২০০৯ সালে যখন আধার এনেছিল কংগ্রেস সরকার, তখন তার বিরোধিতা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১৬ সালে যখন ভারত সরকারের গেজেট প্রকাশিত হয় তখন দেখা যায় যে জম্মু এবং কাশ্মীরের বাসিন্দাদের ছাড়া অন্যান্য রাজ্যের জন্য আধার প্রযোজ্য হবে। তার মানে কোনও সরকারি সুবিধা পেতে গেলে আধার বাধ্যতামূলক হবে। আধার করানোর পিছনে যে যুক্তি নরেন্দ্র মোদীর সরকার দিয়ে থাকে তখনো তাই দিল। নোটবন্দীর পিছনেও যে যুক্তি ছিল আধার নাকি সন্ত্রাসবাদ কমাবে সেই একই যুক্তি। কিন্তু তাতেও কি কালো টাকা বা সন্ত্রাসবাদ কমেছে? আসলে এর পিছনে যে উদ্দেশ্য ছিল তা অত্যন্ত পরিষ্কার, সরকারী যে কোনও প্রকল্প বা ব্যাঙ্কের সঙ্গে, মোবাইল ফোন বা গ্যাসের সাবসিডি পাওয়ার জন্য সমস্ত কিছুর সঙ্গে আধারকে ঘুরিয়ে বাধ্যতামূলক ভাবে যুক্ত করা হল।
এই ফাঁদে কাশ্মীরের মানুষজনও পা দিলেন। দেখা গেল যে কাশ্মীরের প্রায় ৬৭ শতাংশ বাসিন্দারা আধার করিয়েছেন। সেটাকে বৈধতা দিতে ২০১৮ সালে যখন পিডিপির সঙ্গে বিজেপির মধুচন্দ্রিমা চলছে তখন আর একটি গেজেট প্রকাশ করা হল , যেটার নাম দেওয়া হল ‘জম্মু কাশ্মীর আধার আইন ২০১৮’। কাশ্মীরের মানুষ এই ‘সুবিধা’ পেতে এবং নিজেরা যে সন্ত্রাসবাদী নন তা প্রমাণ করতে দলে দলে আধার করালেন। কিছুদিন আগে গৃহমন্ত্রী বলেছেন বাকি ৩৩ শতাংশের জন্যও আধার লাগবে।
এরপর কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া হল এবং গত ৫ই আগস্ট থেকে আজ প্রায় ২৫ দিন কাশ্মীর সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। এর ফলে সেখানকার মানুষজন এই মুহূর্তে কি কি অসুবিধায় পড়েছেন?
১। গ্যাসের বুকিং করতে পারছেন না।
২। ব্যাঙ্কের লেনদেন করতে পারছেন না।
৩। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
৪। মোবাইলে কোনও রকম ওটিপি পাচ্ছেন না।
তাহলে কি দাঁড়ালো একজন মানুষকে আধার দিয়ে একটা সংখ্যায় পরিণত করে তারপর সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে সেই মানুষটিকে মেরে ফেলতে কি গণহত্যা করতে হয়? এভাবেও কি গণহত্যা সংগঠিত করা যায় না? এই মৃত্যুটাকে বলে ‘ সিভিল ডেথ’।
২০১৮ সালে উইকিলিক্সের এডওয়ার্ড স্নোডেন বলেছিলেন আধার সংযোগ করিয়ে সিভিল ডেথের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এই মোদী সরকার।
কাশ্মীর একটা ছোট পরীক্ষাগার মাত্র এরপর সারা দেশে এই পরীক্ষা চালু হবে। কেউ প্রতিবাদ করতে পারবেন না কারণ এরপর আপনার মুখের ছবি তুলে রাখছে আধার কতৃপক্ষ বা ইউআইডিএয়আই। সবাই সবদিক দিয়ে আটকা। এখনও কিছু মানুষ ভেবে চলেছেন যে গ্যাসের সাবসিডির ২০০ টাকা পাওয়ার জন্য আধার করতে হবে। কিন্তু তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন এরপর পুরো গ্যাসটাই বন্ধ হয়ে যাবে আর শুধু কাশ্মীর নয় পুরো দেশের মানুষ মারা যাবেন, কেউ বাদ যাবেন না।