“এটা মাটিয়া। আসামে। তবে ওয়েস্ট বেঙ্গলেও হবে এন আর সি। তুমি এখানকার লোক প্রুভ করতে না পারলেই ব্যাস।”
এখানকার লোক এখানকার কিনা সে আবার প্রমাণ কত্তে লাগবে কেন?
এক ছোকরা অ্যাত ক্ষণ কানে তার লাগিয়ে চুপচাপ ছিল, একন লাফিয়ে উঠে বল্লে “ক্যাচ কট কট। এ শালা কনফার্মড বাংলাদেশি।”
অনেকে ব্যাঁকা হাসচেন দেখে বোজা গেল তেনারাও তেমনি ভাবচেন। বাংলাদেশের রেলগাড়ির এই কামরায় কে যে বাংলাদেশি নয় তাই ভাবচি, অমনি জানালার ধারে বসা একটি চশমাওলা কচি বাবু বল্লে “অত লাফাবেন না, ভাই। আমাদের অনেকেরই বাপ ঠাকুর্দা বাংলাদেশ থেকে এসছিল। পার্টিশনের সময়। এন আর সি হলে আপনি আমিও বিপদে পড়তে পারি।”
“কেন বিপদে পড়ব? আমরা কি ইনট্রুডার নাকি? আমাদের ফ্যামিলি তো তাড়া খেয়ে চলে এসছিল। এই মোল্লাগুলো তো টেররিজম করবে বলে আসে। গভমেন্ট জানে সেটা। হিন্দুদের প্রপার ডকুমেন্টস আছে। কিচ্ছু হবে না।”
চশমাওলা ছাড়বার লোক নয়। সে বল্লে “ওই আনন্দেই থাকুন। আসামের এন আর সি থেকে যে উনিশ লাখ বাদ পড়েছে তার এগারো লাখ হিন্দু। সে খবর রাখেন?”
ছোকরা মানবে না, অন্য বাবুরাও লড়ে যাচ্চেন, শেষে চশমাওলার গার্লফ্রেন্ড ফোনে কি একটা খুলে দ্যাকালে সকলে কেমন দমে গেলেন। কেউ কেউ বল্লেন “ওটা আমাকে ফরোয়ার্ড করুন তো।”
সকলে নিজ নিজ ফোনে ব্যস্ত হয়ে পল্লেন, রঙ্গ বন্দ হওয়ায় হুতোমেরও কাজ ফুরোল। তাই হাওয়া হলেম।

0 Comments

Post Comment