মানুষ প্রশ্ন করতে ভুলে গিয়েছে। প্রশ্ন করতে ভুলে যাওয়া মানে ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা। নির্বিচারে সব কিছু মেনে নেওয়ার নাম অন্ধত্ব। চক্ষুষ্মানের জিজ্ঞাসা থাকে। এই চোখ জ্ঞানের। অবিদ্যা ও অজ্ঞান আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে গ্রাস করে ফেলেছে। ভোগের সাগরে ডুবতে ডুবতে অতলে তলিয়ে যাচ্ছে এক দল মানুষ। গত মার্চ মাসে কেন লক ডাউন হল সারা দেশে? সত্যিই কি সংক্রমণ আটকালো তাতে, বা কম হল? যদি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে তবে কেন লক ডাউন উঠে গেল?
প্রথম প্রশ্নটির সঙ্গে নানা আনুষঙ্গিক জিজ্ঞাসা থাকা সঙ্গত। সেই প্রশ্নগুলো কি আমরা করেছি, করছি? ‘দিন আনি দিন খাই’-দের সঙ্গে নিম্ন মধ্যবিত্ত বহু মানুষ লক ডাউনে অকহতব্য দুর্দশার মধ্যে দিন কাটালেন এবং কাটাচ্ছেন, আমরা কি কোনও প্রশ্ন তুলছি? যে সব কোটি কোটি মানুষ কাজ হারালেন, লক ডাউন উঠে যাওয়ার পর তাঁরা কি কাজ ফিরে পাবেন? না পেলে কী করবেন? তাঁদের কাজ হারানোর বিনিময়ে কী পেলাম আমরা? সংক্রমণ থেকে মুক্তি? না পাইনি। তাই বলে অনন্তকাল লক ডাউন তো চলতে পারে না---লক ডাউন শুরু হল কেন তবে? কী তার উদ্দেশ্য, কী তার পরিকল্পনা? কোনও দিশা ছিল কি পুরো বিষয়ে, এখনও কি আছে?
দেশ বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ অনেকে তুলছেন, মানে বহু সরকারি বিষয় বেসরকারি করে দেওয়া, বণিকদের হাতে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি তুলে দেওয়া। তার পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলছে শাসক ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দলগুলো? একের পর এক মানুষকে, এমনকি গর্ভবতী নারীকে ইউএপিএ-এর নামে গ্রেপ্তার করা হল, কোনও বিক্ষোভ মিছিল হল কি? অনলাইন বিক্ষোভ বা অফলাইন? নাকি যা চলছে সব ন্যায্য, এটাই কি সকলে মেনে নিয়েছি? ন্যায্য বা অন্যায্য হলে কেন তা উচিত বা কেন তা অনুচিত, তা নিয়ে কোথাও কি কোনও আলোড়ন উঠছে?
রাজ্যে লক ডাউনের দুর্ভোগ ছাড়া আর এক ভয়ঙ্কর দুর্যোগ এসেছে দিন কয়েক আগে। প্রবল ঝড়ে সুন্দরবন থেকে মালদা অব্দি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। যত দক্ষিণে যাওয়া যাবে তত বেশি দুর্গতি। উপযুক্ত ত্রাণ কি পৌঁছচ্ছে? খেতে পাচ্ছেন মানুষ? যাঁর ঘর ভেসে গেছে তিনি সাপখোপের দেশে বিনা ত্রিপলে, বিনা মশারিতে কীভাবে ঘুমোচ্ছেন? পানীয় জলের হাহাকার বহু জায়গায়। আমরা কি সে সব জানি?
প্রশ্ন করুন। নিজেকে। প্রতিবেশিকে। বন্ধুকে। সরকারকে। রাষ্ট্রকে।
রাষ্ট্রের প্রধান সম্পদ মানুষ। সেই মানুষ যদি ভাল না থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের কোন মঙ্গল সাধিত হয়?
এই প্রশ্নগুলো নিজেকেই করছি আপাতত। এবং বন্ধুদের। পথ দেখান।