সেটা আশির দশক হবে। সিপিএমের যুব সংগঠন ডি ওয়াই এফ আই তার পতাকায় স্বাধীনতা গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র তিনটি শব্দকে বাদ দিলো। সাদা পতাকায় শুধুমাত্র লাল তারকা। যুক্তি হিসেবে বলা হলো এই তিনটি স্লোগান খুবই বেশি ভাবে, অধিক মাত্রায় রাজনৈতিক আদর্শের পরিচয় বহন করে। এর ফলে গণ সংগঠন ব্যাপক অংশের যুব সমাজকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। এই রাজনৈতিক দূরত্ব ঘোচাতে গেলে, সকলকে যুব সংগঠনের টেনে আনতে গেলে, স্লোগানগুলি বর্জন করা প্রয়োজন। সংগঠনের আদর্শ হিসেবে থাকতেই পারে। কিন্তু এভাবে শোভিত না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। মনে আছে, এর প্রতিবাদে গৌতম দেব লিখেছিলেন, তাহলে এত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লাভ কি? "সাতমন তেলই পুড়বে, আর রাধা নাচবে না" তা কি করে হবে। এক কথায় গণসংগঠনের স্বাধীন স্বতন্ত্র সত্তার কথা বলে পতাকায় পরিবর্তন এনেছিল ডি ওয়াই এফ আই।
ওই ৮০ দশকের ঘটনা। বিহারে বিন্দ্যেশ্বরী দুবে সরকার। জেহানাবাদে ৪০ জন কিষান কিষানি কে হত্যা করা হয়। মনে আছে, বিহারে এর জোর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। এর কয়েক বছর পর, বিহারের আরওয়ালে পুনরায় কৃষক হত্যার ঘটনা। এই সময় পশ্চিমবাংলায় ডিওয়াইএফআইয়ের সম্মেলন গুলি চলছে। চন্দননগরে নিত্যগোপাল স্মৃতি মন্দিরে, হুগলি জেলা সম্মেলন।
জেলা সম্মেলনে প্রশ্ন তোলা হলো -- ১৯০৫ সালে রাশিয়ার অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে জানার পরেও, লেনিনের নেতৃত্ব সেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শ্রমিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিল ও শীতপ্রাসাদ অভিযানে অংশ নিয়েছিল। আশানুরূপভাবেই আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি বর্ষণ হয় ও সহস্রাধিক হতাহত হয়। এ প্রসঙ্গে লেনিন "রাষ্ট্র ও বিপ্লব" রচনায় "কমিউনার্ড দের বীরত্ব কোথায়" শীর্ষক অধ্যায়ে বলেছিলেন : প্যারী কমিউনে ক্ষমতা দখলের ভাবনা ছিল মার্কসের চোখে হতাশা ও মূর্খতার প্রতীক। কিন্তু তা জেনেও মার্কস যখন শ্রমিকদের তা বোঝাতে পারেননি, তখন তিনি নিজেও সেই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিলেন। "পন্ডিতি চালে নিন্দা করেননি"। লেনিন সেই শিক্ষা থেকে ১৯০৫ এর অনিবার্য ব্যর্থ অভ্যুত্থান জেনেও যখন তিনি তা বোঝাতে সক্ষম হননি, তিনি নিজেও অভ্যুত্থানে সমর্থন জানান। আর আমরা মার্কসের চেয়েও মার্কসবাদী, লেনিনের চেয়েও লেনিনবাদীরা বিহারের কৃষক আন্দোলন ও কৃষক হত্যার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ তো করলাম না। উল্টে সমালোচনা করলাম, ওটা জাতপাত ভিত্তিক, ওটা নকশালপন্থী দের দ্বারা চালিত, ওটা শিশুসুলভ বিশৃঙ্খলা ও অ্যাডভেঞ্চারিজম। যদি প্রশ্ন করা হয় জেহানাবাদ ঘটালো কে? আমি বলব বিন্দ্যেশ্বরী দুবের সরকার। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, আরওয়াল ঘটালো কে? আমি বলব মার্কসের চেয়েও মার্কসবাদী এই আমরা, এই কমিউনিস্টরা। কারণ আমরা সেদিন জেহানাবাদের প্রতিবাদ করিনি।
