পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

‘মাচু’ ভাইরাস কিংবা একটি চুমার গল্প

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 213 view(s)
  • লিখেছেন : নীহারুল ইসলাম
বাড়ি থেকে আমার স্কুল খুব বেশি দূরে নয়, সাইকেল চড়ে মাত্র মিনিট দশেকের পথ। অথচ আজ স্কুল যাব বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দশ মিনিট নয়, আরও আরও অনেক মিনিট পেরিয়ে আমি যে কোথায় চলেছি তা আমার নিজেরই অজানা। আমি দেখছি একটা প্রশ্বস্ত পাকা সড়ক। সেই সড়কে হরেক কিসিমের প্রচুর বাইক, মোটরগাড়ি, বাস, লরি। দু-পাশে সারি সারি গাছ নয়, তার জায়গায় সব একই গড়নের বহুতল আকাশ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি আমার স্কুলের কথা ভুলে সেইসব দেখছি আর এগিয়ে চলেছি। সেই সঙ্গে রাস্তাটিকে স্মরণ করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছুতেই স্মরণ করতে পারছি না। শুধু ভাবছি, আমাদের এই পোড়া দেশে এমন ঝা-তকতকে রাস্তা কোথ্‌ থেকে আসে! কিভাবে আসে! তাই বুঝি আমি সাইকেল ছুটিয়ে চলেছি মিনিটের পর মিনিট নয়, আরও আরও অনেক মিনিট পেরিয়ে প্রায় ঘন্টা ছুঁই ছুঁই-এর কাঁটার দিকে।

ঠিক তখনই আমার সামনে একটা মোড় এসে পড়ে। নাম মর্জিনগর মোড়। যেখান থেকে তিন দিকে তিনটে রাস্তা বেরিয়ে গেছে। যা দেখে আমি আমার সাইকেল দাঁড় করাই। ঠিক পথে যাচ্ছি না ভুল পথে, কিংবা কোথায় যাচ্ছি, এবার কোন পথে যাব- যাচাই করতেই বোধহয়। চারদিক তাকিয়ে দেখি খুবই ছোট মোড় এই মর্জিনগর। অথচ কী নেই এখানে! আমি অবাক হয়ে দেখছি। দুনিয়ায় যত রকমের দোকান হয়, প্রায় সব রকমের দোকানই আছে। সব দোকানের আবার নিজস্ব সাইনবোর্ড আছে। যেমন কাপড়ের দোকানের নাম 'আব্রু'। মিস্টির দোকানের নাম 'নাস্তা'। মুদির দোকানের নাম 'এলাহি ভরসা'। ফার্নিচারের দোকানের নাম 'আসবাব'। হোটেলের নাম 'খানাপিনা'। তা বাদেও একটি সেলুন আছে। নাম 'এখানে কামান'। একটা চায়ের দোকানও লক্ষ্য করি। সেটার নাম আবার 'চা-টা'। কিন্তু শুধু 'চা-টা' বাদ দিলে মর্জিনগরের বাকি সব দোকান বন্ধ। কেন বন্ধ কে জানে! অগত্যা আমি সাইকেল ঠেলে 'চা-টা'র দিকে এগিয়ে যাই। প্রচুর মানুষ সেখানে। ভেতরে একটা টিভি চলছে। মানুষ খুব আগ্রহ নিয়ে তা দেখতে ব্যস্ত। এমনকি, দোকানদার নিজেও চা ছাঁকা বাদ দিয়ে টিভি দেখছে। যা দিনকাল! নিশ্চয় তাহলে দেশের কোথাও ভয়ংকর কিছু ঘটেছে। হয় কেউ ধর্ষিত হয়েছে, না হয় কোথাও দাঙ্গা বেঁধেছে। কিংবা আগুন লেগেছে কোনও বস্তি বা মহল্লায়।

