পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বিজেপি কি আর ফ্যাসিবাদী পথে ফিরতে পারবে?

  • 15 July, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 858 view(s)
  • লিখেছেন : বর্নালী মুখার্জী
সব ব্যর্থতা পেরিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রকে টিকিয়ে রেখে মোদী কি এই সব দোষ শুধরে নতুন করে ফ্যাসিস্ট হতে চাইছেন এবং রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রকেই যুদ্ধ অর্থনীতির মেরুদন্ড করে তুলতে চাইছেন? অনেকে বলতে পারেন কংগ্রেস ও তো বেসরকারিকরণ করেছিল, তাঁদের নীতির সঙ্গে তো বিজেপির নীতির ফারাক নেই, তাহলে দু'টো দল আলাদা কোথায়? ফারাক অবশ্যই আছে। বিজেপির মূল লক্ষ্য, কেন্দ্রীভবন, দলের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা।

বাজেটের আগেই জানা যাচ্ছে যে বেসরকারিকরণের কিছু প্রজেক্ট থেকে এনডিএ সরকার সরে আসছে। ভারত পেট্রোলিয়াম, দুটি ব্যাঙ্ক, একটি বীমা কোম্পানির বেসরকারিকরণের দিকে এগোচ্ছে না। তাহলে মোদীর পরিকল্পনা কি? ফ্যাসিস্ট হতে না পারার গ্লানি মুছে তবে কি তিনি ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন?  তিনি কি পারবেন আবার তাঁর ফ্যাসিস্ট পরিকল্পনা কার্যকর করতে? দশ বছরে যা তিনি পারেননি। তিনি কি পারবেন এদেশের একচেটিয়া পুঁজির একাংশকে বেছে তার নেতা হতে? তিনি কি পারবেন এদেশের আমলাতন্ত্রকে কব্জা করতে, যা তাঁর এতোদিনের আকাঙ্খা ছিল? দুর্নীতির লোভ থেকে নিজেকে এবং দলকে মুক্ত করে দেশের কোষাগার ভরতে পারবেন তিনি? তিনি কি পারবেন সকলের কাছে প্রিয় হওয়ার মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে? যা সাধারণ সংসদীয় দলের নেতাদের ক্ষেত্রে ভাল, কিন্তু ফ্যাসিস্ট হওয়ার পথে বড় বাধা। এই বেসরকারিকরণ থেকে পিছু হঠা দেখে এই প্রশ্নগুলোই মনে উঁকি দিচ্ছে।

কংগ্রেসী বেসরকারিকরণ আর ফ্যাসিস্ট বেসরকারিকরণ--- এই দুটি এক জিনিস নয়। ফ্যাসিস্ট সরকার সবসময় ঢালাও বেসরকারিকরণ করে না। বরং তারা যুদ্ধ অর্থনীতি ও পরিবেশ গড়ে তুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে শক্তিশালী করে। জার্মানিতে সেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে যুদ্ধের সাজ সরঞ্জাম তৈরির কারখানায় পরিবর্তিত করা হয়েছিল। এবং আরো যেটা বলার, ফ্যাসিস্ট নিয়ন্ত্রিত বেসরকারি এবং সরকারি সংস্থার বাইরে যেগুলি ছিল তাদের ধ্বংস করা হয়েছিল। কিন্তু গত দশ বছর সময় পেয়েও যুদ্ধ অর্থনীতি ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাদের যা যা করার কথা ছিল তা মোদী করতে পারেনি।

১। মোদিকে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির কোনো একটি লবিকে বেছে নিতে হতো। অথচ সেটাও হয়নি। হিটলার যা পেরেছিল। এক ঝটকায় ভার্সাই চুক্তি বাতিল করে নিজের দেশের একচেটিয়া পুঁজির একাংশকে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করিয়েছিল হিটলার। সিমেন্স, এআইজি, ফার্বেনদের রাস্তা দেখিয়েছিল। অথচ এদেশে মোদী একচেটিয়া ব্যবসায়ীদের একাংশের তেমন নেতা হতে পারেননি। আজ পুতিনকে চুমু খেয়েছেন তো কাল ট্রাম্পকে আদর করেছেন। টাটাকেও হাতে রেখেছেন, আদানিকেও। আম্বানির ও তিনি বন্ধু আবার আদানিরও বন্ধু। এভাবে ফ্যাসিস্ট হওয়া যায়!!!


