পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

সিলেবাস বদলালেও ইতিহাস বদলানো যায়না

  • 12 April, 2023
  • 1 Comment(s)
  • 1285 view(s)
  • লিখেছেন : অভিষেক রায়
ইতিহাস নির্মাণের ভার এখন এমন এক দল ও সরকারের কাছে যাদের ইতিহাস নির্মাণের পুরোটাই ‘মিথ’কে কেন্দ্র করে। হিন্দুত্বের পুরো তত্ত্বটাই দাঁড়িয়ে ‘মিথ’ র উপর। ইতিহাসে ‘মিথ’ এর কোন মূল্য নেই। বর্তমানে হিন্দুদের মহিমা গাওয়ার জন্যে এরা অতীতকে একটি যন্ত্রের মতো ব্যবহার করে। তাই এমন কিছু তথ্য এবং বৃত্তান্ত যা এই তৈরি করা অতীত এবং তাদের নির্মিত হিন্দু ভাবমূর্তিকে বিক্ষুব্ধ করবে তা বাদ দিয়ে ফেলা হবে। এই সদ্য সিলেবাস বদল তার একটি টাটকা নমুনা।

কিছুদিন আগেই  ‘সহমন’ এ ‘এক উদীয়মান গৈরিক ভারত’ নামে একটি লেখা লিখেছিলাম।  ওই বিষয়ে এত তাড়াতাড়ি আরেকটি লেখা লিখতে হবে ভাবিনি। আসলে এখন অনেক কিছু ভাবনা চিন্তার বশে আর থাকছেনা। গত ৫ এপ্রিল ‘ন্যাশনল কাউন্সিল অব এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’ (এন. সি. ই. আর. টি.) ঘোষণা করেছে যে তারা স্কুল পাঠক্রমের ইতিহাসের বইতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। আসলে পরিবর্তনের বদলে বলা ভালো ইতিহাসের বিশেষ কিছু অধ্যায় ছেঁটে বাদ দিয়েছে। পালটানো হয়েছে অন্যান্য বিষয় গুলির সিলেবাস ও। কিন্তু ইতিহাসের বই থেকে মুঘল ইতিহাস ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক অধ্যায় বাদ পড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই আলোচনায় যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক, কী কী বাদ দেওয়া হয়েছে। ‘ Themes in Indian history (ভারতীয় ইতিহাসের প্রসঙ্গ) বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ‘King and Chroniclesঃ 16th and 17th century (রাজা ও ঘটনাপঞ্জী ঃ  ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দী)। একাদশ ক্লাসের সিলেবাস থেকে বাদ গেছে ‘ Central Islamic Lands’ (কেন্দ্রীয় ইসলামীয় ভূমি), ‘Confrontation of cultures’ (বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আদান- প্রদান)। দ্বাদশ ক্লাসের সিভিক্স বই থেকে বাদ গেছে ‘Politics in India since Independence’ ( স্বাধীনোত্তর ভারতে রাজনীতি), ‘Rise of Popular movements’ (জনপ্রিয় আন্দোলনের জাগরণ), ‘Era of One Party dominance’ (একটি দলের আধিপত্যের যুগ)। দশম ক্লাসে ‘Democratic Politics’ ( গণতান্ত্রিক রাজনীতি) র ২য় অধ্যায়ে ‘Democracy and Diversity’ (গণতন্ত্র ও বৈচিত্র্য), ‘Popular struggles and movement’ (জনপ্রিয় সংগ্রাম ও আন্দোলন) এবং ‘Challenges to democracy’ (গণতন্ত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা)। বাদের তালিকা দীর্ঘ। তাই এই অবধি এসে মনে হতে পারে, আরো কত কিছুই বাদ গেছে! বাদ গেছে দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পরে আর. এস. এস. নিষিদ্ধ হওয়ার খবর।

 এ বিষয়ে এন. সি. ই. আর. টি. র যুক্তি কি? একটা অদ্ভুত যুক্তি তারা দিয়েছে, যে তারা সিলেবাস বাস্তাবায়িত করেছে। ইংরেজিতে যে কথাটা ব্যবহার করেছে তা হল ‘Rationalise’। অপর যুক্তিটি হল, কোভিডের পরে পড়ুয়াদের পড়ার চাপ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতি আপাতভাবে অতিক্রান্ত। তাদের দাবী ‘অহেতুক বোঝা’ (Unnecessary burden)র চাপ কমাতে তারা এই ‘পরিবর্তন’ এনেছে। প্রকৃত অর্থেই তাদের কাছে যে বিষয়গুলি ‘বোঝা’ স্বরূপ, যেমন ‘মুঘল সাম্রাজ্য’, ‘গণতন্ত্র ও বৈচিত্র্য’ এবং গান্ধী হত্যায় আর. এস. এস. র ভূমিকা ছেঁটে ফেলে দিয়েছে।

