সাইবাবা মরেছেন। আমাদের রাষ্ট্র ও বিচারব্যবস্থার জিঘাংসার ফলস্বরূপ সাইবাবা মরেছেন। নব্বই শতাংশ পঙ্গু, একার ক্ষমতায় হাঁটতে চলতে না পারা দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের অধ্যাপক সাইবাবা। জেলের সলিটারি কনফাইনমেন্টে বিছানা, শৌচালয়ও গরাদের মেঝেতে নয় বছর হেঁচড়ে হেঁচড়ে কাটানো পর মুক্তি পেয়েছিলেন গত মার্চ মাসে। জেল জীবনে সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে এসেছিল, হৃদপিন্ড পঞ্চান্ন শতাংশ কাজ করেছিল। অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশন করাতে গিয়ে হায়দ্রাবাদে মৃত্যু হয়েছে সাইবাবার। আর আমাদের প্রজাতন্ত্র প্রথমে সুনিশ্চিত করে, এবং পরবর্তীতে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করল গোটা মৃত্যু প্রক্রিয়াটি।
সাইবাবার মৃত্যুকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা’ বলেছেন অনেকে, তবে লেখকের মতে একে ‘মতাদর্শগত হত্যা’ বলাটাই সমীচিন হবে। সাইবাবার একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শগত অবস্থান ছিল, যা শুধুমাত্র আদিবাসী উচ্ছেদ বা জল-জঙ্গল-জমি বাঁচানোর আন্দোলনে সীমাবদ্ধ ছিল না। সাই নিশ্চিন্ত ভাবেই ব্যবস্থা বদলের লড়াইয়ের স্বপ্নসন্ধানী ছিলেন যে স্বপ্নের লালনপালন আমি আপনি অনেকেই করি। সাই শারীরিক সমস্যাকে অতিক্রম করে মতাদর্শের প্রচার ও প্রয়োগ করেছেন সারাজীবন, জেল ও জেলের বাইরে, মতাদর্শের জোরেই।
আমাদের সংবিধানে নাগরিকদের ‘মতপ্রকাশ ও বলার স্বাধীনতা’র অধিকার দেওয়া হয়েছে, অনেকগুলি ‘যদি এবং কিন্তু’ সহযোগে। যে মার্ক্সবাদী শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় তার কাছে ‘মতপ্রকাশ ও বলার স্বাধীনতা’র সাংবিধানিক রক্ষাকবচটি ঢলঢলে, কারণ ১৯(এ)(১) সাবক্লসটি সেই সব মতপকাশের বিরুদ্ধে যা against decency or morality or undermines the security of, or tends to overthrow, the State। রাষ্ট্রেরডিসেন্সি ও মরালিটি এর ধারণা পুত, পবিত্র এবং অলঙ্ঘনীয়। বিদ্যমান রাষ্ট্রের নৈতিক অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্নহীন থাকাটাই নাগরিক হবার শর্ত। নাগরিকের মতপ্রকাশের সমস্ত অধিকার রয়েছে, কিন্তু তা রাষ্ট্রের টেনে দেওয়া চৌহিদ্দের মধ্যে। সংবিধান স্বীকৃত এই ‘মতপ্রকাশের অধিকার’ খন্ডিত এবং নড়বড়ে দার্শনিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। দার্শনিক তর্কের প্রয়োজনে কেউ যদি পূর্বতন বৈষম্যের ওপরে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রের চুড়ান্ত সমালোচনা করেন, সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব বাতিল করে সরাসরি নাগরিকের হাতে ক্ষমতা দেবার কথা বলেন (যেমনটি রুসো বলেছিলেন) তাহলে সাংবিধানিক সেই ব্যক্তির রাষ্ট্রদ্রোহের দোষে দুষ্ট। কোনো ব্যক্তি সাম্যবাদী সমাজ গড়ার রাজনৈতিক আহ্বান দিয়ে বর্তমান বুর্জোয়া রাষ্ট্রের ক্রমবিলুপ্তির কথা বলে (যেমনটি মার্ক্স বলেছিলেন), সেই ব্যক্তিও সংবিধান অনুযায়ী দেশদ্রোহী বলে চিহ্নিত হওয়া উচিৎ।