টাটা গ্রুপ সফটওয়ার পরিষেবা রফতানিকারক সংস্থা টিসকোর সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার শেয়ার বেচতে চলেছে। তারা চাইছে, সেমিকন্ডাক্টার কারখানা স্থাপন করতে। টাটা তাইওয়ানের পিএসএমসি সংস্থার সাথে এক্ষেত্রে যৌথতায় যাবে ভেবেছে। এদিকে আদানিও সেমিকন্ডাক্টরে বিনিয়োগ চাইছেন, আদানির সাথে মার্কিন কোম্পানি কোয়াসিনমের কথা হয়েছে শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া আদানি ব্যাটারি চালিত গাড়িতে বিনিয়োগের জন্য চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি-র সাথে যোগাযোগ করেছে, আর একই ক্ষেত্রে আম্বানির বন্ধু হয়েছে মার্কিন কোম্পানি টেসলা। আবার টাটা গোষ্ঠী এখনও পর্যন্ত ভারতের বৈদ্যুদিন গাড়ি উৎপাদক হিসেবে এক নম্বরে। হয়তো একই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চাওয়া মেঘা গ্রুপকে আদানি দখল করে নেবে। মেঘা গ্রুপকে এই ক্ষেত্রে বিওয়াইডির সাথে যৌথভাবে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার, আগেই বলেছি। আদানি সহ ধনকুবেররা চীন মার্কিন দুই দিককেই সামলে চলছেন। কোনো গোষ্ঠিরই একদিকে ঝুঁকে পড়ার মত ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি দশ বছরে। এই ভাবে দুই বিপরীত যুযুধান পক্ষের মধ্য ভারসাম্য রক্ষা করে চলে যুদ্ধ অর্থনীতি বা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি মোদী এদেশে।


মোদীর উপর চরম আস্থা রাখতে হতো পুঁজির একাংশকে। আর বাকিদের চরম শত্রু হতে হতো। মোদী ব্যবসায়ীদের দোরে দোরে ইডি সিবিআই পাঠিয়েছিল বটে কিন্তু সেটা বিরোধী দলের চাঁদা বন্ধ করতে। আর মূলত তুলনায় ছোট খেলোয়াড়দের দোরে। কিন্তু জার্মানিতে হিটলার জনপ্রিয় হওয়ার ভ্রুক্ষেপ করেনি। যে গুটিকয়েক কোম্পানি হিটলারের পিছনে দাঁড়িয়েছিল তারা আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিকে বিন্দুমাত্র মান্যতা দেয়নি। যেমন ফার্বেন কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে এগিয়ে গেছিল হিটলারের সাথে। হিটলার জার্মানিতে যে সংস্থাগুলির সাহায্যে যুদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তুলেছিল, সেখানে কেমিক্যাল কোম্পানি ফার্বেন সব গিলে নিয়েছিল। কৃত্রিম রবার নিয়ন্ত্রণ করতো ১০০%, লুব্রিকেটিং তেল, ১০০%, সেরাম ১০০%, প্লাস্টিক ৯০%, ম্যাগ্নেশিয়াম ৮৮%, বিস্ফোরক ৮৪%, নাইট্রোজেন ৭৫%। মজার বিষয় হল হিটলার প্রতিষ্ঠিত একচেটিয়াদের একাংশকে হাত করার পাশাপাশি ছোট একটা বা দুটো কম্পানিকেও নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। যেমন দুগেসা কম্পানি। ফার্বেন বা সিমেন্স বা এ আইজি দের থেকে অনেক ছোট দুগেসা, আর তাই সে সুবিধা পেয়ে সম্পূর্ণ ভৃত্য পরিণত হয়েছিল। এই দেগুসা গ্যাস মাস্ক, রাবার টায়ারের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন ব্ল্যাক বানাতো, এবং ক্রমেই একাধিপত্য তৈরী করে ছিল এই ক্ষেত্রে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত একচেটিয়াদের মধ্যে দুই একটা আর প্রতিষ্ঠিত নয় এমন ব্যসায়ীকে একচেটিয়া বানানো ছিল হিটলারের নীতি। এই দেগুসাকে দিয়ে ইহুদিদের বাড়ির সোনা দানা লুটের কাজও করানো যেত। বিদ্যুত ক্ষেত্রে হিটলার ১৯৩৪ এবং ১৯৩৫ সালেই কার্টেল গুলিতে স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ জারি করলো।একটি বড় ছাতার তলায় এনে জানিয়ে দেওয়া হল এবার থেকে তাদের স্বাধীন সিধান্ত নেওয়ার আর কোনো ক্ষমতা থাকবে না। তাদের সরকারের যুদ্ধ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হবে। এক্ষেত্রে নেতা হল সিমেন্স আর এইজি। এরা ফার্বেনের মতই কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বন্দিদের দিয়ে কাজ করাতো। অস্ত্র ব্যবসায়ী যে প্রথম থেকেই ভার্সাই চুক্তি বাতিল করে তার ব্যবসায় ফেরত আসতে চাইবে সেটা বলাই বাহুল্য। ক্রুপ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী তাই চেয়েছিল এবং একাধিপত্য লাভ করেছিল। এক্ষেত্রে সে আর তিনটি সংস্থাকে জুড়ে নিয়েছিল, যার মধ্যে একটা আবার সিমেন্স। তার মানে সব মিলিয়ে ৬/৭ টা সংস্থা দেশ ও যুদ্ধ চালিয়েছিল। যদি এই ব্যবসাদার সংখ্যা অন্তত ৪০/৫০ হতো তবেই হিটলারের পক্ষে আর এই নিয়ন্ত্রণ রক্ষা সম্ভব হতোনা, তার যুদ্ধ অর্থনীতি দাঁড়াতোই না।

