পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

আম্মা

  • 08 August, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 1191 view(s)
  • লিখেছেন : অমর দে
হায়দরাবাদ থেকে মল্লিনাথ কলকাতায় ফিরছেন। এসেছিলেন ছেলের সঙ্গে। ক’দিন হায়দরাবাদে কাটিয়ে ফিরছেন। একা ত্রিশ ঘণ্টার জার্নি খুবই ক্লান্তিকর। থ্রি-টিয়ার নন-এ.সি. কোচে রিজার্ভেশন। হাওড়া থেকে রিটার্ন জার্নি করা ছিল। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। ওদের ছুটি নেই। নতুন চাকরি। বছরে এক-আধবারের বেশি আসতে পারে না। প্রথমদিকে তাঁকে আর মা-কে ওখানে যাওয়ার জন্য ঘন ঘন ফোন করত। মল্লিনাথ বুঝতেন প্রথম প্রথম শুভময়ের মানিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছিল। তবু মানুষকে সব রকম পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। শুভময় এখন যেমন মানিয়ে নিতে পেরেছে। তাঁর-ও ছিল বদলির চাকরি। সারা জীবন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ঘুরে তাঁকে চাকরি করতে হয়েছে। এখন ভাবেন সেটা ভালোই হয়েছিল। নিজের রাজ্যকে চেনার সুযোগ পেয়েছিলেন। চাকরির সুবাদে শুভময় ভারতবর্ষকে দেখার সুযোগ পেয়েছে। এই অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই ওর জীবনে কাজে লাগবে।

স্টেশন সেকেন্দরাবাদে। হায়দরাবাদ থেকে স্টেশনে আসতে এক ঘন্টারও বেশি সময় লাগে। এখান থেকে হাওড়াগামী ফলকনামা এক্সপ্রেস ছাড়ে বিকেলের মুখে। এই সুপার ফাস্ট ট্রেনের স্টপেজ কম, ছোটে ভালো। তবু কলকাতা পৌঁছতে পরদিন রাত হয়ে যাবে। ছেলে বলেছিল – বাবা, প্লেনে যাও। ট্রেনে বোর হয়ে যাবে। কিন্তু মল্লিনাথ রিজার্ভেশন বাতিল করতে চাননি। বলেছিলেন – এবার ট্রেনে যাই, পরেরবার না হয় প্লেনে যাব।

ট্রেন ছাড়ার অনেক আগেই মল্লিনাথ স্টেশনে পৌঁছে গেছেন। মিনিট পঁয়তাল্লিশ অপেক্ষার পর ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকল। কোচ নম্বর ট্রেনে উঠে তিনি নিজের সিট খুঁজে নিলেন। লোয়ার বার্থ। সিটের নিচে ব্যাগটা ঢুকিয়ে জানলার পাশে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। নভেম্বর শেষ হতে চলল, তবু বেশ গরম। অন্যান্য যাত্রীরা একে একে আসছে। সংরক্ষিত হলেও দিনের বেলা এই কামরায় সাধারণ যাত্রীরাও ওঠে। তার মানে রাত দশটা পর্যন্ত বসে থাকতে হবে, তার আগে শোওয়া যাবে না। তাঁর চিন্তা হল একটানা ব’সে থেকে কোমড়ের ব্যথা না বেড়ে যায়। তাহ’লে সমস্যা হবে। বছরের পর বছর দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে ব’সে কাজ করে চাকরিজীবন থেকে এটা তিনি উপার্জন করেছেন। ব্যথাটা শীতকালে বেশি ভোগায়।

