পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

মোঘলরা কি মিশ্র ভারতীয়/ প্রোটো ইন্ডিয়ান ?

  • 24 April, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 1070 view(s)
  • লিখেছেন : উপল মুখোপাধ্যায়
ঔরঙ্গজেব কট্টরপন্থী মুসলিম ছিলেন বলা হয়। তবে ঔরঙ্গজেবের গোঁড়ামি নিয়ে সাম্প্রতিক কাজকম্ম প্রমাণ করে যে উনি তখ্তে বসে একটা আইনের শাসনই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন । ব্যক্তিনিরপেক্ষ আইনের শাসনের এই ভাবনা প্রাক আধুনিক যুগে খুবই প্রাগ্রসর হলেও অতিরিক্ত কাজি নির্ভর দূর্নীতিগ্রস্ত এক শাসন কাঠামোর চাপে ভেঙে পড়ে।

 ‘মোঘলরা’ এই কথা বলতে কিছুই বোঝায় না। বাবর থেকে ঔরঙ্গজেব হল গ্রেট মোঘল ছয়জনের সময় কাল। তারপর থেকে বাহাদুর শাহ জাফর- দুই অবধি কেউ গ্রেট বা দোর্দন্ডপ্রতাপ বলে খ্যাত নন। ঔরঙ্গজেব আলমগীরের বড়ছেলে আজম অন্য ভাইদের মেরে বাহাদুর শাহ -এক খেতাব নিয়ে তখ্তে বসেছিলেন । তিনি বেশ জবরদস্ত ছিলেন। শিখদের সঙ্গে সন্ধিও করেন।  কিন্ত তখ্তে বসার পর  মাত্র পাঁচ বছর বাঁচেন। উনি বেঁচে থাকলে হয়ত গ্রেট মোঘলের সংখ্যা আর একজন বাড়ত।
এবার গ্রেট মোঘলদের কথায় আসা যাক। বাবর মনে প্রাণে তিমুরিদ মধ্য- এশিয় মানসিকতার লোক ছিলেন। সুপণ্ডিত বাবর দিল্লীতে সালতানত দখল করে থেকে গেলেও  বাবরনামাতে হিন্দুস্থানের সংস্কৃতি সম্বন্ধে তাঁর বিরাগের কথা লিখে রেখে গেছেন। তাঁর কবরও আছে কাবুলে। এখন তিনি আধুনিক তাজিকিস্থান  আর উজবেগিস্থানের জাতীয় বীর। তাঁর ছেলে সুপণ্ডিত হুমায়ুন খানিকটা মধ্যপন্থী ছিলেন। তাঁর প্রভাবও সীমিত। ওনার ছেলে জহিরুদ্দিন আকবর ছোটবেলা থেকে বাবা মায়ের সঙ্গ ছাড়া । ধাত্রীমাতা মহাম আনগা আকবরকে বুকের দুধ দিয়ে মানুষ করেন। পড়াশোনা লাটে তুলে ছোটবেলা থেকেই দূর্দান্ত সব কীর্তিকলাপ আর শিকার করে জলে জঙ্গলে শরীর শক্তপোক্ত করেন। তাঁকে জাঁহাবাজ সমরজ্ঞ গড়ে তোলেন বৈরাম খান। মহামতি আকবর গড়ে তোলেন প্রাগ্রসর এক মুদ্রাসঞ্চালন নির্ভর সমৃদ্ধ অর্থনীতি । খাজনা টাকায় নেবার ভাবনা ওনারই। সমৃদ্ধি কখনও সামাজিক সুস্থিতি ছাড়া সম্ভব নয়। এটাই ছিল ওনার ভাবনা। বহুধাবিভক্ত  ভারতীয় সমাজ সম্পর্কে এই উপলদ্ধি আকবর বা তাঁর তাত্ত্বিক সহযোগী অর্থনীতিবিদ মহামতি আবুল ফজলেরও মৌলিক ভাবনা নয় হিন্দুস্থানের নিজস্ব, মিশ্র এক জাতীয় সাংস্কৃতিক  ভাবনার উদ্গাতা হলেন চতুর্দশ শতকের মহাকবি আমির খুসরু। আবুল ফজল আইন ই আকবরি লেখার সময় যে মিশ্র, একান্তই হিন্দুস্থানী, ভারতীয় ভাবনা কাঠামো গঠন করেন তা ভালো রকম