ঠিক মূলধারার রাজনৈতিক দল না হলেও আর এসএস হলো এখনকার শাসক দল বিজেপি-র পিতা। দেশের রাজনীতিতে এখন আরএসএস-এর প্রভাব তুমুল। সেই আরএসএস সম্পর্কে একটি বিস্ফোরক তথ্য সম্প্রতি সামনে এসেছে। পূর্বতন আরএসএস কর্মী পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি এফিডেফিট করে জানিয়েছেন যে সঙ্ঘ পরিবারের নানা শাখাপ্রশাখা বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, এবং সেই বোমা দিয়ে নানা জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেগুলিকে মুসলমানদের কাজ বলে চালায়।
সত্যের খাতিরে বলা দরকার যে এই এফিডেফিটটি সামনে এসেছে কংগ্রেসের সূত্রে। এ বছরের ১৯ আগস্ট করা এই এফিডেফিটটি করেছেন যশবন্ত শিণ্ডে নামক এক ব্যক্তি। সেটি করা হয়েছে মহারাষ্ট্রের নান্দেন-এর জেলা ও সেসন্স আদালতে। শিন্ডে দাবি করেছেন যে তিনি আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলে কাজ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি নিজে এই বোমা তৈরির ও অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ শিবিরে তার সঙ্গে এমন অনেকের দেখা হয়েছিল, বিস্ফোরণের পর যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
কে এই যশবন্ত শিন্ডে? এফিডেফিটটি থেকে জানা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকে তিনি আরএসএস-এর কর্মী। তখন তার বয়স আঠারো। ১৯৯৪ সালে ও ১৯৯৬-৯৭ সালে তিনি আরএসএস-এর প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নেন। তার পর তিনি জম্মুর উধমপুর জেলার রিয়াসি তেহশিলে আরএসএস-এর প্রচারক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৫ সালে ফারুক আব্দুল্লাকে আহত করার কারণে তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।
শিন্ডে জানিয়েছেন যে তিনি একা নন, আরএসএস-এর নেতার নির্দেশ অনুসারে তিনি মহারাষ্ট্রের থানে থেকে আরও কিছু কর্মী বাছাই করে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে যান জম্মুতে। সময়টা ছিল ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে।কারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, কারা সেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ও পরে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন, সেরকম বেশ কিছু নামও তিনি এফিডেফিটে জানিয়েছেন। তার মধ্যে আছে মিলান্দ পারান্দে, রাকেশ ধাওডে, রবি দেব, ইন্দ্রেশ কুমার ও হিমাংশু পানসে-র নাম। রবি দাস বোমা তৈরি করতে শিখাতেন, আর মিলিন্দ পারান্ডে ও রাকেশ ধাওয়াদ প্রশিক্ষণ শিবিরটি পরিচাল্পনা করতেন।
মিলিন্দ পারান্ডে বর্তমানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
তবে এই পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা এই যে আরএসএস এখনও এই এফিডেফিট নিয়ে মুখ খোলেনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র বিনোদ বনশাল বলেছেন, তিনি শিন্ডেকে চেনেন না, এফিডেফিটটিও দেখেন নি, ফলে তিনি এ নিয়ে কথা বলতে অক্ষম।
অনেক সময় নীরবতা অনেকে কথার চেয়ে বেশি শক্তিশালী বার্তা দেয়, তাই না?
সূত্রঃ দা টেলিগ্রাফ, ২/৯/২০২২
মকতুব মিডিয়া, ১/৯/২০২২