পুনা, বম্বে ও কলকাতায় ছড়িয়ে পড়া বিউবনিক প্লেগের প্রকোপ রুখতে ঔপনিবেশিক শাসকরা তৈরি করেছিলেন ১৮৯৭ সালের মহামারি আইন, মাত্র কয়েক লাইনের নির্দেশনামা রয়েছে আইনটিতে, প্রবিধান হল মহামারির সময় সরকারি নির্দেশ অমান্য করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে - ২০২০ সালেও করোনা সংক্রমণের শুরুতে প্রাথমিক ভাবে এই আইনটি প্রয়োগ হয়েছিল মার্চের মাঝামাঝি সময়ে, তারপর ২৪ মার্চ থেকে লকডাউন। লকডাউনে ভারতের শ্রমজীবী, কৃষিজীবী মানুষদের কি অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্য পড়তে হয়েছে তা মোটামুটি আলোচিত। দুর্বল সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিপুল সংক্রমণের সামনে ভেঙ্গে পড়বে এই আশঙ্কায় তড়িঘড়ি চার ঘন্টার নোটিশে লকডাউন ঘোষণা করে দিল নরেন্দ্র মোদি - এবং কমিউনিটি সংক্রমণ পিছিয়ে দিতে কিছু অংশে সফল তারা - লকডাউনের এই গোটা সময়টা শ্রমিক কৃষকের যন্ত্রণা মৃত্যুর বিনিময়ে ঘর গুছিয়েছে ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র, প্রথমত করোনা ছড়িয়েছে মুসলিম, এই বার্তা দিয়ে (রাষ্ট্রপতি কোবিন্দরের প্রেস বিবৃতি স্মরণ করা যেতে পারে তবলিগ জামাত নিয়ে, বা লব আগরওয়ালের বক্তব্য); দ্বিতীয়ত এই লকডাউনের সুযোগে কয়লা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা বেসরকারিকরণের ঘোষণা করা, সরকারি চাকরি ও শ্রম আইনগুলিকে তুলে দেওয়ার দেবার ইঙ্গিত (কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এই ঘোষণা করেছেন লকডাউনের ফলে অর্থনীতির বেহাল অবস্থার ত্রাণের প্যাকেজে - মজার ব্যাপার হল নিও লিবারালিজমের অন্যতম গুরু মিল্টন ফ্রিডম্যান বিপর্যয়ের সঙ্কটকালে মানুষ বিপর্যস্ততার সুযোগে 'আনপপুলার' সিদ্ধান্তগুলি চটপট নিয়ে নিতে বলেছেন, যেমন পিনোশের শাসনকালে চিলিতে, ইরাক যুদ্ধের সময় সেদেশে বা হারিকেন ক্যাটারিনার বিদ্ধস্ত সময়ে নিউ অর্লিয়েন্স প্রদেশে, ফ্রিডম্যানের ভাষায় “an opportunity to radically reform the educational system”); তৃতীয়ত 'আত্মনির্ভরতা' নামক ঢপের চপ গিলিয়ে কর্মসংস্থান তৈরির থেকে হাত তুলে নেওয়া (ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভের দীর্ঘদিনের ডেটা থেকে দেখা যাচ্ছে ভারতের আশি শতাংশ শ্রমজীবী মানুষের বেশির ভাগ সেলফ-এমপ্লয়েড ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে, ফলে আত্মনির্ভতার বকুনি ওনার বাকি সব কিছুর মতই অন্তঃসারশূন্য); চতুর্থত দুই মাস বাদে আনলকডাউনের এই পর্যায়ে মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কারদের বাড়ি ফিরে আসার সুযোগ করে তাদের উপরেই এই পর্যায়ের সংক্রমণের দায় চাপিয়ে রাজার পাট সামলানোর বদ উদ্দেশ্য রয়েছে। করোনা ও লকডাউনের পর্যায়ে হিন্দুফ্যাসিস্টরা অতি সুচারু ভাবে নিও-লিবারালিজিম ও মুসলিম বিদ্বেষের নীতি রূপায়িত করল, প্রশ্ন হল ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবী'রা (নির্বাচনপন্থী ও কিছু নির্বাচন বয়কটপন্থী) এই সময়ে কী করলেন?
