পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

সঙ্ঘপরিবার ও কি বলছে 'ভারত জোড়ো'?

  • 14 October, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 1292 view(s)
  • লিখেছেন : অত্রি ভট্টাচার্য
রাহুল গান্ধীর ' ভারত জোড়ো যাত্রা " বহুদিন পর বিজেপির সরকারের কোনো কাজের প্রতিক্রিয়ায় নয়, স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের দিক থেকে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেস নিজের অ্যাজেন্ডা সেট করছে। সেই কারণেই, এই পদযাত্রার একমাসের মধ্যেই সঙ্ঘের অনেককেই প্রথমবারের জন্য বিজেপি সরকারের আমলে বাড়তে থাকা বেকারত্ব, দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে।

সম্প্রতি বহুনিন্দিত মিখাইল গর্বাচেভ মারা গেলেন। একদা সঙ্ঘের তাত্ত্বিক রাম মাধব 'গ্লাসনোস্ত ইন আরএসএস' নামক প্রবন্ধে লিখেছিলেন, মোহন ভাগবতের হাত ধরে কিভাবে আরএসএসের অভ্যন্তরীণ নীতি ও বহিরঙ্গের ইমেজে খোলা হাওয়া নীতির প্রবেশ ঘটছে। ঠিক যেভাবে, আশির দশকের মাঝামাঝি সোভিয়েত দেশে, কমিউনিজমকে পুরোপুরি প্রত্যাখান না করেও কয়েকটি তথাকথিত 'খোলাবাজারে'র অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেন গর্বাচেভরা, যাকে বলা হয়েছিল গ্লাসনোস্ত, যা অচিরেই বদলে দিয়েছিল পূর্ব ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্র। যদিও, সঙ্ঘের ভিতরে প্রথম বড়সড় সাংগঠনিক উদারনীতি বা নমনীয়তা, যাই বলা হোক, দেখিয়েছিলেন তৃতীয় সরসঙ্ঘচালক বালাসাহেব দেওরস। তিনি সঙ্ঘের রাজনীতিকে জনপ্রিয় অর্থে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনটি প্রায় মন্ত্রের মত নিদান প্রতিটি শাখায় ছড়িয়ে দেন- সেবা, সম্পর্ক (যাকে ইদানীং কর্পোরেট ল্যাঙ্গুয়েজে পাবলিক রিলেশন বলা হয়) এবং প্রচার (এক্ষেত্রে সঙ্ঘের চিন্তাভাবনা, দর্শন)। বিগত কয়েকদিন ধরে, বর্তমান সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতকে সেই আগ্রাসী 'গ্লাসনোস্ত'কে প্রয়োগে আনতে দেখা যাচ্ছে। কখনো তিনি ভারতীয় সমাজের প্রথমসারির মুসলমান  বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে দেখা করছেন, কখনো তিনি ইমামদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, এমনকি মাদ্রাসায় যাচ্ছেন। আবার, দশেরার ভাষণে বলছেন নারীস্বাধীনতা ও সংবিধান মেনে চলার কথা, আবার সম্প্রতি বলেছেন হিন্দু সমাজের জাতপাতের চিন্তা ভুলে যাওয়া উচিত। অনেকেই বলছেন, এ যদি সঙ্ঘের 'গ্লাসনোস্ত' নাও হয়, আদপে এটা সঙ্ঘের 'কংগ্রেসীকরণ' তো বটেই। আরেক দিকে, কংগ্রেসের তলানিতে ঠেকা নিজস্ব 'পাবলিক রিলেশন'কে চাঙ্গা করতে রাহুল গান্ধী আসমুদ্রহিমাচল পদযাত্রা করছেন 'ভারত জোড়ো' যাত্রার নামে। সেখানে রাহুলের পাশে সক্রিয়ভাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-র নির্বাচনী ফলাফল বেরোনোর পর 'কংগ্রেসের মৃত্যু'কামনা করা, বিভিন্ন গণআন্দোলনের মুখ, গান্ধীবাদী সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদবকে। তিনি এই পদযাত্রাকে অন্য কোনো 'রাজনৈতিক তামাশা'র সঙ্গে এক করে দেখতে রাজি নন। তার জন্য তিনি প্রায় ছয়টি কারণ দেখিয়েছেন। প্রথমত, যোগেন্দ্র মনে করছেন বহুদিন পর বিজেপির সরকারের কোনো কাজের প্রতিক্রিয়ায় নয়, স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের দিক থেকে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেস নিজের অ্যাজেন্ডা সেট করছে। সেই কারণেই, এই পদযাত্রার একমাসের মধ্যেই সঙ্ঘের অনেককেই প্রথমবারের জন্য বিজেপি সরকারের আমলে বাড়তে থাকা বেকারত্ব, দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, পদযাত্রার রাজনৈতিক প্রকাশভঙ্গির সঙ্গে একটি সাংস্কৃতিক অ্যাডভান্টেজ রয়েছে। এই ধরণের পদযাত্রা, রাজনৈতিক দল ও মানুষের মধ্যে শারীরিক দূরত্বকে অনেকখানি নিরসন করছে। তৃতীয়ত, এটা যেহেতু কোনো লোক দেখানো ভার্চুয়াল প্রতিবাদ পদ্ধতি নয়, তাই মাঠে ময়দানে বিজেপি-আরএসএস বিরোধী জনতাকে এককাট্টা করা যাচ্ছে। সংকেতটি পরিষ্কারভাবে এই যে, সংসদ নিশ্চুপ হয়ে থাকলেও, সড়কের লড়াই জারী আছে। চতুর্থত, যোগেন্দ্র পদযাত্রাটিতে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন, এই পদযাত্রা কেবলমাত্র কংগ্রেসের নেতা কর্মীদের পদযাত্রা আর নেই, হয়ে উঠেছে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম। যে কারণে, বিজেপির দোর্দণ্ডপ্রতাপ আইটিসেল খুব চেষ্টা করেও, এই পদযাত্রাকে ফ্লপ সাব্যস্ত করতে পারছেনা। পঞ্চমত, যোগেন্দ্র বলছেন রাহুল গান্ধী সেই বিরলতম রাজনীতিবিদ, যিনি এইমুহূর্তে বিজেপির বিরোধীতা করছেন কেবলমাত্র সেকুলারিজম রক্ষার্থে নয়, অর্থনৈতিক ইস্যুগুলির ভিত্তিতেও। এমনকি তিনি নরেন্দ্র মোদীর, ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট বন্ধুদেরও সরাসরি আক্রমণ করছেন।
ষষ্ঠ ও শেষ কারণ হিসাবে, যোগেন্দ্র উল্লেখ করেছেন এই পদযাত্রার উদ্যেক্তা জাতীয় কংগ্রেস হলেও, বহু রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যাদের সঙ্গে কংগ্রেসের মতাদর্শগত বিরোধ রয়েছে তারাও এই 'ভারত জোড়ো যাত্রা'কে সমর্থন করছেন। যার ফলশ্রুতিতে আমরা প্রয়াত সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী গৌরী লঙ্কেশের মায়ের সঙ্গে রাহুল গান্ধীকে একত্রে হাঁটতে দেখছি।

