গত কয়েক মাস ধরে বিবেক দেবরায়, আদিত্য সিনহা, বরখা দাত্, আমির উল্লা খান-এর মতো বিভিন্ন বিষয়ে নামকরা লোকজন ‘মিন্ট’ (ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২), ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ (ডিসেম্বর ১০, ২০২১) এবং ‘নিউজ ১৮’ (ডিসেম্বর ৭, ২০২১)-এর মতো পত্র-পত্রিকা এবং সংবাদ মাধ্যমে অনবরত একথা প্রচার করে চলেছেন যে, যাঁরা কোভিড-১৯-এর টিকা নেননি তাঁরা শুধু নিজেদেরই বিপদ ডেকে আনছেন না, অন্যদের পক্ষেও তাঁরা বিপজ্জনক। অথচ এমন দাবির সপক্ষে কোনও যুক্তি বা তথ্য নেই।
গত ২ মে, ২০২২ তারিখে দেশের সুপ্রীম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, কোভিড-১৯-এর জন্য টিকা নেওয়ার হুকুম সামঞ্জস্যহীন এবং সংবিধানের পরিপন্থী। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় সত্ত্বেও বানজোত কাউর (‘দি ওয়ার সায়েন্স’, মে ১২, ২০২২), তানিশক গোয়েল এবং রিশভ নারায়ণ সিং (‘দি হিন্দু’, মে ২৪, ২০২২) প্রমুখ বিজ্ঞান সাংবাদিকরা এই টিকাকে নাগরিকদের মধ্যে বাধ্যতামূলক করার পক্ষে সওয়াল করে চলেছেন। অথচ তাঁদের হাতে তথ্য অপ্রতুল, যুক্তিও ভঙ্গুর।
এই সওয়ালের বিপক্ষে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সংস্থার যুক্তি নিম্নরূপ -
ক) জীববিজ্ঞানের বুনিয়াদী যুক্তি।
কম-বেশি কোভিড সংক্রমণের ফলে ইতিমধ্যে অধিকাংশ জনমানুষের মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে। যাঁরা টিকাকে বাধ্যতামূলক করতে চান তাঁরা এই প্রমাণ গোপন করেন অথবা তাকে মূল্য দিতে চান না।
খ) পরিসংখ্যানের বুনিয়াদী যুক্তি।
যাঁরা টিকার কার্যকারিতার হিসেব দেখাচ্ছেন তাঁরা একটা নির্দিষ্ট সময়ে অন্যান্য কারণে মৃত্যুর হিসেবগুলো দেখাচ্ছেন না: সব মৃত্যুই নাকি কোভিড-জনিত মৃত্যু! বয়সের সঙ্গে সংক্রমণের ঝুঁকি যে বাড়ে বা কমে সেই হিসেবও দেখাচ্ছেন না। টিকার প্রথম ডোজ এবং দ্বিতীয় ডোজ-এর ২১ দিন পর, এই মধ্যবর্তী সময়ে কারোর মৃত্যু ঘটলে হিসেবে দেখানো হচ্ছে, টিকা না-নেওয়ার ফলেই এই মৃত্যু। এমনকী, যারা ‘আরটিপিসিআর’ পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’ ছিলেন তাঁদের মৃত্যুর সঙ্গে কোভিড-১৯-এর ফলে যাদের মৃত্যু ঘটেছে তাঁদের এক করে দেখানো হচ্ছে; অথচ মৃত্যুর কারণ এইভাবে দেখানো যায় না তাই এই হিসেব ভুল।
গ) বুনিয়াদি যুক্তি।
কোভিড-১৯-এর কোনও টিকা কোথাও আজও বিজ্ঞানসম্মত অনুমোদন পায়নি। যেসব টিকা বাজারে চলছে তা সবই আপৎকালে, পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের ছাড়পত্র পেয়েছে মাত্র। যে-টিকার অনুমোদন নেই তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলতে পারে, কিন্তু তাকে বাধ্যতামূলক করার কথা ওঠে কীভাবে?
ঘ) বুনিয়াদি অঙ্ক।
টিকা দুবার নিলেই যথেষ্ট, নাকি তিন বার বা চার বার, অথবা প্রতি নয় মাস অন্তর, নাকি তিন মাস, না ছয় মাস? এইসব প্রশ্নের উত্তর কারোর জানা নেই, কেননা পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার পরিণতি যখন আজও অজানা তখন তা বাধ্যতামূলক হয় কীকরে?
ঙ) বিভ্রান্তিকর দাবি।
তথ্যপ্রমাণ বলছে যে, কোভিড-এর টিকা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে পারে না। বরং এমন তথ্যপ্রমাণ আছে যে, এই টিকাকরণের সঙ্গে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে।
এও এক বিভ্রান্তিকর দাবি যে, টিকা নিলে এই ভাইরাস নাকি আর নতুন রূপ পরিগ্রহ করতে পারবে না। কিন্তু বিজ্ঞানের শিক্ষা এই যে, যে-টিকা সংক্রমণ আটকাতে পারে না তা ব্যবহার করলে, বিবর্তনের চাপে ভাইরাস নতুন এবং আরও মারাত্মক রূপ পরিগ্রহ করতে পারে।
চ) প্রতিকূল ঘটনাবলি।
অ্যাস্ট্রাজেনিকার টিকা (যা কোভিশিল্ড-এর মতোই) নেওয়ার কুফলের হার ০.৫ শতাংশ (অর্থাৎ ২০০ জন টিকা নিলে ১ জন কুফলে ভুগবে)। নরওয়ে থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। আমাদের দেশে রাজস্থান অঞ্চলে দেখা গেছে, প্রতি সাত জনের মধ্যে একজন টিকা-জনিত কুফলের ভাগীদার হয়েছেন।
এইসব তথ্য বিভিন্ন সময়ে নানান জার্নাল এবং সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে। তাই সর্বজনীন স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে যে, ভাইরাস নিয়ে যদি রটনা চলতে পারে তাহলে টিকা নিয়েও বিতর্ক চলুক। যারা আজও টিকাকে বাধ্যতামূলক করার পক্ষে রায় দিচ্ছেন তাঁরা গণবিতর্কে অংশগ্রহণ করুন। এই সংস্থা গণবিতর্কের কথা এর আগেও বলেছে। এই মর্মে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই সংস্থা জানিয়েছিল যে, পত্রপত্রিকা এবং সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকীয় বিভাগ, স্কুল, কলেজ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সর্বময় কর্তারাও বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু প্রচারক বা নীতিনির্ধারকরা আজ অবধি কেউ এই ডাকে সাড়া দেয়নি। তা সত্ত্বেও এই সংস্থা পুনরায় জানাচ্ছে যে, উৎসাহী যে কেউ admin@uho.org-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।