"রাজা আসে যায় আসে আর যায়
শুধু পোশাকের রং বদলায়
শুধু মুখোশের ঢং বদলায়"
কথাগুলো বহুবার শোনা, তবে বহু ব্যবহারেও তা জীর্ণ হয় না। ভোট আসে, ভোট যায়। ক্ষমতার পালাবদল হোক কিংবা ক্ষমতাসীন এর প্রতিরোধহীন বিজয় যাত্রা, যাই হোক না কেন আম জনতাকে দৃষ্টি ফেরাতেই হয় তার জীবন যুদ্ধের পশ্চাৎ ভূমিতে। কেউ কেউ অবশ্য মনে রাখেন "রাজা আসে যায়, রাজা বদলায়.... দিন বদলায় না !" তবুও অগণিত মানুষ নির্বাচন নিয়ে ঔৎসুক্য দেখান, উত্তেজিত হন এবং ক্ষমতাসীন এর ঔদ্ধত্য, অন্যায় এবং অপশাসনের বিরুদ্ধে তার পুঞ্জিভূত ক্ষোভ কোন বিরোধী অবতারের মধ্যে দুঃসময়ের পরিত্রাতা খুঁজে পায়। কোন অবিশ্বাসী বা নৈরাজ্যবাদী হয়তো পাগলা মেহের আলীর মতো নেচে গেয়ে বলতে পারেন, সব ঝুট হ্যায় ! সব ঝুট হ্যায়! কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে সাচ্চাই কেয়া হ্যায়?
ভোট ব্যবস্থা এবং ভোটের মাধ্যমে শাসক বদলের নেপথ্যে যে সব রহস্যময় ক্ষমতার সমীকরণ প্রধান ভূমিকা নেয়, সেসব কখনোই মূল ধারার সংবাদপত্র জনসমক্ষে আনতে চায় না। অতিসরলীকৃত কিছু ন্যারেটিভ এর মধ্যে জনমানসকে তারা বেঁধে রাখতে চায়। এই আখ্যানের বাইরে গিয়ে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচন এবং পট পরিবর্তনের বাস্তবতাকে একটু বোঝার চেষ্টা করা যাক।
আচ্ছে দিনের স্বপ্ন- বিক্রি অনেক আগেই বন্ধ হয়েছে। দিল্লির মসনদে বসার পরে পরেই সেই স্বপ্ন আদানি এবং আম্বানিদের জন্য সংরক্ষিত করতে হয়েছে। নোট বন্দি এবং জি এস টি-যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে আমজনতা বুঝে নিয়েছেন, তাদের জন্য মোদী ম্যাজিক হচ্ছে একটি নির্মম তামাশা মাত্র।
পুলওয়ামার শহীদদের ছবি দেখিয়ে ভোট ভিক্ষা করার বাস্তবতা এখন নেই। উল্টে, তার স্মৃতি এখন ভূতের মত তাড়া করছে। তদানীন্তন জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্পাল মালিক যিনি এক সময় ছিলেন ঘরের লোক, তিনি হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন সরকারের অভ্যন্তরীণ গাফিলতির জন্যই ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানকে জীবন দিতে হয়েছে। সেই গাফিলতির কথা মোদিকে বলা মাত্রই তিনি সৎপাল সিং কে 'একদম চুপ' থাকতে বলেছেন।[1] জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেবার ঢক্কা নিনাদ বিশেষ দাগ কাটতে পারছে না। রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে, কেন্দ্রের তাঁবে রেখে জম্মু-কাশ্মীরকে যেভাবে তিন টুকরো করা হলো তার পিছনে আসলে যে কর্পোরেট দখলদারির মতলব রয়েছে, সেটা কোনভাবেই আড়াল করা যাচ্ছে না। বিজেপির বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ তুলে এবং কর্পোরেট আগ্রাসনের প্রতিবাদে লাদাখ ক্রমেই তপ্ত হচ্ছে।[2]
রাম মন্দির নির্মাণের পথ নিষ্কণ্টক করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। ধর্মীয় আবেগ পুঁজি করে ভোট কুড়োবার পুরনো অস্ত্র তাই আর কাজে আসছে না। তাহলে নতুন করে মোদি ঢেউ তৈরি করার কোন উপকরণ হাতে রইলো কি? সেটা যে স্পষ্টতই নেই, মোদির মতো পোর খাওয়া রাজনীতিক অনেক আগেই বুঝেছেন। তাই যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই যুদ্ধজয়ের ডঙ্কা বাজিয়ে দিয়েছেন। আপকি বার ৪০০ পার। কয়েকদিন আগে ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকা কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে, প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, বিজেপির এই রণ হুংকার আসলে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে বিরোধীদের ঘায়েল করার একটি কৌশল মাত্র। ২০১৪ সালের নির্বাচনী যুদ্ধে মোদির সাফল্যের প্রধান কারিগর ছিলেন এই প্রশান্ত কিশোর। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “বাস্তব অবস্থা মোটেই এরকম নয় যে বিজেপি এটা পারবে। এককভাবে বিজেপির পক্ষে ৩৭০ টি আসন জয় করার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য”।[3]