ঠিক এই সময় মঞ্চে উপবিষ্ট তৎকালীন রাজ্য যুব সম্পাদক কমরেড বরেন বসু বাধা দিয়ে বললেন, কমরেড এটা পার্টি সম্মেলন নয়। এই আলোচনা পার্টিতে করবেন। এখানে যুব সংগঠন নিয়ে আলোচনা করুন। জবাবে বলা হলো যুব সংগঠনের উদ্বোধনী ভাষণ দিলেন জেলা পার্টির সম্পাদক কমরেড বিজয় মোদক। সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিদের প্রত্যেকেই পার্টি সদস্য, ক্রেডেনশিয়াল কমিটির রিপোর্ট সে কথাই বলছে। তাহলে আর যুব সংগঠন পার্টি সংগঠন আলাদা কোথায়? খোলামেলা পার্টির আলোচনাই হোক। কমরেড রতন দাশগুপ্ত সেদিন সম্মেলনের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে এই আলোচনাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য গণ সংগঠন আর পার্টি সংগঠনের যে স্বতন্ত্র কর্মধারা থাকে ও ভাবধারা থাকে সেই স্বাতন্ত্র্য আশির দশক থেকেই বিলুপ্ত। ফলে ৩৪ বছরের শাসনে পার্টির গায়ে নোংরা কাদা লাগতেই পারে। তার জন্য জনমানসে পার্টির ভাবমূর্তি মলিন হতেও পারে। কিন্তু যুব সংগঠন ছাত্র সংগঠন সে তো ৩৪ বছর সরকারি ক্ষমতায় ছিল না। তার গায়ে কেন কাদা লাগবে? লাগছে, কারণ পার্টি সংগঠন ও গণসংগঠন একাকার হয়ে গিয়েছিল। যুব নেতা ছাত্রনেতা আর পার্টি নেতায় কোন ফারাক ছিল না। পার্টির ব্রিগেড জমায়েতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে আইনুল ভাইয়ের হুকুম, সবাইকে যেতে হবে। আর সবাই যেতে বাধ্য। এমনটাই তো ঘটতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে ছাত্র যুব নেতা শুভদা অশুভদা জনার্দনদা জগদীশদা, তারাই আসীন। একজন বিশ্ববিদ্যালয় কোর্ট মেম্বার তো কোন সভাতেই যেতেন না। বলেছিলেন, উপাচার্য কিছু বলার আগে তাকিয়ে থাকেন মৃদুলের দিকে, জনার্দনের দিকে, নির্মল বাবুর দিকে। এই জো হুজুর সভায় গিয়ে লাভ কি।
সেদিনের সেই বদ রক্ত সম্পূর্ণভাবে নির্গমন হয়নি। ফলে মানুষের এই দলটির প্রতি বিশ্বাস ফিরে আসেনি। বরং এই দলের নতুন প্রজন্ম বা রক্ত, তা বদ রক্তের সংস্পর্শে এসে, তাদের মধ্যেও একটা শাসক, জমিদারি ভাব থেকেই গেছে। ফলে এদের বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে ওঠেনি। পতাকা থেকে রাজনৈতিক আদর্শের শব্দ গুলি বাদ গেল। অথচ যুব সংগঠন প্রত্যক্ষভাবে পার্টি ও সরকারের সাথে জড়িয়ে গেল। গণসংগঠন সরকারের কাছে কোন দাবি দাওয়া আন্দোলন উপস্থাপন করেনি। বরং সরকারকে চোখের মনির মত রক্ষা করতেই ব্যস্ত। আজ তাই এদের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। হাবভাব চালচলনে এই সমস্ত নেতাদের দেখলে কে বলবে যে, এরা চার শতাংশের সমর্থন পায় না। নির্বাচনে সমস্ত আসনে জামানত জব্দ হয়। পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা বিধানসভায় এরা মহাশূন্য। এদের দেখলে সেই কথাটা মনে হয়, মেজাজটাই তো আসল রাজা, আমি রাজা নই। নামেই তালপুকুর, ঘটি ডোবে না।