আমি আমার সাইকেলটা স্ট্যান্ড করে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করি। কেউ আমাকে খেয়াল করে না। আমার দিকে কারও নজর পড়ে না। সবাই হুমড়ি খেয়ে টিভি দেখতেই ব্যস্ত।

কৌতুহল খুব সংক্রামক। আমিও সংক্রমিত হই। সবাই এভাবে কী দেখছে? আমিও দেখি বলে এগিয়ে যাই। আর দেখি, দেশের স্বাস্থ্যদপ্তর টিভি মারফত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করছে- “শুধু দেশ নয়, সারা পৃথিবী মারাত্মক এক ভাইরাসে আক্রান্ত। এমনই সেই ভাইরাস যা প্রথমে মুখে জ্বালা ধরাচ্ছে, তারপর সেই জ্বালা আস্তে আস্তে নাক-কান-চোখ-গলা হয়ে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। এভাবেই আক্রান্তের মৃত্যু ঘটছে। সারা বিশ্বে প্রায় একশোটি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় হাজার ছয়েক। এই ভাইরাসের নাম ‘মাচু’।”

মাচু মানে তো চুমা। এটা আমি বসন্তপুরের হুসেনদাদোর কাছ থেকে প্রথম জেনেছিলাম। আসলে বিড়ি খুঁজতে গিয়ে হুসেনদাদোর পাঞ্জাবীর পকেটে একটা গুপ্ত চিঠি পেয়েছিলাম আমি। হুসেনদাদোর প্রেমিকার লেখা। তাতে লেখাছিল, 'জানু-তুমি যখুন হামাকে মাচু খাও, হামার কী যে ভালো লাগে!' চিঠিটা পড়ে আমার সেই বয়সে একটুও বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে,

সেটি ছিল একটি প্রেমপত্র। কিন্তু মাচু খাওয়া ব্যাপারটা কী? আমার প্রথমে মনে হয়েছিল বোধহয় মাছ খাওয়ার কথা বলছে, কিন্তু 'মাচু' নামের কোনও মাছের কথা তো কখনও শুনিনি কোথাও। অগত্যা হুসেনদাদোকে চেপে ধরেছিলাম। তখন তিনি জানিয়ে ছিলেন দাদী বাদেও তাঁর একজন প্রেমিকা আছে। যাকে সে মাঝেমধ্যে চুমা খায়। আদর করে।

তাহলে কি এই মাচু ভাইরাস চুমা আর আদর থেকেই বিস্তার লাভ করছে? যদি সেটাই হয়, চুমা-আদর বলে আর কিছু কি থাকবে না এই সুন্দর পৃথিবীতে? হুসেনদাদো আর তাঁর প্রেমিকা তাহলে কী নিয়ে বাঁচবে?

মনে পড়ে, হুসেনদাদো তাঁর সেই প্রেমিকার কাছে আমাকে একবার নিয়েও যাবে বলেছিল। আমার পড়াশোনার কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। আমার পড়াশোনার চাপ বেড়েছে। সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। তাই হয়ত তাঁর কথা ভুলে গিয়েছিলাম।  কিন্তু ‘মাচু’ ভাইরাসের কথা শুনে হঠাৎ করে তাঁকে আমার মনে পড়ে গেল।

হুসেনদাদো লোকটা আসলে কবিয়াল মানুষ। এখানে ওখানে কবিগান গেয়ে বেড়ান। আর সময় সুযোগ পেলে চলে আসেন আমাদের বাড়ি। আমার দাদোর সঙ্গে তাঁর গলায় গলায় দোস্তি ছিল। আমার দাদোও ঘোড়ায় চড়ে কখনও কখনও চলে যেতেন বসন্তপুরে তাঁর বাড়ি। তাঁর বাড়ি যেতে হয় বংশবাটির বিল পেরিয়ে। সেটা নাকি একটা বিশাল বিল! এপারে দাঁড়িয়ে ওপারের কিছু খালি চোখে দেখতে পাওয়া যায় না।

