জ্যাটা ছেলে সকলের চক্ষুশূল, আবার মোসলমান হলে কতা নেই। সেকালে যে ছোঁড়া হিঁদু কালেজে ইংরেজি শিক্ষে পেয়ে জেতের মাতা খেয়ে মুর্গী মটন ভক্ষণ কত্ত, বিধবা-বিবাহের সুখ্যেত কত্ত তাকে লোকে জ্যাটা ছেলে বলত। একালে কিচু অন্যধারা। যে ইউনিভার্সিটির শিক্ষে পেয়ে ‘সবই ব্যাদে আছে’ বলে না, প্রধান সেবকের নিন্দে করে, গরীব ছোটলোক প্রভৃতির বেঁচে বর্ত্তে থাকার অধিকার আচে বলে, রামরাজ্যে মতি নেই কাম কাজের খোঁজ করে, গবর্নমেন্ট তাকেই জ্যাটা বলেন। দেশসুদ্ধ সুবোধ বালকে ভরে গ্যালো। তাই গবর্নমেন্ট যাদের জ্যাটা ছেলে বলেন সকলেই তাকে জ্যাটা বলে। বাবুরো সেকানেই থেমে যাবার বান্দা নন। অ্যান্টিন্যাশনাল, আর্বান নকশাল, টেররিস্ট --- এম্নি শ দুই খাসা গালি বার করেচেন।
জ্যাটার মদ্যে প্রলয় জ্যাটারা জে এন ইউ তে শিক্ষে পায়। তাদের উপর সরকার বাহাদুরের বিশেষ নজর আচে। আর তাদের সর্দার হল উমর খালিদ। অতেব তাকে ঘরে থাকতে দেয়া হয় না। দেশভক্ত বাবুরো কেবল প্যাচাল পেড়ে ক্ষান্ত। কিন্তু প্রধান সেবক বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ধরায় এসেচিলেন। তিনি কর্মবীর, কাজ ফেলে রাকেন না। উমরকে প্যায়দা পাঠিয়ে গেরেফতার করা হয়েচে। প্যায়দাদের এম্নি পাকা পোক্ত কাজ যে এগার লাখ পাতার প্রুব যোগাড় করেচেন। হুতোম জন্মে ইস্তক জ্যাটা। তাই পাতা বলতে টানবার জিনিস স্মরণ হল। কয়েক গ্রাম পাতার জন্যে এক মা জননী আর তেনার চৌদ্দ পুরুষকে কতার মারে আধ মরা করা হচ্চে, এদিকে প্যায়দাদের কাচে লক্ষ লক্ষ পাতা।
সম্পাদক শুনে কেঁপে উঠে বল্লে ‘কী হচ্ছে কি! আমাকে বলেছেন ভাল কথা, আর কাউকে বলবেন না যেন। আপনি তো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবেন, আপনাকে লিখতে দিই বলে আমাকেই দেবে হাজতে পুরে। এ আইনে একবার ঢুকলে আর জামিন টামিনের ব্যাপার নেই।’ সম্পাদককে খোঁচা দেয়ার এম্নি সুযোগ ছাড়তে পাল্লেম না। এই তোমাদের স্বাধীন দেশ, আর এই তোমাদের ডেমোক্রেসি? আবার সম্পাদকেরা শুনতে পাই ডেমোক্রেসির চার নম্বর থাম। সে থামে কেবল বালি? মোটে সিমেন্ট দেয়া হয়নি? সম্পাদক বল্লে ‘সে হিসেব দেয়া যাবে না।’ অর্থাৎ কিনা চার নম্বর থামটি পি এম কেয়ারস তবিলের মতন। অডিট করা হয় না। তবে সম্পাদককে হুজুকে বলে গাল দেয়া চলে না। হিঁদুর হৃদয় সম্রাটের প্যায়দারা সীতারামকেও দাঙ্গাবাজ দেগে দিতে ছাড়চেন না, সম্পাদক ভির্মি খাবে না এ বা কি কথা?
হুতোম তার দুখখু বুজেচেন দেকে সম্পাদক বল্লে ‘কয়েক হাজার লোককে অ্যারেস্ট করেছে কদিনের ভেতর জানেন?’ তাতে সম্পাদকের ভাবনার কারণ বোজা হল না। সরকারী প্যায়দা ভগবানের মতন, যা করে মঙ্গলের জন্যে। সম্পাদকেরা সকলেই তো এদানি তেম্নি বলচেন। কয়েক হাজারকে তবু ওয়ারেন্ট দিয়ে এরেস্ট করা হয়েচে, যোগীর রাজ্যে তো নূতন কানুন হচ্চে সেসবও লাগবে না। সবই রামের ইচ্ছে। বেবাক ঘরে ঢুকে ছেলে বুড়ো বুড়ি ছুঁড়ি যে প্যায়দার যেম্নি রুচি ধরে নিয়ে গেলেই চলবে। খাতা, কলম, এগার লাখ পাতার হ্যাপা নেই।
তবে বুদ্ধিতে গৃহীতে যোগীকে টেক্কা দিলেন দেকে ভক্তকুলের ‘হায় হাসন হায় হোসেন’ করে বুক চাপড়ে বিলাপ করা কর্তব্য হয়। যোগী সবে হিসেব পত্তর তুলে দেয়ার আইন কচ্ছেন, দিল্লীর গবর্নমেন্ট কবেই সব বন্দ করে বসে আচেন। প্রধান সেবকের বেমক্কা লকডাউনে কত লোক পড়ি কি মরি ঘরে ফিরতে গিয়ে হেদিয়ে মরেচে গবর্নমেন্ট হিসেব রাকেননি। তবে কিনা পিপীলিকা যা, মজুরেও তা। অতেব সে হিসেব না থাকলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হচ্চে? বাবু বিবি ব্যথা পেয়েচেন কত ডাক্তার, নার্স কোরোনার সাথে লড়তে গিয়ে মলেন সে হিসেব নেই শুনে।
বাবুদের বিলাপ একন শুনবে কে? গবর্নমেন্ট কান দুটি দেবীপক্ষ শুরু হবার আগেই বিসর্জন দিয়েচেন। বিলাপ, কোশ্চেন কোনটাই শুনতে চান না। কালা গবর্নমেন্টের জ্যাটা ছেলেমেয়ে ভিন্ন ঔষধ নেই, এদিকে তারা হয় হাজতবাস করচে, নয় হাজতে যাবার দিন গুনচে।