আম্বানি গোষ্ঠীর খরিদ করা মিডিয়া তারস্বরে চিৎকার করে বলছে দেশের ৪৩ শতাংশ মানুষ নাকি মোদির শাসনে ভীষণ ভীষণ খুশি। তাদের নির্মিত ওপিনিয়ন পোলে (জনমত সমীক্ষায়) নির্বাচনী গণৎকাররা মোদিকে চারশো পার করে দিয়েছে।[4] প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের অভিযোগ- এরকম অবাস্তব সংখ্যায় পৌঁছনো, রহস্যময় ইভিএম এর কারসাজি ছাড়া অসম্ভব। তাই ১০০% ভোট গোনা হোক ভিভি প্যাটের মাধ্যমে।
এসবের মধ্যে মূল প্রশ্নটা হচ্ছে, মোদি কি জেনেশুনেই দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছেন? নাকি অন্য কোন শক্তির কাছে বিশেষ বার্তা দিতে চাইছেন? সেই শক্তি যাতে তার ওপর এখনই আস্থা না হারিয়ে ফেলে, সেটা প্রমাণ করতেই গলার জোরে ভিতরের দুর্বলতা আড়াল করছেন? যদি মনে হয় এই প্রশ্নগুলো নিতান্তই কল্পনাশ্রয়ী, তাহলে শুনুন ভারত মার্কিন নীতি বিষয়ক চর্চা গোষ্ঠীর প্রধান রাইকার্ড এম রস্ও অতি-সম্প্রতি কি বলেছেন।[5] সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ সংক্ষেপে সিএসআইএস এর প্রকাশিত নিউজ লেটারে ইন্ডিয়ান ইলেকশন এন্ড গ্লোবালাইজেশন- এই শিরোনামে তিনি লিখেছেন, “গণতন্ত্র গুলো হচ্ছে এক অদ্ভুত ধরনের জন্তু। যতক্ষণ না ফল ঘোষণা হচ্ছে ততক্ষণ কোনোমতেই নির্বাচনের পরিণতি সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারি না”।........ “অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বিজেপি এবার অনায়াসেই তৃতীয়বারের জন্য বিজয়ী হতে চলেছে। এমনকি যদি এই ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি বলে প্রমাণিত হয়, তা সত্ত্বেও মনে রাখা প্রয়োজন মোদি সরকারের কর্তৃত্বের উপর বাস্তবিক সীমাবদ্ধতা থাকবে। অনেক রাজ্যে বিজেপির উপস্থিতি দুর্বল থাকার কারণে রাজ্যসভায় তাদের দখলে রয়েছে মাত্র ৩৭ শতাংশ আসন। এই কারণেই কোন বিতর্কিত আইন পাশ করানোর ক্ষেত্রে সংসদে সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও এন ডি এর মধ্যে বিজেপির সহযোগী যেসব দল রয়েছে তারা ক্রমাগতই শিবির বদলাচ্ছে”।
মোদির বহু বিজ্ঞাপিত কর্তৃত্ব এবং পারদর্শিতা নিয়ে মার্কিন বণিক গোষ্ঠীর মধ্যে যে যথেষ্ট ধন্দ রয়েছে সেটা একেবারে খোলাখুলি ভাবেই, নানান খতিয়ান দিয়ে তিনি বলেছেন, “সাধারণত কোন সরকার যখন জনমতের মাধ্যমে সদ্য ক্ষমতায় আসে, তখন প্রত্যাশিত বড় বড় সংস্কারগুলি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু গত ৫ বছরের ঘটনাবলী সব হিসেব উল্টে দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মোদি দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্ষমতায় আসার পর আমাদের ইন্ডিয়া রিফর্ম্স স্কোর কার্ড অনুযায়ী যে ৩০ টি বড় সংস্কারের দিকে আমরা চোখ রেখেছি, তার মধ্যে একটি মাত্রই তিনি সম্পন্ন করতে পেরেছেন।
