আমরা জানি, আগামী '২৪এ মোদীকে ভোটে হারাতে হলে বিরোধী ঐক্য জরুরি। কিন্তু সর্বাধিক জরুরি সম্ভবত কংগ্রেস ও তৃণমূল ঐক্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দুদলেরই নেতৃত্বের ইগো সমস্যা, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা অবিলম্বে দূরীভূত না হলে মোদীকে হারানোর লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করা কখনোই সম্ভব হবে না।
একথাও সবাইকে মানতে হবে যে, একদিকে বেশ কিছু রাজ্যে যেমন কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে লড়াইটাই মুখ্য, তেমনই আবার বহু রাজ্যেই আঞ্চলিক দল সমূহের সাথে বিজেপির লড়াইটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ন। এই বাস্তবতাকে স্বীকার না করতে পারলে, এ সমস্যার সমাধানও অসম্ভব। মাথায় রাখতে হবে, বিজেপিকে হারিয়ে বিকল্প সরকার গড়তে হলে নূন্যতম ৩০০ আসন (ম্যাজিক ফিগার ২৭২) জেতা অত্যন্ত জরুরি। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসকে পেতে হবে কমবেশি ১৫০ আসন এবং আঞ্চলিক দল সমূহকে ১৫০ আসন। এরই সাথে মাথায় রাখতে হবে, মহারাষ্ট্র, বিহার, ঝাড়খণ্ড, বাংলা, কর্ণাটক, ছত্রিশ গড়, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, হিমাচল, দিল্লী, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, কেরল, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব,, জম্বু কাশ্মীর প্রমুখ রাজ্যে বিজেপি পরাভূত হলে মোদীর পতন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু বিজেপির গড় ইউপি, গুজরাট বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য সমুহেও বিজেপিকে দুর্বল করা সম্ভব হলে বিজেপি নেমে আসবে ১০০ বা বড়জোর ১৫০এ।
তবে এই অঙ্কের হিসেবকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে প্রয়োজন বিরোধী প্রচারের ঝড় তোলা এবং সেটা সম্ভব করতে গেলে প্রয়োজন বাস্তবসম্মত ও আন্তরিক রূপে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা। সেই সম্মিলিত বিরোধী মঞ্চ দেশব্যাপী সভা সমাবেশ ও মিছিল করে জনসাধারণের মধ্যে জয়ের উন্মাদনা তৈরি করতে পারলেই কেল্লা ফতে।
বিরোধী ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের দায় দায়িত্ব অনেক বেশি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের উচ্চতর নেতৃত্বের পক্ষে সেরকম কোন সদর্থক ভূমিকা দেখা যাচ্ছেনা। রাহুল গান্ধীর সফল ভারত জোড়ো যাত্রার সুফল পাওয়ার জন্য যে সব পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল, তেমন কোন কার্যকরী উদ্যোগ কোথায়? কংগ্রেস তার নিজস্ব গয়ং গচ্ছ মেজাজেই বিদ্যমান। বোঝাই যাচ্ছে না, তারা কি চাইছে? মোদীর অপসারণ না আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির বিনাশ? এরাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে কংগ্রেস চায় সিপিএমের সমর্থন ও বিজেপির সাহায্য নিয়ে তৃণমূলের বিনাশ। সদ্য সমাপ্ত সাগরদীঘির উপনির্বাচনের ফল তার বড় প্রমাণ। আর এই কৌশলের নায়ক হচ্ছেন সংসদে কংগ্রেস দলের বিরোধী নেতা ও রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী।
Like our Facebook Page
২০১৯এ দিলীপ ঘোষের মদতে জয়লাভ করে অধীর তো পা বাড়িয়েই ছিলেন বিজেপিতে যোগ দেবার জন্য এবং তা ঠেকাতেই অন্য সব গুরুত্বপূর্ন নেতাকে বঞ্চিত করে তড়িঘড়ি অধীরকেই বিরোধী নেতা বানিয়ে দেওয়া হয়। এহেন অধীরই হচ্ছেন কংগ্রেস ও তৃণমূল ঐক্যের পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা। এমতাবস্থায় কংগ্রেসের উচ্চতর নেতৃত্বকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, মোদী অপসারণ না তৃণমূলের বিনাশ, কোনটা বেশি জরুরি। কিন্তু সত্যি সত্যিই মোদীর অপসারণ চাইলে তৃণমূলের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলা সর্বাধিক জরুরি এবং সেক্ষেত্রে অধীরের রাশ টানাও আবশ্যিক।
এরই সাথে তৃণমূলকেও বুঝতে হবে যে, মোদীকে হারাতে হলে অনেক বেশি আটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে হবে। যে যার মতো লড়ে মোদীকে হারিয়ে ভোটের পরে ঐক্য গড়ার স্বপ্ন, অলীক কল্পনা মাত্র। আর ঐক্যের অভাবে ও বিরোধীদের ব্যর্থতার কারণে মোদী ২০২৪এ আবার জিতলে দেশের চূড়ান্ত সর্বনাশ হবেই এবং তার দাম সম্ভবত তৃণমূলকেই সর্বাধিক দিতে হবে ভৌগলিক ও রাজনৈতিক কারণে।
কালের নিয়মেই একসময় মোদী হারবে এবং তখন জিতবে কংগ্রেসই, এমন মনোভাব নিয়ে চললে যে দেশ নিশ্চিতভাবেই সর্বনাশের পথে যাবে, এরকম নির্ভুল আশঙ্কা অনেকেরই। যেমন তেমনভাবে লড়ে যে মোদীকে হারানো যাবে না, ২০১৯এর নির্বাচনই তার বড় প্রমাণ। যেভাবে পূলোয়ামা ও বালাকোটের চিত্রনাট্য রচনা করে ও তার সার্থক রূপায়ণ ঘটিয়ে ভোটে বাজিমাৎ করলো, তা একমাত্র মোদীর পক্ষেই সম্ভব। আর ২০২৪এও যে তেমন কোন চমক সৃষ্টি পুনরায় করবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়? ফলে ২০২৪এ মোদীকে হারানো যেমন আবশ্যিক, তেমনই সার্বিক বিরোধী ঐক্য গড়া ও মূলত তৃণমূলের সঙ্গে ঐক্য গড়াও সবিশেষ জরুরি।
0 Comments
Post Comment