তিনি যখন এসব ভাবছিলেন, লটবহর নিয়ে তিনজনের একটা দল এদিকেই এগিয়ে এল। সেই দলের প্রধান মোটাসোটা এক বয়স্ক মহিলা। সঙ্গে এক জোড়া যুবক যুবতী। লটবহরগুলো বয়ে এনে ওরা দুজ’নে মল্লিনাথের উল্টোদিকের লোয়ার বার্থের সিটের নীচে যত্ন করে গুছিয়ে রাখল। বয়স্ক মহিলা নিশ্চিন্ত হয়ে সিটে বসে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছলেন। ওই যুবক যুবতী কিন্তু বসল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত মুখ নেড়ে নিজেদের ভাষায় মহিলার সঙ্গে এক নাগাড়ে কথা বলে যেতে থাকল। ওদের দেখে মল্লিনাথের কৌতূহল হল। বুঝলেন ওরা যাবে না, বৃদ্ধাকে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছে। সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে বুঝলেন ওরা তেলুগু ভাষায় কথা বলছে, যে ভাষার বিন্দু-বিসর্গ তিনি জানেন না। শুধু ওদের কথার একটা শব্দ তাঁর কানে ভাসছিল – আম্মা। আম্মা মানে মা – এটুকু বুঝেই মল্লিনাথ উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন। তাঁর কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। এবার মহিলাকে তিনি ভালো করে লক্ষ করলেন। মনে হল বয়স সত্তরের কোঠায়। ঘোর কৃষ্ণবর্ণ ছোটখাটো মোটা কিন্তু মজবুত চেহারা। চুলগুলো শনের মতো সাদা হলেও, মুখে বয়সের আঁচড় এখনও তেমন পড়েনি। কপালে একটা সাদা ফোঁটা জ্বলজ্বল করছে – সম্ভবত চন্দনের ফোঁটা।

ট্রেনে এক কামরায় কোনও যাত্রীর সঙ্গে বেশ কয়েক ঘণ্টা একত্রে কাটালে তার সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। বুড়িকে দেখে কিন্তু তিনি অস্বস্তি বোধ করলেন। বুড়ির ভাষা তিনি বোঝেন না। আচার-আচরণেও অনেক তফাৎ। কথা বলার কোনও উপায় নেই। তাঁকে পুরো রাস্তা এই বুড়ির মুখোমুখি বোবার মতো বসে থাকতে হবে। আর বুঝলেন এই যুবক যুবতী বুড়ির পুত্র ও পুত্রবধূ। ওরা যখনই আম্মা বলে ডাকছিল, বুড়ির মুখ প্রসন্ন হাসিতে ভরে উঠছিল।

কথায় কথায় ওরা বার কয়েক বিশাখাপত্তনমের কথা বলায় মনে হল হয়তো বুড়ির গন্তব্য বিশাখাপত্তনম। এমন সময় ট্রেন ছাড়ার সিটি বাজল। বুড়ি ওদের ট্রেন থেকে নেমে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিলেন। যুবক যুবতী বুড়িকে প্রণাম করলে উনি ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করে কিছু বললেন। ওঁর চোখ ছলছল করছিল। নামার আগে যুবতী মল্লিনাথের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে কিছু বলে গেল। ভাষা না বুঝলেও এটা অনুভব করলেন যুবতী যেন বলতে চাইছে – বাবু, আম্মাকে একা রেখে গেলাম, তুমি দেখো।

এদিকে বুড়ি আঁচলে চোখ মুছছেন। কলকাতা থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে তেলেঙ্গানার একটি গ্রামীণ পরিবারের সম্পরকের এমন জোরালো বন্ডিং দেখে মল্লিনাথ নাড়া খেয়ে উদাস হয়ে গেলেন। এখন তো তাঁর শহর কলকাতায় সম্পর্কগুলো কেবলই ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে।

ট্রেন হু হু করে ছুটছে। দিনের আলো নিভে গিয়ে অন্ধকার নেমে এসেছে। জানালা গলে ট্রেনের আলো ছিটকে গিয়ে বাইরের অন্ধকারকে যেন আঁচড়ে দিচ্ছে। মুখ ঘুরিয়ে দেখলেন সিটে গুটিসুটি হয়ে বুড়ি শিশুর মতো ঘুমোচ্ছেন। দেখে কেমন মায়া হয়। খুব ক্লান্ত ছিলেন মনে হয়। ওঁর বৌমা ওঁকে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করে গেছে। কিন্তু তিনি সেটা করবেন কীভাবে? কেউ তো কারো ভাষা বোঝেন না।

