পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

লেনিন ও সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম

  • 22 April, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 793 view(s)
  • লিখেছেন : সৌভিক ঘোষাল
‘ইম্পিরিয়ালইজম : দ্য হায়েস্ট স্টেজ অব ক্যাপিটালিজম’ নামক বইতে লেনিন দেখান সাম্রাজ্যবাদের আমলে দেখা দেয় বড় বড় একচেটিয়া কারবার ও পুঁজিপতিদের জোট। এই সাম্রাজ্যবাদকে তাই লেনিন বলেন একচেটিয়া পুঁজিবাদ। বিশ্বের কাঁচামালের উৎস, পণ্যোৎপাদন ও বাজারের একটা বৃহৎ অংশ দখল করে নেয় একচেটিয়া মালিকেরা। বুর্জোয়া রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে প্রভুত্ব করতে থাকে তারা, সরকারগুলির ওপর নিজেদের অভিপ্রায়কে চাপিয়ে দেয়। আজ ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনকে আবার পড়া জরুরি।

১৯০৫ এর বিপ্লবকে লেনিন ও বলশেভিকরা চিহ্নিত করেছিলেন চরিত্রগতভাবে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব বলে। তার লক্ষ্য ছিল ভূমিদাসপ্রথার জের বিলোপ, জারতন্ত্রের উচ্ছেদ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার লাভ। লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা মনে করেন প্রলেতারিয়েতের স্বার্থ হল বুর্জোয়া বিপ্লবের পরিপূর্ণ বিজয়, কারণ এর মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম সন্নিকট ও লঘুভার হবে। সেইসঙ্গে এও তাঁরা মনে করেছিলেন এটি চরিত্রগতভাবে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব হলেও এর চালিকাশক্তি ও নেতা হতে হবে প্রলেতারিয়েতকেই। কারণ রাশিয়ার বুর্জোয়ারা ছিল প্রলেতারিয়েতের ভয়ে ভীত এবং সেই জায়গা থেকে জারতন্ত্রের সংরক্ষণের পক্ষে। বলশেভিকরা বললেন কৃষকদের সহযোগিতায় প্রলেতারিয়েতদের বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং জনগণের কাছ থেকে বুর্জোয়াদের বিচ্ছিন্ন ও একঘরে করতে হবে। মর্মবস্তুর দিক থেকে এটি বুর্জোয়া বিপ্লব হলেও সংগ্রাম পদ্ধতির দিক থেকে এটি তাই প্রলেতারিয় নির্ভর। এই দ্বান্দ্বিকতাকে মেনশেভিকরা আয়ত্ত করতে পারে নি এবং তারা সরলভাবে মনে করেছিল যেহেতু এটি চরিত্রগতভাবে বুর্জোয়া বিপ্লব, তাই তার পুরোভাগে থাকবে বুর্জোয়ারাই। শ্রমিক শ্রেণির কর্তব্য কেবল বুর্জোয়াদের সাহায্য ও সমর্থন করা। লেনিন দেখান মেনশেভিকদের এই মূল্যায়ন প্রলেতারিয়েত এর রাজনীতিকে বুর্জোয়াদের অধীনস্থ করে তুলছে এবং তা মার্কসবাদের বিপ্লবী চরিত্রকে বিকৃত করছে।

লেনিন একইসঙ্গে এও বলেছিলেন কৃষকদের সাথে মৈত্রীর ভিত্তিতে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কাজ সমাধা করেই প্রলেতারিয়েতের কাজ শেষ হয়ে যাবে না। সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তার অর্জিত শক্তিকে ব্যবহার করে সে আঘাত হানবে পুঁজিবাদের ওপর। এইভাবে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব এগিয়ে চলবে সমাজতান্ত্রিক বিজয়ের দিকে। ‘টু ট্যাকটিকস অব সোশ্যাল ডেমোক্রেসি’ বইতে যে সূত্রায়ন করেন তা সারা বিশ্বে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রামরত সমস্ত মানুষের কাছেই এক অতি গুরূত্বপূর্ণ শিক্ষা।