খুসরু প্রভাবিত। এই মার্গ দর্শনেই মোঘল শাসন নীতি হিসেবে সুল ই কুল বা সহনশীলতার নীতিমালা গৃহীত হল। গ্রেট মোঘলদের সময় যা মূলত অটুটই থাকে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ হল আকবর থেকে ঔরঙ্গজেব আর্থিক-সামাজিক   বিকাশের ধারাবাহিকতা ও উত্তরোত্তর  সমৃদ্ধি । অনেকে আকবর বনাম ঔরঙ্গজেব এই তুল্যমূল্য বিচার করেন তবে আধুনিক ইতিহাস শাস্ত্রে এই প্রতিতুলনার গুরুত্ব ক্রমশই কমে গেছে। রাজারাজড়াদের  মধ্যে কে খারাপ আর কে ভালো এ তুলনা বিভ্রান্তিকর। আকবরের পর জাহাঙ্গীরের মা আমেরকুমারী হরখা বাই ছিলেন যাকে আধুনিক ভাষায়  বিখ্যাত শিল্পদ্যোগী ব্যবসায়ী বলা চলে ঠিক তাই। জাহাঙ্গীর জন্মসূত্রে   আধা-রাজপুত কর্মে বাদশা ছাড়াও এক সৃষ্টিশীল বায়োলজিস্ট, এখনকার ভাষায় নেচারালিস্ট কাম দক্ষতম শিকারী। নূরজাহানও প্রকৃত অর্থে একমাত্র সাম্রাজ্ঞী কাম শার্প শুটার শিকারী  । শাহাজানের মা যোধপুরকুমারী জগত গোঁসাই। শাজাহানও রক্ত সম্বন্ধে  পঞ্চাত্তর শতাংশ রাজপুত । মননেও। তাঁর ছেলে দারা শিকহোও বা ঔরঙ্গজেবও  তাই। ঔরঙ্গজেব কট্টরপন্থী মুসলিম ছিলেন বলা হয়। তবে ঔরঙ্গজেবের গোঁড়ামি নিয়ে সাম্প্রতিক কাজকম্ম প্রমাণ করে যে উনি তখ্তে বসে একটা আইনের শাসনই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন । ব্যক্তিনিরপেক্ষ আইনের শাসনের এই ভাবনা প্রাক আধুনিক যুগে খুবই প্রাগ্রসর হলেও অতিরিক্ত   কাজি নির্ভর  দূর্নীতিগ্রস্ত  এক শাসন কাঠামোর চাপে ভেঙে পড়ে।  তবে সেই প্রাক আধুনিক  হানাফি সরিয়তি বিধির সঙ্গে আধুনিক মুসলিম মৌলবাদের প্রকৃতিগত মিল খুবই সামান্য। সপ্তদশ শতকে সরিয়তি বলতে এখনকার দৃষ্টিতে আইনী বা লিগালই বোঝাত ধর্মীয় কোন ভেদভাবের অর্থে তার মান্যতা ছিল না। এই হল গুরুত্বপূর্ণ এক সাম্প্রতিক  চিন্তন। তাই গ্রেট মোঘলদের মধ্যে প্রথম দুজন বাদ দিলে বাকিরা  মতের দিক থেকে আর রক্ত সম্বন্ধে একান্তই মিশ্র হিন্দুস্থানী ।
শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর -দুই ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় কবি ও স্বাধীনতা সেনানী। শেষ মোঘল গুরুত্বপূর্ণ শাহজাদা ছিলেন  মির্জা মোঘল। দুজনের নামই সিপাহী বিদ্রোহে বা প্রথম স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে একই নিশ্বাসে উচ্চারিত হয়।শহীদ মির্জা মোঘল ছিলেন ওই লড়াইয়ের এক বীর সেনাপতি ও অন্যতম খ্যাত ভারতীয় স্বাধীনতা সেনানী।

স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ শাহজাদা মির্জা মোঘলের ছবি।

0 Comments

Post Comment