মোদী পারেনি আমলাতন্ত্রকে সেইভাবেই একাংশর পক্ষে দাঁড়ানোর মত করে গড়ে তুলতে। ফলে আম্বানি সব দলের নেতাদের ছেলের বিয়েতে ডাকছেন, মোদীকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। আম্বানি কংগ্রেসী ভাষায় কথা বলছেন। ২০২১ সালে মুকেশ আম্বানির একটি লেখা উদ্ধৃত করা যাক ....So far economic reforms have benefited Indians unevenly. The disparity is neither acceptable nor sustainable. Therefore, the Indian model of development should focus on creating wealth for the people at the bottom of the economic pyramid. Our greatest advantage lies in India's continent-sized domestic market, which is still largely untapped. Our economy will begin to witness miraculous growth when we create a middle class of one billion people with rising incomes.... For too long, we have been measuring wealth only in personal and financial terms. We have neglected the truth that India's true wealth lies in achieving 'Education for All', 'Health for All', 'Employment for All', 'Good Housing for All', 'Environmental Safety for All', 'Sports, Culture and Arts for All' and 'Opportunities for Self-Development for All' - in short, 'Happiness for All'. To attain these redefined parameters of prosperity, we have to bring care and empathy to the core of everything we do in business and society....

সব থেকে বড় কথা ফ্যাসিস্ট হতে গেলে টাকা লাগে। কোষাগারে পয়সা লাগে। বিজেপি চুরি করে সব ফাঁক করছে, কংগ্রেসী কায়দায় অবিরাম কর ছাড় দিচ্ছে, তাহলে চলবে কেন!!!

সুতরাং এই সব ব্যর্থতা পেরিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রকে টিকিয়ে রেখে দিয়ে মোদী হয় এই সব দোষ শুধরে নতুন করে ফ্যাসিস্ট হতে চাইছেন। রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রকেই যুদ্ধ অর্থনীতির মেরুদন্ড করে তুলতে চাইছেন।
নতুবা তিনি সম্পুর্ন ঔদাসীন্য বা ডিপ্রেশন রোগে ভুগছে।  'যা হচ্ছে হোক', 'কোষাগার ভরানো দরকার ছিল, না ভরে ভরুক' গোছের ভাবনার শিকার হচ্ছেন। আপাতত যেমন জনপ্রিয় আছি থাকি, এই ধরনের অ-ফ্যাসিস্ট মূল্যবোধের শিকার তিনি। সাধে কি আর নাগপুর ক্ষেপে লাল!!

0 Comments

Post Comment