তবে এই সব বললেই যে ভারতের নাগরিকদের জেলে যেতে হবে তেমনটা সবসময় ঘটে না। রাষ্ট্রবিরোধী তাত্ত্বিক পোষণ করলেই ব্যক্তিমানুষকে দেশদ্রোহীতার আইনে আটক করা সম্ভব নয়। সর্বোচ্চ আদালত বলছে যতক্ষণ না সেই ব্যক্তিমানুষটি তার মতাদর্শের স্বপক্ষে কোনো হিংসাত্মক অপরাধ করছে, ততক্ষণ সে অভিযুক্ত নয়। রাষ্ট্রদ্রোহী ভাবনায় গিজগিজ করা রুসো বা মার্ক্সের বই সমাজবিজ্ঞানের ক্লাসে পড়ানো হয়। মাও সে তুং-এর বই কিংবা মাওবাদী পত্রপত্রিকা বাড়িতে রাখাও অপরাধ নয়, অন্ততঃ সর্বোচ্চ আদালত তাই বলছে। আবার সেই সর্বোচ্চ আদালত ২০২২ এর অক্টোবরে বোম্বে হাইকোর্টে আদেশে সাইবাবাদের মুক্তির রায় বাতিল করবার সময় মন্তব্য করছে A person's brain was the most integral part of committing terrorism-related offences –সাইবাবা ও তার সহবন্দীরা যে কোন টেরর-রিলেটেড অফেন্সের সাথে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও মস্তিকের ‘অপরাধ ঘটনোর সম্ভাবনা’র ভিত্তিতে পুনরায় জেলবন্দী করার বিকট যুক্তি সর্বোচ্চ আদালত হাজির করেছিল। আদালতের কাছে ফুটোস্কোপ যন্ত্র আছে, সেটা দিয়ে মগজের ভিতরে বিদ্রোহের পরিমাপ তারা করতে পারে। সাইবাবা ও সহবন্দীদের যে আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল সেই ইউএপিএ আইনটি এই বিদ্যমান ব্যবস্থার স্ববিরোধীতা ও অন্তঃসারশূন্য গণতান্ত্রিক অনুশীলনের সর্বশ্রেষ্ট নমুনা। ইউএপিএ আইনটি বুর্জোয়া আইনী নৈতিকতার কবরের উপর নির্মাণ করা হয়েছে। অভিযুক্তকে নির্দোষ ধরে বিচার আরম্ভ করার (presumption of innocence) করা পরিবর্তে অভিযুক্তের দায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা। Guilt by association এর মত জঘন্য বিধান রয়েছে এই আইনে। অথচ ইউএপিএ আইন দিব্যি টিকে রয়েছে, সংবিধানকে কাঁচকলা দেখিয়ে। অহরহ এই আইন প্রয়োগ হচ্ছে মাওবাদী/আর্বান নকশাল দাগিয়ে বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে, কাশ্মির ও মনিপুরের বিদ্রোহী, মুসলিম ইন্টেলেকচুয়াল, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। পূর্বের কংগ্রেসের শাসনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরমের আমলে এই আইনকে নতুন করে প্রয়োগ শুরু হয়। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের রাজত্বে এই আইন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এই আইন। আইনটি সর্বাত্মক ভাবে দমনমূলক, প্রতিহিংসাপরায়ণ ও ন্যায়বিচারের টুঁটি চেপে ধরার জন্য এক মতাদর্শগত হাতিয়ার – কোনো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সঞ্জাত সমাজে এই আইনের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। কিন্তু ইউএপিএও থাকবে আবার বাকস্বাধীনতার বকুনিও থাকবে, এই দুই এর মিশ্রণই আজকের গণতন্ত্র স্বরূপ।
কোনো ফৌজদারি হিংসাত্মক অপরাধের ঘটনা না ঘটিয়েও মতাদর্শের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, বই পড়া, লেখা, মগজের অবাধ্যতা ইত্যাদি যে জেল ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে, সাইবাবার ঘটনা তা প্রমাণ করে দিল। দীর্ঘদিন ধরেই সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে শাসক মোদি ও আরএসসের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে। একাধিক আইনি বিশেষজ্ঞ সর্বোচ্চ বিচারালয়ের একাধিক জাজমেন্ট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা। একদিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক লম্বা চওড়া বাণী দিয়ে মিডিয়ায় পয়েন্ট সংগ্রহ করেছেন, অন্যদিকে সাইনাবার ক্ষেত্রে বিচারের নামে প্রহসনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করেছেন। ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর প্রথমবার বম্বে হাইকোর্ট সাইবাবা সহ অন্যান্যদের মামলায় নির্দোষ ঘোষণা করে। পরেরদিনই শুক্রবার মহারাষ্ট্র সরকার সর্বোচ্চ আদালতে ওই রায়ের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিতের বেঞ্চে আপিল করে। মহারাষ্ট্র সরকারের হয়ে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। বিচারপতি ললিতের বেঞ্চে মামলা শোনার সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে আবেদন করা হয়। বিচারপতি চন্দ্রচূড় হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশের আবেদন খারিজ করেন, সাইবাবা ও অন্যান্যদের মুক্তির রায় বহাল রাখেন সাথে পরবর্তী সোমবার ফের মামলাটি শোনার আশ্বাস দেন। ওই দিন সন্ধ্যাবেলা প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত একটি অসম্ভব কান্ড ঘটালেন, বিচারপতিদের একটি ব্যক্তিগত জমায়েতে অতি বিশেষ জরুরি কারণ দেখিয়ে শনিবার বেঞ্চ বসিয়ে মামলা শুনানির ব্যবস্থা করলেন, নিয়োগ করা হল আরএসএস ঘনিষ্ঠ বিচারপতি বেলা ত্রিবেদি ও বিচারপতি এম আর শাহকে। সাইবাবার মুক্তি পেয়ে যাওয়াটা একটা রাষ্ট্রের স্যাডিস্টিক ইগোর একটি ভয়াবহ পরাজয় - তাই বিচারব্যবস্থা, নির্বাহীব্যবস্থা ও আমলাতন্ত্র মিলিত ভাবে এক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ সংগঠিত করলো। সাইবাবাদের মুক্তি আটকাতে ক্ষমতার কলঙ্কজনক অপব্যবহার করে শনিবারে বেঞ্চ বসল। দুই বিচারপতি বম্বে হাইকোর্টের রায় উলটে, সাইবাবাদের মুক্তির আদেশ খারিজ করে বম্বে হাইকোর্টে ফের শুনানির জন্য মামলা ফেরত পাঠিয়েদিল, নতুন বেঞ্চে ।
সাইবাবাদের মামলা মতাদর্শগত, সেখানে লিবার্টি, ইক্যুয়ালিটির গালভরা চুদুরবুদুর চলেনা। কোভিডের সময় সমস্ত বন্দীদের মুক্তি দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত, সাইবাবা সহ মাওবাদী অভিযোগে বন্দীদের খালি ছাড়া হয়নি। মতাদর্শের যুদ্ধ বলেই ছাড়েনি। মায়ের মৃত্যুর পরেও প্যারোল দেওয়া হয়নি সাইকে। যদিও রামরহিম সহ বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মাসের পর মাস প্যারোল দিতে কোনো সমস্যা নেই বিচার ব্যবস্থার। একাধিক রাজনৈতিক মামলায় সর্বোচ্চ আদালত জামিনের আবেদন শুনতে অস্বীকার করছে। উমর খালিদ ও শারজিল ইমামের উদাহরণ এখানে দেওয়া যায়।
দ্বিতীয়বারও বম্বে হাইকোর্টেরসাইবাবাদের বেকসুর খালাস ঘোষণা করে ২০২৪এর৭ মার্চ ২৯৩ পাতার রায়ে যুক্তিসহযোগে ফাঁস করা হয়েছে পুলিশের সাক্ষ্যপ্রমাণের কারসাজি। শুধু তাই নয়, এবারের বেঞ্চের রায়ে পুনরুত্থাপিত হয়েছে ইউএপিএ প্রয়োগের স্যাংশানের প্রশ্নটি যার ভিত্তিতে পূর্বের হাইকোর্টের বেঞ্চ সাইবাবাদের নির্দোষ ঘোষণা করেছিল। স্বভাব যায় না মলে, ইল্লত যায় না ধুলে – সাইবাবাদের ফের মুক্তির ঘোষণার সাথে সাথে মহারাষ্ট্র সরকার উচ্চতর আদালতে দৌড়ায় এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করতে। সর্বোচ্চ আদালত এইবার বম্বে হাইকোর্টের রায় যুক্তিগ্রাহ্য বলে স্বীকৃতি দেয়। অতীতের পাপস্খলনের জন্য? সেরকমটা নয়, আগের কান্ডের প্রতিক্রিয়ায় যেভাবে ধিক্কৃত হয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতের নৈতিকতা, তাতে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব ছিল না। লেডি ম্যাকবেথের মত হাত ধুয়ে ফেলার যতই চেষ্টা হোক, সাইবাবার মৃত্যুর দায় এড়ানো কি সম্ভব? সাইবাবার যন্ত্রনা দীর্ঘায়িত করাও মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করার জন্য ওই কুখ্যাত শনিবারের বেঞ্চ কি দায়ী নয়? প্রতিহিংসামূলক জঘন্য রায়দানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালত কি নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করবে? কদাচিৎ নয়। ওইসব করলে বিচার ব্যবস্থার নৈতিক ভিত্তি টলে যেতে পারে।