১৯০৫ সালের বিপ্লবের জোয়ার থিতিয়ে এলে জারতন্ত্র তীব্র আক্রমণ নামিয়ে আনে। হাজার হাজার বিপ্লবীর কারাবাস হয়। অনেককে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়। পুলিশ শ্রমিক সংগঠনগুলি ভেঙে দিতে থাকে।  ফলে পার্টির সভ্যসংখ্যা কমে যায়। সংগঠনগুলির আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।  পার্টি পুরোপুরি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে বাধ্য হয়। বিপদ একদিকে যেমন জারের হামলার মধ্যে দিয়ে আসছিল, তেমনি আসছিল মতাদর্শগত হামলার মধ্যে দিয়ে। মেনিশেভিকরা এই পিছু হটার পর্বে নানারকম মতবাদ নিয়ে আসে যা পার্টিকর্মীদের বিদ্যমান ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণের পথ দেখায়, এমনকী সমগ্র সংগঠনের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তোলে। লেনিন ও বলশেভিকরা বলেছিলেন হামলার মুখে পশ্চাদপসরণ করতে হলেও তা করা দরকার সুশৃঙখলভাবে, বাহিনী অটুট রেখে। বিপ্লবের জন্য তুচ্ছতম সব মামুলী কাজও গুরুত্বের সাথে করে যাওয়া প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় দ্যুমা বা পার্লামেন্টে বক্তৃতা দেবার যে কোনও সুযোগের সদব্যবহার করে নিতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন, বীমা তহবিল, সমবায়, শ্রমিক ক্লাবগুলোতে নিয়মিত কাজ করা দরকার। লেনিন আইনী পদ্ধতিতে কাজ ও বে আইনী কাজের মধ্যে উপযুক্ত মেলবন্ধনের প্রয়োজনিয়তার ওপর বিশেষ গুরূত্ব দেন।

অন্যদিকে মেনশেভিকরা হাজির করে দমনের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পার্টির কর্মসূচী ও বৈপ্লবিক ধ্বনি পরিহার করার লাইন। বিপ্লবে আস্থা ছেড়ে বুর্জোয়াদের সাথে আপোষ করে নেওয়ার কথা ছড়াতে থাকে তারা। এই প্রবণতাকে লেনিন চিহ্নিত করেন লিকুইডেশনইজম বা বিলোপবাদ বলে। অর্থাৎ প্রলেতারিয়েতের পার্টি সংগঠন ও আদর্শকেই বিলোপবাদীরা লুপ্ত করে দিতে চায়।

ধর্ম ও ভাববাদের দিক থেকেও মার্কসীয় মতাদর্শকে বিপথে চালিত করার বেশ কিছু প্রবণতা এই সময়ে দেখা যায়। এমনকী মার্কসবাদকে ধর্মের একটা নতুন রূপ হিসেবে কল্পনা করে কোনও কোনও মহল থেকে লেখা হতে থাকে। এইসমস্ত বিতর্কের প্রেক্ষিতে বস্তুবাদী দর্শনিক প্রস্থানকে সবলে সামনে আনা ও কুহেলিকার জাল ছেঁড়ার প্রয়োজনে দর্শন শাস্ত্রের আঙিনায় পদার্পণ করেন লেনিন। প্রচুর পঠন, বিশ্লেষণ, অধ্যাবসায়ের ফল হিসেবে প্রকাশিত হয় "বস্তুবাদ ও প্রত্যক্ষ বিচারবাদ" নামে তাঁর একেবারে অন্য ধরনের একটি বই। ১৯০৯ সালে প্যারিসে আয়োজিত হয় রুশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির পঞ্চম কংগ্রেস। বিলোপবাদী ও প্রত্যাহারপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন লেনিন এবং সম্মেলনে এ অবস্থান স্বীকৃতি পায়।