হুসেনদাদোর মুখ থেকেই আমি প্রথম শুনেছিলাম সেই বিলের গল্প। নৌকা চড়ে পেরোতে হয়। সাঁতার তো দূর, পানিতে নামা যায় না। যেমন বড় বিল তেমনি তার কলকলানি কালো ঠাণ্ডা পানি। সেই পানিতে আবার নাকি কিচনি বাস করে। বালবাচ্চাদের কেউ যদি ভুল কর নেমে পড়ে, আর উঠে আসতে পারে না। কিচনি তাকে নিজের মাথার লম্বা লম্বা চুল দিয়ে জাপটে ধরে পানির তলায় বসিয়ে নেয়।

কিচনির গল্প আমি হুসেনদাদোর মুখে শুনলেও কিচনি সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল। মনে ছিল না এইমাত্র। ভুলে ছিলাম। অবশ্য ভুলে থাকাটাই স্বাভাবিক। আমাদের গ্রামে অনেক পুকুর থাকলেও সেইসব পুকুরে বহু বছর পানি নেই। তাহলে কিচনি থাকবে কী করে?   

যাইহোক, হুসেনদাদো লোকটা রক্তের সম্পর্কে আমাদের কেউ না। তবু আত্মীয়ের চেয়ে বড়। আমাদের গ্রামে সেসব নিয়ে অনেক গল্প চালু আছে। যেমন একটা গল্প এরকমঃ

আমাদের বৈঠকবাড়ির বারান্দায় নাকি বসেছিলেন হুসেনদাদো। তখন শীতকাল। তার ওপর সকালবেলা। মাঠ-পাহারাদার আফাংচাচা আমাদের চামাবেড়ার বেগুনের জমি থেকে দুই বেগুন চোরকে ধরে এনেছে। দু’জনই অল্পবয়সী। তা দেখে হুসেনদাদো নাকি আফাংচাচাকে বলেছিলেন-

‘ অধের ছাড় তো বাপ আফাং,

কেহু কি জানে কে সাপ আর কে ব্যাঙ?

অরা সব দুধের বাচ্চা, অধের মুনে লেগ্যাছে আগুন-

তাই না হয় দুইট্যা তুল্যাছে বাগুন। ’

অন্ত্যমিলে এমন কথা শুনে আফাংচাচা এত খুশি হয়েছিল যে, আমার দাদোর অপেক্ষা না করে ছেলে দু’টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। তারপর ভয়ে ভয়ে ছিল আমার দাদো এসে যদি আবার বকাঝকা করেন! আমার দাদো মাঠ থেকে ফিরে সব শুনে অবশ্য বকাঝকা করেননি, বরং বলেছিলেন, ‘ ঠিকই তো! বাচ্চা ছেল্যা ভুল করলে শাস্তি দিতে নাই। শাস্তি দিলে অরা বিগড়ে যায়। ’

আমি এই গল্প শুনেছিলাম আফাংচাচার মুখ থেকেই।

কী আশ্চর্য! মানুষগুলো নেই তবে তাঁদের গল্পগুলি আজও স্মৃতিতে অদ্ভূতভাবে বেঁচে আছে।

মানুষগুলো বলতে আমার দাদো আর আফাংচাচা কবেই মরে গেছেন। তবে হুসেনদাদো এখনও বহাল তবিয়তে বেঁচে আছেন। যদিও বহুদিন তিনি আমাদের বাড়িতে আসেন না। সম্ভবত আমার দাদোর মৃত্যুর পর থেকে। এমনও শুনেছিলাম, তাঁর আমাদের বাড়িতে না আসার কারণ আমার দাদোর মৃত্যু নয়, তিনি নাকি সবার অমতে প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে তাঁর সেই প্রেমিকাকে বিয়ে করেছেন বলেই স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছেন। এবং বেশ সুখেই আছেন।

সত্যিই কি তিনি সুখে আছেন?

