পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

দরকার কাজের ভান্ডার, লক্ষ্মীর ভান্ডার যথেষ্ট নয়

  • 28 October, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 1144 view(s)
  • লিখেছেন : মৌমিতা আলম
গ্রামের মেয়েদের দৈনন্দিন সমস্যার অন্যতম হলো রান্নার জন্য রোজকার জ্বালানি। এক বিপুল পরিমান জ্বালানির দরকার হয় তিন বেলা রান্নার জন্য। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাসের কানেকশন তো পেয়েছে কিন্তু সেই গ্যাস ভরানোর সামর্থ্য আর নেই।

কালেঠুর মাইয়া মামি গুইঠা/মুঠিয়া বানায়। সারাদিন গুইঠা/মুঠিয়া শুকিয়ে রাতে হবে রান্না। মামী, গ্যাস ভরান না ক্যানে? মামি বলে "টাকা কঠে মাই।" আমি জিজ্ঞেস করি, ক্যানে লক্ষীর ভান্ডারের টাকা লা কী করছেন!" মামি বলেন,

"মাই, লক্ষীর ভান্ডারের তো পাঁচশো টাকা খালি! গ্যাস ভরাইতে নাগে নয়শো টাকা!"

গ্রামের মেয়েদের দৈনন্দিন সমস্যার অন্যতম হলো রান্নার জন্য রোজকার জ্বালানি। এক বিপুল পরিমান জ্বালানির দরকার হয় তিন বেলা রান্নার জন্য। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাসের কানেকশন তো পেয়েছে কিন্তু সেই গ্যাস ভরানোর সামর্থ্য আর নেই। তাই রান্নার ঘরের এক কোনে ফাঁকা সিলিন্ডার এর উপর রাখা আছে গুইঠা। মেয়েদের হাতে ডিরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফার সেটা যতই সামান্য হোক একটা অবশ্যই বড় পদক্ষেপ। কিন্তু পপুলিস্ট রাজনীতির এই চমকে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে বলে শাসক দলের ঢক্কানিনাদ ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া কিছুই নয়।

 

নারীর ক্ষমতায়ন এর জন্য দরকার কাজ। যে কাজে সুরক্ষা, নিয়মিত আয়ের রূপরেখা সুনিশ্চিত করা হবে। একশো দিনের কাজ সমাজের সবচেয়ে নিচের পাদানি তে থাকা নারীদের কিছুটা রোজগার এর সুযোগ করে দিত, কিন্তু গত কয়েকবছর সেখানে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ আর রাজ্য কেন্দ্রের দড়ি টানাটানিতে সেই প্রকল্প এখন বিশবাঁও জলে।

Periodic labourforce survey (PLFS) 2018 -19 এর রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের লেবার ফোর্সে যোগদানের হার হলো ১৭.৫% যা সর্বভারতীয় হারের থেকে কম(১৮.৬%).

 

পশ্চিমবঙ্গের এক বিপুল সংখ্যক মহিলারা কাজ করেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে। তাদের না আছে কাজের সুরক্ষা না অন্যান্য সুরক্ষা যেমন - নূন্যতম মুজুরি, সমান কাজে সমান বেতন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসরকালীন ভাতা, স্বাস্থ্য বীমা ইত্যাদি। অক্সফাম (Oxfam’s India Discrimination Report 2022) এর রিপোর্ট অনুযায়ী ক্যাজুয়াল কাজে যেখানে পুরুষের আয় মাথা পিছু ৯০১৭ টাকা, মহিলাদের মাথা পিছু আয় ৫৭০৯ টাকা। পুরুষদের আয় মহিলাদের থেকে ৫৮% বেশি।

 

পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ক্ষেত্রেও মেয়েদের কাজের সুযোগ কমে এসেছে বেশ কয়েক বছর। কম মুজুরিতে, সিভিক পুলিশ থেকে সিভিক শিক্ষক নিয়োগের সরকারি পরিসংখ্যান এ খাতায় কলমে সংখ্যা বাড়লেও বাস্তবের করুণ চিত্র অবজ্ঞার অন্ধকারে ঢেকে। অঙ্গনওয়ারী থেকে আশা কর্মীরা - সবাই নামমাত্র টাকায় প্রচুর খাটুনি করছেন। নূন্যতম মজুরি থেকে তাঁরা বঞ্চিত।

বেশ কয়েকটি দুর্গা থেকে লক্ষী পুজো রাস্তায় কাটছে ন্যায্য চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত প্রার্থীদের। যাঁদের এক বিশাল অংশ মহিলা। ২০১১ সালের পর থেকে মাত্র দুবার নিয়োগ হয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। আর মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের অবস্থা আরও করুন। ২০১১ সালের পর নিয়োগ হয়েছে মাত্র এক বার। প্রসঙ্গত উল্লেখ এই দুই কমিশনের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে থাকে গ্রাম বাংলার এক বিশাল সংখ্যক মেয়েরা। এঁদের পাঁচশো টাকার দক্ষিণ্য চাইনা, এদের চাই সুরক্ষিত চাকরি।

পাহাড় সমান দুর্নীতি হলে, নারী চাকরি থেকে বঞ্চিত হতে বাধ্য। পুরুষ শাসিত সমাজে পরিবার চাইবে বাটি ঘটি বিক্রি করে পুরুষের চাকরি নিশ্চিত করতে, মেয়েরা তো পরের ঘরের লক্ষী!

 

কোজাগরী লক্ষী পূর্ণিমার রাতে, লক্ষী যখন ঘরে ঘরে ঘুরে দেখবেন, তখন কি লক্ষী ঠাকুর দেখতে পারবেন ছোট হয়ে আসা বেকার যুবতীদের মুখ! মানুষের ঘরে আসার পথে কি দেখা হবেনা সেই অন্ধকারে চাকরির দাবিতে বসে থাকা মুখগুলোর দিকে?

 

লক্ষীর নামে মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। তাই একশো দিনের কাজের কথা উঠতেই খেঁকিয়ে উঠলো শুমারি। এক প্রকার ঝামটা দিয়েই বললো - তিন হাজার বাকি কয়েকবছর থেকে!

নারীর ক্ষমতায়নের জন্য লক্ষীর ভান্ডার যথেষ্ট নয়। দরকার কাজ। সেই কাজ, যে কাজ কালেঠুর মাইয়া মামির নিজের পরিচিতির সুযোগ করে দেবে। সে শুধুই কালেঠুর মাইয়া (বউ) হিসেবে পরিচিতি পাবে না। তাকে লোকে চিনবে তার নিজস্ব নামে। গুইঠার ধোঁয়ায় ফুসফুসে দাগ পড়বে না।

লক্ষী ঠাকুর নিশ্চিত দাক্ষিণ্য আর ক্ষমতায়ন গুলিয়ে ফেলেন না। ধানের শীষে পাক ধরেছে। শ্রম দিয়েছে নারী পুরুষ দুজনেই। কিন্তু লক্ষী নিশ্চিতভাবে জানেন যে সেই ফসলে হক সবার আগে পুরুষের। নারীর শ্রম বেগার খাটুনি।

লক্ষী ঠাকুর তাই এবার ক্ষমতায়নের কাজে ভান্ডার ভরাবেন নিশ্চয়ই । আর পূর্ণিমায় পরে অমাবস্যা টাও যেন দেখে যান ঠাকুর।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

0 Comments

Post Comment