স্থিতাবস্থার এই পর্বে লেনিন বলশেভিকদের কৃষি কর্মসূচীর দিকটি নিয়ে বিশেষ পরিশ্রম করেন। ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেসির কৃষি কর্মসূচী’ বইটিতে তার প্রমান আছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পরেই প্রলেতারিয় আন্তর্জাতিকতার ক্ষেত্রে পিছু হটার একটা পর্ব শুরু হয়। ইউরোপের বিভিন্ন সমাজ গণতান্ত্রিক দলগুলো নিজ নিজ দেশের যুদ্ধস্বার্থ তথা জাতীয় বুর্জোয়াদের লেজুড়বৃত্তি শুরু করে। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কার্যত ভেঙে যায়, কেননা শ্রমিক শ্রেণির বিভিন্ন দল নিজ নিজ দেশের পুঁজির স্বার্থে পরস্পরের শত্রু শিবিরে দাঁড়িয়ে যায়। ফ্রান্স, ইংলন্ড এবং বেলজিয়ামে সোশালিস্টরা সরাসরি সরকারে যোগ দেয়। জার্মানীতে সরকারে যোগ না দিলেও যুদ্ধ চালানোর জন্য ব্যয়বরাদ্দের পক্ষে তারা ভোট দেয়। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের মধ্যে থাকা বেশীরভাগ দল প্রচার করে সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, সমস্ত দেশের শ্রমিকদের শ্রেণি ঐক্য, তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্ববোধ হল শান্তিকালীন সময়ের ব্যাপার। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নিজ দেশের বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা তাদের ভুলতে হবে। সব কিছুকে হতে হবে যুদ্ধের অধীন। রাশিয়ায় প্লেখানভের মতো সম্মানীয় মার্কসবাদীও এই ভুল পথ নেন। বলশেভিক পার্টি ও তার নেতা লেনিনের নেতৃত্ব এই নিরিখে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছিল। লেনিন ও বলশেভিকরা যুদ্ধের প্রথম থেকেই দ্বিধাহীনভাবে এই যুদ্ধকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ বলে বর্ণনা করেন ও এটা স্পষ্ট করে দেন যে জাতীয়তাবাদের নামে নিজ নিজ দেশের বুর্জোয়াদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থকে মদত দেওয়া শ্রমিকদের কাজ নয়। দেশ বিদেশের প্রতিকুল স্রোত এবং অজস্র ধরপাকড় অত্যাচার নির্যাতনের মুখে দাঁড়িয়েও বলশেভিকরা তাদের যুদ্ধবিরোধী অবস্থানে অটুট থাকে। লেনিনের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কর। তিনি বললেন অপর দেশের যে সমস্ত মজুরী দাসেরা আমাদের ভাই তাদের বিরুদ্ধে নয়, অস্ত্র ঘুরিয়ে ধরতে হবে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া সরকারের বিরুদ্ধে। যুদ্ধের সময়েও প্রলেতারিয় বিপ্লবের আহ্বানকে ভুলে যাওয়া চলে না। লেনিন আহ্বান রাখলেন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে পরিণত করার পক্ষে, যা সংগঠিত হবে নিজ নিজ দেশের বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণি ও মেহনতি জনতার বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে। ‘ইউরোপীয় যুদ্ধে বিপ্লবী সোশ্যাল ডেমোক্রেসির কর্তব্য’, ‘সমাজতন্ত্র ও যুদ্ধ’ প্রভৃতি বইতে লেনিনের এই সমস্ত চিন্তা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের যে নতুন সময়ে দুনিয়া প্রবেশ করল তাকে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে লেনিন লেখেন ‘ইম্পিরিয়ালইজম : দ্য হায়েস্ট স্টেজ অব ক্যাপিটালিজম’ (সাম্রাজ্যবাদ : পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়) নামক ক্লাসিকটি। এই বইতে লেনিন দেখান সাম্রাজ্যবাদের আমলে দেখা দেয় বড় বড় একচেটিয়া কারবার ও পুঁজিপতিদের জোট। এই সাম্রাজ্যবাদকে তাই লেনিন বলেন একচেটিয়া পুঁজিবাদ। বিশ্বের কাঁচামালের উৎস, পণ্যোৎপাদন ও বাজারের একটা বৃহৎ অংশ দখল করে নেয় একচেটিয়া মালিকেরা। বুর্জোয়া রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে প্রভুত্ব করতে থাকে তারা, সরকারগুলির ওপর নিজেদের অভিপ্রায়কে চাপিয়ে দেয়। মুষ্টিমেয় সাম্রাজ্যবাদী দেশ নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেয় প্রায় সারা বিশ্বকে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিকাশের অসমতা বৃদ্ধি পায়। মুনাফার তাড়নায় সাম্রাজ্যবাদীরা শ্রমিক ও সমস্ত মেহনতিদের শোষণ বাড়িয়ে তোলে, তাদের অবস্থা হয়ে ওঠে অসহ্য। বিপ্লবের আবশ্যিকতা বুঝতে শুরু করে প্রলেতারিয়েত। সেই সঙ্গে মুষ্টিমেয় সাম্রাজ্যবাদী দেশের দ্বারা নিপীড়িত যে উপনিবেশ ও আধা উপনিবেশে কোটি কোটি লোকের বাস তাদের সঙ্গে বিরোধ প্রখর হয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির। লেনিন দেখান কীভাবে পুঁজিবাদ ক্রমশ হয়ে উঠেছে প্রতিক্রিয়াশীল, সমাজের বিকাশের পথে এক মহা বিঘ্ন। মানবসমাজের সামনে অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটা অথবা উপনিবেশ, একচেটিয়াদের বিশেষ সুবিধা, সব ধরনের পীড়নে অভ্যস্ত হয়ে পড়া। সাম্রাজ্যবাদ মানবসমাজকে এক বিশেষ অর্থে সমাজতন্ত্রের কাছাকাছি নিয়ে আসে।

