পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বেঁড়ে ব্যাটার খোঁজ

  • 01 April, 2020
  • 1 Comment(s)
  • 1478 view(s)
  • লিখেছেন : হুতোম প্যাঁচা
কোনো শালায় খোঁজ রাখেনি কজন গ্যাচে ঘর সব ব্যাটাকে ছেড়ে এবার বেঁড়ে ব্যাটাকেই ধর। --- ফেসবুক কবি
কোনো শালায় খোঁজ রাখেনি
কজন গ্যাচে ঘর
সব ব্যাটাকে ছেড়ে এবার
বেঁড়ে ব্যাটাকেই ধর।
--- ফেসবুক কবি
আমাদের সম্পাদক তোফা আছে, আপনাদের হুতোমেরই হয়েচে জ্বালা। কোরোনার গেরোয় মোদী ভর সন্দেবেলা যকন তোপ ফেল্লে যে মাঝ রাত্তির হতে লকডাউন, তকন সম্পাদক গার্লফ্রেন্ডকে রিসিভ কত্তে দমদমা যাচ্চে। শুনেই তার কি গোঁসা! মোদীর পেসাদী ফুল মাতায় না ছুঁয়ে যে আপিস যায় না, সে মুখ খারাপ কত্তে শুরু কল্লে। হুতোম শুধোলে ব্যাপারখানা কী? সম্পাদক বল্লে মা জননীর প্লেনটি ল্যান্ড করবার কথা রাত্তির দশটায়। চেক আউট কত্তে কত্তে সাড়ে দশ হবে, ইটালি হতে সম্পাদকের জন্যে বিস্তর উপহার এনেচেন কিনা। তিনি আবার থাকেন ভাগীরথীর ওই পারে। তেনাকে সেথায় পৌঁচে দিতেই বারোটা বাজবে। তারপর বাবু ঘরের ছেলে ঘরে ফেরেন কী উপায়? পথে পুলিশের সাথে গোল কল্লে যদি সব জানাজানি হয়? এদিকে গার্লফ্রেন্ডকে নিজ দায়িত্বে উবের চেপে চলে যেতে বলাও হয় না। বুড়ো বয়সে জুটেচেন। সেই যে গিন্নীর সাথে আইফোন নিয়ে মন কষাকষি হচ্চিল সেই মওকায়। একন সম্পাদক পিরীতে হাবুডুবু। সৎ পরামর্শ কানে তুলচে না।
ওতেই হুতোমের কপাল পুড়ল। সম্পাদক শেষ অবধি আরবানাতে হুতোমের নিবাসটিকেই রাঁড়ের বাড়ি করে তুল্লে। দোষের মধ্যে এটি এয়ারপোর্ট হতে সত্বর পৌঁচনো যায়, আবার সম্পাদকের বাড়ীটিও নেহাত দূর নয়। বারোটা না বাজতে মহিলাটিকে এ চুলোয় গ্যারাজ করে দিয়ে “গুড নাইট সুইট ড্রিমস” বলে চুমো খেয়ে বাবু গিন্নীর আদুরে সোয়ামী সেজে বাড়ী গিয়ে ডিনার কল্লেন।
পরদিন সাত সকালে সম্পাদক ডিউটি দিতে হাজির। দুই জনে দিন ভর ফ্ল্যাটের মধ্যে পাঁচো ইয়ার ডেকে ফুর্তি কল্লেন। সে কি জাঁক! কজন মন্ত্রী সান্ত্রী যে এলেন আর গিলে বেসামাল হলেন সে গোনা শক্ত হয়ে পল্ল। বিদেয় হবার আগে সম্পাদক বিলাভেডের কপাল ছুঁয়ে দেখলে গায়ে জ্বর। আমি কানে কানে শুধোলেম, ভায়া কোরোনা নাকি? ইনি কোন দেশ থেকে এয়েচেন য্যানো?
বল্লে, চুপ চুপ। এট্টু জ্বর হয়েচে তার ভাবনা কী? প্যারাসিটামল দিলেই হবে একন। এ রোগের তো ভিন্ন ওষুধ নেই।
বলি সে তো হল। এই মোচ্ছবটি কল্লে কোন আক্কেলে? ওই আহ্লাদী বাবুদেরও হলে সামলাবে কে? এনার পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো উচিৎ হয় কিনা?
সম্পাদক বল্লে এ শর্মা যে সে শর্মা নয়। কালই হয়ে যাবে টেস্ট। আপনি চুপটি করে থাকুন দিকি।