রাত ন’টা নাগাদ রেলের ক্যাটারিং থেকে খাবার দিয়ে গেল। তখনও বুড়ি ঘুমোচ্ছেন। খাওয়ার পর বেসিনে মুখ ধুয়ে নিজের সিটে এসে দেখলেন বুড়ি উঠে বসে পোটলা থেকে খাবার বের করছেন। খুবই সাধারণ খাবার। রুটি আর সবজি। কিছুটা খাবার মল্লিনাথের দিকে বাড়িয়ে ধরে নিজের ভাষায় কিছু বললেন। মল্লিনাথ বুঝলেন উনি তাঁকে খেতে বলছেন। বিব্রতভাবে মাথা নেড়ে তিনি ইঙ্গিতে জানালেন যে তাঁর খাওয়া হয়ে গেছে। আর খেতে পারবেন না।

মল্লিনাথ খাবার না নেওয়ায় বুড়ি ক্ষুণ্ণ হলেন। তারপর কিছু ভেবে সিটের তলা থেকে একটা বড় ব্যাগ বের করলেন। আনাজপাতি আর ফলমূলে বোঝাই নাইলনের একটা শপিং ব্যাগ। ব্যাগ থেকে সোনালি রঙের বড় একটা পেয়ারা বের করে মল্লিনাথের হাতে দিয়ে ইশারায় বললেন – খাও বাপা। খুব মিষ্টি পেয়ারা। আমাদের বাগানের ফল।

বুড়ির বক্তব্য বুঝতে মল্লিনাথের কোনও অসুবিধা হল না। এবার আর না বলতে পারলেন না। ঈষৎ সবুজাভ সোনালি মধুপক্ক পেয়ারাটা হাতে নিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। বুড়ি এবার খুশি হয়ে হাসলেন। ওই প্রসন্ন হাসি যেন কথা বলছে – খাও বাপা, খাও। ঠিক নিজের মায়ের মতো। ছোটবেলায় মা তাঁকে এভাবেই খাওয়াতেন।

এরপর দু’জনের মধ্যে শুরু হল এক অলৌকিক কথোপকথন।

মল্লিনাথ নির্ভেজাল বাংলা বললেন – আম্মা, তুমি এবার খেয়ে নাও।

এক টুকরো রুটিতে একটু সবজি তুলে মুখে পুরে আম্মা নিজের ভাষাতেই বললেন – হ্যাঁ বাপা, অনেক রাত হল। এবার খাচ্ছি।

আম্মা একটু একটু করে খাচ্ছেন আর কথার নকশা বুনছেন। কথা বলছেন আর হাসছেন। আবার কথা বলছেন। কথার স্রোত হাওয়ার মতো, নদীর স্রোতের মতো অনবরত বয়ে চলেছে। মল্লিনাথ বুঝলেন কথা বলতে বড় ভালোবাসেন এই বুড়ি মা।

আম্মা তুমি কোথায় থাকো?

রুটির টুকরো ধরা হাত উঁচিয়ে অনেক দূরের দিকে নির্দেশ করে একটা গ্রামের নাম উচ্চারণ করে বললেন – আমাদের গাঁও অনেক দূরে। সেখান থেকে স্টেশন আসতে বিস্তর সময় লাগে। খুব ধকল হয়। তাই ছোট ছেলে আর বৌমা আমাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে গেল। এত জিনিসপত্র কি আমি একা বইতে পারি? কিন্তু ওরা আমার সঙ্গে যেতে পারল না। যাবে কী করে? ওরা না থাকলে বাড়ি খেতি কে দেখবে? খেতিতে ফসল হয়। বাগানে ফল ফলে। সেসব কে দেখবে?

তুমি এখন কোথায় যাচ্ছ আম্মা?