‘Rationalisation’ র যুক্তিটা অবশ্য হাস্যকর। কারণ ‘Rationalise’ তখনই হতে পারে যখন পুরো বিষয়টায় একটা অন্তর্ভুক্তিকরণ (Inclusiveness) থাকে, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে নির্বাচন নয়। 

এর আগের প্রবন্ধেই উল্লেখ করেছিলাম, শিক্ষাক্ষেত্র রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের কাছে সূচনা কাল থেকেই খুব আগ্রহের একটি পরিসর। কারণ সেখানে নরম মাটি পাওয়া যায়। হিন্দু রাষ্ট্রের নির্মাণের আঁতুড় ঘর ওটি। মোটামুটি ভাবে ক্ষমতায় আসার আগে নিজেদের লিফলেটে তারা যেসব কথা বলে বেড়াত, এখন পাঠ্যপুস্তকে সেসব অন্তর্ভুক্ত করার সুবর্ণ সুযোগ তারা পেল। ক্ষমতায় আসার পরে চারটে স্তম্ভকে তারা সন্তর্পণে ধ্বংস করেছে এবং করছে। এবার ইতিহাসের ওপর একদম সমূলে আঘাত। এই ইতিহাস না তৈরি করলে তাদের কাঠামোটা ঠিক দাঁড়াবে না। তাই এই আঘাত স্কুল শিক্ষাতেও। স্কুলে ইতিহাস ডিসিপ্লিন নয়। একটি বিষয় মাত্র। সেই জন্যে স্কুলের পাঠ্য বইতে নির্বাচন অতি স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্তটা হল, যে নির্বাচিত ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে রাখতে হবে সেই নির্বাচন ন্যায়সঙ্গত কিনা। সম্প্রতি প্রশ্ন এসেছে, পরিবর্তন কি এর পূর্বে ঘটেনি? অবশ্যই হয়েছে কিন্তু নেহেরুর জন্যে আকবরকে জায়গা ছাড়তে হয়নি। বরং আকবর এবং নেহেরু পর্যন্ত ভারতীয় ইতিহাসের ধারাবাহিক বিবর্ততটা স্পষ্ট হয়েছে। একটা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস বুঝতে এই নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতার খুব প্রয়োজন। স্কুলে ইতিহাস পড়ানো হয় অতীত সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে এবং খোলা মনে ইতিহাসকে জানতে। ইতিহাস সেখানে রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারেনা। যে মুঘল সাম্রাজ্য বাদ দেওয়া হয়েছে, সেই সাড়ে তিনশো বছরের মুঘল শাসন থেকে ঔপনিবেশিক সময়ে উপনীত হওয়া পর্যন্ত কৃষি, মুদ্রা, শুল্ক এবং আরো সূক্ষ্য ভাবে বলতে গেলে, পোশাক, ভাষা, খাদ্য, সামাজিক ব্যবস্থায় যে বিবর্তন এসেছিল সেই ইতিহাস অতি দৃষ্টতার সাথে ত্যাগ করা হল। মূলে ক্ষতি হল সামগ্রিক ভারতীয় ইতিহাসের। এবং পরুয়াদের।  বাদ দেওয়া হয়েছে একটি অধ্যায় , ‘মুঘল দরবারঃ কালানুক্রমের মাধ্যমে ইতিহাসের পুনর্গঠন’ (Mughal Court: Reconstructing Histories through Chronicles)। এই অধ্যায়ে পড়ুয়ারা জানতে পারে ইতিহাস রচনার প্রণালী। কীভাবে দলিল ও নথির মাধ্যমে ইতিহাস লেখা হয়। বিশেষ করে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা অর্থাৎ হিউম্যানিটিজের শিক্ষার্থীরা, যারা তার কিয়ৎকালের মধ্যেই ইতিহাসকে বিষয় করে উচ্চ শিক্ষায় যাবে তাদের কাছে এটি ভীষণ জরুরী এবং কৌতূহলের।  