তা সেদিন হতে হুতোম চুপ করেই ছিলেন। এদিকে মিলান ফেরতা মা জননী কোরোনা পজিটিভ হলেন, তা নিয়ে খবর কাগজে নাহক কেচ্ছা হল। সম্পাদক বল্লে কি ভাগ্যিস আমার নামটি কেউ লেকেনি। আজকাল যা সব নাছোড় ওয়েবসাইট হয়েচে। এদের তো কাগজের সাথে কোন সলিডারিটি নেই। লিকে দিলেই হল অমুক কাগজের সম্পাদক মহিলাটির বয়ফ্রেন্ড। ব্যাস! প্রেস্টিজের দফারফা। অনেক কষ্টে পার্টিটি কার মহালে হয়েচিল সে কতা চেপে দিয়েচি।
হুতোম ভেবে পেলেন না সম্পাদক বেশি বেহায়া না বেশি আহাম্মক। প্রেস্টিজের চিন্তা কচ্ছে! শ্যাম কুল দুই রাখতে গিন্নী আর কন্যার যে সব্বোনাশটি করে বসে আছে সে ভাবনা স্বর্গত শ্বশুরমশায়ের জন্যে ছেড়ে রেখেচে।
কদিন আর এ মুখো হয় না দেকে একদিন আপিসে গিয়ে হাজির হলেম। বল্লে গার্লফ্রেন্ড তো কোয়ারান্টাইনে আচে। সেকানে কি আমার যাওয়া কর্তব্য হয় হুতোমবাবু? আমি হলাম রেস্পন্সিবল সিটিজেন।
অমন রেস্পন্সিবল সিটিজেন যে কত দেখলেম সেই ফেব্রুয়ারি হতে। দমদমার এয়ারপোর্টে তেনাদের ছড়াছড়ি। কোরোনা শুরু হতেই যে যেকানে ছিলেন সকলের দেশের মাটির জন্যে মনটা বড্ড কেঁদেচে, তাই ফিরে পড়েচেন। সকলেই জানেন কোরোনার দেশ হতে এলেও এনাদের কিচ্চুটি হয়নি। তাই বাপ-মায়ের আপিস হতে সোনাগাজী কোথাও যেতে বাদ রাখলেন না। কেবল কজনের পড়শী ঠ্যাঁটা হওয়ায় পুলিশের অতিথ হয়ে বেলেঘাটা আসা হল। অনেক রেস্পন্সিবল তস্য সেয়ানা। তেনারা সদ্য কে কোথায় গিয়েচিলেন সেসব চেপে গিয়ে ঘর দোর ফেলে উধাও হয়ে গেলেন। সরল মনের বাবুরো আবার ইশকুল কালেজ ঝাঁপ ফেলতে পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে ছুটি কাটাতে গেলেন। এম্নি মওকা তো নিত্য হয় না। তস্য সরল বাবু বিবি জনতা কারফিউ হলে থালা বাজিয়ে কোরোনা হতে নিস্তার পেলেন।
এম্নি আমোদ চলতে চলতে গুপুস করে মোদীবাবুর লকডাউনের তোপ পড়ে গেল! বাবুরো আপিস কাছারি দোকান বাজার বন্দ হওয়ায় মাথা নেড়ে বল্লেন উচিৎ কাজ হয়েচে। মোড়ে মোড়ে রোববারের মজলিশ রোজকার মজলিশ হল। আর বচ্ছর ওলিম্পিকে ক্যারম খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন যে বাবুরো তেনাদের প্র‍্যাকটিসে ভারী মন হল। কে বলতে গিয়েচিল ওলিম্পিকে ক্যারম খেলতে নেয়া হয় না। তার জননী এবং তস্য ভগিনীকে বাবুরো তেড়ে গাল দিলেন। এদিকে নেটফ্লিক্স, প্রাইম, হটস্টারাদি ব্যবসায়ের ভারী বাড় হল। আর সকলে ভাল মন্দ রাঁধতে আর ফেসবুকে, ইন্সটায় ছবি পোস্টাতে লাগলেন। সন্দ রইল না যে কোরোনা শিগগির প্রাইভেট জেটে চেপে ভারত ছেড়ে পালাবে।