এবার দেখা যাক, এর বিপ্রতীপে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত কি করছেন? তিনি যা করছেন, সেটা বোঝার জন্য আমাদের খানিক পিছনে যেতে হবে, যখন সঙ্ঘের গুরুজী গোলওয়ালকরকে ঘোড়ার গাড়িতে আসতে দেখে ক্রুদ্ধ যুবক বালাসাহেব দেওরস, যিনি নিজে পরে সরসঙ্ঘচালক হবেন, বলেছিলেন- 'প্রকৃত সরসঙ্ঘচালক পায়ে হেঁটে ঘুরবে'। মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রাখা, ব্রাহ্মণ- অব্রাক্ষণের ভেদ ভুলে সকলেই হিন্দু একথা বোঝানো, সঙ্ঘের ভিতরে নিজেকে ঈশ্বরবিরোধী 'কমিউনিস্ট' বলে জাহির করা বালাসাহেব সঙ্ঘের প্রধান তিন গণসংগঠন তৈরী করেন আদিবাসী অঞ্চলে কাজ করার জন্য 'বনবাসী কল্যাণ আশ্রম', ছাত্রসংগঠন 'অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ' ও শ্রমিক সংগঠন 'ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ'। মনে রাখতে হবে জরুরী অবস্থার সময়ে গুজরাত নবনির্মাণ আন্দোলনের ইন্দিরা বিরোধী মুখ হয়ে উঠেছিল, এবিভিপি। সেই আন্দোলনের অন্যতম ফসল আজকের প্রধানমন্ত্রী মোদী।
দেওরস চাইতেন না আরএসএস শেষমেশ একটি 'স্পিরিচুয়ালিস্ট কাল্ট'-এ পরিণত হোক, তাই তিনি জনসংযোগ ও সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে সনাতন হিন্দু ধর্মের আদর্শ পৌঁছে দেওয়ার জন্য জরুরী অবস্থার সময়কালকে ব্যবহার করেন। সেই সময়ে সবথেকে লোকপ্রিয়,  সমাজতন্ত্রী মুখ জয়প্রকাশ নারায়ণ তার সম্পর্কে বলেছিলেন 'যদি তুমি ফ্যাসিস্ট হয়, আমিও ফ্যাসিস্ট'। আমাদের দেশের প্রথমসারির বুর্জোয়া রাজনৈতিক নেতৃত্বের, ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে ধারণা ও হিন্দুত্ববাদের প্রতি সহজাত ঝোঁক এর থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়।