জমিদারি মেজাজের প্রধান সমস্যা হলো সদা সর্বদাই নিজেকে ওভার এস্টিমেট করে। ফলে ২০১৬ নির্বাচনে প্রথম দফায় ভোট ছিল মেদিনীপুরের নারায়ণগড়, সূর্যকান্ত মিশ্রের কেন্দ্র। একটু মনে করে দেখুন সূর্যকান্ত ভোটের দিন সাংবাদিকদের বললেন, প্রথম বলেই নাকি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। দেখা গেল সূর্যবাবু নিজের কেন্দ্রেই গো হারা। লক্ষণীয় এই চরম দুর্দিনেও আসন বন্টনের সময় তারা কত কড়া মনোভাব। বামফ্রন্টের শরিকদেরও এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি না। সেই মনোভাব এদের নতুন প্রজন্মের মধ্যেও। আর তার সাথে আছে একটা হাম বড়াই ভাব। আমাদের একটা তত্ত্ব আছে, মার্কসবাদ সর্বশক্তিমান, কারণ ইহা সত্য। অন্যান্যদের এরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে চলে। নিজেরাই নিজেদের বলছে, আহা ওই কৃষ্ণকলি মেয়েটা কে গো? এ তো আমাদের ঘরের মেয়ে। কী গভীর চোখ। চলো আমরা সবাই ওকেই ভোট দিই। আর কৃষ্ণকলি (দীপ্সিতা) নিজেও সে কথা ভেবে আহ্লাদে আটখানা। কৃষ্ণকলিও ভেবে ফেলল প্রায় জিতে গেছে, এমন মনোভাব।
এরা শুধুই ওভার এস্টিমেট এর শিকার। কোভিড পর্বে লকডাউনের সময় এরা যতজনের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তার চেয়ে শতগুণ বাড়িয়ে সমাজ মাধ্যমে প্রচার দিয়েছে, ফেসবুক টুইটারে। আবার নিজেরাই সেই প্রচার গিলেছে, বিশ্বাস করেছে। এরা ভুলে গেল কম্পিউটারে বসে একা একজন দারুন সুন্দর ভিডিও তৈরি করে বাজারে ছাড়তে পারে। হাজার লাইক পেতে পারে। কিন্তু আন্দোলনটা হয় মাঠে ময়দানে। সেই মাঠে ঘাম রক্ত ঝরাতে হয়, সেটা কম্পিউটারে বসে হয় না। এই ভার্চুয়াল আর রিয়েল ওয়ার্ল্ডের পার্থক্যটা সিপিএম এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। সিপিআইএম এখন এতটাই জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত যে তার অধিকাংশ কর্মসূচি ডিওয়াইএফ এর নামে পালিত হয়। আবার ডিওয়াইএফ নিজের গ্রহণযোগ্যতা কম বুঝে এখন নানা ধরনের ছোটখাটো যা কিছু সংগঠনকে আশ্রয় করছে, রেড ভলেন্টিয়ার্স, সবুজ বাঁচাও, পশুপ্রেম, অভয়ামঞ্চ, গনকন্ঠ, প্রগতি মঞ্চ এই ধরনের নানা নামের আড়ালে। গণ সংগঠনেরও আবার গণ সংগঠন। মানুষ জেনে গেছে এগুলোও বকলমে সিপিএম।
ইতিমধ্যেই সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে গিয়ে, জাত খুইয়ে, নির্বাচনে টুম্পা সোনার গান আমদানি করেছে, কাজ হয়নি। বুদ্ধ বাবুর এআই ব্যবহার করল। কাজ হলো না। এখন শুনছি শাহরুখ খানের ছবি বীরজারা দেখানো হবে। রাজ্য যুব দপ্তরে আড্ডার ঠেক, কফি শপ হবে। এখন তো শুনছি বিজ্ঞাপন করে বিভিন্ন পদে ডাটা অ্যানালাইজার, ক্যাম্পেইনার, কপিরাইটার, ক্যাপশন স্লোগান সিলেক্টর ইত্যাদি নিয়োগ করবে সিপিএম। এভাবে নানাবিধ প্রয়াস। দলটাকে প্রায় এ্যাড এজেন্সি বানিয়ে তোলার চেষ্টা। এমনকি আপাত