সেটা হচ্ছে কর্পোরেট কর ৩০% থেকে ২৫% কমিয়ে আনা। প্রথম পর্যায়ে, মোট কুড়িটি ক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ চালু করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে মাত্র যে দুটি ক্ষেত্রে তিনি আইন-কানুন শিথিল করেছেন সেটা হচ্ছে কয়লা এবং একক ব্রান্ডের খুচরো ব্যবসা। কোভিড ১৯এর পর যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, তখনই কিছু সদর্থক সংস্কার তিনি শুরু করেন। আশ্চর্যজনকভাবে, ভোটের দিন ঘোষণা হবার পর থেকেই তিনি বিদেশি বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে”।...... “মোদি সরকারের এই সাম্প্রতিক গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের প্রধানতম ইস্যু গুলো নিশ্চয়ই ভোট চলাকালীন উধাও হয়ে যাবে না। বিশ্বায়নের বিষয়টি ভোটের প্রচারে বেশ সদর্থক ভূমিকা নেবে বলেই মনে হচ্ছে। অন্তত দিল্লির রাজনীতিতে বিশ্বায়নের ব্যাপারটা রাজনীতি-নিরপেক্ষভাবে সকলের কাছেই সমানভাবে গ্রহণযোগ্য, যা আমাদের কাছে বেশ আশাব্যঞ্জক”। [5]
তাহলে বুঝতেই পারছেন, রাজনৈতিক মার-প্যাঁচে পারদর্শিতা দেখিয়ে হোক কিংবা পুতিনের পথে লৌহমুষ্টি দেখিয়ে হোক, মোদি যেভাবেই ফিরে আসুন না কেন, মার্কিন মনিবদের স্বাগত জানাতে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ থাকবে না; অবশ্যই যদি তাদের প্রত্যাশিত সংস্কারের পথে তিনি সমর্পিত হন। এমনকি যদি শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার পালাবদল হয়, সেক্ষেত্রেও পবিত্র বিশ্বায়নের নীতির আড়ালে তাদের স্বার্থ একইভাবে সুরক্ষিত থাকবে বলে তারা যথেষ্ট আশাবাদী বলেই দাবি করছেন।
আন্তর্জাতিক স্তরে সিএসআইএস এর মত প্রভাবশালী রাজনীতি এবং অর্থনীতির বিশ্লেষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নামজাদা পত্রিকা দি ডিপ্লোম্যাট ২৭ শে মার্চ লিখেছে, “ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে নরেন্দ্র মোদী এত সন্ত্রস্ত কেন?” [6] এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ভারতের রাজনীতিতে এক সপ্তাহ কাল একটি বিরাট সময়। চলতি মাসের এক সপ্তাহের মধ্যে বিজেপির ভাবমূর্তিতে বড় রকমের বদল ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এবং নির্দেশে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে যে সব তথ্য সামনে এসেছে তাতে এটা পরিষ্কার, ভোটের জন্য চাঁদা নেবার এই পদ্ধতিটাই সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ এবং গোলমেলে। ফাঁস হওয়া তথ্য বলে দিচ্ছে -বিজেপি শুধুমাত্র এই দুর্নীতির সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী, সেটাই একমাত্র সত্য নয়। একইসঙ্গে এই চাঁদা তোলার প্রকল্পের মাধ্যমে যে তোলাবাজির চক্র চলছিল তার নেতৃত্ব দিয়েছিল এই বিজেপি।... প্রাণপণ চেষ্টা করা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদি সরকার এই তথ্য গোপন রাখতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে সম্পূর্ণ তথ্য তুলে ধরতে। বিজেপি নিজেদের সম্পর্কে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে তারা স্লোগান তুলেছিল 'আপকি বার ৪০০ পার'। কিন্তু এইসব তথ্য ফাঁস হবার কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিজেপির মুখের চেহারা বদলে যায়। দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ইস্যু কে কেন্দ্র করে নড়বড়ে বিরোধী ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স নিজেদের সংহত করতে শুরু করেছে এবং তারা সরাসরি অভিযোগ করছে - বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ করা হচ্ছে”।
এই প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে “সব জনমত সমীক্ষা-ই যদি মোদির তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পক্ষে ভবিষ্যৎবাণী করছে, তাহলে শাসক দলের অভ্যন্তরে এই ত্রাহি ত্রাহি রব কেন”?