আমার কৌতুহল হয়। এই জন্যে বোধহয় আমার আজকের সাইকেল ভ্রমণ! এই জন্যেই বুঝি আমি বেখেয়ালে সাইকেল চালিয়ে আমার স্কুলের বদলে এরকম অপরিচিত জায়গায় এসে পড়েছি। না হলে ‘মাচু’ ভাইরাসের কথা আমার কানে ভেসে আসবে কেন?

খুব দুঃশ্চিন্তা হয় আমার। না- আমার নিজের জন্যে নয়, দুঃশ্চিন্তা হয় হুসেনদাদোর জন্য।

আজ কী জানি কেন, হঠাৎ বেরিয়ে পড়েছি যখন, হুসেনদাদোর বাড়ি ঘুরে আসা যাক। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। কিন্তু কোন রাস্তায় যাব। আমার সামনে এখন তিনটে রাস্তা। কোন রাস্তাটা বসন্তপুরের দিকে গেছে জানি না। কাউকে যে জিজ্ঞেস করব, তেমন কাউকে দেখতেও পাচ্ছি না। ইতিমধ্যে 'চা-টা'ও বন্ধ। ‘মাচু’ ভাইরাসের আতংকে বোধহয় নিমেষেই কে কোথায় কেটে পড়েছে, আমি টের পাইনি। এখন তাকাতেই দেখি সব শুনশান। কে জানে 'মাচু' ভাইরাস নিয়ে সরকার আবার নতুন কোনও ফরমান জারি করল কিনা!  

করলে করুক আমার কী, আমি হুসেনদাদোর বাড়ি যাব বলে ঠিক করেছি যখন তখন যাবই।

আমি আবার সাইকেলে চড়ে বসলাম। না, ডানদিকের রাস্তা ধরলাম না। বাঁ-দিকেরটাও না। আমি এগোতে শুরু করলাম সোজা রাস্তাটা ধরে।

অদ্ভূত ব্যাপার কিছুটা এগোতে না এগোতে দেখি ঝা-তকতকে রাস্তার বদলে কাঁচারাস্তা। মোটরগাড়ির বদলে গোরুগাড়ির চলাচল। একটা-দুটো সাইকেলও চলছে। যেমন আমি, আমি তো সাইকেলে চড়ে এগিয়ে চলেছি। হুসেনদাদো নিজেও সাইকেল চড়ে আমাদের বাড়ি যাতায়াত করতেন। আমার দাদো অবশ্য ঘোড়ায় যাতায়াত করতেন। যাইহোক, আর আছে সাধারণ মানুষ। কেউ আসছে। কেউ যাচ্ছে। কারও মাথায় বোঝা, কারও আবার ঘাড়ে। রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য গাছগাছালি। গাছে গাছে হরেক রকমের পাখপাখালি।  তা বাদে আদিগন্ত মাঠ। মাঠে সোনার ফসল ফলে আছে। বসন্তের মুক্ত বাতাস বইছে। পাখি ডাকছে। কত রকমের পাখি। কত রকমের ডাক। যেন নহবতের ঐক্যতান।

আমার আর কাউকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন অনুভব হয় না। আমি বুঝতে পারি, আমার সাইকেল ঠিক পথেই এগোচ্ছে। বসন্তপুর এদিকে না হয়ে অন্য কোনও দিকে হতেই পারে না। অতএব আমি নিশ্চিত আর কিছুক্ষণের মধ্যে হুসেনদাদোর সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছেই।

হ্যাঁ, ওই তো সামনে কী ওটা? প্রান্তরজুড়ে চিকচিক করছে?

আমি সাইকেলের প্যাডেলে জোরসে চাপ দিই। কেমন যেন সন্দেহ হয় আমার। ওই চিকচিক প্রান্তর মরিচীকা নয় তো!