আম্মার মুখ আবার মধুর হাসিতে ভরে উঠল – বিশাখাপত্তনম। ওখানে আমার বড় ছেলে থাকে। তিন নাতি নাতনিতে ভরা সংসার। বেচারা কারখানায় কাজ করে। খুব খাটনির কাজ। কিন্তু কী করবে? কাজ তো করতেই হবে। সব উপরয়ালার ইচ্ছা। ছোট ছেলে গাঁয়ে খেতিবাড়ি দেখে আর বড় ছেলে এত দূরে কারখানায় কাজ করে। আমার খেতিতে ফসল হয়, বাগানে কত ফল হয় – কিন্তু ওরা খেতে পায় না। নাতি নাতনিরা খেতে পায় না। সব বাজার থেকে কিনে খায়। তাই আমি বছরে দু’একবার বড় ছেলের কাছে আসি।

বলতে বলতে আম্মার দুই চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে। চোখ মুছে বলেন – নাতি নাতনিকে দেখার জন্য মন খুব দুখায় বাপা।

আম্মার খাওয়া শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু কথা থামেনি। দীর্ঘদিন পৃথিবীতে বাস করলে বুকের ভিতর অনেক কথা জমে। বলছেন – খালি হাতে কি ছেলের বাড়ি যাওয়া যায়? তাই নাতি নাতনির জন্যে ক’টা ফলপাকুর আর ছেলে-বৌমার জন্যে সামান্য কিছু উপহার নিয়ে যাচ্ছি। ওরা সুখে না থাকলে আমি কি শান্তিতে থাকতে পারি?

খাওয়া শেষে পাত্রগুলো বেসিনে ধুয়ে এনে আম্মা ব্যাগের মধ্যে গুছিয়ে রাখলেন। আম্মার সব কাজ বেশ পরিপাটি। রাত দশটা বেজে গেছে। আম্মা ইশারায় বললেন – রাত হয়েছে, এবার শুয়ে পড়ো। সকাল থেকে মল্লিনাথের ধকলও কম হয়নি। একটানা বসে থেকে এখন শরীর ভেঙে আসছে। তিনিও শুয়ে পড়েন। শুয়ে শুয়েই আম্মা হাত মুখের ভঙ্গিতে বললেন – বড় ছেলে বিশাখাপত্তনম স্টেশনে আমাকে নিতে আসবে। আমার বয়স হয়েছে, এত মালপত্তর নিয়ে নামতে পারব না। নামার সময় একটু ধরে দিও বাপা। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করবেন।

মল্লিনাথ আম্মার দিকে কাত হয়ে শুয়ে আশ্বাস দিলেন – চিন্তা কোরো না আম্মা, ঠিক নামিয়ে দেব। তারপর দু’হাতের দশটা আঙুল দেখালেন। অর্থাৎ বিশাখাপত্তনম পৌঁছতে বেলা দশটা বাজবে। সায় দিয়ে মাথা নাড়লেন আম্মা।

অন্যান্য যাত্রীরাও কামরার আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়েছে। একটা ব্যাগে মাথা রেখে আম্মা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন। টয়লেটের দিকের আলোটা শুধু জ্বলছে। কিন্তু তখনই মল্লিনাথের ঘুম এল না। মায়ের কথা মনে পড়ছে। কত দিন আগে মাকে হারিয়েছেন। অবচেতনা থেকে মাকে চেতনায় ফিরিয়ে আনলেন মল্লিনাথ। তাতে আনন্দ না কষ্ট হচ্ছে ঠিক ঠাহর করতে পারলেন না। শুধু একটা টনটনে বেদনার সঙ্গে সুখানুভূতিতে মনটা দুলে উঠল।

খুব সকালে ঘুম ভাঙে মল্লিনাথের। হাত ঘড়িতে দেখলেন ভোর পাঁচটা। আম্মা আগেই উঠে বসে আছেন। তাঁকে জাগতে দেখে হেসে কিছু বললেন। আম্মার সেই হাসিতে তাঁর সকালবেলাটা ভালো হয়ে গেল।