এদিকে রুগী বেড়েই চলেচে। গোল দেকে সকলে সিদ্ধান্ত কল্লেন এ ষড় না হলে সম্ভবে না। কে কল্লে? পয়লায় ঠিক হল চীনেরা ষড় করে ভারতে কোরোনা ঢুকিয়েচে। দিনে রাতে চীনের বাপান্ত করেও কোরোনাকে বাগে আনতে পারা গেল না। কদিন বাবুরো সেন্টার টেবিলে পা তুলে টিভিতে দেকলেন হাজারে হাজারে লোক ঘরে ফিরবে বলে রাস্তা জুড়ে হাঁটতে লেগেচে। পথে ট্রেন নেই বাস নেই এরা হেঁটেই চলেচে। দিল্লীর অরবিন্দবাবু আবার গায়ে পড়ে বাসের বেওস্তা ভাতের বেওস্তা কত্তে গ্যাচেন, তাই এরা কাতারে কাতারে বাস স্ট্যান্ডে লাইন দিয়েচে। বাবুরো চিকেন ললিপপ সহযোগে হুইস্কি খেতে খেতে বল্লেন, দ্যাকো তো কি অন্যায়! সোশাল ডিস্ট্যান্সিং এর বারোটা বাজালে! এ শালারাই কোরোনা ছড়াচ্চে। এদেরই জেলে ভরো। আচ্ছা নাহয় গুলিই করো। সন্নেসী মুখ্যমন্ত্রী ওসব কত্তে না পেরে মজুরদের পথে বসিয়ে ব্লিচিং দিয়ে ধুইয়ে দিলে। বাবুরো মাতা চুলকে বল্লেন এতখানি না কল্লেই হত।
নিন্দুকে বলতে গিয়েচিল আজ্ঞে এরা খেতে পায় না, থাকতে পায়নি, তাই তো পথে নেমেচে। সরকার বাহাদুর তো এর বিহিত কল্লেন না। বাবুরো ঢেঁকুর তুলে বল্লেন সময় থাকতে দু পয়সা জমায়নি মদ গাঁজায় উড়িয়েচে তা একন উপায় হবে কী? এদের জন্যে আমরা মরব নাকি? লকডাউন মানতে হবে।
বলতে না বলতে বুদ্দিসুদ্দির মাতা খেয়ে মোদীবাবু বলে বসলেন লকডাউনে ফাঁপরে পড়ে থাকলে যোড়হাত ক্ষমা চাইচি। ভারী গোল হল। এদিকে রুগী হাজার ছাড়ালে। কড়ার হল সরকার বাহাদুর যা বলবেন কেবল সেটিই খবর গেরাহ্যি হবে। আর সব ফালতো।
তকন কোরোনা মুখ তুলে চাইলেন। নিজামুদ্দিন মসজিদের সংবাদ পাওয়া গেল। অনেক কাল মোছলমানদের গাল দেয়ায় গাফলত হয়েচিল, একন দলে দলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে বাবুদের লকডাউনের ডিপ্রেশন দূর করার বেওস্তা হল। চীনের দোষ দিনমজুরের দোষ সব দোষ ঘাড়ে নে মোছলমানে নন্দ ঘোষ হল। সরকার বাহাদুরের হাড় জুড়োল। একন একটি কাজই বাকি। দেড় হাজারি কোরোনাকে এক হাজারি বলো। দু হাজারিকে দেড় হাজারি বলো। এম্নিধারা কমিয়ে চলো। শ্রীরাম সকলকেই রক্ষে করবেন।
এদিকে আরেক কাণ্ড!
সম্পাদকের কন্যা মায়ের সাথে রগড় কচ্ছিল বেঙ্গালুরুর দুই হোদল কুতকুতকে নে। তারা গিন্নীদের ফাঁকি দিয়ে থাইল্যান্ডে ফষ্টিনষ্টি কত্তে গিয়েচিলেন। পুলিশে বাড়ী এসে তেনাদের পরিবারসুদ্দু কোয়ারান্টাইন করেচেন। গিন্নী আর পুলিশের মাঝে দুই বাবু কেমন চিড়ে চ্যাপ্টা হচ্চেন তা বিবেচনা করে মায়ে ঝিয়ে আমোদ পাচ্চিলেন। এম্নি সময় মেয়ের হোয়াটস্যাপে সইয়ের মেসেজ হাজির হল। “তোর বাবার নামে কিসব ডার্টি মেসেজ ঘুরে বেড়াচ্ছে দ্যাখ।” কে সম্পাদকের আরবানার ফ্ল্যাট, ফ্ল্যাটের অতিথ, অতিথের মোচ্ছব সব ফাঁস করে দিয়েচে।
সেই থেকে সম্পাদক গিন্নী আর কন্যার সাথে কোয়ারান্টাইনে আছে। কেমন আছে সে আপনারাই বুঝে দেকুন।
1 Comments

Anup Gupta

01 April, 2020

Jathaartho .

Post Comment