“এর সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে, গত ১০ বছরে মোদির অপাপবিদ্ধ ভাবমূর্তি এইভাবে কখনো বিপর্যস্ত হয়নি।... জার্মানির সরকার বলেছে কেজরিওয়ালের গ্রেফতার তাদের ভাবাচ্ছে এবং মার্কিন সরকারের মুখপাত্র বলেছে তারা সমস্ত ঘটনা-ক্রমের ওপর কড়া নজর রেখেছে। এতেই চটেছে মোদি সরকার। তারা বলছে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কেউ যেন নাক না গলায়”।[6]
গত চার বছর ধরে যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কোভিডকালে ঘটে যাওয়া, মানবতার বিরুদ্ধে ভয়ংকর অপরাধ গুলি সম্পর্কে চোখে ঠুলি এটেঁ বসেছিল। তারাও আসরে নেমে পড়েছে। মোদী সরকারের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে তারা বলেছে, “নির্বাচনের ঠিক আগে, ভারতে বিরোধীদের ওপর দমন পীড়ন এক সংকট মুহূর্তে পৌঁছেছে”। [7] তারা এমনও বলেছে যে, “এই দমন পীড়ন দেখিয়ে দিচ্ছে, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি বর্তমান শাসকের কতটা অবজ্ঞা এবং অশ্রদ্ধা রয়েছে”। সচেতন নাগরিকের মনে স্বভাবতই যে প্রশ্নটা উঠবে, হঠাৎ কি এমন ঘটল যে মার্কিন প্রশাসনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই সংগঠন তেড়ে ফুরে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বয়ান দিতে শুরু করল? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে এক বছর আগের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ফিরে যেতে হবে।
২০২৩ এর ২৪ শে জানুয়ারি, আমেরিকার একটি শর্ট সেলিং* সংস্থা, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ভারতের আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কে একটি মারাত্মক রিপোর্ট প্রকাশ করে।[8] তাতে তাঁরা অভিযোগ করে, আদানি গোষ্ঠী নানা অবৈধ এবং অনৈতিক উপায়ে নিজেদের সংস্থার শেয়ার মূল্যকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়েছে। পরবর্তী ১০দিনের মধ্যে, শেয়ার বাজারে আদানী সাম্রাজ্যের বিধ্বংসী পতন শুরু হয়। এক ধাক্কায় তাদের লগ্নি-পুঁজির ষাট শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজার থেকে উবে যায়। এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধনকুবেরের সাম্রাজ্য টলোমলো করতে থাকে। বিশ্বের বাজারে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বাণিজ্যিক অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য তারা বিশ্বের বড় বড় লগ্নী সংস্থাগুলির দ্বারস্থ হয়। আবুধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি, গোল্ডম্যান স্যাকস, বি এন পি পারিবা, মরগ্যান স্ট্যানলি ‘র মত মহারথীরা তাদের শেয়ার কিনতে এগিয়ে আসে। আম্বানি এবং মিত্তালদের মতো ভারতীয় ধনকূবেররাও তাদের উদ্ধারে নামে। এলআইসি’র মত রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্সুরেন্স সংস্থাকে ধরে এনে এই চোরাবালিতে নামিয়ে দেওয়া হয়। এতে আপাতভাবে মুখ রক্ষা হলেও দেশের ছোট এবং মাঝারি বিনিয়োগকারীরা সম্পূর্ণভাবে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং নিজেদের অনিবার্য ধ্বংস থেকে অনেকটাই রক্ষা করতে সমর্থ হয়।[9] অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল মিউচুয়াল ফান্ড এই ফাঁদে পা দিতে অস্বীকার করে। বিপদে পড়ে ফুঁসতে থাকে ওয়াল স্ট্রিটের কয়েকটি বৃহৎ লগ্নিকারী সংস্থা, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির ধন কুবেরদের পরামর্শদাতা লগ্নিকারী সংগঠন ভ্যানগার্ড এবং ব্ল্যাক রক।[10] কিছুদিনের মধ্যেই আমেরিকার জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এবং সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এবং আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবার তোরজোড় শুরু করে দেয়। [11]
এদেশের সর্বোচ্চ আদালতেও চারটি জনস্বাস্থ্য মামলা দাখিল করা হয়। একটি সিট গঠন করে সিবিআই এর মাধ্যমে আদানি দের এর বিরুদ্ধে তদন্ত করার নির্দেশের দাবী ওঠে। প্রত্যাশিতভাবেই, আদালত সে আর্জি খারিজ করে দেয় এবং ৬ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করে দেয়।[12] এই কমিটি আবার সেবির ওপর দায় ঠেলে দেয় এবং কিছুদিন পরে সেবি (SEBI) প্রমাণের অভাবে আদানিদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণযোগ্য নয় বলে দাবি করে।