প্রথমে, আমাদের অনুধাবন করতে হবে মোহন ভাগবতের দশেরার বক্তব্যের রাজনৈতিক- সামাজিক গুরুত্ব। জেনে রাখা ভাল, ঐতিহাসিক পরম্পরায় সঙ্ঘের সরসঙ্ঘচালকরা দশেরার দিন নাগপুর থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে থাকেন, এছাড়াও 'অস্ত্রপূজা' ইত্যাদি হয়। এবং, সেখানে প্রতিবছর প্রধান অতিথি হিসেবে কোনো না কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকেন। যেমন, ১৯৯২-তে বাবরি মসজিদ ধংব্বসের দুমাস আগের, তৎকালীন সরসঙ্ঘচালক বালাসাহেব দেওরসের দশেরার বক্তৃতায় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ও লেখক অরুণ শৌরি, বিশিষ্ট শিল্পপতি যুগলকিশোর বিড়লা প্রমুখরা। মনে রাখতে হবে, এর আগে অবধিও সঙ্ঘের বাইরের লোক ও কলকারখানা-কেন্দ্রিক শিল্পের সম্পর্কে আরএসএসের ছুৎমার্গ ছিল। এবছর, প্রথমবারের জন্য একজন মহিলাকে প্রধান অতিথি হিসেবে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। যিনি হলেন, বিখ্যাত পর্বতারোহী সন্তোষ যাদব। আরএসএস সম্পর্কে জনপ্রিয় মত হল, এরা নারীবিদ্বেষী, মনুবাদী ও ফ্যাসিস্ট মতাদর্শে অনুপ্রাণিত। বোঝাই যাচ্ছে, সেই ইমেজ ভাঙ্গতে ভাগবত তৎপর হয়ে উঠেছেন। তিনি চাইছেন, সংখ্যালঘুদের মন থেকে সঙ্ঘের সম্পর্কে ভয় দূর করতে। এই দশেরার মঞ্চ থেকেই তিনি আগেও বলেছেন, 'মুসলমানদের অংশগ্রহণ ছাড়া হিন্দুরাষ্ট্র সম্ভব নয়'। 'রাষ্ট্রের' নির্মাণে পুরষ ও মহিলাকে একত্রে কাজ করতে হবে, 'সম্মান এবং স্বতন্ত্রতা' নারীপ্রশ্নে আরএসএসের এই ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়ে, নারীস্বাধীনতার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন মোহন ভাগবত। রাম মাধবের মতে, মোহন ভাগবতের এই 'গ্লাসনোস্ত', সঙ্ঘের রাজনৈতিক বিরোধীদের, মতাদর্শগত বিরোধিতার নিরস্ত্রীকরণে সাহায্য করে।

