পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গ, রাজ্যপালের নাম বোসসাহেব

  • 17 July, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 661 view(s)
  • লিখেছেন : অশোকেন্দু সেনগুপ্ত
এমন নয় যে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি কেবল এই রাজ্যেই আছে। লর্ড ওয়াভেল ( ভারতের শেষ ভাইসরয়) তাঁর ডায়রিতে দাবি করেছেন যে এ দেশে শিক্ষাক্ষেত্রেই দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি। এরপরেও কেবল দুর্নীতির গল্প খবরের কাগজের পাতায় পাতায়। এর অর্থ স্পষ্ট, মেইনস্ট্রইম মিডিয়াও চায় না এই সরকার চলুক; জনতা চায়। তাই বুঝি বোস সাহেবের এতো রাগ! তিনি এতটাই রেগে আছেন যে সংবিধানও মানতে চান না আর সংবিধানে রয়েছে যে, রাজ্য সরকার কোনও বিল আনলে (অবশ্যই বিধানসভায় পাস হওয়া বিল) রাজ্যপালকে তা গ্রহণ করতেই হবে অথবা তা পুনর্বিবেচনার জন্য বিধানসভাতেই ফেরত পাঠাতে হবে।)

সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালই এই মহান গণতান্ত্রিক দেশের একমাত্র মানুষ যাঁকে জণগনের ভোটে নির্বাচিত হতে হয় না। অথচ, এদেশের রাষ্ট্রপতিকেও নির্বাচনে জিতে আসতে হয়। তবু এই বিশ্বে আমরা প্রধান গণতান্ত্রিক দেশ বলে চিহ্নিত। এমন অনেক বিচিত্র ধাঁধা আছে আমাদের সংবিধানে।
এই সংবিধানই রাজ্যপালকে দিয়েছে প্রায় অসীম ক্ষমতা। সেই ক্ষমতাবলে কোনও কোনও রাজ্যপাল নিজের ক্ষমতাকে যেন ঈশ্বরের ক্ষমতার মতো সর্বত্রগামী মনে করা শুরু করলেন। মাঝেমধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই সংবিধানেরই আর এক স্তম্ভ - মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট। তারা রাজ্যপালের ক্ষমতার সীমা বাঁধার চেষ্টা করলেন (দ্রষ্টব্য বুম্মাই বনাম ভারত সরকার এর মামলা, ১৯৯৪)। দু:খ বা আশংকার বিষয় এই যে, তাতেও পূর্ণ সমাধান মেলেনি। সারকারিয়া কমিশনের রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টকে তার এমন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল নিশ্চয়। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে, কোনও দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে কি নেই তা নির্নয়ের জায়গা হতে পারে একমাত্র বিধানসভার উপস্থিত সদস্যদের ভোট। রাজ্যপাল তার খুশিমতো বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন না।
ডানা কাটার সেই শুরু কিন্তু তাঁরা ৩৫৬ ধারা তথা রাষ্ট্রপতি শাসনের সুযোগ বাতিল করলেন না। এই আইনের সুযোগ নিয়ে এই পশ্চিমবঙ্গেই অন্তত দু-দুবার সরকার বরখাস্ত হল। জনতা সরকারের আমলে একই সাথে ১২ টি রাজ্য সরকার ফেলে দেওয়া হল।
তারও আগে কেরলে কম্যুনিস্টদের পরিচালিত সরকার ভাঙতে স্বয়ং জবাহরলাল নেহরু (এই সংবিধানের অন্যতম রুপকার) উদ্যোগ নেন। কম্যুনিস্টদের নীতি অনুসারে তাঁরা কোর্টে যেতে পারেন না। তাঁরা তার দিকে গেলেনও না।
কেন্দ্রে যে সরকারই থাক তারা চায় যে কোনও উপায়ে রাজ্য সরকারগুলি ভাঙতে, ভেঙে রাষ্ট্রপতি শাসনের আয়োজন  করতে। অন্তত কোনও প্রকার অস্থিরতা সৃষ্টি করতে। বর্তমানে কেন্দ্রে যাঁরা সরকার  চালাচ্ছেন তাঁরা যেন দ্বিতীয় পথটাই বেছেছেন। এই সেই বুদ্ধি যা স্বাধীনতার পর থেকে আমরা দেখে আসছি এবং সেই ট্রাডিশন বুঝি সমানে চলেছে।
সাম্প্রতিক কালের উদাহরণ তামিলনাডু, পশ্চিমবঙ্গ ইত্যাদি। আমরা কেবল এই রাজ্যের বিষয়ে সামান্য কিছু বলতে চাই। এই রাজ্যে রাজ্যপাল হয়ে এলেন ধনকর। পরে তিনি হলেন দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি। এমন আগেও হয়েছে, অবাক হবার কিছু নেই তাতে। তবু অবাক হলেন রাজ্যের বামপন্থী দলগুলি। ত্তারা অভিযোগ করলেন যেন ধনকরের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচার জন্যই এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও কেন্দ্রের শাসকদলের সেই প্রস্তাবে সায় দেন। হতে পারে, নাও হতে পারে। রাজনীতিতে সবই সম্ভব। তবে সাধারণ মানুষ যে সে কথা বিশ্বাস করেনি তার প্রমাণ মিলেছে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে।