না, মরিচীকা নয়। একটা বিল। পানির ওপর সূর্যচ্ছটা পড়ে অমন রূপ পেয়েছে।

তাহলে কি ওটাই হুসেনদাদোর গল্পের সেই বংশবাটি বিল?

হ্যাঁ, বংশবাটি বিল। হুসেনদাদোর বর্ণনার সঙ্গে একেবারে হুবহু মিল। এপ্রান্তে দাঁড়িয়ে অপর প্রান্ত চোখে পড়ছে না। মন কেমন করা কলকলানি কালো পানি। দেখেই ভয় লাগছে।

পাড়ে একজন মাঝি নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছিল। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, যাবেন নাকি ওপারে?

আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওপারে কোথায়? কী আছে সেখানে?

-কেনে, বসন্তপুর। কী থাকবে আবার। বসন্তপুর একটা গাঁ। দুনিয়ায় তো গাঁ বুলে আর কিছু বেঁচি নাই। তাই গাঁ ধুঁড়তে ধুঁড়তে আপনার মুতোন ছেল্যাপিলারা কখুনো কখুনো এস্যা পড়ে। তাই লৌকা লিয়ে বস্যা থাকি সকাল থেক্যা সাঁঝ পর্যন্ত। যদি কেহু আসে বসন্তপুর না দেখ্যা ফিরে যাবে, হামি বেঁচি থাকতে তা হতে দি কী কর‍্যা!

লোকটা আব্দুল মাঝি নয়, তার ছুঁচলো দাঁড়ি নেই। তবু আমার মনে হল লোকটা আব্দুল মাঝির মতোই কেউ হবে হয়ত। কিংবা আব্দুল মাঝির আত্মীয়। আমি সাহস করে তার নৌকার দিকে এগিয়ে যাই। সে আমাকে সাইকেল নিয়ে নৌকায় উঠতে সাহায্য করে। আমি ঠিকঠাক নৌকায় উঠলেই সে নৌকা ছেড়ে দেয়। শুধু ছেড়ে দেয় না, বংশবাটি বিলের বুক চিরে সেই নৌকা ছুটতে শুরু করে। নৌকাটির সঙ্গে আমিও ছুটতে শুরু করি বসন্তপুরের উদ্দেশ্যে। যেখানে বাস করেন আমার হুসেনদাদো ও তাঁর প্রেমিকা।

না, আমি এখন হুসেনদাদোর সেই প্রেমিকার কথা ভাবছি না। আমি দেখছি বংশবাটির বিলের অতল থেকে উঠে আসা অসংখ্য শ্যাওলার কিলবিল করা শির, যা এমনই লকলক করছে, দেখে মনে হচ্ছে যেন এখনই জল ছেড়ে উঠে এসে মাঝি, সাইকেল এবং আমি সহ গোটা নৌকাটিকেই জাপটে ধরে আবার জলের তলায় বসে যাবে।

আমার ভীষণ ভয় করে। চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছা করে। কিন্তু চিৎকার করতে পারি না। তার আগেই জ্ঞান হারাই।

 

###

যখন জ্ঞান ফিরে, দেখি আমি শুয়ে আছি ফুল-লতাপাতা ঢাকা একটি বাড়ির আঙিনায় পাতা চৌকির ওপর সুন্দর বিছানায়। আর আমার মুখের কাছে একটা সুন্দর মুখ ঝুঁকে আছে। যেন এখনই আমাকে চুমা খাবে। তার মাথার দীঘল কালো চুল আমাদের কাছাকাছি থাকা দুই মুখকে এই পৃথিবীর সবকিছুর থেকে আড়াল করে রেখেছে। না, ‘মাচু’ ভাইরাসের কথা কিংবা কিচনির কথা ভেবে আমি ভয় পাই না। বরং একটি চুমার অপেক্ষা করি।  

 

 

 

 

 

 

0 Comments

Post Comment