যে সঙ্ঘের বিরুদ্ধে মুসলিম নিধনের ও মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি, তাদের হঠাৎ মুসলমান জনসমাজের সঙ্গে জনসংযোগের হিড়িক দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এর আগেও সঙ্ঘের বেশ কয়েকজন সরসঙ্ঘচালক এই কাজ করেছেন। সঙ্ঘের আরেক তাত্ত্বিক শেষাদ্রি চারির মতে, এইধরণের সংযোগ ভারতীয় ইসলামকে আরবি প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য সঙ্ঘের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। ১৯৬১- সালে দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক গোলওয়ালকরের সঙ্গে একজন আরবি পন্ডিত, সৈফুদ্দিন জিলানির বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকের বিষয় ছিল, ইসলামের অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও তার ভারতীয়করণ। শেষাদ্রি, দি ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটিস কাউন্সিল কর্তৃক সদ্য প্রকাশিত 'থিওলজি, জুরিসপ্রুডেন্স অ্যান্ড সিনক্রেটিক ট্র্যাডিশনস: ইন্ডিয়ানাইজেশন অফ ইসলাম' বইটিরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আসলে, সঙ্ঘের এই প্রয়াসের মধ্যে একধরণের 'গুড মুসলিম' খুঁজে বার করার প্রবণতা যেতে পারে, যারা নিজের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে খানিক লজ্জিত, এবং অতি অবশ্যই ভারতরাষ্ট্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ। 'ঘর ওয়াপসি'র মতো রিচুয়ালভিত্তিক ফ্যাসিবাদের থেকে, 'তুমি আসলে হিন্দুই ছিলে' ন্যারেটিভের নমনীয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা সঙ্ঘ বুঝে গিয়েছে। তাই তারা একদা, পূর্বতন সরসঙ্ঘচালক কে সুদর্শনের তৈরী করা মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চকে পুনরুজ্জীবিত করছে, সঙ্ঘের আদর্শ সংখ্যালঘু সমাজের ভিতরে প্রবেশ করানোর জন্য। তাই, এস ওয়াই খুরেশি, নাজিব জঙ্গ, জামিরুদ্দিন শাহের মত মুসলিম সমাজের প্রাক্তন সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার 'ক্রিমি লেয়ার'-এর সঙ্গে বসে তারা বৈঠকও করছে, আবার তাদেরই সরকার মুসলিম অধিকারের রাজনৈতিক মঞ্চের উপর রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নও নামিয়ে আনছে।
সমাজতত্ত্ববিদ হিলাল আহমেদ একে বলছেন 'হিন্দুত্ব কনস্টিটিউশনালিজম', অর্থাৎ, সঙ্ঘের ও বিজেপির সংবিধান পাল্টানোর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে, এখন সে সংবিধানকে ব্যবহার করে, বিরোধীস্বরকে বশ্যতা স্বীকার করাবে, এবং নিজের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্তি ঘটাবে। আর, ইমাম ও উলেমাদের সঙ্গে সঙ্ঘের সম্পর্ক আজকের নয়, জরুরী অবস্থার সময়ে সঙ্ঘের কার্যকতারা ও জামাত- এ- ইসলামীর কর্মীরা একসঙ্গে জেল খেটেছেন, নসবন্দি ইস্যুতে তাদের সাথে দিল্লির জামা মসজিদের তৎকালীন ইমাম বুখারীর যোগসূত্র তৈরী হয়েছিল।