এককথায় উত্তর হল - ত্রাণ বিলোলেন ও ফেসবুক জুড়ে তার ছবি দিলেন। মানবিকতার দৃষ্টিতে দেখলে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, রাজনৈতিক ভাবে দেখলে? রাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্মণরেখার গন্ডিতে অতি নিরাপদ কাজ। হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন লকডাউনে আর কী করা যেত যেখানে চলাফেরা ও জমায়েতের উপর প্রবল পুলিশি বিধিনিষেধ রয়েছে। পালটা প্রশ্ন করা যায়, সেটাই তো রাষ্ট্রীয় অভিপ্রায় ছিল, পারমিশনের চৌহদ্দির মধ্যে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের ত্রাণ বিলানোতে আটকে রাখা গেলে তার চেয়ে ভালো কী হতে পারে? প্রশ্ন উঠবেই, তাহলে মানুষগুলি না খেয়ে মারা যেত চোখের সামনে? ফের উলটো প্রশ্ন করা যায় বিপ্লবী প্রগতিশীল ও কমিউনিস্টদের ত্রাণে ভারতবর্ষের (বা বাংলার) কত শতাংশ মানুষ প্রাণধারণ করেছেন? এই অংশ থেকে ত্রাণ বিতরণ না হলে লকডাউনে মানুষগুলি মরে যেতেন? মনে হয় না, ভারতবর্ষের মানুষের জিয়ল মাছের প্রাণ। খাবি খেতে খেতে কোনো না কোনো একটা ব্যবস্থা করে ফেলতেন, অন্য কোনো অংশের কাছে সাময়িক ভাবে হাত পাততেন। অন্য অংশ যেমন এন জি ও, কর্পোরেট এজেন্সি, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, রেডক্রশ, অ্যাকশনএইড, মাড়োয়াড়ি ব্যবসায়ী, দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল মায় আর এস এস অবধি যে বিপুল পরিমাণ ত্রাণের আয়োজন করেছে লকডাউনের সময় তার সাথে পাল্লা দেওয়া অসম্ভব। ৪৩-এর মন্বন্তরের সময় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি যে কমিউনিটি কিচেন করে রিলিফের ব্যবস্থা করেছিলেন সেগুলি ছিল প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বীহীন, এবং শুধু ত্রাণ দেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে রাজনৈতিক নীতি আদর্শ লক্ষ্যের প্রচার ছিল - একটা বিপ্লব বার্তা ছিল। আজকের দিনে ত্রাণের রাজনীতির স্থিতাবস্থার হেজিমনির (বাংলা করতে পারলাম না) সমার্থক।
এতে কোনো সন্দেহ নেই বর্তমান বামপন্থী কমিউনিস্টরা বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট একটা রণকৌশল নিয়েই, নতুন যায়গায় গিয়ে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস অর্জন ও সংগঠন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে - পরবর্তী কালে এই যোগাযোগগুলি কাজে আসবে। কিসে কাজে আসবে সেটাও প্রশ্ন, আগামী বিধানসভা ভোটে নাকি পঞ্চায়েত ইলেকশনে নাকি সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে? এই বিপর্যয়কালে দাতা গ্রহীতার সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে কি মানুষের সংগ্রামী চেতনার উন্মেষ হয়? অতিমারীতে বিপন্ন মানুষের এই দুরবস্থায় বা প্রকৃতির সাথে মানুষের দ্বন্দ্বে যে চেতনার বিকাশ হয় তা কি শ্রেণিচেতনা ও শ্রেণিসংঘর্ষের রূপ দেওয়া যায়? হয়ত সুযোগ ছিল, এপ্রিল মাস জুড়ে বাংলায় যে রেশন দুর্নীতির ফলে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছিল তাকে বিক্ষোভের রূপ দেওয়া যেত, কিন্তু সে আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠল হিন্দু ফ্যাসিস্ট বিজেপি, রেশন দুর্নীতি নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় গলা ফাটানো ছাড়া বামপন্থী কমিউনিস্টদের বিশেষ দেখা গেল না। ভারতবর্ষের মানুষ দুর্নীতির সাথে ঘর করেন, এবং সরকারের দুর্নীতি বিরোধীপক্ষের ভোটে কিছু সাহায্য করতে পারে মাত্র, দুর্নীতিকে ইস্যু করে বিপ্লব করা সম্ভব নয় - তবুও রেশন নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই সময় দমবন্ধ করা লকডাউনকে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারতো।