১৯১৭ র ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে রাশিয়ায় জারতন্ত্রের পতনের পর যে বুর্জোয়া সরকার ক্ষমতায় আসীন হয় তা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিলেও যুদ্ধ বন্ধ করার পক্ষপাতী ছিল না। অক্টোব্রিস্ট এবং কাদেতদের সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে সোশ্যাল রিভোলিউশনারি ও মেনশেভিকরাও। তারা তখনো সমাজতন্ত্রের দিকে হাঁটতে রাজী ছিল না। তাদের বক্তব্য ছিল জারতন্ত্রের পতনের পর বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা দরকার, কারণ রাশিয়া তখনো সমাজতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত নয়। লেনিন এই পরিস্থিতিতে বলশেভিকদের কার্যপ্রণালী নির্ধারণের জন্য বিকশিত ও বিকাশমান দিকগুলির বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন বিপ্লবের প্রথম পর্যায়টিই কেবল সমাপ্ত হয়েছে এবং তার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা গেছে বুর্জোয়াদের হাতে। তিনি স্লোগান তুললেন সোভিয়েতগুলির হাতে সমস্ত ক্ষমতা তুলে দেবার জন্য। বিপ্লবের চূড়ান্ত মুহূর্তকে কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য লেনিন দীর্ঘদিন পর অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলে এলেন রাশিয়ায়। পেত্রোগাদে তাঁকে ১৬ এপ্রিল ১৯১৭ তে অভ্যর্থনা জানাল হাজার হাজার শ্রমিক। এর পরের দিনই লেনিন বলশেভিকদের সভায় প্রলেতারিয়েতের কর্তব্য নির্দেশ করে একটি বক্তৃতা দেন। এটি ‘এপ্রিল থিসিস’ নামে বিখ্যাত। নতুন পরিস্থিতির বিশ্লেষণ ও কার্যাবলী নির্ধারণে এই থিসিসের গুরুত্ব ছিল বিরাট। এখানে বুর্জোয়াদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছে যে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব তা থেকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংগ্রামের প্রত্যক্ষ ও সুস্পষ্ট পরিকল্পনা হাজির করলেন লেনিন। বললেন ক্ষমতা যাওয়া চাই শ্রমিক শ্রেণি ও গরীব কৃষকের হাতে। সব ক্ষমতা চাই সোভিয়েতের হাতে, সাময়িক সরকারকে কোনও সমর্থন নয় – এর রণধ্বনি তিনি স্থির করেন। তিনি বোঝালেন কেবল সোভিয়েতগুলির রাজই পারে জনগণের জন্য শান্তি, কৃষকদের জমি এবং ক্ষুদিতদের রুটি দিতে। সেইসঙ্গে তিনি এও সতর্ক করে দিলেন এখনই সাময়িক সরকারকে উচ্ছেদের ডাক না দিতে, কারণ তাদের সমর্থন করছে সোভিয়েতগুলি, আর তাদের বিশ্বাস করে জনগণ। লেগে থেকে ধৈর্য সহকারে মেহনতিদের স্বপক্ষে টানতে হবে বলশেভিকদের, সোভিয়েতগুলিতে সংখ্যাধিক্য অর্জন করে সেগুলিকে বলশেভিক সোভিয়েত করে তুলতে হবে। এইসব কাজগুলিই নভেম্বর বিপ্লবের সাফল্যের ভিত্তি রচনা করেছিল।

 

 

0 Comments

Post Comment