প্রায় ৪০০ পাতার পাল্টা বয়ানে আদানি গোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধে পেশ হওয়া সমস্ত প্রমাণ এবং অভিযোগ কে শুধু ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তাই নয়, তারা দাবি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ আসলে দেশের, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি আক্রমণ।[13] এতকিছুর পরেও, আদানী সাম্রাজ্যের ধস কিছুটা হলেও হয়তো ঠেকানো গেল এবং বিচার বিভাগ ও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হাত থেকে নিষ্কৃতির জন্য, তাদের হাতে রক্ষাকবচ এখনো অটুট রয়েছে, এটাও তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হল। কিন্তু সারা দেশ ও বিশ্বের কাছে, বিশেষত বৃহৎ লগ্নীকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তাদের বাণিজ্যিক ভিত্তি এবং বিস্তৃতি নিয়ে যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবের আসমান জমিন ফারাক। সমুদ্র বন্দর থেকে বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, কয়লা, গ্রীন এনার্জি সহ দেশের অবকাঠামোর (infrstructure) তামাম ক্ষেত্রে তাদের দাপট, সরকারের অভ্যন্তরে তাদের গভীর যোগাযোগ - এসবই আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের প্রলুদ্ধ করেছে তাদের সংস্থায় বিনিয়োগ করতে। এদের অনেকেই ভেবেছিলেন they are too big to fail. কিন্তু হাইডেন বার্গ রিসার্চ এর শক্তিশেল নিক্ষিপ্ত হতেই যখন কার্তিকের খড় বেরিয়ে গেল, তখন থেকেই ওয়াল স্ট্রিটের লগ্নি-পূঁজির মালিকরা এবং মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন শাখা সতর্ক নজর রাখতে শুরু করেছে। অতি সম্প্রতি, মোদির রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেই টাল খেতে শুরু করেছে, আমেরিকার জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের পক্ষে ব্রুকলিনের দুঁদে আইনজীবীরা আদানিদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং মামলার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই কারণেই রাষ্ট্রসংঘ, মার্কিন প্রশাসন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক সুরে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বয়ান দিতে শুরু করেছে।[14] এদিকে মোদির সমস্যা ক্রমেই আরো ঘোরালো হয়ে উঠছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণের সামনে মোদি নিজের যে লার্জার দ্যান লাইফ ইমেজ হাজির করেছিলেন, তার ঠিক আড়ালেই, গুজরাটের বাইরে ভারতব্যাপী আদানিদের উত্থান শুরু হয়েছিল । এখন বিকশিত ভারত মানে বিকশিত আম্বানি ও আদানি। দশ বছর পর, এই আদানি-গোষ্ঠী এখন অ্যালবাট্রসের মত মোদি সরকারের গলায় ঝুলে রয়েছে। তাকে ঝেড়ে ফেলা যেমন অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব তাকে অস্বীকার করা। কাজেই পুতিনের প্রদর্শিত পথে লৌহমুষ্টি দেখানো ছাড়া, বিকল্প রাস্তা গুলো মোদির জন্য বন্ধ হতে চলেছে।
এমতাবস্থায়, বিরোধী গোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান মুখ রাহুল গান্ধী সাম্প্রতিক কালে তার ন্যায়যাত্রায় এবং বিরোধী জোট - ইন্ডিয়ার মঞ্চে যে প্রশ্নগুলো তুলছেন, তা আপাতভাবে যুক্তিযুক্ত এবং গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তিনি যেভাবে সোচ্চার হয়েছেন, সেই সাহস প্রায় কোন বিরোধী দলের মধ্যেই এযাবৎ দেখা যায়নি। যে পাঁচটি ন্যায়ের কথা কংগ্রেস পার্টি তাদের দলীয় ইস্তাহারে ঘোষণা করেছে,[15] সেটা যদি আদৌ কার্যকর হয়, তাহলে একথা নিশ্চিত করে বলা যায়, গত ১০ বছরে আমজনতার ওপর মোদি সরকার যে স্টিম রোলার চালিয়েছে এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে যে ভয়ংকর ক্ষত সৃষ্টি করেছে, সেখানে হয়তো প্রলেপের কাজ করবে। বলা হয় আমজনতার সম্মিলিত স্মৃতি খুব একটা স্থায়ী হয় না। শাসকের নিজস্ব প্রতিশ্রুতির স্মৃতিও যে ক্ষণস্থায়ী, সেটা স্বাধীনতা-উত্তর ৭৬ বছরে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে কংগ্রেসের ইতিহাস মোটেই গৌরবোজ্জ্বল নয়। ২০২৪ সালের এই সাধারণ নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ঠিক যেসব অভিযোগের তীর শাসক বিজেপির দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে, সেই একই অভিযোগে ২০১৪ সালে তারা বিদ্ধ হচ্ছিলেন। টুজি কেলেঙ্কারির কথা কেউ ভোলেননি। সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিল কয়লা কেলেঙ্কারি। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ, আদিবাসী ও অরণ্যবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল গুলি তারা নিজেদের শিল্পপতি বন্ধু, রাজনীতিক, ব্যবসাদার এবং ভাই বেরাদরদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। সরকারি নিয়ম ভেঙে, পরিবেশ বিধি নিয়মের তোয়াক্কা না করে, প্রকাশ্যে কোন নিলাম না ডেকে, ভবিষ্যতে কয়লা উত্তোলনের জন্য জলের ধরে জমি ও জঙ্গল ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছিলেন। লুটেরাদের এই মহোৎসবে সভাপতিত্ব করছিলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বর্তমান সরকারের মতো তারাও তখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই কে নিয়ন্ত্রণ করতেন। কয়লা কেলেঙ্কারির নানান তথ্য চেপে যাওয়ার জন্য সিবিআইকে সেই সময় সর্বোচ্চ আদালত “খাঁচার তোতা” বলে ভর্ৎসনা করেছিল। জোটের মধ্যেকার দলগুলোকে তাঁবে রাখার জন্য, তখনো সিবিআই কে কাজে লাগানো হতো। ২০০৭ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সক্রিয় উদ্যোগে এবং প্ল্যানিং কমিশনের প্রধান মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়ার সহায়তায় তৈরি করা হয়েছিল পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া। যা আসলে ছিল বিল এন্ড ম্যালিন্ডা গেট ফাউন্ডেশন এর ভারতীয় সংস্করণ। পিপিপি মডেল এ তৈরি হওয়া এই পরামর্শদাতা সংগঠন কাল ক্রমে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে।[16] বলাবাহুল্য যে কোভিড কালে যে অবৈজ্ঞানিক এবং অমানবিক বিধি-নিষেধের শিকার হতে হয়েছে ভারতের ১৩০ কোটি মানুষকে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল নীতি আয়োগ [17] এবং শক্তিশালী কিছু ফাউন্ডেশন এর।[18] তাই যত ন্যায়ের কথাই কংগ্রেস পার্টি বলুক না কেন, নীতি আয়োগ এর মত একটি অনির্বাচিত, আমলাদের সংগঠন যদি দেশের অর্থনীতির বিষয়ে শেষ কথা বলে, তাহলে আদৌ আমাদের দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোটা কি কর্পোরেট শক্তির প্রভাব মুক্ত হয়ে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক হতে পারবে? নীতি আয়োগ বা ঐরকম যেসব তথাকথিত থিঙ্ক ট্যাংক রয়েছে, তারা কি সংসদের কাছে জবাব দিতে দায়বদ্ধ থাকবেন? এসব প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে, দিল্লির ক্ষমতায় হয়তো বিরোধীদলের ফিরে আসা সম্ভব হতে পারে, কিন্তু গণতন্ত্র ফিরবে কিনা, সেই প্রশ্নটা বিশ বাঁও জলেই ডুবে থাকবে।
শাসক এবং বিরোধী দল ছাড়াও আরো একটি চরিত্র এবং তার দুনিয়াব্যাপী সংগঠনের জাল এই ঐতিহাসিক নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বারবার সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে। অনেকেই হয়তো অনুমান করতে পারছেন তিনি কে। তিনি হচ্ছেন দুনিয়ার প্রথম সারির অন্যতম ধনকুবের, জর্জ সোরোস। এ যাবৎ প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, বিভিন্ন ধরনের অসাম্য, অন্যায় এবং অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য সারা পৃথিবী জুড়ে, যে সংগঠনের তিনি ডালপালা ছড়িয়ে রেখেছেন তার নাম ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন।[19] আদানি গোষ্ঠীর অভিযোগ ছিল, তাদের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে এবং তা তথ্য সহকারে প্রকাশিত হচ্ছে সেটা আসলে এই সোরোস মহাশয় এর আশীর্বাদ পুষ্ট সংগঠনের কাজ। [20]