কিন্তু ইতিহাস নির্মাণের ভার এখন এমন এক দল ও সরকারের কাছে যাদের ইতিহাস নির্মাণের পুরোটাই ‘মিথ’কে কেন্দ্র করে। হিন্দুত্বের পুরো তত্ত্বটাই দাঁড়িয়ে ‘মিথ’ র উপর। ইতিহাসে ‘মিথ’ এর কোন মূল্য নেই। বর্তমানে হিন্দুদের মহিমা গাওয়ার জন্যে এরা অতীতকে একটি যন্ত্রের মতো ব্যবহার করে। তাই এমন কিছু তথ্য এবং বৃত্তান্ত যা এই তৈরি করা অতীত এবং তাদের নির্মিত হিন্দু ভাবমূর্তিকে বিক্ষুব্ধ করবে তা বাদ দিয়ে ফেলা হবে। এই সদ্য সিলেবাস বদল তার একটি টাটকা নমুনা। প্রাচীন ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে গরু পূজিত হলেও, অতিথি সৎকারের জন্যে গোমাংস রন্ধন স্বীকৃত ছিল। কিন্তু এতে সনাতনীদের গোভক্তিকে আঘাত করতে পারে তাই ওই অংশটি বাদ দেওয়া হয়েছে। হরপ্পার সিন্ধু সভ্যতাকে বৈদিক সভ্যতার ধারাবাহিক অংশ বলে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। প্রমাণ বলাটা ভুল। হিন্দুত্বের ইতিহাস প্রমাণের ধার ধারে না। সেটা সম্ভব ও নয়। বলা ভালো তত্ত্ব চাপিয়ে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে। এর চূড়ান্ত প্রচেষ্টা হল, রামজন্মভূমি আন্দোলন। একটা ইতিহাস প্রেক্ষিত অতীতের দাবী তোলা, যেখানে রামের অস্তিত্ব শুধু রয়েছেই নয়, সেটা প্রতিষ্ঠিত করতে তার জন্মভূমিতে একটি মন্দির নির্মাণের যৌক্তিকতাকে সত্যতা দেওয়া। সঙ্ঘ গুরু গোলয়ালকরের দাবী ছিল ভগবৎ গীতার রচনাকাল বুদ্ধের ১৫০০- ২০০০ বৎসর পূর্বে। কিন্তু মুশকিল হল, গীতা যে সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রতিনিধিত্ব করে, তা কয়েক শো বছরের বিবর্তনের ফল। সেই বিবর্তনের ইতিহাস কোথায়? ইতিহাসের যে একটা গতি ও ধারাবাহিকতা আছে, সেটা সঙ্ঘের ইতিহাসে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এখানে ইতিহাসের উৎস নেই। আছে শুধু ভাবালুতা ও অনুভূতি। এবং ইসলাম বিদ্বেষ।  ইতিহাস এখানে রূপক আখ্যান তাই পুরাণে বর্ণিত যে ভারতের গৌরবান্বিত চিত্র পাওয়া যায়, সেটাই প্রধান ও একমাত্র উপজীব্য। নব্বই উত্তীর্ণ প্রবাদপ্রতিম ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার মনে করেন ইতিহাস হল অতীতকে বোঝা। ইতিহাস ঠিক সত্যানুসন্ধান ও নয়। এবং সেই অতীতকে বুঝতে হয়, ঐতিহাসিক নিদর্শন যা স্থাপত্য, মুদ্রা, ধ্বংসাবশেষ, পুঁথি, প্রাচীন গ্রন্থতে রয়েছে। সাথে অবশ্যই ইতিহাসবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ। এবং সেই জন্যে একটি অধ্যায়ের ইতিহাসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হিন্দুত্বের ইতিহাস যেন এই বহু পরিশ্রমের ইতিহাসকে পরিহাস করে। এছাড়া ইতিহাস একটি স্তৈতিক (static) ডিসিপ্লিন নয়। এটি ঠিক তার বিপরীত অর্থাৎ বিকাশধর্মী। সেটা কিভাবে? একটু আগেই উল্লেখ করেছি, ইতিহাস লেখা হয় তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং ইতিহাসবিদেরা সেটা বিশ্লেষণ করেন নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। এই বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একটি ইতিহাস উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পাঠকের কাছে। নইলে ইতিহাস হয়ে পড়ত শুধুই ধারাবিবরণী। পঞ্চাশের দশক থেকে যে ভারতীয় ইতিহাস- রচনার (Indian historigraphy)  মোড় এসেছিল, তারপর থেকে ইতিহাসকে ফিরে দেখার এক বড় পরিবর্তন এসেছিল। এই আধুনিক ইতিহাস রচনার ধারাকে নস্যাৎ করে দেয় হিন্দুত্বের ইতিহাস। পুরাণ যেখানে ঐতিহাসিক ভাবে সাহিত্য যাকে ক্লাসিক আখ্যা দেওয়া হয়, সেখানে পুরাণ হিন্দুত্ববাদীদের কাছে হল প্রধান ভিত্তি বা বলা ভালো একমাত্র উৎস। পুরাণকে কেন্দ্র করে থাকে গভীর লোকবিশ্বাস এবং ধর্মবিশ্বাস। বিপদটা সেখানেই। এই ধর্ম বিশ্বাসকে তারা পূর্ণরূপে কাজে লাগায়। আর এখান থেকেই নির্মিত হয় একটি জাতীয় হিন্দু অস্মিতা। তখন ইতিহাসের কোন মর্যাদা থাকেনা। এখানে গোটাটাই একটা সম্প্রদায়কে কেন্দ্র একটি পলিটিক্যাল প্রোগ্র্যাম। হিন্দুত্বের ইতিহাসের মূল ন্যারেটিভ দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ১. প্রাচীন ভারতের গৌরব ২. মধ্যযুগে অর্থাৎ ইসলামীয় শাসনের সময়ে হিন্দুদের ওপর শাসন ও অত্যাচার। একদম সরাসরি উগড়ে দেওয়া মুসলমান বিদ্বেষ। এই তত্ত্ব থেকে তারা সিদ্ধান্ত টানে যে বিশেষ করে মুসলমান এবং খৃষ্টান, যারা অতীতের অত্যাচারী শাসকদের উত্তরসূরি, মূলত বহিরাগত আক্রমণকারী এবং সাথে বামপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষবাদী, এবং হিন্দুত্ব বিরোধী যারা হিন্দুত্বের তত্ত্বকে অস্বীকার করে তারা কখনোই এই ভারতীয় ভূখণ্ডে সম মর্যাদার সাথে থাকতে পারার অধিকার রাখেনা। সঙ্ঘ গুরু গোলয়ালকরের কথানুযায়ী ভারতের একমাত্র স্বাভাবিক রূপে নাগরিকত্বের দাবীদার হল বর্ণ হিন্দু গোষ্ঠী এবং এই তত্ত্ব তাদের কাছে প্রশ্নাতীত। ইংরেজিতে প্রথম ভারতীয় ইতিহাস, আসলে ব্রিটিশ ভারতীয় ইতিহাস লিখেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চপদস্থ আমলা জেমস মিল। বইয়ের নাম ও ‘হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’। সেই বইয়ে পরিষ্কার করে দেখানো হয়েছিল ভারতীয় ইতিহাস দুই ভাগে বিভক্ত। হিন্দু ইতিহাস ও ইসলামীয় ইতিহাস। ঔপনিবেশিক শক্তি কোনোদিন ভারতকে ‘নেশন’ এর মর্যাদা দেয়নি এবং নিজেদের তৈরি করা এই সুচতুর বিভাজিত ইতিহাসের তত্ত্ব তারা পূর্ণ ভাবে কাজে লাগিয়েছিল যার পরিণতি দেশভাগ। ভারতীয় ইতিহাসবিদেরা বিগত সাত দশকে ভারতীয় ইতিহাসকে ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে,  জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের দ্বারা স্বাধীন হওয়া যে দেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ ইতিহাসকে মান্যতা দিয়েছে তা এই এতকাল বাদে হিন্দুত্বের ইতিহাস চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। আসলে হিন্দুত্ববাদীরা ওই ঔপনিবেশিক ছকটিকেই কাজে লাগিয়েছে। এখানেও হিন্দু, মুসলমানের বিভাজিত ইতিহাস। হিন্দু ধর্মের একটি একপেশে ইতিহাস এদের দ্বারা উঠে এসেছে যেটা ভারতীয় ধর্মীয় ইতিহাসের সর্বব্যাপী রূপটিকে পরাহত করে। শ্রী চৈতন্য, গুরুনানক, রামমোহন রায়, দয়ানন্দ সরস্বতী, বিবেকানন্দ যারা ধর্মের গোঁড়ামোকে প্রতিবাদ করে বেরিয়ে এসেছেন এবং অবশ্যই লোকায়ত ধর্মের কবীর, লালন ফকির এবং ভক্তি আন্দোলনের অসংখ্য সাধক, সাধিকারা নির্মম ভাবে বাদ পড়ে গেছে। 

 

বর্তমান পরিস্থিতিতে এই উদ্ভট দাবীর কারণ অনুমান করলে বোঝা যাবে রাজনীতি- শিক্ষা এবং ইতিহাসকে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে খেলিয়ে দিচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা। এখানে রাজনীতি হল একটি পেশীর শক্তির জয়, যেখানে শিক্ষাকে জবরদস্তিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতের নাগরিকদের ওই বিশ্বাসের ঊপর নির্ভর করা যুক্তিহীন, অর্ধ সত্য, মিথ্যার একটি উপাদান রূপে তৈরি করা যায়।

তারা বঞ্চিত হল স্বভূমির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানার অধিকার থেকে।   

1 Comments

Barnali Mukherjee

13 April, 2023

দরকারি লেখা। ধন্যবাদ।

Post Comment