বামপন্থী উদারতা দেখিয়ে লিবারেশনকে বামফ্রন্ট আসন ছেড়ে দিয়েছে। বোঝাই যায়, এটা উদারতা নয় অস্তিত্ব রক্ষা বা মুখ রক্ষার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। গণআন্দোলন ও সংসদীয় রাজনীতির মধ্যে একটা ভারসাম্য রক্ষার প্রয়াসে আমার মনে হয়েছে, লিবারেশন অনেকাংশে সফল। অন্তত আন্তরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। গণফ্রন্ট হিসেবে প্রথমে আইপিএফ একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। আজও পার্টির সঙ্গে তার গণসংগঠন পৃথক স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম। জানিনা আরো কতদিন এই স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে পারবে।
বিগত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের লিবারেশন সম্পর্কে অনেক বেশি ইতিবাচক মনোভাব দেখানো উচিত ছিল। পরিবর্তে তারা সাবেক গোঁড়ামি দেখিয়েছে। কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকে ডেঁপো বলতেও দ্বিধা করেনি। নকশাল পন্থা নৈব নৈব চ। বরং কংগ্রেসের হাত ধরা যায়। সেই সিপিএম যখন উপনির্বাচনের ছটি আসনে সমঝোতা করছে উদারভাবে, তখন সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। আশঙ্কা ছিল, সিপিএম নিজের মুখ রক্ষা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত লিবারেশনের মুখ পোড়াবে না তো? বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর পরিণতি তো সেই কথাই বলছে।
সিপিএম একদা ক্ষমতাসীন পার্টি, ফলে তার লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব, যেভাবে সম্ভব, সাপের মুখ, ব্যাঙের মুখ চুম্বন করে, ক্ষমতায় ফিরে আসা। আইএসএফ কে একবার ধরে, তারপর ছেড়ে, আবার ধরে, পথ খুঁজছে। আর লিবারেশন সংসদীয় ক্ষমতার স্বপ্ন দেখলেও, কোন শর্টকাট রাস্তা বাছাইয়ে এখনো পর্যন্ত আগ্রহ দেখিনি। তাই অনেকেই আমরা আশঙ্কায় ছিলাম। শুনলাম লোকসভা নির্বাচনে নৈহাটি কেন্দ্র থেকে সিপিএম যত ভোট পেয়েছিল, এবার লিবারেশন প্রার্থী উপনির্বাচনে তার চেয়ে কম ভোট পেয়েছে। এটা হবার কথা নয়। লিবারেশনের কোনো নির্বাচনী পর্যালোচনা এখনও পাইনি। এমনিতে বিগত লোকসভা নির্বাচনে নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে, সিপিআইএম প্রার্থী যে ভোট পেয়েছিলেন, এবারের ভোটে বাম প্রার্থীর ভোট কিছুটা কমার কথা। কারণ কংগ্রেস এবার জোট সঙ্গী নয়। আবার বিপরীতে কিছুটা বাড়ার কথা। লিবারেশনের নিজের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১৪০০ থেকে ১৭০০ ভোট আছে। তার মানে লিবারেশন প্রার্থী মোটের উপর লোকসভায় নৈহাটিতে প্রাপ্ত বাম ভোটের সমান ভোট ধরে রাখতে সক্ষম। কিন্তু জানা গেল লিবারেশন এর প্রার্থী লোকসভায় প্রাপ্ত বাম ভোটের অর্ধেকেরও কম পেয়েছেন। এটা কিভাবে সম্ভব হলো? আমার নিজের বিশ্বাস সিপিআইএম ঠিক যতটা তৃণমূল বিরোধী, ততটাই নকশালপন্থী এসইউসি বা অন্য বাম দল বিরোধী। বাম শিবিরে সিপিএম তার একক আধিপত্য বজায় রাখতে চায়।