মুখ ধুয়ে এলে একজন চা-ওয়ালা চা দিয়ে গেল। বিস্কিট সঙ্গেই আছে। আম্মাকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলেন চা খাবেন কী না। দু’পাশে মাথা নেড়ে একটা বোতল তাঁর দিকে এগিয়ে দিয়ে খেতে বললেন।

বোতলে কী আছে বুঝতে না পেরে খেতে ভরসা পাচ্ছেন না, আবার আম্মাকে না-ও বলতে পারছেন না। খুব দোটানায় পড়ে গেলেন। তাঁর মনোভাব বুঝতে পেরে আম্মা হাত-মুখ নেড়ে বললেন – খাও বাপা খাও, কোনও ভয় নেই। এ জিনিস আমি নিজের হাতে বানিয়েছি।

অগত্যা চায়ের কাপ সাইড টেবিলে রেখে সন্দিগ্ধ ভাবে বোতলটা হাতে নিলেন। ইতস্তত করে গলায় একটু ঢেলেই বিহ্বল হয়ে গেলেন। কী এটা? কী সুগন্ধ! কী স্বাদ! গলা দিয়ে ভিতরে যেতে যেতে সেই স্বাদ শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ছে। এমন শরবত মল্লিনাথ আগে কখনও খাননি।

হাসি মুখে আম্মা মল্লিনাথকে লক্ষ করছিলেন। আরও কিছুটা শরবত গলায় ঢেলে বোতল ফিরিয়ে দিতে গেলে আম্মা ইঙ্গিত করলেন – আরও খাও। তারপর ব্যাগে রাখা দুটো বোতল দেখিয়ে বললেন – নাতি নাতনির জন্যে নিয়ে যাচ্ছি। ওরা খেতে খুব ভালোবাসে।

ট্রেন একনাগাড়ে দৌড়চ্ছে। সকালের স্নিগ্ধ হাওয়া শরবতের ওই স্বাদকে যেন আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শরবত খেয়ে মল্লিনাথ তৃপ্তি পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাকে খাইয়ে আম্মা যে আরও বেশি তৃপ্ত হয়েছেন সেটা ওঁর মুখের হাসিতে ফুটে উঠেছে। ভালো লাগার একটা সুন্দর অনুভূতি মল্লিনাথের মনে সঙ্গীতের সুরের মতো বাজতে থাকল। সেই ভালো লাগায় অনেকক্ষণ তন্ময় হয়েছিলেন তিনি, হঠাৎ সম্বিত ফিরতে দেখলেন আম্মা মালপত্র গোছাচ্ছেন। চট করে একবার ঘড়ি দেখে নিলেন। আর কিছুক্ষণ পর ট্রেন বিশাখাপত্তনম পৌঁছবে।

ট্রেন বিশাখাপত্তনমের কাছাকাছি এসে গতি কমাতে শুরু করেছে। আম্মা সিট থেকে উঠে মল্লিনাথের দিকে তাকালেন। ওঁর চোখের ভাষা বুঝে নিয়ে মল্লিনাথ ভারী ব্যাগদুটো দু’হাতে ঝুলিয়ে কামরার দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন। ছোট ব্যাগদুটো হাতে নিয়ে আম্মা পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ট্রেন স্টেশনে থামতে ব্যাগ নিয়ে মল্লিনাথ আগে প্ল্যাটফর্মে নামলেন। তারপর আম্মা নামতে একজন মাঝবয়সী লোক দ্রুত এসে আম্মাকে প্রণাম করল। তাঁর দিকে ঘুরে হেসে আম্মা বুঝিয়ে দিলেন যে এ-ই ওঁর বড় ছেলে। তারপর ডান হাত মল্লিনাথের থুতনিতে ছুঁইয়ে সেই হাতে চুমু খেলেন। ঠিক মায়ের মতো।

0 Comments

Post Comment