আত্মপক্ষ সমর্থনে এই গোষ্ঠী যা বলছে তাতে বিশেষ কোন সারবত্তা না থাকলেও, এটা ঘটনা যে, অর্গানাইজড ক্রাইম এন্ড কোরাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট সংক্ষেপে সি সি পি আর, অ-সরকারি অনুদানে পরিচালিত একটি সাংবাদিকদের যৌথ মঞ্চ এবং ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন থেকে তারা আর্থিক সহায়তা পায়।[21] [21A] সরকারের সমর্থক এবং দক্ষিণপন্থী অনলাইন পত্রিকা অপ ইন্ডিয়া তথ্য প্রমান হাজির করে দেখাচ্ছে যে কর্ণাটকে ন্যায় যাত্রার সময় রাহুল গান্ধীর পাশে যিনি হাঁটছেন তিনি সোরস্ পরিচালিত সংগঠনের আন্তর্জাতিক উপসভাপতি।[21B] যে সাহসী সাংবাদিক মোদি সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার খবর করে জনপ্রিয় হয়েছেন এবং কয়েক বছর আগে ম্যাগসাইসাই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, তাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে, যার নাম While We Watched। সেখানেও সোরস্ সংযোগ খুঁজে পাচ্ছেন কেউ কেউ। ছবিটির নির্মাতা, ডক সোসাইটি নিজেই জানাচ্ছে তারা ফোরড ফাউন্ডেশনের অন্যতম সহযোগী। এটা বলা বাহুল্য যে তথাকথিত গোদি মিডিয়ার বিপরীতে, যে গুটিকয় মিডিয়া সরকারের প্রবল সমালোচক হিসেবে দৃশ্যমান হচ্ছে, খোঁজ করলে তাদের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই কোন না কোন অসরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সাহায্যের সূত্র মিলবে। এসব কথা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হল আমরা যেন ভুলে না যাই যে, কোন ফাউন্ডেশনের অর্থ-সাহায্যে পুষ্ট সংগঠন যতই গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াক না কেন, তারা কোন না কোন ভাবে অর্থদাতা দের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। ঠিক যেমন এই মহামতি জর্জ সোরোস। জন্মসূত্রে হাঙ্গেরিয়ার অধিবাসী। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রচলিত আছে যে, তিনি হিটলারের ইহুদী বিরোধী নাৎসি অভিযানের সময় নাম ভাঁড়িয়ে, খ্রিস্টান পদবী ব্যবহার করে এবং হিটলারের বাহিনীর সঙ্গে যোগ সাজসে, ইহুদিদের নিরাপদ জায়গায় পাঠাবার নাম করে সোজাসুজি কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিতেন এবং আত্মসাৎ করতেন তাদের সম্পত্তি। এভাবেই তার উত্থান। পরবর্তীকালে বিভিন্ন হেজ ফান্ডের মালিক হয়ে আমেরিকার ধনাঢ্য ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক ফাটকা বাজারে তার জুড়ি মেলা ভার। তিনি সেই ব্যক্তি যিনি ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড কে পথে বসিয়ে প্রায় কয়েক বিলিয়ন ডলার কামিয়েছিলেন।[19A]
ভ্যাকসিন সম্রাট যেমন সারা পৃথিবী জুড়ে তার ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য এবং উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন এবং মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন সরকারের নীতি প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা নেন, ঠিক একই কায়দায় এই গুণধর ব্যবসায়ী বিভিন্ন সামাজিক, অধিকার গোষ্ঠী, বিভিন্ন বাম মনোভাবাপন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানে টাকা ঢালেন।[22] আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার কুখ্যাতি রয়েছে কোন সরকার বা শাসনব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে অন্য কোন সরকার বা ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে, মধ্য এশিয়ায় বিভিন্ন একনায়ক সরকারের বিরুদ্ধে যে জন্ আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল সেখানেও তার প্রভাব ছিল। জন-আন্দোলন কে তার নিজস্ব ঢং ও ধারায় এগোতে না দিয়ে নিজের ব্যবসার স্বার্থে সহায়ক কোন ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করাই তার কাজ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর প্রধান যেসব মুখিয়া আছেন, তিনি তাদের অন্যতম। তার গৌরবময় উপস্থিতি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক, সেখানেই কিন্তু গণতন্ত্রের পক্ষে সুখবর থাকার সম্ভাবনা কম। যদি দেখা যায়, ফোরড ফাউন্ডেশন কিংবা ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের অর্থপুষ্ট কোন এনজিও প্রধান রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হচ্ছে [23] কিংবা এক সময়কার আগ-মার্কা কোন দল এনজিও তে রূপান্তরিত হচ্ছে, এবং কর্পোরেট গোষ্ঠীর ছায়া সংগঠন হিসেবে, প্রশাসনের অন্দর মহল থেকে জনপদ ও মহল্লা পর্যন্ত ডালপালা বিস্তার করে রেখেছে শক্তিশালী কিছু ফাউন্ডেশন; তাহলে ক্ষমতার মসনদে যেই বসুক না কেন, গণতন্ত্রের পরিসর মুক্ত, স্বাধীন এবং নিষ্কলুষ থাকতে পারে কি?