সিপিএমের শাসনে ৩৪ বছরে মোটের ওপর তিনটে প্রজন্ম পার হয়েছিল। একটি অংশ যারা সাতাত্তরের আগের মানুষ, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কারণে এরা ছিল কংগ্রেস বিরোধী ও সিপিএমের কট্টর সমর্থক। দ্বিতীয় প্রজন্মটি বাম শাসনের মেয়াদে শিক্ষা চাকরি-বাকরি জীবিকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মোটের উপর এরা বাম সরকারের আমলেই চাকরির অধিকাংশ সময় কাটিয়েছে বা চাকরির মেয়াদ শেষও করেছে। এই অংশটি ছিল অন্ধ সিপিএম। আর তৃতীয় অংশটি যারা শিক্ষা দীক্ষা লাভ করেছে, কিন্তু জীবিকা লাভ করেনি, অথবা শিক্ষা,জীবিকা দুটি থেকেই বঞ্চিত। অল্প শিক্ষিত কর্মহীন বেকার। এরা ছিল প্রবল ভাবে বাম সরকার বিরোধী। শাসনকাল যত দীর্ঘস্থায়ী হবে ততই এই তৃতীয় অংশটি শক্তিশালী হবে। হয়েও ছিল। ১৩-১৪ বছরের তৃণমূল শাসনে তৃণমূলের মূল সমর্থক ওই বাম সরকার বিরোধী অংশ। এখনো সরকারি অফিস পৌরসভা পঞ্চায়েত স্কুল কলেজে কর্মরতদের অধিকাংশ টাই বাম আমলে নিযুক্ত। এরাই ডিএ আন্দোলন, যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ, ইত্যাদি আন্দোলনের প্রথম সারিতে। সাধারণের চোখে এরা সুবিধা ভোগী। ফলে এদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকার কথা নয়। পাচ্ছেও না।
অন্যদিকে তৃণমূলের শাসনে সরকারি ক্ষেত্রে স্কুল কলেজে তেমন নিয়োগ না ঘটলেও, চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী বেশ কিছু নিয়োগ ঘটেছে। তাছাড়া অন্যান্য ছোটখাটো নানাবিধ জীবিকায় নিযুক্ত হয়েছে। উচ্চ বেতন সম্পন্ন অপেক্ষা, স্বল্প বেতন, স্বল্প আয়ের নানা সংস্থান হয়েছে। সেই সাথে নানাবিধ সরকারি প্রকল্পে সরাসরি আর্থিক সাহায্য মানুষের কাছে পৌঁছেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে কার্যত সমস্ত ব্যয় ভার সরকার বহন করে। রেশন ব্যবস্থায় ভাতের সমস্যাটা অন্তত দুশ্চিন্তার কারণ নয়। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও তুলনামূলকভাবে সুযোগ সুবিধা অনেকটা প্রসারিত। আগে যে পরিমাণে মানুষ চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্য চাইতে আসতো, পুরানো পোশাক চাইতে আসতো, স্কুল কলেজে ভর্তি, পরীক্ষার ফীজ, বইপত্র কিনে দেওয়া, এখন প্রায় ৯০% ই কমে গেছে। ফলে এই অংশটির চোখে পুরনো উচ্চ বেতনভোগী অংশটি মিত্র নয়। তাই সরকারি কর্মচারীর আন্দোলন এই নিম্ন বেতনভোগী, অস্থায়ী কর্মচারীদের সমর্থন লাভে ব্যর্থ। সাম্প্রতিক আরজিকর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মানুষদের ছবিগুলোর দিকে তাকালেই এই ভেদ রেখা ও বৈষম্য স্পষ্ট বোঝা যায়। এখন দেখার বিষয় যে শহর ছাড়িয়ে প্রান্তসীমায় এই সরকার বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ কতটুকু স্পর্শ করল। যার লিটমাস টেস্ট, প্রাথমিক পরিচয় সদ্য সমাপ্ত ছটি বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রত্যক্ষ করা গেলো।