দলিতপ্রশ্নে সঙ্ঘের জড়তা অনেকদিন আগেই কেটে গিয়েছে, তাই সে সহজেই সকল হিন্দুকে একটি পরিচিতিসত্তার রাজনীতিতে একত্রিত করার ডাক দিতে পারে। ১৯৮০-৯০ এর মাঝামাঝি আরএসএস আদিবাসী, দলিত ও উত্তর- পূর্ব ভারতের মানুষের মধ্যে কাজ করার জন্য, আলাদা সার্ভিস সেল খোলে। এবং, এই সেবামূলক স্ট্র্যাটেজি এইসব অঞ্চলের খ্রিষ্টান মিশনারিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিযোগিতায় দ্রুততার সঙ্গে কাজে দিয়েছিল। বনবাসী কল্যাণ আশ্রম, ভারতীয় স্ত্রী শক্তি, রাষ্ট্রীয় সেবিকা সমিতি এবং বৈভব শ্রী নামের বিভিন্ন সংগঠনের আড়ালে থেকে, সঙ্ঘ দীর্ঘদিন ধরে জনজাতি ও নিম্নবর্গের মানুষের মধ্যে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে প্রবেশ করিয়ে চলেছে। সঙ্ঘের কাছে, আরো একটি চ্যালেঞ্জ ছিল- এই বর্গের মানুষের মধ্যে বামপন্থীদের ও আম্বেদকরবাদীদের জনপ্রিয়তা। মন্ডল কমিশন পরবর্তী সময়ে  নিজেদের ব্রাহ্মণ্যবাদী 'ধর্মপরায়নতা' থেকে সরে এসে সঙ্ঘ এখন, ওবিসি এবং দলিত মানুষকে 'ধর্মরক্ষক' হিসেবে দেখে।এক্ষেত্রে, তারা ব্যবহার করছে দলিত জনজাতির সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে, তাদের স্মৃতি-সত্তায় লুকিয়ে থাকা লোকগল্পের নায়কদের। যেমন, উত্তরপ্রদেশের পাসি জনজাতির নায়ক হিসেবে সুহেলদেবকে দেখা হয়, যিনি মুসলিম আক্রমণকারীদের হারিয়ে নিজের মাতৃভূমি রক্ষা করেছিলেন। তার জন্মজয়ন্তী ধুমধাম করে পালন করছে আরএসএস, পাসি জনজাতিকে রাষ্ট্রীয় রক্ষক শিরোমণি উপাধি দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, একই গতিতে হিন্দুত্বের আগ্রাসী আখ্যান এবং দলিত মানুষের অন্তর্ভুক্তিকরণ দুই-ই চলছে। হিন্দু- আদিবাসী সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে একই মন্দিরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, জনজাতির লোকদেবতার সঙ্গে হনুমানমূর্তি। সমাজতাত্ত্বিক ও লেখক বদ্রী নারায়ণ, তার বিস্তার ফিল্ডওয়ার্কের ভিত্তিতে জানিয়েছেন, দলিত বস্তিবাসীদের অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সমাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠার বাসনাকে কাজে লাগাচ্ছে সঙ্ঘ। একদা, বামপন্থী ও আম্বেদকরবাদীদের কাজের জায়গা এইসব অঞ্চলে প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে হনুমান চালিশা ও রামায়ণের সুন্দরকান্ডের পাঠ।

সুতরাং, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ভারতীয় রাজনীতির এক 'পেরেস্ত্রৈকা'র, এক পুনর্গঠনের, যখন ফেডারেলিজম স্রেফ কথার কথা থাকবেনা, কোনো অমিত শাহ বাঙালিকে চমকাবেনা, হয়ত রাহুল গান্ধীও তার ভারতযাত্রার মানচিত্রে বাংলাকে জুড়ে নেবেন।

তথ্যসূত্র-

https://indianexpress.com/article/political-pulse/rss-mohan-bhagwat-dussehra-speech-population-control-minority-women-8191048/

https://theprint.in/opinion/six-reasons-why-bharat-jodo-yatra-isnt-simply-a-routine-political-tamasha/1156123/

https://thewire.in/communalism/the-bjp-rsss-quest-for-the-acceptable-muslim

https://theprint.in/opinion/golwalkar-to-bhagwat-why-rss-chiefs-meet-muslim-leaders-de-arabisation-of-indian-islam/1148257/

Nilanjan Mukhopadhyay -The RSS: Icons of the Indian Right.

Republic of Hindutva: How the Sangh Is Reshaping Indian Democracy - Badri Narayan

Because India Comes First: Reflections on Nationalism, Identity and Culture - Ram Madhav

0 Comments

Post Comment