কোন পাঠক হয়তো ভাবতে পারেন, সবদিকেই যদি এত প্রশ্ন তাহলে যাই কোথায়? এই ‘ঐতিহাসিক’ নির্বাচনে কাকে জেতাই বা কাকে হারাই ? আসল প্রশ্নটা কিন্তু আরো গভীরে। কোন দলকে ভোট দেওয়ার অর্থ কি, আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদের কাছে দাসখত লিখে দেওয়া? অনেকেই বলছেন এই নির্বাচন ঐতিহাসিক। কারণ, শুধু নতুন সরকার গঠন নয়, দেশের সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার শেষতম সুযোগ ! জরুরি অবস্থার সময় যেভাবে সংবিধানের দফারফা করে দিয়েছিল সেই সময়ের কংগ্রেস সরকার, সেই ইতিবৃত্ত লেখা আছে Making of india's Constitution বইটিতে। বইটির লেখক বিচারপতি এইচ আর খান্নার কয়েকটি কথা এই প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, “ সংবিধান কতগুলো লিখিত কাগজের গুচ্ছ নয়। এটা আমাদের জীবন যাপনের উপায় এবং আমাদের কাজ হচ্ছে আমাদের জীবন যাপনের পদ্ধতিকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা। অন্তহীন নজরদারি রাখাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাধীনতার মূল্য চোকাতে পারি। এই স্বাধীনতার একমাত্র রক্ষাকর্তা হচ্ছে জনগণ। মানুষের অপরিসীম অজ্ঞানতাই উদ্ধত ক্ষমতার রাস্তাকে প্রশস্ত করে। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা”। [24]
তথ্যসূত্রঃ
তথ্যসূত্রঃ
16. PHFI: More wool over public eyes –Part 2 https://www.moneylife.in/article/with-phfi-falsification-is-the-truth/28389.html
17 . https://www.niti.gov.in/sites/default/files/2023-02/Report-on-Mitigation-and-Management-of-COVID19.pdf
18. https://www.gatesfoundation.org/ideas/articles/coronavirus-india-response-m-hari-menon
19. https://www.opindia.com/2020/02/george-soros-manipulator-global-order-indian-nexus-concerns-for-india/
19A . https://www.britannica.com/biography/George-Soros
20. https://www.adani.com/Newsroom/Media-Release/Adani-Group-Media-Statement-on-OCCRP-Report
21. https://www.newslaundry.com/2023/09/01/the-adani-story-simplified-stock-manipulation-mystery-investors-and-sebi-role
21A. https://www.occrp.org/en/aboutus/who-supports-our-work
21B. https://www.hindustantimes.com/india-news/george-soros-aide-walked-in-bharat-jodo-joined-anti-caa-protests-bjp-101676717388597.html
22. https://www.globalresearch.ca/george-soros-can-influence-global-media-ties-at-least-253-organizations-study-finds/5807641
23. https://www.indiatoday.in/india/story/arvind-kejriwal-ngo-cia-amarinder-singh-sikh-chhotepur-337574-2016-08-27
24. https://books.google.com.fj/books?id=BBnUF1SUlFgC&printsec=copyright&source=gbs_pub_info_r