যেহেতু বার বার করে বামপন্থী কমিউনিস্টদের কথা উল্লেখ করছি, সেখানে সিপিএম নিয়ে অবস্থানটা পরিষ্কার করা দরকার। প্রথমত সিপিএম একটি পাক্কা সংশোধনবাদী নিওলিবারাল অর্থনীতির দালাল দল বলে এই লেখকের বিশ্বাস, ফলতঃ বিপ্লবী কমিউনিস্টদের মধ্যে পড়ে না। দ্বিতীয়ত, ভোটের রাজনীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জ সিপিএমের কাছে ' চাই আমাদের গোটা কারখানাটাই কয়লাখনি চাই রাষ্ট্র শাসন' এই বক্তব্য আশা করা দুষ্কর।
এই লকডাউনের গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার উপর পশ্চিমবঙ্গে এলো উমপুন ঘূর্ণিঝড়। বন্যা, দুর্যোগ ঘূর্ণি ঝড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে রিলিফ দেওয়াটা দীর্ঘদিনের বামপন্থীদের (ও অন্যান্যদের) সহজাত অভ্যাস, জনগনকে সেবা করার পাশাপাশি সামাজিক ত্রুটিগুলিকে নিয়ে আওয়াজ তোলারও সুযোগ। লকডাউনের ত্রাণের সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ত্রাণের বহুলাংশে পার্থক্য আছে। অবশ্য লকডাউনের ত্রাণের ভরবেগে উমপুনের ত্রাণও এবার গতি পেয়েছে। সামনের বছর বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলিও উমপুনের ত্রাণ নিয়ে তরজায় জড়িয়েছে। মুখযমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা থেকে জানা যাচ্ছে, পাঁচ লক্ষ ঘূর্ণিঝড় বিদ্ধস্ত মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কুড়ি হাজার টাকা সাহায্য করবেন। এইখানে একটি বিষয়ে খানিক আলোচনা করার আছে, লকডাউন ও তার আগের সময় থেকেই বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী শিক্ষাবিদ সমাজকর্মীরা ক্রমাগত দাবি করেছেন সরকার যেন গরীব মানুষের কাছে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেয়, ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অত্যন্ত জরুরি দাবি কোনো সন্দেহ নেই, এই সময়ে দাঁড়িয়ে। মানুষের হাতে টাকা নেই, কেনা বেচা নেই, অর্থনীতি ডুবে যাবার মুখে। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে, নিও-লিবারাল লগ্নিপুঁজির চক্র থেকে পুঁজিকে উদ্ধার করতে সেই কেইনসীয় জনকল্যাণের রাস্তায় ফিরতেই হবে - যতদিন না চক্রাকার স্ট্যাগনেশন ও ইনফ্লেশনের থেকে মুক্তি পেতে আবার কোনো র্যাডিকাল অর্থনীতির তত্ত্ব আসছে নিও লিবারালিজিমের মত। পুঁজির ব্যবস্থাটিকে রক্ষা করতে পিছনের দিকে হাঁটতে হবে, পপুলিজিমের রাস্তা নিতে হবে। গরিব মানুষের হাতে টাকা দেবার দাবিটি একটি উদারতাবাদী অর্থনৈতিক দাবি, তা মেনে নেবার পক্ষে বেশ কিছু বুর্জোয়া পপুলিস্ট দল রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বিষয়টি খুব ভালো করেই বোঝেন, তাই সরাসরি টাকা হস্তান্তর করে একসাথে ভোট ও আনুগত্য ফিরিয়ে আনার বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন। এখানেই প্রশ্নটি হল, এই সরকারি অনুদানের বিপুল আকারের সামনে, সামগ্রিক 'প্রেসার ভাল্ভ' রাজনীতির সামনে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের একই ত্রাণ-সেবার রাজনীতিতে হাঁটা রাস্তায় কতটা সফল হবে? কতটুকু মানুষের মনে দাগ কাটবে? গুরুবাদী এই দেশের মানুষের দাতার প্রতি কতখানি ভক্তিভাব জাগিয়ে তুলবে আর কতখানি বিপ্লবীচেতনা? এবং এই ফ্যাসিবাদী সময়ের প্রেক্ষিতে কতদিন এই টুটাফুটা সংসদীয় গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার, মেকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাবেন বিপ্লবী কমিউনিস্টরা? বিপ্লব (মানে কমিউনিস্ট বিপ্লব, ক্ষমতাদখল, সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি) বিষয়ে আহ্বান রাখবেন?