ধনকর গেলেন এই রাজ্য থেকে, এলেন সি ভি আনন্দ বোস। মন্ত্রীদের,  বিশেষত ব্রাত্য বসুর মুখ দেখে মনে হল বুঝি ঘরের ছেলে ফিরল ঘরে। বোস অল্পদিনেই বুঝিয়ে দিলেন যে তিনি এসেছেন, মুখ্যমন্ত্রী না হয়েও, এই রাজ্য শাসন করতে। যদিও সকলেই জানেন, কেন্দ্রের কর্তারাও, যে এই রাজ্যে আছে একটি নির্বাচিত সরকার। যার প্রধান অন্য কেউ নয় তথাকথিত 'অপরাজেয়' বাম দলকে ভোটে হারিয়ে ক্ষমতায় আসা শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


ত্রিপুরাতে বিযেপিও তো অপরাজেয় বামেদের হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তবে, সে কেন পারবে না এই রাজ্যে তৃণমূল নামের দলটিকে হারাতে? শুরু হল বোসের ( আমরা অবশ্য ম্যাজিসিয়ান বোসের খেলার কথা বলছি না) খেলা।খেলার শুরুতে এই রাজ্যের শাসকদলই তাঁকে সুযোগ করে দেন। শিক্ষায়, অন্তত,  এতো দুর্নীতি বাংলায় কার্যত নজীরবিহীন।


এমন নয় যে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি কেবল এই রাজ্যেই আছে। লর্ড ওয়াভেল ( ভারতের শেষ ভাইসরয়) তাঁর ডায়রিতে দাবি করেছেন যে এ দেশে শিক্ষাক্ষেত্রেই দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি।
এরপরেও কেবল দুর্নীতির গল্প খবরের কাগজের পাতায় পাতায়। এর অর্থ স্পষ্ট, মেইনস্ট্রইম মিডিয়াও চায় না এই সরকার৷ চলুক। জনতা চায়। তাই বুঝি বোস সাহেবের এতো রাগ!
তিনি এতওটাই রেগে আছেন যে সংবিধানও মানতে চান না আর সংবিধানে রয়েছে যে, রাজ্য সরকার কোনও বিল আনলে (অবশ্যই বিধানসভায় পাস হওয়া বিল) রাজ্যপালকে তা গ্রহণ করতেই হবে অথবা তা পুনর্বিবেচনার জন্য বিধানসভাতেই ফেরত পাঠাতে হবে।)
বোস সাহেব কোনটাই না করে বিল চেপে বসে আছেন। তিনি অবশ্য দাবি করেন যে কোনও বিল তাঁর কাছে পড়ে নেই। কিছু বিষয় বোঝেননি তাই ফেরত দিয়েছেন বিধন্সভার সচিবালয়ে। কেউ একজন সত্য বলছেন না।  তিনি কে? রাজ্য সরকার না রাজ্যপাল?


মীমাংসা হবে কোর্টে। দু পক্ষই কোর্টে গেছে। আমরা সত্য জানতে চাই মাত্র। এর মধ্যে অবশ্য কেন্দ্রের যে কোনও সভায় পশ্চিম বঙ্গ ডাক পাবে সবার শেষে। তাতে অবশ্য  বোস সাহেবের কিছু যায়-আসে না। ভুগব আমরা, যারা সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেও বাংলার বামপন্থীদের কথা অল্প হলেও বলতে হয়। তাঁরা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি মূল তথা প্রধান শত্রু কে? মমতা না মোদি? তার ফলে জনসাধআরণ বুঝতে পারছে না, 'কোন পথে যে চলি.... '। অথবা তাঁরা বুঝতে পারছে না সাম্প্রদায়িক সমস্যা বড় হয়ে দেখা দেবে যেদিন সেদিন (খুব দুরে নয়) মানুষ কোন পথে চলবে? নিশ্চয় মোদির পথে নয়। তা হলে বামেদের ছুতমার্গে? এই বাংলার মানুষ তো দেখেছে বামেদের এই সেদিনও যেদিন ভাঙ্গা হল বাবরি মসজিদ। সেদিনও তারা পাশে পেয়েছিল কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁরা তাই তাঁকেই ভরসা করেন আজও।

0 Comments

Post Comment