আদালত স্যাক্রোস্যাংট, আদালতের সমালোচনা ডিসক্লেইমার দিয়ে করাটা তাই বাধ্যতামূলক ।বিচারব্যবস্থার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখে ফের বিদ্যমান বিচারব্যবস্থার মৌলিক সমালোচনাতে ফেরা যাক- রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আইনের চোখে সকলে সমান। এই প্রচলিত অনুমানটিতে দার্শনিক গলদ রয়েছে। সমাজ শ্রেণি বিভক্ত এবং জাতিবর্ণে বিভক্ত, সামাজিক বৈষম্যও উৎপাদনের উপকরণের মালিকানার অধিকার সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটি স্তম্ভ বিচার বিভাগ ও আইনি ব্যবস্থা। এটি স্বয়ম্ভু নয়, রাষ্ট্রের শ্রেণি পক্ষপাতের সাপেক্ষেই বিচার ব্যবস্থার অভিমুখ নিয়ন্ত্রিত হয়। সাইবাবার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তার মতাদর্শগত অবস্থানকে রাষ্ট্র সহিংসতার সাথে দমন করতে চেয়েছিল, আদালতের মাধ্যমে সেটি সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশি এনকাউন্টারের মাধ্যমে এই দমন সম্পন্ন করার দরকার হলে সেই উপায় প্রয়োগ করা হবে, হচ্ছে। এই সবকিছু মিলেমিশেই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।
সাইবাবার মতই আরেকটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল কিছুদিন আগে বন্দী থাকা অবস্থায়, জেসুইট পাদ্রী স্ট্যান স্বামী। স্ট্যান স্বামীর ঘটনাও বিস্ময়কর। এক অশীতিপর যাজক, পারকিনসন রোগী আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন, তাকে মাওবাদী সন্দেহে ভীমা কোরেগাঁও মামলার বন্দী করা হয়েছিল ২০২০ সালে। একাধিক বার তার জামিনের আবেদন খারিজ হয়, এমনকি বম্বে হাই্কোর্টেও। যে স্পেশাল কোর্টে তার মামলা চলছিল, সেখানে ২০২০ সালের নভেম্বরে ফাদার স্ট্যান আপিল করেছিলেন একটি সিপার ও স্ট্রএর জন্য, পারকিনসন রোগাক্রান্ত বলে জল খেতে সুবিধা হবে। তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ সেটিরও বিরোধিতা করে। এই ঘাতক সুলভ নির্মমতা রাষ্ট্রের সঙ্কল্পিত। বয়স্ক হোক বা শারীরিক ভাবে অক্ষম, সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয়েছে মারবো, তখন মারবোই। এবং একটা স্পেক্টাক্যাল তৈরী করে হত্যা। স্ট্র দেওয়াটা বা মায়ের মৃত্যুতে জামিন দেওয়াটা বড় বিষয় না, দেওয়াই সম্ভব। কিন্তু সামান্য মানবিক চাওয়াগুলিকে ঠোক্কর মেরে উড়িয়ে, প্রতিটা আবেদনকে নিষ্ফলতার দিকে ঠেলে নিষ্ঠুরতাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে রাষ্ট্রবিরোধী ও রাষ্ট্রবাদী দুই নাগরিক দর্শকই শিউরে ওঠে, সতর্ক হয়ে ওঠে -বিদ্রোহী মননের ফলাফল কি হতে পারে দেখে। গ্রীক ট্র্যাজেডিতে এরকম হত -বিদ্রোহী নায়কের অন্তিম পরিনতি ছিল ছটফটিয়ে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু। রাজশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর চরম করুণ ফলাফলের শিক্ষা নিয়ে দর্শক ঘরে ফিরতেন। আমাদের চোখের সামনেও সেরকমই ঘটছে - সাইবাবা, স্ট্যান স্বামী। তবে ইতিহাসে স্পার্টাকাসদের ফিরে আসাও অবশ্যম্ভাবী।