অতিমারি আইন ও লকডাউন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যেখানে সমস্ত বিপ্লবকামী শক্তিকে বাধ্য করা হয়েছে ঘরে ঢুকে যেতে, এবং এক ও একমাত্র সুযোগ দেওয়া হয়েছে ত্রাণ বিতরণের - এবং তারা সেটাই করে গেছেন। যেহেতু আশেপাশের বেশির ভাগ বিপ্লবী সংগঠনের কর্মীরা এক ধরনের ওভারগ্রাউন্ড, নিয়মতান্ত্রিক ও নিরাপত্তার জীবনে অভ্যস্ত, তাদের কাছে লকডাউনের যুক্তি (যেটি রাষ্ট্রীয় দমনের যুক্তিও বটে) মেনে ত্রাণে যুক্ত হওয়ার বাধ্যতা ছিল, অ্যাক্টিভিস্টদের অ্যাক্টিভ থাকার একমাত্র উপায় ছিল ত্রাণ। রাষ্ট্রের এই কমপালসিভ ন্যারেটিভ কি ভাঙ্গা যেত না? তার জন্য অবশ্য বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিগুলির 'পিছনপানে' হাঁটতে হতো, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি ও সংগঠনের দিকে - যে ব্যবস্থায় লকডাউন হোক বা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, বিপ্লবীদের স্বাধীন চলাফেরা ক্ষুণ্ণ হয় না। যেমন কিছু উদাহরণ দেওয়া যায় মাওবাদীদের ক্ষেত্রে, লকডাউনে ও অতিমারি আইন বলবৎ হলেও তাদের কার্যকলাপ বন্ধ হয়নি, তাদের রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া নির্দেশনামা মানার দায় নেই। মাওবাদী রাজনীতির পক্ষে বা বিপক্ষে এই আলোচনা নয়, কিন্তু এই রাষ্ট্রের যুক্তির আখ্যানের বাইরেই তাদের অবস্থান সেটাই এখানে উল্লেখ করা। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি -লকডাউনের শুরুতে শোনা গেল নিরাপত্তা বাহিনী এই অভূতপূর্ব মানবিক সঙ্কটকালে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার কথা ভাবছে (১) ৭ এপ্রিল মাওবাদীদের মালকানগিরি-কোরাপুট-বিশাখা বর্ডার ডিভিশন কমিটির সেক্রেটারি কালিয়াসাম যুদ্ধ বিরোধী ঘোষণা করলেন (২) এর মধ্যেই খবরে খুঁজে পেলাম ৩ এপ্রিল পূর্ব সিংভূমে তিন জন মাওবাদী এনকাউন্টারে নিহত (৩) ৫ এপ্রিল ছত্তীসগঢ় ডিজিপি বলছে অপারেশন শুরু করতে বাহিনীকে রি-ক্যালিব্রেট করা হবে (৪) ৮ এপ্রিল ঝাড়খণ্ডে অ্যান্টি মাওয়িস্ট অপারেশন চালিয়ে যাবার কথা হয়েছে (৫) ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জন-বুদ্ধিজীবী প্রফেসর আনন্দ তেলতুম্বেকে মাওবাদী যোগসাজশে গ্রেপ্তার করা হল ১৪ এপ্রিল (এটা সবাই জানেন, তাই খবরের সোর্স দেওয়া হচ্ছে না), ১৬ই এপ্রিল ছত্তীসশগঢ়ে এক মাওবাদী ক্যাডার শহিদ হলেন (৬) ১৭ এপ্রিল বিজাপুরে পুলিশের অপারেশনের সময় এক গ্রামবাসী নিহত (৭) ২৩ এপ্রিল ওড়িশার বোলাঙ্গিরে মারামারি করেছে মাওবাদী ও আধা সামরিক বাহিনী (৮) ছত্তীসগঢ়ে কাঁকেরে সাত জনকে মাওবাদীদের শহরের নেটওয়ার্ক চালানোর অভিযোগে ২৫ এপ্রিল অ্যারেস্ট করা হয়েছে (৯) ভারতের কিউবা পি বিজয়নের কেরলে, কোঝিকোড়ে শুভ মে দিবসে দুই জনকে ধরেছে এনআইএ (১০) দোসরা মে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি থেকে মাওবাদীদের 'প্রপার্টি ম্যানেজার'কে অ্যারেস্ট করা হয়েছে (১১) মে মাসের তিন তারিখ মাওবাদী মহিলা নেত্রী যার মাথার দাম ছিল ১৬ লক্ষ টাকা তাকে হত্যা করেছে মহারাষ্ট্রের হিন্দু ফ্যাসিবাদ বিরোধী সরকারের পুলিশ (১২) এরপরেও আরো রাষ্ট্রীয় হত্যা হয়েছে, সেগুলি নথিবদ্ধ করে ভারাক্রান্ত করার মানে হয় না, কিন্তু মোদ্দা বিষয়টা হল, মাওবাদীদের নিজস্ব রাষ্ট্রবিরোধী লড়াই রাষ্ট্রের চাপানো লকডাউন পরোয়া না করেই চলেছে। অন্য দু একটি গেরিলা সংগ্রামরত নকশালপন্থী দল, উত্তর পূর্ব ভারতের জাতিসত্তার লড়াই চালানো সংগঠনগুলি এবং কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী সংগ্রামের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। এই সব বিপ্লবীদের এইসময় ত্রাণের রাজনীতিতে আত্মসমর্পণ করতে হয়নি - লকডাউনের কালে সোস্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হতেও হয়নি। আমাদের আশেপাশে দেখা বেশির ভাগ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি -গ্রুপগুলির কর্মী বাহিনী ও নেতৃত্ব বড়োই বেশি দৃশ্যমান ফেসবুক, টুইটার ও জনসভায়। ফ্যাসিবাদী সময়ে কবে আমরা আমাদের বিপ্লবী নেতৃত্বকে ফেসবুক, টুইটার (যেগুলি ট্র্যাক করা যায় সহজে), ধর্মতলার মোড় থেকে উধাও হয়ে জনগণের দঙ্গলে ক্যামোফ্লেজে দেখতে পাবো?
বহু মানবতাবাদী ও প্রগতিশীল মানুষ লকডাউনের ধারাবাহিকতায় কমিউনিটি কিচেন ও রিলিফের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন এখনো, তাদের উদ্যোগকে আক্রমণ করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়, তাদের কাজটি অত্যন্ত জরুরি। মূল বাহাসটি হল বিপ্লবী কমিউনিস্টদের সাথে - এই গুরুতর সময়ে ত্রাণের রাজনীতি নিয়ে আশঙ্কা, বিপ্লবী শিবিরের ত্রাণ দেওয়া ও ছবি তোলানোর দিকে ঝোঁক নিয়ে - ত্রাণের ছবি দেখিয়ে রাজনীতি করাটা বিপ্লবী অনুশীলনে পড়ে না বলেই জানতাম - যেখানে অন্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া প্রায় বন্ধ। শাসক দল অনেক সময় ত্রাণে বাধা দিচ্ছে (যা নিয়ে এনজিওরাও চেঁচামেচি করে) - এই ছাড়া কোনো রাজনৈতিক মোকাবিলার সামনে কাউকে পড়তে হয়নি। ত্রাণের রাজনীতি ক্ষোভবিক্ষোভ তাপউত্তাপকে নর্মালাইজেশনে, ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাকে ঠেকনা দিতেই সাহায্য করে। এই চক্কর থেকে কোন দিকে মোড় ঘোরানো যায় সেটা ভেবে দেখার আবেদন জানিয়ে এই লেখা।
১) https://www.daijiworld.com/news/newsDisplay.aspx?newsID=688980
২)https://timesofindia.indiatimes.com/india/maoists-call-for-truce-in-the-time-of-corona/articleshow/75016152.cms
৩) https://telanganatoday.com/three-maoists-encountered-in-jharkhand
৫)https://timesofindia.indiatimes.com/city/ranchi/anti-naxal-ops-to-continue-in-state-police/articleshow/75035635.cms
৬)https://www.newindianexpress.com/nation/2020/apr/16/maoist-killed-in-exchange-of-fire-with-security-forces-at-chhattisgarhs-dantewada-2131125.html
৭) https://www.siasat.com/villager-killed-crossfire-between-security-forces-naxals-1875244/
৮) https://kalingatv.com/state/sog-maoists-exchange-fire-in-odishas-balangir/
১০)https://english.mathrubhumi.com/news/kerala/maoists-presence-suspected-nia-raid-in-kozhikode-two-in-custody-1.4730037
১২) https://www.daijiworld.com/news/newsDisplay.aspx?newsID=703776